somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর আত্মহত্যা

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০১৫,
আমি অপু আমনে একা একা রাস্তায় হাটছিঁ ।আশে পাশে অনেক কপোত কপোতি- সাথে উষ্ণ রোমাঞ্চ।আমি শুধু ভাবছে তার পুরোনো স্মৃতি গুলোর কথা। সিথি আজ নেই। থাকলে হয়ত আজও সবার মত কিছু স্মৃতিময় মুহুর্ত কাটানো যেত। হাতের সিগারেটটা শেষ।দিঘির পাড়ে বসে আরেকটা ধরালাম-

দিনটি ছিল ডিসেম্বরের শেষের দিকে ২০১১ সাল । শহুরে শীত। কিছুদিন হল জ়ে এস সি নামক এক বিভীষিকাময় পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। রেজাল্ট ভালই হয়েছে খারাপ না। জি পি এ ৫ । যদিও খুব ভয়ে ছিলাম রেজাল্টএর আগের দিন গুলোয়। আল্লাহএর রহমতে ভালই করেছি।
জানুয়ারির এক তারিখ আমার স্কুল লাইফ এর বেশ কাছের বন্ধু সাদি, প্রতিবেশিও বলা চলে ওর এবং বেশ কিছু বন্ধুর কথায় ক্লাস নাইন এর জন্য মিরপুরে খ্যতনামা নামের এক কোচিংএ ভর্তি হলাম।

বিকেল বেলায় ছিল সে দিনের ক্লাসটি মোটে তিন জন ক্লাসে। উঠতি বয়স। বয়েজ স্কুলে পড়ার সুবাদে মেয়েদের দিকে আকর্ষনটা একটু বেশিই। সেদিন ক্লাসে কেউ ছিলনা তেমন। মানে ইয়ে চোখে পড়ার মত।ছুটি দিল বের হয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম। আজকাল্কার মত আড্ডা দেয়া, সিগারেট এর বদ অভ্যাসও ছিল না।
পরের দিন জানুয়ারির ২ তারিখ । আমার জন্মদিন।মনটাও বেশ ভাল। গিফট হিসেবে মনে হয় মোবাইল কিনে দেবার কথা হয়েছিল তাই হয়ত। বিকেলে কোচিং এ আসলাম। বেশখানিকটা সময় আগেই চলে এসেছি। আমাদের তখন ক্লাস ছিল নিচের তলায়। এসে বসলাম । আমি আর আমার বন্ধু সাদি। আস্তে আস্তে আরো অনেকে আসা শুরু করল। ছেলে,মেয়ে । মানে ক্লাস মেট কিন্তু বিভিন্ন স্কুলের । ক্লাস শুরুর শেষ সময়ে একটা মেয়ে আসল। অনেকটা ঝড়ের বেগে। চশমা পরে। সবুজ স্যালোয়ার কামিজ এর সাথে সাদা ক্রীম রঙের সোয়েটার । দেখতে খারাপ না তবে নাকটা একটু বোচাঁ । তাও ঠিক মত বোঝাযায় না।চোখে পড়ার মত বিষয় হচ্ছে মেয়েটা অনেক চুপ চাপ। বেশ কবি কবি ধরনের। মোটা ফ্রেমের চশমার ফাকঁ দিয়ে মাঝে মাঝে আশে পাশের নতুন মানুষদের দেখছে। বেশ ভাল বলা চলে। প্রথম দিন এভাবেই চলে গেল।

