আড্ডাঃ
সামহোয়্যার ইন ব্লগ, এক বিশাল প্লাটফর্ম যেখানে শুধু দেশ নয় এর সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষদের অবাধ আনাগোনা এবং মানবজীবনের সামগ্রিক বিষয়াদি নিয়ে মত প্রকাশের এক মুক্ত মঞ্চ। এর পাঠক ও লেখক- আমি, আপনি- আমরা সকলে। আমরা যারা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ সর্বোপরি সাহিত্যের যে দিক গুলো আছে, কেবল সেই দিক গুলো দিয়েই ব্লগিং করি অথবা যাদের ব্লগিংয়ের অন্যতম বিষয় সাহিত্য তাদের একটা আড্ডার, মুখোমুখি আড্ডা কেমন হতো, এই চিন্তা থেকেই শুরু হয়েছে সাহিত্য আড্ডার পথ চলা।
ব্লগার অলওয়েজ ড্রিম (নাইম রানা) সর্ব প্রথম (১১ই আগস্ট ২০১৩) ব্লগ ও ফেসবুক কেন্দ্রিক সাহিত্যানুরাগীদের নিয়ে একটি আলাদা গ্রুপ করার পরিকল্পনা করেন। প্রথম পোস্টের পর তেমন একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। তাতে থেমে যায়নি স্বপ্ন, ২৩শে আগস্ট ২০১৩ তে আবারো পরিকল্পনা করা হয় সাহিত্য আড্ডার। এবারও হতাশা। তবে ভাল কিছু শুরুর আগে বাধা বিপত্তি আর হতাশা মনে হয় একটা শুভ লক্ষণ, হলোও তাই। তবে দ্বিতীয় বারে মন্তব্যে মন্তব্যে ভরে উঠে ব্লগের পাতা। অনেকে সশরীরে আসতে না পারলেও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলো।
অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হল। ৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৩ তে শুরু হল এক নতুন পথচলা। আর থামতে হয়নি, দিন দিন বেড়েই চলছে আমাদের আড্ডা প্রেমীদের সংখ্যা। প্রান সঞ্চার হচ্ছে নানান বিষয়ের আলোচনায়। কি নেই আমাদের এই আড্ডার আলোচনায়? শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধূলা সব সব নিয়েই আমাদের এই আড্ডা জমে উঠে মাসের শেষ শুক্রবার। অনেকে মনে করেছিলেন এখানে নীরস সাহিত্য আড্ডা হবে, কিন্তু আড্ডা কি আর বিষয়কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে? সাহিত্যকে ছাপিয়ে চলতে থাকে জীবনের আড্ডা।
প্রথম আড্ডায় আমরা একত্রিত হয়েছিলাম ছবির হাটে। এরপর থেকে নিয়মিত ভাবে এই আড্ডা চলতে থাকে পাবলিক লাইব্রেরির চত্ত্বরে। গোল হয়ে দাঁড়িয়ে, কখনো বসে চলে আমাদের আড্ডা। সেই আড্ডায় যোগ দিতে সুদূর যশোর থেকে উপস্থিত হতেন ইফতি ভাই। যিনি কেবল ভালো কবিই নন চমৎকার বংশীবাদক ও। তার বাঁশির সুরের মূর্ছনায় আমাদের আড্ডা পেয়েছে এক নতুন মাত্রা।
ছবিতে ইফতি ভাই বাঁশি বাজাচ্ছেন।
এই আড্ডাকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে দুটি প্রবন্ধ। আর এই প্রবন্ধ দুটিই লিখেছেন আমাদের সাহিত্য আড্ডার সম্মানিত এ, টি, এম মোস্তফা কামাল ভাই। কামাল ভাই আমাদের আড্ডার যে শুধু মধ্যমনি এমন নয়, আসলে তিনি আমাদের আড্ডার বটবৃক্ষ। আমরা যারা আড্ডা পাগল নবীন তরুণ তাদের কান্ডারী হলেন আমাদের কামাল ভাই। আমরা তার কাছ থেকে শিখি, অনেক অজানা কিছু জিজ্ঞাস করে জেনে নিই। তার জ্ঞানের সুধায় তৃপ্ত করি নিজেদের। কি পড়তে হবে, কি পড়া হয়নি, কি পড়া একান্ত উচিত, এমন সব অনেক বিষয়ে আমাদের এই নবীন তরুনদের পথ প্রদর্শক এ, টি, এম মোস্তফা কামাল ভাই। তাই তিনি ছাড়া আড্ডাকে অসম্পূর্ণ মনে হয়।
