somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি মৃত ক্যাপ্টেন মাজহারের বাবা বলছি

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হ্যালো..
হ্যালো বাবা...
হুম..
কেমন আছো ?
ভালো , তুমি কেমন ?
আমিও ভালো, সকাল বেলা হাঁটাহাটি কর তো ?
হুম
হুম না বল কর কি না ?
হ্যা করি , মাঝে মাঝে মিস হয়ে যায় ,
নিয়মিত কর বাবা , ঔষুধ খেয় ঠিক মত
আচ্ছা
ভালো থেকো বাবা

ঘুমটা ভেঙে গেল মজিদ সাহেবের । সাড়ে ৪ টা বাজে । ফযরের আযান হতে অনেক দেরি । আর ঘুম ঘুম আসবে না । উঠে বসলেন মজিদ । টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা টেনে নিয়ে পানি খেয়ে নিলেন । কি করা যায় ? ফযরের আযানের জন্য অপেক্ষা করতেই হবে । বারান্দায় গিয়ে বসে থাকা যায় । ইজি চেয়ারটায় হালকা কুয়াশা পড়ে আছে । তাই ঠান্ডা লাগছে । ভোরের আলো ফুটতে অনেক দেরি । চারিদিকে হালকা অন্ধকার । পাখিদের ডাকাডাকি এখনও শুরু হয়নি ।

কতদিন হল ? তিন বছর ? অনেক সময় । গত তিন বছরে একটিবারও মাজহারের সাথে কথা হয়নি । এখনও নিয়মিত হাটাহাটি করা হয় না , শরীরটা ভেঙে যাচ্ছে । মাজহার না বললে আর কেউই সেভাবে বলে না । আযান হচ্ছে ওযু করা দরকার

আবার বারান্দায় গিয়ে বসলেন মজিদ সাহেব । ভোরের আলো ফুটতে শুরু করছে । পূর্বের আকাশে গাঢ় কমলা আভা । পাখিও ডাকাডাকি করছে , কিন্তু পাখির চেয়ে কাকের কা কা আওয়াজটাই বেশি কানে আসছে । কাক এভাবে উত্তেজিত হয়ে ডাকাডাকি করে কখন ? যখন ওদের শোকের সময় তখন ? হয়ত । আজ মর্নিং ওয়াকে যেতে ইচ্ছে করছে না । এখানে বসতেই ভাল লাগছে । ক্যাডেট কলেজের শুরুর মাজহার প্রায়ই বলত সকালে মর্নিং ওয়ার্ক ওর ভাল লাগে না । কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটা ওর রুটিন হয়ে গেল । ছোটবেলায় অনেক আলসে ছিল ছেলেটা । সকালে ঘুম থেকে উঠতেই চাইত না । সেই ছেলেটা ক্যাডেট কলেজ এরপর সেনাবাহিনীতে । ভাবতেই অবাক লাগে । যদিও ক্যাডেটে ও পড়তে চায়নি । আমিই মনে হয় বেশি জোর করেছিলাম । সেদিন যদি জোর না করতাম আজ হয়ত ব্যাপারটা অন্যরকম হত ।
খালুজান চা , সবুজের ডাকে চোখ মেললেন মজিদ সাহেব । খালুজান আপনেরে রেডি হইতে কইছে । বাসার সবাই আজ গ্রামের বাড়ি যাইব । হুম আসছি , তুই যা ।

গাড়ির পেছন সিটে বসে জানালা দিয়ে চোখ মেলে দিলেন মজিদ সাহেব । রাস্তার দুপাশে ক্ষেত । তবে সবই ন্যাড়া । কোন সবুজ নেই । আবারও মাজহারের কথা মনে হচ্ছে । কত বয়স হয়েছিল ছেলেটার ? ২৯ । খুব বেশি না । ছেলেটা জীবনের অর্থই বুঝতে পারল না । তার আগেই চলে গেল । অথচ মনে হচ্ছে এই সেদিন ওকে স্কুলে নিয়ে গেলাম ভর্তি করাতে । অনেকটা তাড়াতাড়িই ভর্তি করিয়েছিলাম ওকে । প্রথমদিন হেডমাস্টারকে দেখেই কেঁদে ফেলেছিল ও । অদ্ভুত ছেলে আমার । কি ভীতুই না ছিল ছেলেবেলায় । অথচ বড় হয়ে দেশের সেবা করতে ঠিকই যোগ দিয়েছিল সেনাবাহিনীতে । কিন্তু আমিতো না করেছিলাম । তুমি পারবে না এত কষ্ট সহ্য করতে । অন্য কোথায় ভর্তি হও । ও কি বলেছিল এখনও পরিস্কার মনে আছে , বলেছিল "বাবা তুমি না মুক্তিযোদ্ধা, দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলে , আমি সেই সুযোগ পাইনি , কিন্তু এই সুযোগটা নিতে আমাকে না করোনা প্লিজ" । না , আমি না করিনি । বড্ড ঘুম পাচ্ছে , কিছুটা ঘুমিয়ে নেয়া দরকার

ঘুম ভাঙল সবুজের ডাকে । এসে পড়েছি । কতদিন পর এলাম ? গতবছরের এই দিনে মনে হয় শেষ এসেছিলাম । না আরেকবার এসেছিলাম । মাজহারের নামে পাঠাগার উদ্বোধন করতে । এরপর আর আশা হয়নি । আজ বাড়ি ভর্তি মেহমান । কিন্তু এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না । কিছুটা একা দরকার । তবে তার আগে বাড়ির পেছনটা ঘুরে আসতে হবে । না হলে মাজহার রাগ করবে । ছেলেটা আমার সেই ছোটবেলা থেকেই পরিবার পরিজন ছেড়ে বড় হয়েছে । এখনও একাই থাকে । মাঝে মাঝে মনে হয় ওর সাথে অন্যায়টা করেছি আমি । ক্যাডেট কলেজে ভর্তি না করলেই হত ।

মাজহারের কবরের পাশে এসে দাড়ালেন মজিদ সাহেব । এবছর কবরটা পাকা করা হয়েছে । তাই কিছুটা উচু হয়ে আছে । আশাপাশে জঙ্গলও কিছুটা বড় হয়ে আছে । কবরের দেয়ালটা ধরে এক দৃষ্টিতে কবরের মাটির দিকে তাকিয়ে আছেন মজিদ সাহেব

মেহমানদের বিদায় করে দিয়ে নিজের রুমে চলে এলেন মজিদ সাহেব । ভাল লাগছে না । বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলেন । কি হয়েছিল সেই ২৫ তারিখ ? কেনইবা বিডিআর জোয়ানরা বিদ্রোহ করেছিল ? ব্যাপারটা কি পরকল্পিত ছিল ? মনে হচ্ছে হ্যা । না হলে কেন হানিমুনের তিনদিনের দিন ছেলেটাকে ফোন করে পিলখানা ক্যাম্পে জয়েন করতে বলা হবে ? কি দোষ ছিল ওর ? আমার সাথে কথা হয়েছিল হানিমুন থেকে ফেরত আসার আগের দিন । অথচ দুদিন পরেই ছেলেটা চলে গেল । ওর শ্বশুরের সাথে শেষ কথা হয়েছিল ওর । ওর শ্বশুরকে নাকি বলতেছিল
হ্যালো , বাবা এখানে কোন একটা সমস্যা হয়েছে । সবাই খুব ছোটাছুটি করছে । জোওয়ানরা বিদ্রোহ করেছে । আমাদের সাহায্য দরকার...
পুলিশের আইজি ওর শ্বশুরের কাছে ছিল সাহায্য চাওয়ার তীব্র আকুতি । কিন্তু সেদিন কেউ ওদের সাহায্যে এগিয়ে যায়নি , কেউ না । তিন বছর হয়ে গেল প্রকৃত সত্যটা এখনও জানা যায়নি । হয়ত এজীবনে ছেলে হত্যার বিচারটা দেখে যেতে পারব না । সে আশা অবশ্য আমি করিও না । তবে আল্লাহর কাছে ঠিকই জানতে চাইব , কেন তিনি আমাকে এমন শাস্তি দিলেন । আমি কি পাপ করেছিলাম যে তিনি আমাকে ছেলের মরদেহের ভার আমার কাঁধে দিয়েছেলেন ??

জানালে দিয়ে দিনের শেষ আলোটা বিছানায় এসে পড়ছে । আমার ছেলেটাও ছিল সূর্যের মতই । কিন্তু পার্থক্য শুধু এটুকুই সূর্য ডুবে গিয়ে পরদিন আবার উঠে , কিন্তু মাজহার সেই যে গেল আর আসবে না


বিঃদ্রঃ গল্পের চরিত্র সবই সত্যি , কিন্তু গল্পটা আমার বানানো । অযথা বিতর্ক না করার জন্য অনুরোধ করছি

# এক বন্ধুর অনুরোধে খুবই তাড়াহুড়ো করে লেখা , কিছুটা ভুল থাকা স্বাভাবিক । আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:০৬
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×