আমি জীবনে কোনদিন প্রেম করিনি। বান্ধবী ছিল কথা বলেছি মজা করেছি কিন্তু কিশোরে পা রেখে যে প্রেম সে ধরণের কিছু ছিল না। কিন্তু এবার মাথায় ভূত চেপে বসল । পাগলামিই বলা চলে। বয়েজ স্কুলে পড়েছি। প্রেম করার সুযোগ পাইনি এবার কোচিং কম্বাইন্ড ! প্রেম করতেই হবে। যেহেতু সাদি কেই চিনি তার মাঝে ও আমার স্কুল ফ্রেন্ড বলেই বসলাম ‘’ দোস্ত ঐ যে নাক বোচাঁ মেয়েটা কে আমার লাগবে’’ । কথা টা শুনে কিছুক্ষন ভেবাচেকা খেয়ে বলল ;’’ তুই কেন! তোর বাপও ওকে পটাতে পারবেনা’’ । কথাটা ফাইজলামি হলেও একটু মনে গেথে বসল। শেষমেষ দেখা গেল যে বাজিই ধরে বসলাম দু’বন্ধু মিলে। খোজঁ নিয়ে জানলাম মেয়েটার নাম সিথি । এলাকার একটা স্কুলে পড়ে। বেশ ভারি মেজাজের মেয়ে। ছেলেদের সাথে কথা কমই বলে। অন্তত প্রেম করার মত না । কিন্তু মাথায় চেপে বসেছে বাজি ধরেছি জিততে আমাকে হবেই। সে মেয়ে যাই হোক।
জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ক্লাস পুরোদমে শুরু হল, সাথে সাথে আমার উদ্দেশ্যও। পড়াশুনা তখন এমনিই করতাম না সেটা আরো লাটে উঠেছে।প্রথম দিকে কিছুই করতাম না এমনকি কথা বলার চেষ্টাও করতাম না। শুধু একটি কাজ ছাড়া- চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকতাম। যখনই আমার দিকে ওর চোখ পড়ত তখনই ও লক্ষ্য করত আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। বেশ উদ্ভট একটা পরিস্থিতি ওর জন্য। এ কাজটা প্রতিদিনই করা শুরু করলাম। ক্লাসের সবাই বিষয়টি লক্ষ্য করা শুরু করল, নানা কথাও শুনতাম আমাকে নিয়ে। যা হয় আর কি। তার পর টুকটাক কথা বলা শুরু করলাম। কিছু প্রয়োজন হলেই ওর কাছে জিজ্ঞাসা করতাম/চাইতাম।ইছা করে বই/কলম নিয়ে যেতাম না। নিয়ে গেলেও সিথির কাছ থেকেই চাইতাম। প্রথম মাস এভাবেই কেটে যাচ্ছিল।

এ মাসের শেষের দিকে শুনলাম কম্বাইন্ড আর ক্লাস হবে না। ছেলে মেয়ে আলাদা করে দিবে। শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমার বাজির কিছুই হলনা তার মধ্যে আবার ক্লাস রুম আলাদা করে দিচ্ছে। মেজাজটা স্বভাবতই অনেক খারাপ ছিল তখন।নাহ এবার আর অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। কিছু একটা করতেই হবে।দিনটা সঠিক মনে নাই। এক দিন কোচিং ছুটির শেষে ডেকে ফোন নাম্বার চাইলাম। কিন্তু কাজ হল না। সরাসরি মানা করে দিল। বলল যে তার নিজের ফোন নাই।মেজাজটা তখন এতোই খারাপ যে হাতের ফোনটা পর্যন্ত ফেলে দিলাম। কিছুক্ষন বন্ধুদের পচানি খাওয়ার পর- দূর থেকে কে যেন ডাকছে, পিছে ফিরে তাকাতেই দেখি সিথি ডাকছে আমাকে। কাছে গেলাম।
- আমারতো নাম্বার নাই । তোমারটা দাও আমি পরে ফোন করে নিব যদি কখনো দরকার হয়।
- আচ্ছা। কাগজ দাও লিখে দিচ্ছি।

মনের ভেতর একটু আশার আলো জ্বলে উঠল।কিন্তু তবুও ভরসা পেলাম না। ভাবলাম হয়ত ভদ্রতা দেখানোর খাতিরে নাম্বার নিয়েছে। মেয়েদের যদিও এধরনের ভদ্রতা অনেক কম থাকে।