ছবিতে এ, টি, এম মোস্তফা কামাল ভাই।
এভাবেই চলছিলো। এরপর চলে এলো ফেব্রুয়ারি মাস। আর সারা মাস জুড়ে চলে ঢাকার একুশে বইমেলা। আড্ডা চলে এলো বইমেলায়। বই দেখা আর আড্ডা দেয়া। এই মাসে কেবল শেষ শুক্রবারে আড্ডা নির্দিষ্ট ছিলোনা। আড্ডা চলতে থাকে প্রায় প্রতিদিন। কেউ বই মেলায় এলে, মুঠোফোনের কৃতিত্বে অন্য কে কে আসছে এই জেনেই শুরু হয়ে যায় আড্ডা। তেলে ভাজার সাথে সাথে চলতে থাকে চায়ের কাপে ঝড়। কে আসছে, কে খাচ্ছে, কে বিল দিচ্ছে এই সব এর কে খোঁজ রাখে। কেবল চলতে থাকে আড্ডা।
এরপর এক সময় বই মেলাও শেষ হয়। কেমন যেন ঝিমানো ভাব চলে আসে আমাদের মাঝে। এক সাথে এতো বার দেখা হয়েছে বইমেলায় যে, সবার যেন একটা ক্লান্তি ভাব চলে এসেছিলো। সেই ক্লান্তি কাটাতে আবার শুরু হয় আড্ডা। তবে নতুন জায়গায়। ৩৫ বছর পার করে উদ্বোধন করা হয় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নতুন ভবন। এই উপলক্ষ্যে আমি (সজীব) আর দুর্জয় ভাই আগে একবার ঘুরে আসি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের নতুন ভবন। দেখে এতো মুগ্ধ হই যে প্রায় দুজনে মিলেই সিদ্ধান্ত নিই এর পরের আড্ডা হবে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ক্যাফেটারিয়ায়। নবম তলায় খোলা ছাদে, শেষ বিকেলে রোদ মেখে মেখে চলতে থাকে আমাদের আড্ডা। সাহিত্য আড্ডার জন্য এমন একটা পরিবেশ না হলে কি হয়? আশা করা যাচ্ছে, এরপর থেকে আমাদের আড্ডা এই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ক্যাফেটারিয়াতেই হবে।
প্রথম আড্ডার পর আমরা বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছিলাম, সেগুলো হলোঃ
১) সাহিত্য-আড্ডা গ্রুপের সদস্যগণ নিজেদের লেখার পারস্পরিক খোলামেলা সমালোচনা করবেন। সে সমালোচনাকে অবশ্যই ইতিবাচক ও গঠনমূলক হতে হবে।
২) গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ যারা লেখেন অর্থাৎ যারা সাহিত্য চর্চা করেন তারাই এই গ্রুপের সদস্য হতে পারবেন।
৩) সদস্যকে অবশ্যই সমালোচনা হজম করার মতো সাহস ও ইচ্ছা থাকতে হবে। কারণ সমালোচনা হবে কঠোর। মোটেই নরম ধরণের নয়। সুতরাং যার গন্ডারের চামড়া নেই তার এই গ্রুপের সদস্য হওয়ার প্রয়োজন নেই।
৪) মাসে অবশ্যই কমপক্ষে একদিন সাহিত্য-আড্ডার আড্ডা হবে এবং সেটা প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে। এছাড়াও আড্ডা হতে পারে যে কোনো দিনই। সদস্যদের কয়েকজন একত্রিত হতে পারলেই তারা সাহিত্য-আড্ডার ব্যানারে আড্ডা দেবেন এবং সে বিষয়ে গ্রুপে পোস্ট দেবেন। তবে মূল আড্ডা ঐ শেষ শুক্রবার।
৫) গ্রুপের সদস্যরা নিয়মিত গ্রুপে পোস্ট দেবেন। আগে থেকেই ঠিক করা থাকবে কে পোস্ট দেবেন। তিনি পোস্ট দিলে সবাই সেটার সমালোচনা করবেন।
