আজ ১৫ ডিসেম্বর। সাধারণভাবে দেখতে গেলে দিবসটির বিশেষ কোন গুরুত্ব নেই, কিন্তু দেশ-বিদেশের যেসব বাংলা ভাষাভাষী ব্লগিংয়ের সাথে জড়িত, তাদের কাছে সামান্য হলেও দিনটির একটি তাৎপর্য থেকে যায়। ১৫ ডিসেম্বর প্রথম বাংলা কমিউনিটি ব্লগ হিসেবে সামহোয়্যারইন ব্লগ তার যাত্রা শুরু করে। শুরুতে ১০০ জনেরও কম ব্লগার নিয়ে শুরু করা সাইটটটির বর্তমান নিবন্ধিত সদস্যই ৩৮,০০০। কিন্তু এরচেয়েও বড় কথা হলো, সামহোয়্যারইন ব্লগের শুরু করা কমিউনিটি ব্লগিং এখন বাংলা ভাষাভাষী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলা ব্লগিংয়ের জগতে আবির্ভূত হয়েছে সচলায়তন, প্রথম আলো ব্লগ, আমারব্লগ, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ। প্রতিটিই তার স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে, হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের মিলনমেলা, মত প্রকাশের মাধ্যম, হয়তো গড়ে তুলেছে অদৃশ্য আত্মার বন্ধনও।
একটা ব্যাপার স্বীকার করতেই হবে, ব্লগিং এখন আর হেলাফেলা করার মত কোন বিষয় নয়, বা চরিত্রে শৌখিন হলেও বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে মোটেই শৌখিন নয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কোন খবর বা তথ্য দরকার হলে আজকাল আর বাইরের কোন সাইটে খুঁজি না, ব্লগেই পেয়ে যাই, বা না পেলেও ব্লগারদের সাহায্য চাইলে মিলে যায়। বাংলাতে কিছু লিখে সার্চ করলেও সবার আগে এই কয়টা বাংলা ব্লগেরই কোন পোস্টের লিংক চলে আসে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলা ব্লগ মত প্রকাশের একটা বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়াবে, ব্লগাররা হয়ে যাবেন একটা গুরুত্বপূর্ণ "প্রেশার গ্রুপ"। বিশেষ করে, কর্পোরেট আর ব্যক্তিমালিকানাধীন মূলধারার মিডিয়ার জাঁতাকলে হাঁসফাঁস করা জনতার ব্লগের শরণ নেয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কাজেই, ব্লগ এখন শুধুমাত্র একটি বা দু'টি সাইট নয়, ব্লগিং এক নতুন যুগের সূচনা, সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলানোর পথে আরেকটা পদক্ষেপ। এর জন্য দরকার ব্লগিংকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া, এবং যতদূর বুঝি, "ব্লগ দিবস"-এর প্রয়োজন সেখানেই। প্রশ্নটা হলো, সেই ব্লগ দিবসটা কবে হবে? তার কার্যক্রমই বা কি হবে? ব্লগে এর মাঝেই এই নিয়ে বেশ কিছু পোস্ট চলে এসেছে, একজন সাধারণ ব্লগার হিসেবে নিজের মতামত জানানোর একটা চেষ্টা করার ইচ্ছা হলো তাই। ব্যক্তিগতভাবে, আমার মতামত সামহোয়্যারের জন্মদিনের পক্ষেই। খানিকটা পক্ষপাত আছে, অস্বীকার করি না, কারণ এখানেই আমার এবং আমার মত অনেকের ব্লগিংয়ের শুরু, এমনকি যারা এখন অন্য ব্লগ সাইটে লেখালেখি করেন বা সেগুলোর স্রষ্টা, তাদেরও যাত্রা শুরু এই ব্লগেই। যে পথ দেখায়, তাকে সেটার স্বীকৃতি দেয়ার মাঝে অগৌরবের কিছু তো দেখি না, কাজেই বাংলা ব্লগ দিবস সামহোয়্যারের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে হলে সেখানে সামহোয়্যার ব্লগের আধিপত্যের কিছু আমি অন্তত খুঁজে পাই না।
এবার দেখি, ঐ দিনটা পালনে সমস্যাগুলো ঠিক কোথায়। ১৫ ডিসেম্বর আবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু'টো দিবসের মাঝে স্যান্ডউইচ হয়ে যায়, স্বাভাবিকভাবেই, যেকোন দিবসের চেয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস বা বিজয় দিবসের গুরুত্ব বহুগুণে বেশি। এখানে ব্লগিংকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া একটা উদ্দেশ্য, কাজেই সেটা যেন সবাই গুরুত্ব দিয়েই গ্রহণ করে সেটাও দেখা জরুরী। সেজন্য সবাই উদযাপন করতে পারে, এমন একটা দিনেই ব্লগ দিবস হওয়া উচিত, এবং সেজন্য ডিসেম্বরের ৩য় বা ৪র্থ শুক্রবার (সাপ্তাহিক ছুটি, সবার উদযাপনের সুবিধা) ব্লগ দিবস পালন করা যায়, আর ১৫ ডিসেম্বরকে সামহোয়্যারের জন্মদিন হিসেবে পালন করাই শ্রেয়। আবার এর পাল্টা যুক্তি হিসেবে, অনির্দিষ্ট কোন দিনকে ব্লগ দিবস হিসেবে পালন করায় অনেকের আপত্তি আছে, প্রতি বছর দিন পাল্টে গেলেই বা কেমন লাগে? সেক্ষেত্রে, ১৬ থেকে ২৫ ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কোন একটা দিন উপযুক্ত হতে পারে, সেটা ১৮, ১৯, ২০ বা ২১ ডিসেম্বর হতে পারে, যা কিনা বাংলা ব্লগিংয়ের যাত্রা শুরুর আশেপাশেই থাকে, একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ দু'টো জাতীয় দিবসের মাঝখানে বসেও বাগড়া বাধায় না।
এবার উদযাপনের কথা বলি ২-১টা। একটা জমায়েত হতেই পারে, সাথে অনলাইনেও লেখালেখি হতে পারে সেদিন। হতে পারে, সেদিন প্রত্যেক ব্লগার তার নিজের নিজের বলয়ে ব্লগিংকে প্রমোট করবেন। একই সাথে, ব্লগিংয়ের যারা ভবিষ্যৎ, তাদের ব্লগিং সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য ব্লগারদের পক্ষ থেকে কয়েকটি দল কোন কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেন, ঠাকতে পারে লাইভ রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা এবং ব্লগে তার উপর তাৎক্ষণিক পোস্ট এবং অন্যান্য ব্লগারদের ফিডব্যাক ও মন্তব্য করার কার্যক্রম। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এমন একটি দারুণ ইন্টারঅ্যাকটিভ মাধ্যমে সরাসরি মতবিনময়ের সুযোগ তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করবেই। একটা ব্লগ দিবসে ১০টা কলেজ-ভার্সিটি থেকে যদি ৫০০ জনকেও রেজিস্ট্রেশন করানো যায়, তাদের ২০% টিকে গেলেও কিন্তু সেটা ভবিষ্যতের ভিত্তি হয়ে থাকবে।
ব্লগাররা কি একজন সামান্য ব্লগারের সামান্য কথাগুলো একটু বিবেচনা করে দেখবেন?