somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোপন অধ্যায় :: উপন্যাস :: পর্ব : ২

১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গবেষণার কাজ করছিলাম। হঠাৎ মিতু এসে বললো-আমার ইন্টারনেটো এখটু দরখার। আমি তার দিকে না তাকিয়েই বললাম-ঠিক আছে। দুইটা মিনিট দম লও। দিরাম। কেনো তাকে চাওয়ার সাথে সাথেই সুযোগ দিলাম না-এ নিয়ে সে বেকেঁ বসলো। কিন্তু একটু পরেই তার আচরণ দেখে মনে হলো-সময় চাওয়াতেই যেনো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেলো! তার ওয়াজ নসিহত শুরু হলো। কোনো দিন তাকে পিসিতে সুযোগ দেই না, তার কোনো কাজকেই আমি গুরুত্ব দেই না প্রকারান্তরে তাকেই আমি গুরুত্ব দেই না ইত্যাদি ইত্যাদি। সে উচ্চবাচ্চ করতে করতে অন্যরুমে চলে গেলো।

দুমিনিট হোয়ার আগেই আমি উঠে গেলাম। সে ততক্ষণে বিছানাতে শুয়ে ফুঁসতেছিলো। অনুতপ্ত অপরাধীর মতো করে তাকে বললাম-পিসি ফ্রি আছে, নেট ইউজ খরতা পারো। সে এমনভাব নিলো যে- এই বিনয়কেও তখন আমার মহাঅপরাধ মনে হলো। পাশ ফিরেই রইলো। ফিরে তাকানোরো প্রয়োজনবোধ করলো না। আমি তার পাশেই শুয়ে রইলাম। দুইজন খুবই কাছাকাছি; কিন্তু মানসিক অবস্থায় দুজনের যেনো যুজন যুজন দূরত্ব! আমার শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে লাগলো। আমি তাকে বললামও। পানি আর ঔষধ চাইলাম। তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলাম না। আমার কথাকে না-সে খুব গুরুত্ব দিলো না-সে বিশ্বাস করলো-কোনোটাই বুঝতে পারলাম না। সে যেমনটি বেকেঁ ছিলো ঠিক তেমনি বেঁকেই রইলো। আমার জ্বরের মাত্রা ক্রমশ বাড়তেই লাগলো। মাত্র কয়েকদিন হলো ডায়রিয়া থেকে সুস্থ হয়েছি। শরীর এখনও যথেষ্ট সবল নয়। তার ওপর গত দুদিন থেকে আবার জ্বরে ভুগছি। মাঝে-মধ্যে সেই প্রবাদটিই জীবনের সাথে বড়ো নিবিড় হয়ে ওঠে, বড়ো আপন হয়ে ওঠে-অভাগা যেদিকে যায়, সাগরও শুকায়ে যায়!

ক্রমেই রাত বাড়ছে। একগুচ্ছ মনখারাপ। সমস্ত পৃথিবীর কলাবাগান জুড়ে যেনো হতাশা আর অভিমান উপচে পড়ছে! শরীরে তখন প্রচণ্ড জ্বর। মানিব্যাগ হাতে নিয়েই বেরিয়ে পড়লাম। মানুষের সবচেয়ে বড়ো চেষ্টা হলো-নিজেকে বাঁচিয়ে রাখ সংগ্রাম! পয়েন্টেই ফার্মেসি। গত দুদিন থেকেই নাপা খাচ্ছি। কোনো উন্নতি হচ্ছে বলে মনে হলো না। সকালে ছাড়ে তো বিকেলে আবারও আসে। ব্যাপারটা এরকমই যে, আমি তাকে ছাড়তে চাইলেও সে কিন্তু আমায় ছাড়ছে না! আহা! প্রেমিকা আমার! বুঝলাম, অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন। ফার্মেসিতে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সোজা বাসায় ফিরে এলাম।

বিস্কিট খেয়ে ঔষধ সেবন করলাম। তারপর সোজা বিছানায়। প্রচণ্ড গরম। ফ্যানের সর্বোচ্চ পাওয়ার দেওয়া। শো শো করে ফ্যান চলছে। তবু আমার লেফ মুড়ি দিতে হলো-ঠাণ্ডার জন্য নয়, শরীরে গরম সৃষ্টির জন্য! শরীরে বেশি তাপ থাকলে বেশি ভারী লেপের প্রয়োজন পড়ে। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই আমি এ শিক্ষা অর্জন করেছি। জ্বরের তাপমাত্রায় একবার মনে হলো-আয়ু বুঝিবা শেষ হয়ে এলো! আহা! আয়ু…। আমি বিছানাতে ছটফট করতে থাকি, কাতরাতে থাকি। তাকে অভিমান ভুলে বললামও-গায়ে ভীষণ জ্বর। সে একটিবারমাত্র শুনলো। তারপর তুড়িঘড়ি করে ওঠে গেলো। ভাবলাম আমার জন্য হয়ত কোনো খাবার আনতে গেছে। অথবা মাথায় জলপট্টি আনতে গেছে।

ওমা! এক মিনিট, দু মিনিটি, পাঁচ মিনিট, একঘণ্টা, দুঘণ্টা, তিনঘণ্টা…তার কোনো খবরও নেই! পাশের রুমে সে শুয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড জ্বরে এমনিতেই চোখে ঘুম ছিলো তার ওপর আবার তার এই আচরণ আমাকে নানাভাবে বিষিয়ে তুলতে লাগলো। একবার ভাবলাম-সম্পর্ক একেবারে শেষ করে ফেলি, যে কঠিনতর বিপদে কোনো কাজেই লাগে না, তারসাথে একত্র বসবাস করে লাভ কী? এ সম্পর্ক থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। এমনি নানা পক্ষে-বিপক্ষের ভাবনা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও বলতে পারি না। সকাল আটটা বাজতেই সে আমাকে আলতো স্পর্শ করে কোমল কণ্ঠে বললো-যাবে?

