somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীর একরাত - ৩

২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিচিত্র হলেও সত্যি যে সাউথ সুদানের অর্থনীতি অনেকাংশেই গরু নির্ভর। গরুর সংখ্যা এখানে বিত্ত আর আভিজাত্যের নির্ধারক। যৌতুকপ্রথা এখানেও আছে। কনের বাবাকে ন্যুনতম দশটা গরু না দিতে পারলে বিয়ে হবেনা। তাই বলে ভালবাসাবাসিতে বাঁধা নেই। প্রায় অবাধ যৌনাচারের এই দেশে বিয়ের মোজেজাটা কি, সেটা জানতে চেয়েছিলাম এক স্থানীয় যুবকের কাছে। তার উত্তরে যা বুঝলাম তা হল, একমাত্র বিয়ে করলেই সে বউ পেটানোর লাইসেন্সটা পাবে, তখন আর এই কুকর্মেটির জন্য তাকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না! বৈধ হোক আর না হোক, সন্তানের যাবতীয় দায় যথারীতি মায়েদের। কাফ্রী ক্রীতদাসদের কথা আমরা অনেকেই শুনেছি। কাফ্রী মানে কালো, আরবীতে বলে সুদ বা সৌদ। সুদান যুগযুগ ধরেই ক্রীতদাসদের উৎস ছিল, অবাক করার বিষয় হল এখনও আছে!

সাউথ সুদানে গোত্র বা ট্রাইবের সংখ্যা প্রায় গোটা ষাটেক। মুখে আঁকিবুঁকি, কাটাচেরা আর উল্কি এইসব দেখে নাকি এদের আলাদা করে চেনা যায়। আমি অবশ্য আজো জাপানী আর চীনাদের তফাৎ বুঝিনা, তাই এদেরটা নিয়েও কখনও মাথা ঘামাইনি। আদি ধর্মে এরা সবাই 'এনিমিস্ট', খুব দ্রুত খ্রিস্টান আর ইহুদিতে রুপান্তরিত হচ্ছে আজকাল। প্রত্যন্ত এলাকায় এদের নগ্নতা সহজাত। দূর কাপোয়েতার রুক্ষ তপোসারা যেমন, তেমনি হোয়াইট নাইল পাড়ের তেরেকেকা কাঊন্টির আমুদে মুন্দারিরা। ভাগ্যিস এরা বহিরাগতদের নগ্নতা সংক্রান্ত অস্বস্তির ব্যাপারে যথেস্ট সচেতন।

বিষ্ময়ের ব্যাপার হল নীলনদের পাশে থেকেও এরা জালের ব্যবহার তেমন শেখেনি। এদের মাটি খুব উর্বর, আমাদের সৈনিকেরা অবসরে শখ করে দেশি কুমড়া, পেঁপের বীজ বুনে অবিশ্বাস্য ফসল ফলিয়েছে; অথচ এরা চাষাবাদ তেমন জানেই না। তৈরি পোষাক আর ঔষধ ব্যবসাটা প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করে চীনা আর ভারতীয়রা। এ এক সম্ভাবনাময় বাজার। অন্তত কৃষক উড়িয়ে এনে জমি লিজ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যদি এদের এগ্রো সেক্টরটাও টার্গেট করত, তা হত অত্যন্ত সফল বিনিয়োগ। অথচ অন্যান্য মিশন এলাকার মতই বাংলাদেশ সরকার এখানেও বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের জনপ্রিয়তাটাকে পুজি করে কোন ব্যবসায়িক সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।


পাক-ভারতীয়দের নিরন্তর অপচেস্টার পরও সাউথ সুদানেও বাংলাদশী শান্তিরক্ষীরা সুনাম কুড়িয়েছে। পুবে ডিংকা-তপোসাদের সাথে যেমন টরিট টিম সাইট তেমনি পশ্চিমে ইয়াম্বিও টিম সাইট চমৎকার মানিয়ে নিয়েছিল স্থানীয় আজান্দেদের সাথে। সবাই বিপদ, উত্তেজনা আর ঝামেলার গল্প শুনতে চায়। অথচ ঝামেলাতেই শান্তিরক্ষীদের ব্যর্থতা। প্রতিটা মুহুর্তের সতর্কতার সমন্বয়েই ঝামেলামুক্ত শান্তিপুর্ন আরেকটা বছরের সাফল্য। আমাদের একটা বছর নিরাপদেই কেটে গেল, নতুন একটা দেশের জন্মগ্রহন দেখার অভিজ্ঞতা অসাধারন নিশ্চয়। শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় একজন ক্যাপ্টেন ইফতেখারের মৃত্যু এড়ানো গেলনা শেষ অবধি!


যাহোক কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই রাতটা পার হল। সকাল সাতটার ভেতর আরেকটা রাশান হেলিকপ্টার চলে এল। হেলিকপ্টারের ইমার্জেন্সি ডোর খোলা নিয়ে এক পাইলট কিছুক্ষন গজ গজ করল, অবশ্য কারনটা বুঝিয়ে বলতেই বুঝল। ভদকাখেকো এই রাশান পাইলটদের পেশাদারিত্ব সত্যি ঈর্ষনীয়! একজোড়া হেলিকপ্টার নিয়ে ফিরতি পথে আমরা টরিট টিম সাইটে যাত্রাবিরতি নিলাম। মিশনের শুরুর অনেকটা সময় এই টিম সাইটেই কেটেছে আমার। সংক্ষিপ্ত বিরতির পুরোটা সময় তাই ক্যাম্পের উঠানের একলা নিম গাছের তলায় জম্পেশ আড্ডায় কাটিয়ে দিয়ে ফিরতি পথে উড়াল দিলাম। জানিনা নতুন কোন এসাইনমেন্ট অপেক্ষা করছে জুবায়!

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×