একটা কবিতা লিখতে চাই।
আমি-তুমি'র কবিতা হতে পারে,অথবা ব্যর্থতার,বা নিসর্গের। বিপ্লবের কি সাম্যের কবিতা হলেও সমস্যা নেই।
কিন্তু একটা কবিতা লিখতেই হবে।
এমন একটা হিরন্ময় কবিতা,যেটা বছরের পর বছর কবিরা পড়বে,
সুশীলেরা ব্যাখ্যা দেবে,সাধারণে বিস্ময়ে ভুরু তুলে তাকাবে।
হয়তো কোন প্রেমিক তার প্রেমিকার হাত ধরে শোনাবে,অথবা টিএসসিতে কোন রক্তগরম সদ্যতরুণ বক্তৃতামন্চে গর্জন করে ইশতেহারে ওঠাবে।
তাই শুরু করে দিই,কবিতা লেখার যুদ্ধযাত্রা।
কিন্তু কোন ছন্দে লিখবো?
অক্ষরবৃত্ত? মাত্রাবৃত্ত? স্বরবৃত্ত?
ঝামেলা। সেই ব্যাকরণ ক্লাসে ছাড়া তো আর পড়িনি,
বাংলা আর পড়তে হবে না ভেবে যে লাফটা দিয়েছিলাম কলেজের শেষ পরীক্ষায়,এখনো মনে আছে।
পড়া হলো না,জানাও হলো না এ জীবনে আর ছন্দের সমীকরণ।
নিজেকে কবি ধরে নিই এই মুহূর্তে,তাতে সংশয় কমে যায়,
কবি যা লিখবে তাই কবিতা,একটু দাড়ি-গোঁফ আছেই ব্যস্ততার অজুহাতে,শাহবাগের বাজারে চেহারাতে মানিয়ে যাবো অন্তত।
অনুপ্রেরণা দরকার এবার।
প্রেম করতে পারিনি,তবে হতাশা আছে অনেক,একটা কবিতা
হয়েই যাবেনা?
দুঃখে নাকি কবিতা পুড়ে খাঁটি হয়?
বাজে কথা,তাহলে নিরন্ন মানুষের হাহাকারগুলো কবিতা হয়ে
একুশের বইমেলাতে হুমায়ুনের অটোগ্রাফের সারির চেয়ে
হাজার গুণ বড় হতো।
যাক,সুখের কবিতাই লিখি বরং,ভালোবাসার,মমতার।
মা যখন থালায় করে ভাত নিয়ে এল,মায়ের মুখে তাকিয়ে ভাবলাম,এ জীবনে কিছুই দেয়া হলোনা,একটা কবিতা দেব নাকি?
কিন্তু ধরিত্রীর মত সর্বংসহা আমার মা কে সাজানোর মত
মহত কোন শব্দ খুঁজে পেলামনা,
কবিতার শব্দভাণ্ডারে টান দিয়ে শব্দের অভিশাপ নেয়ার দুঃসাহস দেখানোর চেয়ে সীমান্তে থেমে যাওয়াই ভালো।
বাবাকে নিয়ে লিখবো? ঊর্ধ্বগতির বাজারে প্রতিদিন অক্লান্ত খেটে চলা মানুষটাকে দেখলে কবিতা লেখা ছেড়ে যে ঠেলাগাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে ইচ্ছা করে,তাতে যদি আমার অপরাধবোধ একটু কমে!
তারচেয়ে,ভাতের থালার ভাজা মাছটাকে নিয়ে লিখলে কেমন হয়? কাঁটাময় একটা কবিতা,ক্যাকটাসের মত?
মাছের দামটা মনে পড়তেই অবশ্য কবিতার শব্দগুলো
সন্ধি-সমাস সহ দৌড় দিয়েছে,
ভাবছি মাছটাকেই বাঁধাই করে বইয়ের স্টলে তুলে দিই।
একটা লিরিক লিখতে চাই। গানের। সুর দেয়া হবে। সহজ,সুন্দর,মেলোডিয়াস। রাসেলের ফরমাশ,সুর দিয়ে গান গাইবে,কি দারুণ গানের গলা ছেলেটার,আর গিটারের হাত,প্রকৌশলী হতে গিয়ে টুংটাং সুরটাকে মাটিচাপা দিয়ে দিল।
গিটার ভাত দেবে না,ইট-কাঠ-ড্রয়িংয়ের জটিল হিসাব জীবনে প্রতিষ্ঠার সাথে একজন সুন্দরীও জুটিয়ে দেবে হয়তো।
শব্দের সমুদ্র হাতড়ে ফিরি মোহময় গানের খোঁজে,
যে গান হয়তো কোন কিশোরীর হৃদয়ে দোলা দিয়ে আমার পকেটের দৈন্যদশার পাপ ঢেকে দেবে,হোক না বন্ধুর সুরে।
আসে না।
উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে চন্চ্ঞল ডলফিনের মত শব্দগুলো হারিয়ে যায়,আর নাক কুঁচকানো কারো কথা মনে করলে রোমান্টিকতা আসা একটু কঠিন বৈকি,কারণ পকেটটা আমার এখনো হালকাই আছে,আর ভবিষ্যতটা আগের চেয়েও অনিশ্চিত।
তো রাসেল,অপেক্ষায় থাকো,নয়তো নিজেই লিখে নাও,আমি
যতদিন না কবিদের মত শান্ত জলাশয়ে কবিতার মাণিক্য খুঁজে না পাই,ততদিন অবশ্য তোমার হতেও পারে প্রেমিকা অপেক্ষা করবে নাকি আমার কোন এক অতীতের মতই মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে জানি না।
তবে আমার তো কবিতা লিখতেই হবে। একটা কালজয়ী,বা খুব সাধারণ গ্রাম্য কবিতা।
সে কবিতা আমাকে খ্যাতি দিতে পারে,হয়তোবা অর্থও,
অথবা ২-১টা অভিনন্দন পত্র,
বা কারো মিষ্টি মুখের টুকরো হাসি,একুশের স্টলে ১টা বই,ঝকঝকে ছাপা,ব্যাক কাভারে আমার দেড়েল আঁতেল ছবি,
কিন্তু আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেবে,অস্থির রাতে চরকি ঘুরে আমাকে পংক্তির খোঁজে হাঁটতে হবেনা।
কবিরা খুব সুখী মানুষ হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৪