কৃষি যুগ ,ইন্ডাস্ট্রিয়াল যুগ শেষ করে আমরা এখন নলেজবেস ইকোনমি এর দিকে ।যে দেশের জ্ঞান চর্চা যত বেশি সেই দেশ তত উন্নত ।আসুন নিজেদের দিকে তাকানো যাক সারা বিশ্বের পরিপেক্ষিতে ।
আলোচনার সময় ফোকাস করা হবে বাংলাদেশ ,পাকিস্তান এবং ভারত কে ।এছাড়াও ইরান ,চীন ,জাপান ,কোরিয়া এবং আমেরিকা এই সব দশ গুলোর দিকেও তাকাবো ।
প্রথমে দেখে নেওয়া ২০১১ সালের ভিত্তিতে যাক সেরা দশ টি দেশ রিসার্চ পেপার জমা দেবার ভিত্তিতে ।
এখানে খেয়ালে রাখতে হবে -H ইনডেক্স যে দেশে যত বেশি তার গবেষনার মান তত উন্নত ।
ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত গবেষনার ভিত্তি তে সেরা দশ টি দেশ ।
মেডিসিন সংক্রান্ত গবেষনার ভিত্তি তে সেরা দশ টি দেশ ।
শক্তি সংক্রান্ত গবেষনার ভিত্তি তে সেরা দশ টি দেশ ।
বাংলাদেশ
রিসার্চ পেপার জমা দেবার ভিত্তিতে ২০১১ সালে বাংলাদেশের rank ৬০ ।জমা পরা রিসার্চ পেপারের পরিমান ২,১৯৭।
রিসার্চ পেপার জমা দেবার ভিত্তিতে ২০১১ সালে পাকিস্তানের rank ৪৪ ।জমা পরা রিসার্চ পেপারের পরিমান ৮,২৯৪।
রিসার্চ পেপার জমা দেবার ভিত্তিতে ২০১১ সালে ইরানের rank ১৭ ।জমা পরা রিসার্চ পেপারের পরিমান ৩৬,৮০৩।
রিসার্চ পেপার জমা দেবার ভিত্তিতে ২০১০ সালে বাংলাদেশের rank ৫৯।
রিসার্চ পেপার জমা দেবার ভিত্তিতে ২০১০ সালে পাকিস্তানের rank ৪৩।
রিসার্চ পেপার জমা দেবার ভিত্তিতে ২০১০ সালে ইরানের rank ৪৩।
২০০৯ সালে
বাংলাদেশের rank ৬১
পাকিস্তানের rank ৪৫।
ইরানের rank ২১।
১৯৯৬ সালে
ইরানের rank ৫৩,পাকিস্তানের ৫২ আর বাংলাদেশের rank ৬১।
এখানে দেখা যাচ্ছে ইরান ৫২ থেকে ১৭ তে উঠে এসেছে ২০১১ সালের মধ্যে ।বাংলাদেশ কিন্তু এগোয়নি ।তখনও ৬১ ছিল এখনো ৬১ ই আছে ।পাকিস্তান ৫২ থেকে ৪৩ তে উঠেছে ।
ইরানের এই বৃদ্ধি অসাধারণ ।মনে রাখতে হবে রিসার্চ এর ক্ষেত্রে ইরানের বৃদ্ধির হার পৃথিবীর সর্বাধিক ।
ভারতের ক্ষেত্রে গবেষণা পত্র বার করবার ক্ষেত্রে ২০০৯ সালে দশম স্থানে ছিল ।২০১০ এ নবম স্হানে ।এবং ২০১১ তে সপ্তম(৭) স্থানে আছে ।
রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট বাজেট -
সারা পৃথিবীতে যত টাকা বরাদ্দ হয় রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর জন্য তার প্রায় ৩০ % ব্যয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই করে ।ইউরোপ মহাদেশ ২৪ % ব্যয় করে ।চীন এবং জাপান ১৪% করে ব্যয় করে ।ভারত ৩ % করে ।
নিজ দেশের মোট বাজেট বরাদ্দের মাত্র ১ .৮৯ % রিসার্চের জন্য খরচা করে ভারত ।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২ .৮ এবং কোরিয়া এবং জাপান প্রায় ৪ শতাংশ খরচা করে ।
বলা ভালো পাকিস্তান নিজ বাজেটের মাত্র .৯ শতাংশ রিসার্চের পিছনে খরচা করে ।আর বাংলাদেশ সরকার এখনো ঘুমিয়ে আছে ।তবে একটা সুখবর -প্রথম একটি নামী বহুজাতিক কোম্পানি হিসাবে স্যামসং বাংলাদেশের ঢাকায় একটি "রিসার্চ সেন্টার হাব" খুলেছে এই বছর ।
গ্লোবাল ইনোভেসান ইনডেক্স
কোনো সরকারের রিসার্চ ক্ষেত্রে ইনপুটের পরিমান এবং তা থেকে প্রাপ্ত আউটপুট নিয়ে নিয়ে এই গ্লোবাল ইনভেসান ইনডেক্স বানানো হয় ।মোদ্দা কথা হল যে দেশের রিসার্চের পরিবেশ যত ভালো সেই দেশ এই ইনডেক্স এ তত বেশি এগিয়ে থাকবে ।
২০১২ এর প্রকাশিত এই লিস্টে ভারতের স্থান ৬২ ,বাংলাদেশ ১০৪ এবং পাকিস্তান ১১০ নাম্বারে রয়েছে ।
যদিও সিঙ্গাপুর ,হং কং এর মতো চত দেশ গুলি বাদ দিলে ভারত ১৫ নাম্বারে রয়েছে ।হতাশা জনক পরিস্থিতি ।
