স্কুল লাইফের এক বান্ধবী , মাস খানেক আগে বিয়ে করেছে পেয়েছিলাম । সেদিন রাস্তায় দেখা । আমি তখন এক হকারের সাথে একটা গেঞ্জি দামাদামি করছিলাম । ১৫০ টাকার জিনিস চাচ্ছিল ৪০০ টাকা , তাও নাকি আবার একদাম । হকারের উদাস উদাস চেহারার দিকে চোখ সরু করে তাকিয়ে নিবিষ্ট মনে ভাবছি হকারকে ঝাড়াঝাড়ি স্কেলে কতো মাত্রার একটা ঝাড়ি দেওয়া উচিত, কিন্তু সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছিল না । এমন সময় শুনি ডাক , “ খা লি দ !! “
এমন আকুল হয়ে কে আমাকে ডাকছে দেখতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম । দেখি রাস্তার ওপাশের আইলেন থেকে সব দাঁত বের করে , প্রাণপণে বান্ধবী আমার হাত নেড়ে যাচ্ছে । বিয়ের এক মাসেই সে মাশআল্লাহ্ দৈর্ঘ্যে – প্রস্থে সমান হয়ে যাওয়ার রাস্তা ধরে ফেলেছে ( এমনটা অনেকের বেলায়ই দেখি । রহস্যটা কি? )
গেলাম । এই কথা, ঐ কথা, সেই কথা । মেয়েরা সম্ভবত বিয়ে নিয়ে খুশি থাকলে তাদের জগতটাই বদলে যায় । আলাপের প্রধান বিষয়বস্তুই হয়ে যায় জামাই , শ্বশুর , শাশুড়ি , দেবর – ননদ বা জামাইয়ের জন্য নাস্তা বানানো, অফিসের ব্যস্ততা ইত্যাদি । আমি শুনছিলাম, নিতান্ত ভদ্রতা বশত হাই তুলছিলাম না । কথায় কথায় কথা বের হল যে সে সম্প্রতি হানিমুন সেরে ফিরে এসেছে এবং আমার জন্য নাকি গিফটও নিয়ে এসেছে । এবার আমার মনে বেশ আগ্রহ জাগে
- কই গেছিলি রে ?
- দার্জিলিং দোস্ত ।
- কি করলি হানিমুনে গিয়া ? বলতো শুনি একটু ।
- মানে কি?!!?
( বান্ধবী বিশাল অবাক । চোখ দুটো গোলগোল হয়ে গেছে । )
- মানে হানিমুনে গিয়ে কি কি করলি দুইজন ?
- বান্দরামি ছাইড়া দিয়া মানুষ হ বুঝসস । দিনদিন বড় হইতাসস আর ফাঁতরের শেষ সীমানা হইতাসস ।
বলে সে লাফ দিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়া এক রিকশায় উঠে বসলো ।
আচ্ছা, আপনারাই বলেন – দার্জিলিং গিয়ে কতো কিছুই তো করা যায় । কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়, পাহাড়ে ওঠা যায়, হ্রদে নৌকা চালানো, বনফায়ার করা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি । ব্যাখ্যায় আর গেলাম না, সেসব না বুঝে বান্ধবী কি বুঝেছিল আশা করি আপনারাও বুঝেছেন ........ কলুষিত মনমানসিকতা ! এজন্যই জাতির ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘোর অমানিশা . এমন বান্ধবী কি জাতি চেয়েছিল ?
আমি তাকে পেছন থেকে গলা ফাটিয়ে ডাক দিতে থাকি - “ ঐ যাস গা কেন ? আমার গিফট কবে দিবি ?? ঐ ঐ ঐ ......... !!!
আফসোস ! সেই ডাক সমগ্র বাংলাদেশ ছড়িয়ে গেলেও, তার কান দিয়ে আর ঢুকলোই না