বিখ্যাত বিটলস ব্যান্ডের জন লেনন যখন স্কুলে পড়েন তখন স্কুল থেকে একবার একটা রচনা লিখতে দেওয়া হল ; প্রসঙ্গ- জীবনে কি হতে চাও ? ক্লাসের সবাই স্বাভাবিক ভাবেই ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার , পাইলট , প্রেসিডেন্ট এসব হতে চাওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে রচনা লিখে জমা দিলো । জন লেনন ওসবের কিছুই লিখলেন না , তিনি লিখলেন আমি জীবনে সুখি হতে চাই । এই লেখা দেখে শিক্ষক তাকে ডেকে বললেন যে জন লেনন সম্ভবত রচনাটার মানেই বুঝতে পারেন নি ।
জবাবে জন লেনন শিক্ষককে বললেন- “ আপনি সম্ভবত জীবনের মানেই বুঝতে পারেন নি । “
সুখি হওয়ার ইচ্ছাটা সবারই । আর মধ্যবিত্ত পরিবারের সুখ আসতে খুব আহামরি কিছু লাগেও না । এসব পরিবারের মায়েদের দিন কাটে রান্না ঘরে । তিনি জন্মেছেন বাবার বাড়ি , আর বিয়ে হওয়ার পর চলে এসেছেন স্বামীর বাড়ি । জীবনে পরিবর্তন বলতে তার এটুকুই । তিনি হয়তো কখনো সমুদ্র দেখেন নি, সব কাজ থেকে কিছুদিনের জন্য ছুটি নিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাসও ফেলেন নি । তার টাইয়ের নট বাঁধার মতো জটিল কাজ শেখার প্রয়োজন পড়ে না । তার জীবন ছকে বাঁধা ,চিন্তার জগত খুব সংকীর্ণ; রান্নায় লবন বেশী হয়ে গেলো না তো ? তেল কি মাস শেষ হওয়ার আগেই ফুরিয়ে যাবে? বিকেলে কি আজ নাস্তা বানানো লাগবে ?
বাবার আছে কেবল দায়িত্ব । সংসারে দায়িত্ব, কাজের জায়গায় দায়িত্ব, বাজারের ব্যাগের প্রতি দায়িত্ব, বাড়ির দরজা , ইট , কাঠ , সুরকির প্রতি দায়িত্ব । তার আয় সীমিত । ঘুম ভাঙ্গে খুব সকালে । কাজে যাওয়ার আগে দরজার কাছে গিয়ে হঠাৎ ঝুঁকে পড়ে তিনি সঙ্গিনীকে চুমু খান না , বরং তাড়া থাকে দেরী না হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে । মাস ভালো মতো ফুরোবার আগেই তার হাত খালি হয়ে যায় । তখন তিনি কিছুটা বিষণ্ণ মুখে ঘুরে বেড়ান । সম্ভবত তিনিই পরিবারের সবচেয়ে একা মানুষ, নিঃসঙ্গ শেরপা । সারা জীবন তিনি কেবল কষ্টই করে যান , নিজ ছাড়া আর সবার জন্য । কিন্তু তার অবদানের মূল্যায়ন খুব কমই হয় ।
ছেলে-মেয়েগুলোর মধ্যে প্রায়শই বিপরীতমুখি চরিত্র দেখা যায় । এরা খুব অল্প বয়সে জেনে যায় বেশিরভাগ চাওয়াই পূরণ হওয়ার মত না , কিন্তু মনে মনে স্বপ্ন দেখে আকাশ ছোঁয়ার । বয়স বাড়ে , কমতে থাকে স্বপ্নের পরিধি, রঙ । তখন মনে জন্মায় অভিমান । কেন বাবার অনেক টাকা নেই ? কেন আশেপাশের কিছু অপদার্থ মানুষ কেবল বাবার টাকা আছে বলে আরাম, আয়েশ, স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন পার করবে ? মনে ক্ষোভ থাকে , কিন্তু এরা অভিযোগ করে না । ...... জীবনের সামনে এদের খুব দ্রুত দাড়াতে হয় । এরা সকালে উঠে বিছানার পাশের বেল বাজিয়ে বাসি মুখে মর্নিং টি আনিয়ে খায় না । জামা কেনে একটা নষ্ট হলে আরেকটা । মানি ব্যাগে টাকার চেয়ে থাকে কাগজের পরিমাণই বেশী । মনে মনে হয়তো কাউকে খুব গভীর ভাবে ভালোবাসে , কিন্তু ভেতরের জটিলতার জন্য প্রিয় মানুষের খুব কাছে যায় না । এরা কল্পনা বিলাসী হয়েও বাস্তববাদী । এরা স্বপ্ন দেখে । দেখতে হয় , নিজের অবস্থাকে একটু সহনীয় করে নেওয়ার জন্যেই ।
মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো আসলে “ একদিনের “ অপেক্ষায় থাকে , যে একদিনে সব কিছু বদলে যাবে । এই “ একদিন “ খুব বিপদজনক শব্দ ; সম্ভবত “ কোনদিন নয় “ এরই এক নামান্তর । তারাও সেটা জানে , কিন্তু তা মানতে রাজী না ।
স্বপ্ন যারা দেখতে জানে , স্বপ্ন পূরণ হওয়ার অধিকার কেবল তাদেরই হওয়া উচিত । সব মধ্যবিত্তর ঐ “ একদিন “ সত্য হোক ।