ছুট্টবেলায় আদর্শলিপিতে পড়ছিলাম, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না - আর পরে কোন হালায় জানি কইছিলো বিয়া হইলো দিল্লীকা লাড্ডু, যে খায়, সে পস্তায়, যে না খায় হেইডাও পস্তায়। ছোটবেলার সেই অমর বাণী আম্রিকা আইসা বার্গার আর কুকাকুলার লগে গুলাইয়া খাইয়া যেই ভুলডা করছি, সেই ভুলডা হইতে সবাইরে সাবধান কইরা দিবার লাইগা আইজকার এই বাচালতার প্রয়াস
হে বঙবাসী পুরুষগন, জিন্দেগীতে যাই করেন না কেন, ভুলেও লাতিনা মহিলা বিবাহ করিবেন না। ইহারা দেখিতে চরম সৌন্দর্ঝময়ী হইলেও বিবাহের পূর্বাবর্তী চেহারা দেখিয়া পরবর্তী চেহারার কথা ঘুনাক্ষরেও আপনার মরমে ঠেকিবে না। বরং সৌন্দর্য দেখিয়া ঠেক খাইলে নিজেই পস্তাইবেন। মনহরন হইয়া শেষে জীবনহরণও হইয়া যাইতে পারে।
বঙবাসী কুমারী ললনাদের ছলনায় ভুলিয়া হৃদয় ভাঙিয়াছিল সেই কৈশোরে, ধণুর্ভাঙা পণ করিয়াছিলাম, বিবাহ করিব না, কেবল রমনী হৃদয় লইয়া খেলিবো আর সেই হৃদয় পুরানো হইলে অপর হৃদয়ের পরশে নিজেকে নবীন করিব। প্রাচ্যে বঙললনার প্রাচূর্য্য থাকিলেও পাশ্চাত্যে নাই, সেই সুযোগে মাজেদা-খালেদা নাম্মী ডিভিওয়ালীরা আম্রিকাতে নিজেরে বেঙলী প্রিন্সেস জাহির করিয়া বড়াই করিয়া থাকে, মিলিওনিয়ার না হইলে তাহাদের কাছে কারো বেইল নাই। আমি এমনিতেই রাজকীয় বংশের সন্তান, নিম্মবর্ণের এহেন ব্যাভিচার সহ্য কি করিয়া হইবে, ঠিক করিলাম বঙললনা পাণি এ জীবনে গ্রহন করিব না। এমন অত্যাচার আমার রাজকীয় নীলাভ রক্ত সইবে না।
কিন্তু হায়, বিধি বাম। বিধাতা যখন ঝড়বৃষ্টির মাঝে উষ্ঠা দিয়া ফালায়া দেন, তখন তিনি বজ্রপাতের টর্চ মাইরা ঠিকই চেক করিয়া দেখেন, হালায় পরছে কিনা। আমারও সেই অবস্থা হইলো, কপালে ছিলো বিবাহ, আল্লাহ কানে ধইরা আমারে আমার স্ত্রীর হস্তে সমর্পন করিলেন। ফুটন্ত তৈলাধার পাত্র হইতে গরম চুলার মাঝে পতিত হইলাম।
প্রথমদিনে আমারে দেখিয়া আমার স্ত্রী আমারে পছন্দ করেন নাই। এমনিতেই সুন্দরী মহিলা, তার উপরে তাহার পাণিপ্রার্থীর সংখ্যা নেহায়েত কম ছিলো না। আমি বেটে কালো বাঙালী ভূত, আমারে পছন্দ করিবেন কি দেখিয়া। তবে সবই উপরওয়ালার মর্জি, তিনি ছাগলা রোমিওর জন্য সুন্দরী জুলিয়েট পাঠাইতে দ্বিধাবোধ করেন না, আমার জন্যও তিনি শিকে ছিড়িলেন। এক মায়াময়ী রাতে আমার লুঙি পরা অবয়ব দেখিয়া আমার ভাবী বধুর মনে প্রেমের উদ্রেক হইলো। এবং তিনি ও আমি দিন কয়েক পরে কবুল বলিয়া সংসার শুরু করিলাম।
