somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা একটা অজ্ঞাতনামা ঘৃণ্য নরপিচাশ রাজাকারকে খুজতেছি ...

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"অষ্টাদশী ভাগীরথী ছিল বরিশাল জেলার পিরোজপুর থানার বাঘমারা কদমতলীর এক বিধবা পল্লীবালা। বিয়ের এক বছর পর একটি পুত্র সন্তান কোলে নিয়েই তাকে বরণ করে নিতে হয় সুকঠিন বৈধব্য। স্বামীর বিয়োগ ব্যথা তার তখনও কাটেনি। এরই মধ্যে দেশে নেমে এল ইয়াহিয়ার ঝটিকা বাহিনী। গত মে মাসের এক বিকালে ওরা চড়াও হলো ভাগীরথীদের গ্রামে। হত্যা করলো অনেককে যাকে যেখানে যেভাবে পেলো।

এ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ভাগীরথীকে ওরা মারতে পারলো না। ওর দেহলাবণ্য দস্যুদের মনে যে লালসা জাগিয়েছিল তাতেই হার মানল তাদের রক্ত পিপাসা। ওকে ট্রাকে তুলে নিয়ে এল পিরোজপুরে। তারপর ক্যাম্পে তার উপর চালানো হলো হিংস্র পাশবিক অত্যাচার।

সতী নারী ভাগীরথী। এ পরিস্থিতিতে মৃত্যুকে তিনি একমাত্র পরিত্রাণের উপায় বলে ভাবতে লাগলেন। ভাবতে ভাবতেই এক সময় এল নতুন চিন্তা- হ্যাঁ মৃত্যুই যদি বরণ করতে হয় ওদেরই বা রেহাই দেব কেন? ভাগীরথী কৌশলের আশ্রয় নিল এবার।
এখন আর অবাধ্য মেয়ে নয় দস্তরমত খানদের খুশী করতে শুরু করল, ওদের আস্থা অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগলো। বেশীদিন লাগলো না, অল্প কদিনেই নারী লোলুপ ইয়াহিয়া বাহিনী ওর প্রতি দারুণ আকর্ষণ অনুভব করল। আর এই সুযোগে ভাগীরথী ওদের কাছে থেকে জেনে নিতে শুরু করল পাক বাহিনীর সব গোপন তথ্য। এক পর্যায়ে বিশ্বাস ভাজন ভাগীরথীকে ওরা নিজের ঘরেও যেতে দিল। আর কোন বাঁধা নেই। ভাগীরথী এখন নিয়মিত সামরিক ক্যাম্পে যায় আবার ফিরে আসে নিজ গ্রামে।

এরই মধ্যে চতুরা ভাগীরথী তাঁর মূল লক্ষ্য অর্জনের পথেও এগিয়ে গেল অনেকখানি। গোপনে মুক্তি বাহিনীর সাথে গড়ে তুলল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। এরপরই এল আসল সুযোগ। জুন মাসের একদিন ভাগীরথী খান সেনাদের নিমন্ত্রণ করলো তাঁর নিজ গ্রামে।
এদিকে মুক্তি বাহিনীকেও তৈরী রাখা হলো যথারীতি। ৪৫ জন খান সেনা হাসতে হাসতে বাগমার কদমতলা (ভাগীরথীর) নিমন্ত্রণ খেতে এসেছিল কিন্তু তার মধ্যে ৪/৫ জন ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছে বুলেটের ক্ষত নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে। বাকিরা ভাগীরথীর গ্রামেই শিয়াল কুকুরের খোরাক হয়েছে।

এরপর আর ভাগীরথী ওদের ক্যাম্পে যায়নি। ওরাও বুঝেছে, এটা তারই কীর্তি। পাক আর্মিরা তাই হুকুম দিল জীবিত অথবা মৃত ভাগীরথীকে যে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে নগত এক হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। কিন্ত ভাগীরথী তখনও জানতো না ওর জন্য আরও দুঃসহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। একদিন রাজাকারদের হাতে ধরা পড়লো ভাগীরথী। তাকে নিয়ে এল পিরোজপুর সামরিক ক্যাম্পে।

খান সেনারা এবার ভাগীরথীর উপর তাদের হিংস্রতার পরীক্ষার আয়োজন করলো। এক হাটবারে তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাঁড় করানো হলো জনবহুল চৌমাথায়। সেখানে প্রকাশ্যে তার অঙ্গাবরণ খুলে ফেলল কয়েকজন খান সেনা। তারপর দু’গাছি দড়ি ওর দু’পায়ে বেঁধে একটি জীপে বেঁধে জ্যান্ত শহরের রাস্তায় টেনে বেড়াল ওরা মহাউৎসবে।
ঘন্টাখানেক রাজপথ পরিক্রমার পর আবার যখন ফিরে এল সেই চৌমাথায় তখনও ওর দেহে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। এবার তারা দুটি পা দুটি জীপের সাথে বেঁধে নিল এবং জীপ দুটিকে চালিয়ে দিল বিপরীত দিকে। ভাগীরথী দুভাগ হয়ে গেল।

সেই দুভাগে দু'জীপে আবার শহর পরিক্রমা শেষ করে জল্লাদ খানরা আবার ফিরে এল সেই চৌমাথায় এবং এখানেই ফেলে রেখে গেল ওর বিকৃত মাংসগুলো। একদিন দু’দিন করে সে মাংসগুলো ঐ রাস্তার মাটির সাথেই একাকার হয়ে গেল এক সময়। বাংলামায়ের ভাগীরথী এমনি ভাবে আবার মিশে গেল বাংলার ধুলিকণার সাথে…।"

(বর্বরতার রেকর্ড, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, অষ্টম খন্ড)

আমাদের দেশে ভাগিরথীদের মত মানুষদের আত্মত্যাগের কথা জানতে আমরা খুব একটা আগ্রহ বোধ করি না, মিডিয়াও না। এই দেশে স্বাধীন করে ফেলেছেন এমন গুটিকয়েক নাম বলে বলে সময় কোথায় আমাদের!
ভাগীরথীর সম্বন্ধে আমি জানতে পারি সম্ভবত ২০০৫ সালে। ২০০৬ সালে এই লেখাটা যখন আমি আমার কয়েদী বইয়ে উল্লেখ করেছিলাম তখন আমার বিপুল তথ্যের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বিশেষ তথ্য হাতে ছিল না। এখনকার মত কয়েক বছর পূর্বেও ব্লগস্ফিয়ারে মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত তেমন উল্লেখ করার মত তথ্য ছিল না।

এই এক অভাগা দেশ, এখানে মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত বইপত্রের দাম সুলভে থাকাটা যুক্তিযুক্ত অথচ একেকটা বইয়ের দাম আগুনসম।
আমার মনে আছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের এবং অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত বইপত্রের প্রায় পনেরো হাজার ফটোকপি করেছিলাম। উপায় ছিল না। নৈতিকতা-অনৈতকতা নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় তখন আমার ছিল না। আগেই উল্লেখ করেছি, ব্লগস্ফিয়ারে তখন তেমন কোনো তথ্যই ছিল না, অন্তত বাংলা ভাষায়।

তো, গতকাল আমার মাথায় বিষয়টা আসে, ভাগিরথীকে রাজাকাররা ধরিয়ে দিয়েছিল, বেশ। কিন্তু আমরা কোথাও এই রাজাকারের নাম জানতে পাই না। কারণ আছে, তখন মুক্তিযুদ্ধের পর সঠিক ইতিহাসের কাজ শুরু হয়েছিল বটে কিন্তু পরে আর এগুতে পারেনি! তাছাড়া ওই সময় হয়তো এই রাজাকারদের নাম নিয়ে আসার বিষয়ে কেউ তেমন করে ভাবেননি।
এমন কি আমি নির্বোধের মাথায়ও কখনও আসেনি ভাগিরথীকে যারা ধরিয়ে দিয়েছিল, ওই রাজাকার কে-কারা ছিল। এই নিয়ে এখন নিজের প্রতিও আমার ক্ষোভ আছে। কেন বিষয়টা পূর্বে আমি লক্ষ করলাম না!

ভাগিরথীর ঘটনাটা পিরোজপুরে। যুদ্ধের সময় পিরোজপুরেই ছিলেন অতি সজ্জন (!) এক ব্যক্তি যিনি রাজাকারের সর্দার হিসাবে যথেষ্ঠ কুখ্যাত ছিলেন। আমরা সবাই জানি (কেবল আসিফ নজরুল ব্যতীত) তিনি হচ্ছেন, আমাদের মহান মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এহেন কোনো অপকর্ম নাই যা তিনি করেননি। ভাগিরথীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ১০০০ (তৎকালীন হিসাবে বিপুল টাকা) টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করা হবে আর মাওলানা সাহেব ঝিম মেরে বসে থাকবেন এ আমার বিশ্বাস হয় না। যে সাঈদী মানুষের ঘরের টিনটা পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে।

আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছি, কোনো এক সূত্রের কল্যাণে বের হয়ে আসবে সেই অজ্ঞাতনামা রাজাকারের নাম...।

লেখকের অনুমতি ক্রমেঃ মুল পোস্ট

পিরোজপুরের ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×