কারো কারো জানা থাকতে পারে চরমনাইয়ের বর্তমান পীর সাহেব রেজাউল করিম সাহেবের দাদা প্রাক্তন পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক এর লিখা একটা কিতাব "ভেদে মারেফাত বা ইয়াদে খোদা" । পীর থাকা জরুরি কিনা এ সম্পর্কে জনগণের মাঝে দ্বিমত আছে অনেকেই জানেন, তাই পীর থাকার উপকারিতার সপক্ষে দলিল হিসাবে তিনি একটি গল্প ২৭-২৮ পাতায় বর্ণনা করেছেন । এতে লিখেছেন, কোনো এক দেশে এক দরবেশ মারা গেলে সেখানকার এক কাফন চোর রাতের অন্ধকারে নতুন কবরে ঢুকে যেই না কাফন খুলতে গেছে অমনি সেই মৃত দরবেশ খপ করে তার হাত ধরে ফেলেন, এতে বেচারা কাফন চোর সেখানেই হার্ট ফেল করে মারা যায় । দরবেশ সাহেব এবার তার এক খলিফাকে স্বপ্নে আদেশ করেন যেন এই কাফন চোরকে তুলে নিয়ে গোসল দিয়ে আবার তারই পাশে কবর দেয়া হয় । তাকে কেন এ সম্মান দেয়া হবে জানতে চাইলে তার উত্তর, " কাফন চোরের হাত আমার হাতের সঙ্গে লেগেছে , তাকে ফেলে রেখে আমি কেমনে কিয়ামত দিবসে পুল সিরাত পার হয়ে যাবো ?"
বইটা দেখতে চাইলে, (এতে অনেক শিরকী আকিদা রয়েছে কাজেই আমল যোগ্য নয়!) Click This Link
এ গল্প পড়লে সুবহানাল্লাহ বলে অনেকেই পীরের মুরিদ হওয়ার জন্য লাইন ধরতে পারেন, কিন্তু যদি আমরা একটু গল্পটাকে বিশ্লেষণ করি তো কতগুলো প্রশ্ন জাগে,
১. কবরের ভিতরে মৃত দরবেশ জীবিত হয়ে চোরের হাত ধরে ফেলার ঘটনাটা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু ?
২. কবরের ভিতরে মৃত দরবেশ তার খলিফাকে স্বপ্নে নির্দিষ্ট কিছু দেখানোর ক্ষমতা রাখেন কি?
৩. দরবেশ কিয়ামত দিবসে নিজে পুল সিরাত পার হওয়ার নিশ্চয়তা কিভাবে পেয়েছেন ? আরেকজনকে সাথে নেয়াতো পরের কথা!
গ্রাম দেশে ওয়াজে কিছু মাওলানা সুরালো গলায় অনেক চমকপ্রদ মিথ্যা বানোয়াট গল্প বলে মানুষকে আকৃষ্ট করে থাকেন, এগুলোর সত্যতা যাচাই না করে গ্রহণ করা এক ধরনের মূর্খতা । " কোনো এক দেশে এক রাজা ছিল" জাতীয় গল্প কোনো বিষয়ে ধর্মীয় গুরুত্ব বুঝাতে ব্যাবহার করার ক্ষেত্রে আরো যত্নবান হওয়া দরকার।
আশা করি আমার পয়েন্টটা,বুঝাতে সক্ষম হয়েছি । সাধারণ গল্পের জন্য রেফারেন্স লাগে না, যেমন বাঘ ও রাখালের গল্প, এতে কেউ জিজ্ঞেস করেনা কোথাকার কোন রাখাল ইত্যাদি! কিন্তু ধর্মীয় বিষয়ের গুরুত্ব বুঝাতে গল্প বলতে হলে অনেক ক্ষেত্রেই উপযুক্ত রেফারেন্স বা দলিল দরকার!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪৮