somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশি :: রম্যগল্প

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মামা রুবজ এ রহমান ইংল্যান্ড থেকে পালিয়ে সবেমাত্র ইতালি এসেছেন। বৈধকাগজপাতি নেই বললেই চলে। দিনের বেলা পুলিশের ভয়ে বেরুতে পারেন না। নিশাচর বন্যপ্রাণিদের মতো মধ্যরাতে বের হন। প্রাতিষ্ঠানিকশিক্ষা কম থাকায় দেশেই তার কপালে ভালো কোনো চাকরি জুটেনি বিদেশে জুটবে কী করে! রেস্টুরেন্টে পার্টটাইম ওয়েটারের কাজ করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি যে রেস্টুরেন্ট কাজ করেন একদিন সে রেস্টুরেন্টের নামে পত্রিকায় বেশ বড়োসরো সংবাদ ছাপা হলো। ভেজালখাবার পরিবেশন! সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনের টনক নড়লো। পুলিশ সাঁড়াশি অভিযানে বের হলো। সে অভিযানে ধরা খেলেন আমার গুণধর মামা! একে তো ভেজাল খাবার তদুপরি তার বৈধকাগজপাতি নেই। সব মিলিয়ে তিনি ছয় মাসের জেল ও আর্থিকদণ্ডে দণ্ডিত হলেন।

ইতালীয় জেলের খাবার খেয়ে মামা প্রচণ্ড পেটেরপীড়াতে ভুগতে লাগলেন। জেলেই চিকিৎসা চলতে লাগলো। একটু ভালো হয় তো আবার খাবার খাওয়ার পর শুরু। এভাবে ছয়মাস কেটে গেলো। জেল থেকে বের হওয়ার পর মামা ইতালির ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখালেন। কিন্তু তাতে উপকার হয়নি। এমন কঠিন বিপদের দিনে তিনি আমাকে ফোন করলেন। আমি তাকে অভয় দিলাম।

মামা ছিলেন অন্ধ পিরভক্ত। পিররা যেমন নারীদের মতো লম্বা লম্বা চুল রাখে রুবজ মামার অবস্থাও তেমন! দাড়ির অবস্থা দেখলে জঙ্গি বাংলাভাইও ফেল! আমি মামার বিশ্বাসটাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম। হার্দিকস্বরে বললাম—দেশে উপমহাদেশের প্রখ্যাত একজন পির রয়েছেন। খুবই কামেল আর বুজর্গ। তার সরণাপন্ন হয়ে এ যাবৎ কেউই নিরাশ হয়নি। রুবজ মামা আমার কথা শুনে খুবই খুশি হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশে এসেই তিনি চিকিৎসা করাবেন।

যে কথা সেই কাজ। সপ্তাহের মধ্যেই তিনি দেশে ফিরলেন। মামার পেটের অবস্থা তখন খুবই খারাপ; অনেকটা নয় মাসের পোয়াতি মাহিলাদের মতো! মামাকে বললাম নারায়ণগঞ্জে উপমহাদেশের বিখ্যাত একজন পির রয়েছেন। সকলেই তাকে শহিদ আশরাফ নারায়ণগঞ্জী নামেই চিনে। অত্যন্ত পরহেজগার আর বুজর্গ মানুষ। হাদিয়া চেয়ে নেন না। কেউ দিলে আবার না করেন না। চলেন, আগামীকালই যাই। মামা বললেন—বেশ, তাই হোক।