এখানে আরো একটি লিস্ট প্রকাশিত হয় তাতে লিস্ট করা হয় কোন দেশের সায়েন্টিস্ট রা প্রতিকুল পরিস্থিতির মাঝেও ভালো গবেষণা করেন -
তাতে প্রথম স্থানে আছে চীন ,এবং দ্বিতীয় স্থানে ভারত আছে ।বাংলাদেশের অবস্থান ৫৬ নাম্বারে এবং পাকিস্তান ৭৫ নাম্বারে ।
পেটেন্ট অপ্লিকেসান এবং পেটেন্ট গ্র্যান্টেড হবার ভিত্তিতে -
আপনারা জানেন কিনা জানি না -নিম এবং হলুদের পেটেন্ট আমেরিকা নিয়ে নিয়েছিল ।অথচ আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে অনেক দিন আগেই এর ভেসজ গুনের কথা লেখা আছে ।তখন ভারত সরকারের ঘুম ভাঙ্গে ।শেষ মেষ বন্ধু জার্মানরা প্রতিবারের মত এবারেও ভারতের হয়ে ওকালতি করে ।শেষে পেটেন্ট ভারতের হাতে আসে ।এই পেটেন্ট থেকে কিছু অর্থ ও ভারতের কোষাগারে যুক্ত হয়েছে ।বাংলাদেশ সরকার এখনো ঘুমাচ্ছে ।ঢাকাই মসলিনের পেটেন্ট কি নেওয়া আছে ?-না নেই ।জামদানির মতো ওটিও হাতছাড়া হতে আপনাদের বেশি সময় লাগবে না ।এটা সম্পূর্ণ আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে হয় ।
২০১২ সালে পেটেন্ট গ্র্যান্টেড হবার দিক থেকে জাপান সবার এগিয়ে রয়েছে ।তারপর আমেরিকা এবং তারপরে চীন ।ভারত রয়েছে ১৭ নাম্বারে ।
তবে পেটেন্ট বেশি হলেই যে খুব ভালো তা নয় যেমন ইরান ,এরা পেটেন্ট এপ্লিকেশন সব সময় নিজের দেশেই করে ।এবং উল্টো পল্টা চমক সৃষ্টি করে ।চীন ও এই ব্যাপারে পিছিয়ে নেই ।
যাই হোক ,২০১২ সালে জাপানের নেওয়া পেটেন্ট ২,৩৮,৩২৩ ভারতের ৫১৬৮।*পাকিস্তানের ৩০ থেকে ৪০ টির মধ্যে ।আর বাংলাদেশ ৬ টি ।*(তারকা চিন্হ দেওয়া তথ্য টির ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত নই ,তবে সংখ্যা টা এর আসে পাশে ঘোরাফেরা করবে )
পেটেন্ট নিজের দেশেও নেওয়া যায় আবার বিদেশেও নেওয়া যায় ।
বিদেশে(পড়ুন আমেরিকায় ) পেটেন্ট নেওয়ার দিক থেকে ভারত সপ্তম স্থানে(১০০০ এর একটু বেশি পেটেন্ট ) আছে ।পাকিস্তান মাত্র ৬ টি পেনেন্ট নিয়েছে ।আর বাংলাদেশ একটিও নেয় নি ।
বোঝা যাচ্ছে উপমহাদেশে পেটেন্ট একটি ফ্যান্টাসির জায়গায় রয়েছে ।
মোস্ট ইনোভেটিভ কোম্পানি -
অনেকে অনেকরকম লিস্ট বার করে ।তবে আমি এখানে শুধুমাত্র পেটেন্টের দিক থেকে দেখব ।
কোন কোম্পানির পেটেন্ট কত বেশি তার উপরে লিস্ট করলে সবার উপরে থাকবে আই বি এম।এরকম হাজার টা কোম্পানির লিস্ট করলে ভারতীয় কোম্পানি থাকবে মাত্র ৮ টা ।চিনের ৩৫ টা ।বাংলাদেশ ,পাকিস্তান এর একটি কমনীয় থাকবে না ।এই হলো আমাদের উপমহাদেশের হাল ।অথচ এই আই বি এম এর ৫০ % এর বেশি
আমার যা মনে হয় -
১)আমাদের জন্ম জামাকাপড় তৈরি আর টেকনোলজিকাল সলুশন(কম্পিউটার সংক্রান্ত ) দেবার জন্য হয় নি ।আমরা ক্রীতদাস না ।আমরা একটা গৌরবান্বিত প্রাচীন সভ্যতার অংশ ।
২)সমন্বয় চাই ।উপমহাদেশের ইউনিভার্সিটি গুলোর মধ্যে সমন্বয় ।এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নাই ।
৩)আপনি কি জানেন -বাংলাদেশে একটিও বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই ।
ভারতে থাকলেও সেগুলো প্রচুর পরিমানে অন্তর্মুখী ।কোনো সমন্বয় নাই ।
৪)আমি একটা অবাক ট্রেন্ড লক্ষ্য করেছি ।উপমহাদেশ থেকে যথেষ্ট ছাত্রছাত্রী আমেরিকা পড়তে যায় শুধুমাত্র স্টেটাস এর জন্য ।টাকা দিয়ে আমেরিকার বস্তা পচা ইউনিভার্সিটি গুলোতে পড়ে ।এর কোনো মানে আছে কিনা জানি না।আমেরিকার ইউনিভার্সিটি মানেই যে ভালো এর কোনো মানে নাই ।