৬) এই গ্রুপটা লেখার প্রশংসা অর্জনের জন্য নয়। এটা লেখার খুঁত খুঁজে বের করার জন্য। প্রশংসা আমরা অন্য জায়গা থেকে অর্জন করে নেব। এবং বাইরে থেকে প্রশংসা অর্জিত হবেও যদি সদস্যগণ সমালোচনার মাধ্যমে বের হয়ে আসা খুঁতগুলো দূর করে নিতে সচেষ্ট হন।
৭) এই গ্রুপ দলাদলির উর্ধ্বে থেকে কাজ করে যাবে। অর্থাৎ সাহিত্য-আড্ডা দলাদলিমুক্ত একটি দল।
প্রকাশনা
যাইহোক পথ পরিক্রমায় নতুন কিছু করতে আমরা সকলে খুবই আগ্রহী। সে ধারাবাহিকতায় জানুয়ারি ২০১৪ এর আড্ডায় আমাদের সকলের প্রিয় ব্লগার ঘুড্ডির পাইলট ভাই একটা প্রস্তাব রাখেন যে আড্ডা কেন্দ্রিক একটা সাহিত্য প্রকাশনার ব্যবস্থা করার। প্রথমত সবকিছু ব্যক্তিগত ভাবে করার পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীতে তা নানাবিধ সমস্যায় আর হয়ে উঠেনি। একটু খুলেই বলা যাক। প্রথম চিন্তা ছিলো আমাদের সাময়িকী হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু। যেমনঃ আমরা ফটোকপি মেশিনে আমাদের লেখাগুলোকে ছাপিয়ে নিজেরা তৈরি করবো হাতে। কিন্তু বাস্তবতা আমাদের সে পথ থেকে সরিয়ে আনে। লেখা জমা হয় অনেক। এতো এতো লেখাকে ফটোকপি মেশিনে ছাপিয়ে সাময়িকী করা এই দুরূহ কাজ। আমরা মনে করেছিলাম সর্বোচ্চ তিন ফর্মা হবে। কিন্তু এতো ভালো ভালো লেখা জমা হয় যে বাধ্য হয়ে প্রত্যেকের একটার বেশি লেখা দেয়া ছাড়া উপায় ছিলো না। টাইপ করে দেখা যায় প্রায় ছয় ফর্মা হয়ে যাচ্ছে। এতো বড় একটা কাজ প্রথমেই আমাদের একটু হতভম্ব করে দেয়। কাচি চালাতে যেয়ে আমাদের হৃদয় টুকরো টুকরো হয়েছে। বিশেষ করে এখানে ঠাঁই হয়নি এ, টি, এম, মোস্তফা কামাল ভাইয়ের একটা প্রবন্ধ। যা আমাদের সত্যি পীড়া দিয়েছে।
তাই, আজাদ ভাইয়ের পরামর্শে সিদ্ধান্ত হয় সাময়িকী হবে ছাপানো। এই ছাপাতে যাওয়ার হ্যাপা পোহাতে এতো দেরী হলো। বইমেলা উপলক্ষে প্রথম প্রকাশের ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। তার উপর সামনে ছিল ফেব্রুয়ারী মাস তাই আমাদের প্রকাশনার কাজটা অনেক পিছিয়ে যায়। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে প্রকাশিত হয় আমাদের আড্ডা কেন্দ্রিক প্রথম প্রকাশনা “সাহিত্য আড্ডা”র প্রথম সংখ্যা।
সময়টা বড্ড বেশি লেগে গেছে। অনেকে মনে করেছেন হয়তো শুধু সবকিছু পরিকল্পনাই থেকে যাবে, কিন্তু সকলের ঐকান্তিক ইচ্ছাই নিয়ে গেছে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে। যারা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলাম তারা সকলেই চাকরিজীবী। সে জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি এবং অনভিজ্ঞতার ও একটা ব্যাপার ছিল যে কারনে পত্রিকায় কিছু ভুল ভ্রান্তি রয়ে গেছে, আশা করি আপনারা প্রথমবারের মতো বিষয়গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তী সংখ্যা গুলোতে আমরা এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠবো। প্রথম সংখ্যা যত পরেই প্রকাশিত হোকনা কেন, তা ফেব্রুয়ারি সংখ্যাই। এখানে তো আর বাণিজ্য হচ্ছেনা। আমরা আমরাই তো। তাই না!