খুব ভোরে আমরা রওয়ানা দিলাম। আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন মামার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আতাউর রহমান বিশাল আর আবু সিনা। আমরা যখন পৌঁছলাম তখন ঘড়িতে কাটায় কাটায় বারোটা। পিরের বাড়ি বেশ বড়ো। পুরুষ ও নারী রোগী দ্বারা পুরো বাড়িটাই কানায় কানায় পূর্ণ। তবে তুলনামূলক নারী রোগীদের সংখ্যাই বেশি। বিশেষ করে অবিবাহিত যুবতী নারীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। আমি আগেই যোগাযোগ করে টিকিটের ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। ভেতরে ঢুকতেই মামা জোরে সালাম দিলেন। একে একে সব সমস্যাই তিনি খুলে বললেন। পির মহোদয় অত্যন্ত বিজ্ঞের মতো সব শুনলেন। অতঃপর চেয়ার থেকে উঠে মামার পেট দেখলেন। পেট গর্ববতী মহিরাদের মতোই উঁচু! তিনি খানিকক্ষণ কী যেনো ভাবলেন। এরপর চেয়ারের পিছনে আলমিরার ওপরের সেলফে চারটি বোতল রাখা ছিল। সেখান থেকে ডানদিকের দুটি বোতল বের করে আনলেন। একটিতে পানি জাতীয় পদার্থ আরেকটি হলুদ হলুদ কী দ্বারা যেনো পূর্ণ! পির ভরাটগলায় বললেন—এই নিন। এটা যে জায়গায় সমস্যা সেখানে লাগাবেন। আর এটা এক সপ্তাহ পর্যন্ত খাবেন। আপনি কোনো দুঃশ্চিন্তা করবেন না। সকল বালামুছিবতই তিনি দেন (উপরের দিকে হাত ইশারা করে); আবার তিনিই সব আসান করেন। সবই তানার ইচ্ছা। আমরা উসুলিমাত্র! পিরের কথা ও ব্যবহারে মামা খুবই মুগ্ধ হলেন। মোটা অঙ্কের বকশিশ দিয়ে আমরা বাসায় ফিরে এলাম।

মামা পানিপড়া নিয়মিত পান করতে লাগলেন। আর হলুদ ঔষধগুলো পেটে লাগাতে লাগলেন। মাঝেমধ্যে মুখেও মাখতেন। তার ধারণা কামেল পিরের ঔষধে নিশ্চয়ই পেটের ব্যথা ও মুখের ব্রুণ ভালো হয়ে যাবে। সপ্তম দিনের মাথায় পির মহোদয় কল দিলেন। পিরের কল দেখে আমি তো মহাখুশি। সালাম দিতেই তিনি বললেন—মুনশি সাহেব, আমি অত্যন্ত লজ্জিত এবং দুঃখিত। আমি বললাম—কেন জনাব? তিনি অপরাধীর মতো কান্নাজড়িত স্বরে বললেন—আপনাদের দুটি শিশিই ভুল দেওয়া হয়েছে। আমি বললাম—মানে? পির মহোদয় কিছুক্ষণ থামলেন। তারপর কম্পিতস্বরে বললেন—একটি শিশিতে আমার ছেলের প্রস্রাব পরীক্ষার জন্য রেখেছিলাম আর আরেকটিতে তার ...। আমি চিৎকার করে বললাম—কী বলেন পির সাহেব? আমার রাগান্বিত স্বর শুনেই তিনি কল কেটে দিলেন।

আমি রাগে লাফাতে থাকলাম। পিরকে মারব কি কাটব ভেবে পেলাম না! এদিকে মামাও বাসায় নেই। সময় যতই গড়াচ্ছিল আমার রাগ ততই বাড়তেছিল। কীভাবে পিরকে শায়েস্তা করব তার একটা নকশা মনে মনে করে ফেললাম। বিকেল চারটার সময় মামা বাসায় ফিরলেন। মামার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি তো অবাক। ওমা! মুখে ব্রুণের কোনো লেশও নেই। পেটের দিকে তাকাতেই দেখলাম একেবারে হৃত্বিক রোশনের মতো স্লিম! এ কী করে সম্ভব?

একগুচ্ছ বিস্ময় নিয়ে আকাশের দিকে তাকাই। রোদ্রস্নাত সুনীল আকাশে হঠাৎ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি! আমার তখন মনে পড়লো পিরের সেই মোহাচ্ছন্ন বাণী—সবই তানার ইচ্ছা!




সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×