শুক্রবার। সকালবেলা। খুব সাজুগোজু করে বের হলেন রুহেল আমীন ওরফে গিট্টু মিয়া। বের হয়েই মামা রুবজ এ রহমানকে বললেন—মামা, কউক্কছাই আমারে কোন নায়কের লাখান লাগে? মামা ছিলেন খুবই রসিক। তিনিও হাসতে হাসতে বললেন—তুইন তো বেটা দেড়ফুটি! ত্বয় চেহারাসুরতে লাগের আফ্রিকান হিরো আলমের লাখান!
সকালবেলা মামার মুখে বাঁশ খেয়ে গিট্টু মিয়া চুপসে যাওয়া বেলুনের মতোই নেতিয়ে গেলেন। কিন্তু পরিকল্পনা থেকে পিছালেন না। আজ যে তার বিয়েবার্ষিকী! বাজার থেকে বউয়ের জন্য একটা কিছু কিনে না নিলে যে আর রক্ষা নেই! পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক মামাকে নিয়ে গোলাপগঞ্জ বাসস্টেশনে দাঁড়ালেন। মিনিট দুয়েকের মধ্যে বাস এলো। প্রচণ্ড ভিড়। গিট্টু মিয়া দেড়ফুটি হওয়ায় কনট্রাকটারের দুপায়ের ফাঁক গলে সহজেই বাসে উঠে গেলেন। এদিকে মামা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলেন। আশেপাশে খুঁজার পর নিজের প্যান্টের পকেট খুঁজতে লাগলেন। বামনপ্রজাতির ভাগিনা বলে কথা! কীজানি পকেটেও লুকিয়ে থাকতে পারে!
কোথাও না পেয়ে মামা একটু হতাশই হলেন। এমন সময় গিট্টুমিয়া ষাড়ের মতো চেঁচিয়ে বললেন—মামা জলদি আইয়োক্কা। সিট ফাইছি। মামা ছিলেন হাতির মতোই শক্তিধর। গিট্টুর শব্দ পেয়েই মামা সামনের মানুষজনকে ঠেলে বাসে উঠলেন। দুই সারিতে দুই সিট খালি। গিট্টু বৃদ্ধের পাশে খালি সিট দেখিয়ে মামাকে বললেন—মামা আফনে অনো বইযাউক্কা। আর আমি অউ-উ অনো। মামা নিরুপায় হয়ে বসে পড়লেন। কিন্তু গিট্টুমিয়ার চমক দেখে রীতিমতো টাসকি খেলেন!
গিট্টু খুব সুন্দরী এক মেয়ের সঙ্গে বসে তাকে ভালো করে নিরীক্ষণ করছে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মেয়েটি হাত দিয়ে মুখ ধরে রেখেছে। গিট্টু মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার লোভ সামলাতে পারল না। মেয়েটিকে পটানোর তীব্র ইচ্ছে নিয়ে বললো—এইযে মিস …। মেয়েটি কর্ণপাত করল না। গিট্টু কিন্তু থেমে যাওয়ার পাত্র না। সুযোগবুঝে মেয়ের আরও একটু শরীর ঘেঁসে বসে বললো—এইযে …। মেয়েটি তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। হঠাৎ করেই ওয়াক করে বমি করে দিলো গিট্টুর মুখের ওপর। সেকি বমি! যেনো অষ্টআশির বমির বন্যা! বমিতে গিট্টুমিয়া রীতিমতো গোসল করে ফেলল।
হাঁপানি রোগীদের যেমন শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তেমনই অবস্থা গিট্টুর। অধিক বমি চোখমুখে পড়ায় তার শ্বাস নেওয়াই কষ্টকর হলো। তবু সুন্দরী মেয়ের বমি বলে সে কিছুই বললো না। বরং মিষ্টির মতো করে তার যথোপযুক্ত ব্যবহার করতে লাগল। একসময় চোখের বমি পরিষ্কার করতে গিয়ে বেচারার হাত গিয়ে পড়লো মেয়ের কাঁধের ওপর।
মুহূর্তেই মেয়েটি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল। ডান হাত দিয়ে একমন ওজনের এক থাপ্পর বসিয়ে দিলো গিট্টুর গালে। গিট্টুর চোখেমুখে বমির প্রলেপ তখনো লেপটে রয়েছে। গিট্টুর একবার মনে হলে সে স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু পরক্ষণেই মগজের ভেতর সে ব্যথা অনুভব করতে লাগল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটি গিট্টুর চুলের মুঠায় ধরল। ওমা! চুল ধরতেই গিট্টু মিয়ার আসল রূপ বেরিয়ে এলো। পরিস্থিতি খারাপ দেখে গিট্টু চুল (পরচুলা) রেখেই দিলেন দৌড়। বাসায় ঢুকতেই তার বউ কুতকুতি বেগম দা হাতে এগিয়ে এলো। চিৎকার করে বললো—কে আফনে? খারে চাইরে? আমার ঘরো কিতা? গিট্টু বললো—আমি তোমার স্বামী, গিট্টু ওরফে চমচম মিয়া! তার বউ কুতকুতি বেগম তখন বাঘিনীর মতো হুঙ্কার ছেড়ে বললো—হালার হালা! টাকলুর ঘরর টাকলু! আমার জামাইর মাতাভর্তি চুল! আধা মিনিটর মধ্যে ঘর তাকি না বাড়াইলে তর কল্লা কাটিলাইমু। হালার হালা! টাকলুর টাকলু কোনানর!
দরজার ওপাশ থেকে মামা তখনো হেসেই চলছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৫০