মুল পরিকল্পনাকারী ব্লগার ঘুড্ডির পাইলট ভাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই কুহক মাহমুদ ভাই, কামাল ভাই ও সেলিম আনোয়ার ভাইকে।
প্রথম সংখ্যায় যাদের লেখা এসেছেঃ
কবিতা
গোপন নৈরাজ্যে গেয়ে ওঠা নিরাশার গান!-স্বপ্নবাজ অভি
তালাশ- সেলিম আনোয়ার
মুদ্রিত মৃত্যু সংবাদ-আহমেদ আলাউদ্দিন
অতীন্দ্রিয় অনুভুতিতে তুমি ও একাকী আমি-সায়মা
ফাগুন-সকাল রয়
অগোছালো মেয়ে-০৩-আরমান ভাই
উপহার-মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সজীব
প্রলয়বৃত্ত – ১-আশরাফুল ইসলাম দূর্জয়
গল্প নয় সত্য, কাব্য নয় বিষাদ-মাহবুবুল আজাদ
তোমাদের সন্তান-মাহমুদুল হক ইফতি
প্লাস্টিকের হাতুরি-শাহেদ খান
যে রাতে মৃত্যুই আনন্দ-শাপলা নেফারতিথী
প্রবন্ধ
বাঙ্গালা শের-এ টি এম মোস্তফা কামাল
গল্প
অনিশ্চিত -অপর্ণা মম্ময়
পুতুল খেলা ও একজন ভার্চুয়াল স্রষ্টা- কাল্পনিক ভালবাসা
অপচয়- জুলিয়ান সিদ্দীকী
ফেরা- মাহতাব সমুদ্র
ফাঁদ- মাহমুদ রহমান
প্রতিশোধ- ঘুড্ডির পাইলট
অন্তঃসত্তা জেনি এবং আমরা অবাক মানুষেরা- লুমেন হোসেন
লতা ও পুই লতার আত্মকথন- সাদিয়া সুলতানা
মিতিন ও আমি- হাসান মাহবুব
যাদের লেখা প্রকাশ হয়েছে তারা এক কপি সৌজন্য সংখ্যা পাবেন। এটি একটি ত্রৈ-মাসিক প্রকাশনা হবে। সমৃদ্ধ থাকবে আপনাদের গল্প কবিতায়। যারা এর কপি পেতে চান তারা চলে আসতে পারেন আমাদের সাহিত্য আড্ডায়। ডাকে পেতে যোগাযোগ করুনঃ
মাহবুবুল আজাদ ০১৯১৯ ৮২ ৩৩ ৫৪
মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সজীব: ০১৬১৯ ৫১ ৮৯ ৩৪
আর লেখা পাঠানোর জন্য ই-মেইল করুন : [email protected]
[email protected]
মূল্যঃ ৪০ টাকা মাত্র। তবে যারা ডাক যোগে পেতে চান তাদের অন্ততঃ ৫০ টাকা বিকাশ করতে হবে। নাম ঠিকানা উপরের নম্বরে এস এম এস করে জানিয়ে বিকাশ করবেন। প্রয়োজনে ফোনে নিশ্চিত হয়ে নিন।
একই সাথে পরবর্তী সংখ্যার জন্য লেখা আহ্বান করা হচ্ছে। আশা করছি, প্রথমবারের মতো এবারেও অনেকেই লেখা পাঠিয়ে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াশকে স্বার্থক করে তুলবেন।
পাঠকও আমাদের লেখক, লেখকও আমাদের পাঠক।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৭