আমি তখন গভীর ঘুমে ছিলাম। সহসা ঘুম ভাঙায় তার ওপর খুব রাগ হলো। তবু তা চেপে নরম গলায় বললাম-কোথায়? দশটাথ বার্সিটিত পরীক্ষা। আমারও তখন মনে পড়ে গেলো। মন ভাঙলে তা জোড়া লাগানো যেমন কঠিন তেমনি গভীর ঘুম ভাঙলেও তা পুনরায় লাগানো কঠিন। কী ভেবে যেনো উঠে পড়লাম। হাতমুখ ধুয়ে খাবার টেবিলের দিকে গেলাম। টেবিলে শুধু পানিভাত রাখা ছিলো। এমনিতেই পানিভাত কম খাই, তার ওপর সকালে তা দেখলে মেজাজ আরও খারাপ হওয়ার কথা। হলোও তাই। কিন্তু কীভাবে যেনো সহসা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেললাম। নীরবে পানি ভাত খেয়ে নিয়ে বললাম-চলো।

সে এরই মধ্যে হালকা সাজগোজ করে নিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে পরীক্ষা বলে কথা! একটু স্মার্টনেস না হলে কী আর চলে! আমিও এই ফাঁকে একটু দাড়িগোফ কামিয়ে নিলাম। নিজের কাছেও তখন নিজেকে বড়োই ফ্রেস মনে হলো। আহা! মনের ময়লাগুলোও যদি এভাবে কামিয়ে ফেলতে পারতাম! তবে কতই না ভালো হতো!

রিকসা করে রওয়ানা হলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যেই আমারা গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। একটু পরেই শুরু হলো পরীক্ষা। প্রাথী আনুমানিক বিশজনের মতো হবে। আমি গেস্ট রুমে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমার মনে পড়তে লাগলো-একদা আমিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার পোস্টে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ১৪৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে আমরা ছয়জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। লেখালেখির সূত্রে এক সচিবের সাথে সখ্য থাকায় আমার ফলাফলও আগেই জানতে পেরেছিলাম। আমিই নাকি প্রথম হয়েছিলাম! কিন্তু তিনি ফোনে ধমকের স্বরে বললেন-বোকরাম! বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি মেধায় হয় না। বাসায় যাও, এমপিমন্ত্রী ধরো। তাহলেই কাজ হবে।

সচিবের কথায় একটু আশ্বাসের সাথে একটু হতাশাও পেলাম! আহা! সোনার চাকরি! সেনার দেশ! কোনো দলের সাথেই সরাসরি জড়িত না থাকায় আমার চাকরির আশাও ক্ষীণ হয়ে এলো। তবুও সরকারদলীয় কিছু বন্ধুর সহযোগিতা নিয়ে এমপির কাছে দৌড়াতে লাগলাম। নিজের এলাকার এমপি তখন দেশের বাইরে। অর্থমন্ত্রী মহোদয়ও তখন দেশের বাইরে। আর শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আমার কোনো ধরনের লিয়াজো সম্ভব হয়নি বলেই একরকম চাকরির আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।

আজকে যখন মিতু পরীক্ষা দিচ্ছে তার সে পরীক্ষার ফলাফল নিয়েও ভাবছি-ঠিক আমার মতোই তারও অবস্থা হবে। অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট ওর খুবই ভালো। দুইটা প্লাস। অনার্স-মাস্টার্সেও ৩.৩৫ এর মতো সিজিপিএ। তবু ওর চাকরি হবে না! আগেরবার যখন লিডিং ইউনিভার্সিটিতে, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা দিতে নিয়ে গিয়ে ছিলাম তখন কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক ও এক সাংবাদিকের সহযোগিতা নিয়েছিলাম। কোনোই কাজে আসেনি। যাদের চাকরি হয়েছিলো তাদের রেজাল্ট ছিলো সবচেয়ে নিম্ন! আজও হয়ত তাই হবে। এটা জেনেও এলাম। তবে আগের মতো আজ কোনো ধরনের লবিং করার চেষ্টা করিনি। ভাবলাম-যদি মেধার জোরে হয়! হতভাগাদের নাকি আশাই একমাত্র ভেলা!

লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হলো। আমি চোখ বুলাতেই দেখলাম তার নাম আছে। আমি তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললাম-অভিনন্দন! ভাইবার লাগি প্রস্তুতি লও।
১৮.০৫.২০১৭
শিবগঞ্জ, সিলেট
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:২৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×