মামা হঠাৎ কল দিয়ে বললো—ভাগিনা, খালকে একটু সকাল সকাল আইছ; পাত্রী দেখাত যাইতাম। বালা সুট-কোট ফড়িয়া আইছ। কদিন থেকেই মামা তার ভাতিজার জন্য পাত্রী দেখছেন। কিন্তু কোথাও ষোলকলা পূর্ণ হচ্ছে না।
যাইহোক, আমি সকাল দশাটার দিকে রওয়ানা দিলাম। হাঁটতে হাঁটতে যেনো আর পথ ফুরাতেই চায় না! আমি অধৈর্য হয়ে বলি—মামা, আর কত দূর? মামা বলেন—ওই তো, আর থোরা পথ। বলে বলেই প্রায় আধঘণ্টা হাঁটলাম। পাত্রীর বাড়ির বাংলোঘরে সুফাতে আসনগ্রহণ করলাম। পাত্রী কোথায়? জিজ্ঞেস করতেই পাত্রীর নানি মুচকি হেসে বললো—আগে খাওয়া দাওয়া শেষ খরিলাইন ... । যে কথা সেইকাজ। প্রথম পর্ব ভালোভাবেই শেষ হলো।
এবার আমি একটু অস্বস্থিবোধ করতে লাগলাম। বাড়ির মেয়েছেলে, জোয়ান, বুড়া অনেকেই কেমন যেনো আড়চোখে তাকাচ্ছে। আবার অনেকেই দরজার পর্দা একটু সরিয়ে লাজুকদৃষ্টিতে মিলিয়ন ডলারের হাসি দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই পাত্রী এসে আমার বাম দিকে বসল। একেবারে সাদাসিদে কিন্তু ভারি মিষ্টি।
আমি মামার দিকে তাকিয়ে ক্ষীণস্বরে বললাম—দারুণ! মামা দ্রুত অন্দরমহলে গেলেন। মিনিট দুয়েক কাটিয়ে এসে আমাকে বললেন—এখন তো উটি যাইতাম অইব। আমি বললাম—জিঅয়। সচরাচর আমি পান খাই না। কিন্তু সেদিন কী মনে করে যেনো বিদায়মুহূর্তে এক খিলি পান মুখে পুরলাম। এমন সময় অন্দরমহলের কে যেনো জোরেশোরেই বলতে লাগলো—দুজনকে খুব মানাবে! পাত্র বেশ স্মার্ট! কথাটি শোনামাত্রই আমি ঘামতে শুরু করলাম।
বিদায় নেওয়ার পালা। মামা আমার কানে ফিসফিস করে বললেন—খইন্যাবেটিরে কিছু দিতে নায়নি? এতক্ষণে বিষয়টা দিনের মতোই পরিষ্কার হয়ে গেল। আমি কয়েকবার ঢুক গিলে মানিব্যাগ বের করলাম। আর মনে মনে মামার ওপর ভীষণ রাগান্বিত হলাম। সর্বমোট ৬০০ টাকা আছে। নিজের গাড়িভাড়াটা শুধু রেখে অবশিষ্ট ৫০৫ টাকা কন্যার হাতে দিলাম। গণনার প্রয়োজন নেই। বলেই আমি পুনরায় আমার মুখের ঘাম মুছার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম।
সবাইকে সালাম দিয়ে বাসা থেকে বের হতেই মামাকে বললাম—হালার হালা! মামা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর আমিও মামার সঙ্গে শরীক হলাম।
বোনাস :: গত পোস্টের পুথিপাঠের লিংক: https://youtu.be/2MobkPVGZJ0