আমার সেই উদারপন্থী প্রেমিকা আজ আর নেই, বর্তমানে উনি ফ্যাসীবাদের সমর্থক। উনার জ্বালাময়ী কন্ঠ আর দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপের কৌশল ইরানী সামরিক শক্তিকেও হার মানাইয়া দিতে পারে। কোথায় স্বামীভক্ত হইয়া আমার জন্য বাপের বাড়ির কুমড়া আলু আনিবেন, তা না করিয়া উনি আমার ওয়ালেট, ক্রেডিট কার্ড আর ব্যাংকের চেক বইটা লইয়া গিয়াছেন, আর এখনও ফেরৎ দেন নাই। উনার ভয়ে আমি একটা আন্ডারওয়ার পর্যন্ত ক্রয় করিতে পারিতেছি না, এক লুংগি দশ বছর ধরিয়া পড়িতে পড়িতে নরম হইয়া গিয়াছে। ভাগ্য ভাল লু্ংগিটা উত্তরাধিকারসূত্রে আমার দাদাজানের, উনি বাবুগন্জ থেইকা কিনছিলেন, এ যুগের লুংগি হইলে এতদিন টিকিতো না
লাতিনা শব্দটা শুনিলেই মানুষজন ভাবে আমার স্ত্রী আর শাকিরা আপা হয়তোবা আত্মীয় হইতে পারে। একারণে বন্ধুমহলে আমার নানারকম শাকিরা সংলিশ্ট কৌতুক শুনিতে হয়। তবে করুণ সত্য কথা হইলো, লাতিনা হইবার কারণে আমার মহিয়সী স্ত্রী কেবল নাচিতেই পারেন না, নাচাইতেও পারেন। আমি গত দশ বছর যাবৎ তাহার তর্জনীনির্দেশনায় নাচিতে নাচিতে আত্মারাম খাঁচাছাড়া করিতেছি, এখন টিভিতে কেন, রেডিওতেও শাকিরার গান শুনিলে অন্তরআত্মা কাঁপিয়া ওঠে।
হয়ত কহিতে পারেন এমন নপুংসকের মতো জীবনধারণে আমার আমার আভ্যন্তরীন বঙশার্দুল কি ভাবে মানাইয়া নিতাছে। সে কেন গর্জাইয়া উঠে না? ব্যাপার হইলো, বঙশার্দুলের চাইতে লাতিনা বাঘিনীর তেজ বেশি, গর্জন তো দূরের কথা, একটু মিউমিউ করিলেই তিনি পশ্চাতের সম্মুখের, অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের সকল উদাহরণ টানিয়া বুঝাইয়া দেন যে আমার সাতজনমের ভাগ্য যে উনার মত বিবি আমার মত অধমরে বিবাহ করিতে রাজী হইয়াছে। হাজার হইলেও আমার চাইতে বলশালী, ধনশালী, পাসপোর্টশালী লম্বা চওড়া পাত্র তাহার দ্বারে দ্বারে প্রতিদিন প্রেমের সারিন্দা বাজাইতো। সেই সারিন্দা উপেক্ষা করিয়া তিনি যখন আমার মত ভিখিরী রাজকুমারের পাণি গ্রহন করিয়াছেন, তাহার লাতিনা মেজাজের তেজ সহ্য করা আমার জন্য ফরজে কেফায়া।
কি আর করিব বলেন, মনের দুঃখ মনে রাখিয়া ঘরজামাইয়ের কাজ করি আর সবাইকেই বলি। আমার দূর্ভাগ্য হইতে শিক্ষা নিন, জান থাকিতে লাতিনা বিবাহ করিয়া পস্তাইবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৪৫