একবার মামির সঙ্গে মামা রুবজ এ রহমানের ভীষণ যুদ্ধ হলো। যুদ্ধ মানে তর্কযুদ্ধ আরকি! মামা তর্কে হেরে গেলে গণ্ডারের মতো অস্থির হয়ে ওঠেন। তখন হাতের কাছে যা পান তা দিয়েই ঘরের জিনিসপত্র ভাঙার চেষ্টা করেন। কখনোবা ঘরের বেড়াও কাটেন। কিংবা ঘর থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু কখনো ভুলেও মামির গায়ে হাত তুলেন না। আজ মামা ওসবের কিছুই করলেন না। কেবল পশ্চিমাকাশের দিকে ঘনঘন তাকাতে লাগলেন—কখন সূর্য অস্ত যায়!
সন্ধ্যার সময়। চারদিকে অনেকটাই থমথমে পরিবেশ। উঠানের দক্ষিণ দিকে গাছের সঙ্গে বাঁধা জোড়া বলদ। মামা বলদদ্বয়ের গলার রশি খুলে গোয়ালে ঢুকালেন। এরপর চুপিসারে গাছ থেকে বলদের শক্ত রশিটি খুললেন। আশেপাশে তাকালেন। কেউ কোথাও নেই। তিনি বাড়ির পিছনে এলেন। পিছনটা ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ। সন্ধ্যা হতে না হতেই ঝিঁঝি পোকারা ডাক শুরু করে দিয়েছে। এ ডাক যেনো সন্ধ্যাবার্তাই বহন করছে! জঙ্গলের সম্মুখভাগেই রয়েছে মস্তবড়ো আমগাছ। মামা সেখানে গেলেন। তার হাতে একজোড়া বলদরশি! তিনি দুটোকে গিঁট দিয়ে আরও বড়ো করলেন। এরপর আমগাছের ডালের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধলেন।
আবছা অন্ধকার। একটু দূর থেকে মামার মুখ স্পষ্ট দেখা যায় না। বলদ বাঁধার মতো করে মামা নিজের গলায় রশিটি বাঁধার চেষ্টা করলেন। ফাঁসিতে ঝুলে যাবেন ঠিক এমন মুহূর্তে পাশ থেকে একটি সাপ ফোঁস করে উঠলো। মামা ভয়ে রশিটশি ফেলে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলেন—ওরে বাপ রে! সাপ! এরপর দিলেন বলদদৌড়!
চিৎকার শুনে মামি দৌড়ে এলেন। এসে দেখেন আমগাছে বলদের রশি ঝুলছে। অদূরেই মামা। একেবারে সান্ধ্যভূতের মতোই তাকে অস্পষ্ট আর অদ্ভুত লাগছে!
--------------
মুনশি আলিম
সিলেট
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৬