সেদিন রাতে পড়তে বসছি। কেন যেন কিছু ভাল লাগছেনা। মনে মনে ছোট বেলার একটি প্রেম কাহিনী মনে করে হাসতে ছিলাম। যদিও সেটাকে প্রেম বলা যাবে না। আমি ক্লাস ফাইভ এ পড়ার সময় ক্লাস থ্রি এর এক মেয়েকে সিনেমাটিক স্টাইলে প্রপোজ করেছিলাম। সিনেমার মত রোজ বাসার বারান্দায় বসে থকাতাম দেখবার জন্য। যদিও বেশিদিন যায়নি। আম্মুর কানে কিভাবে যেন কথা চলে যায় পড়ে একরাশ হাস্যরসাত্বক বকুনি।
১০টা ২৫ বাজে ভাবতে ভাবতে বই নিয়েই চোখটা লেগে এসেছিল, হুট করেই ফোনের ভাইব্রেশনে তন্দ্রাচ্ছন্নতা কেটে যায়। একটা মিসকল। টি এন্ড টি নাম্বার থেকে। ভুলে হয়ত এসেছে দেখে বালিশের নিছে মোবাইল রাখতেই আরেকটা মিস কল। খটকা লাগল, কল দিলাম কিন্তু ধরল না। খানিক পরে আরেকটা মিসকল এবার মেজাজটা চরম বিগড়ে গেল । মিসকল এর জ্বালায় ঘুমাতেও পারছিনা। মা আবার এসে বই নিয়ে ঝিমানোর জন্য বকা শুরু করেছে। শেষ মেষ রাত ১১ টা ৩১ এর দিকে সেইম নাম্বার দিয়ে কল আসল রিসিভ করলাম।( মেয়ে কন্ঠ)
-হ্যালো কে বলছেন?
-আমি!
-আমি কে?
-আমাকে চেননি এখনো?
- আরে ভাই সেই কখন থেকে ফকিরের মত টি এন্ড টি দিয়ে মিসকল দিতেছেন ! কাকে চান? কি চান?
- সকালে নাম্বার দিলা আর এখনই ভুলে গেসো? আমি সিথি।
-অহ!! তুমি? আগে বলবা না। ধুর, না জেনেই কত কি বলে ফেলেছি।মনে কিছু কর না।

এই শুরু হল আমাদের যোগাযোগের অনন্ত ধারা। প্রতিদিন কথা হত। কথা বলার সময় ঠিক রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত। প্রথমে আমি ৩টা মিসকল দিতাম। পরে ফোন দিতাম। শত হোক টি এন্ড টি নাম্বার সতর্ক থাকা ভাল। প্রথম প্রথম আমি কল দিয়ে কথা বললেও পড়ে ও নিজেই কল দিত। সে মাসে মনে হয় ওর বাসার টি এন্ড টি বিল প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি এসেছিল। সপ্তাহেরই শুক্রবার কোচিংএ ঢুকব রিক্সা থেকে নেমেই দেখি সিথি দাড়িঁয়ে আছে। দেখে মনে হল যে, আমার জন্যই মনে হয় দাড়িঁয়ে আছে।কাছে যেতেই-
- গুড মর্নিং স্যার!
- আরে সিথি ? এতো সকালে তুমি? তুমি তো এতো আগে আস না কখনো?
- নাহ! আজ একটু আগেই আসলাম। ধর সেন্টার ফ্রেশ খাও
- নাহ! রেখে দাও আমার কছে আছে।
- চল ফুচকা খেয়ে আসি
- এতো সকালে? কোথায় পাবো । সকাল আটটা মাত্র
- আচ্ছা বাবা , ঠিক আছে যাব।
সেদিন পকেটের খুব নাজেহাল অবস্থা, ফুচকা খেতে চেয়েছে না’ বলাও শোভা পায় না। তখন বাসা থেকে বেশি টাকাও দিত না। যতসামান্য। যতটুকু দরকার অতটুকুই। এই প্রথম সেফটি মানি রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। বাধ্য হয়ে সাদিকেই বললাম এই ব্যাপারে।
- দোস্ট টাকা দে!
- কেন?
- ফুচকা খামু
- চল, এতে টাকা চাওয়ার কি আছে?
- আরে সিথি বলছে…
- ও এই কথা? আগে কইবি তো হারামি- নে ধর।
সে যাত্রায় মানসম্মান খোয়ানোর হাত থেকে বেচেঁ গিয়েছিলাম।সেদিন ফুচকা খেয়ে চলে এলাম।

এভাবে তিন চার দিন কেটে গেল। বেশ ভাল জমে উঠেছে তখন। টি এন্ড টি থেকে মোবাইলে টেক্সটিং বেশি শুরু হল।ফেব্রুয়ারি মাস। ঠণ্ডা একটু কম। ফাল্গুনের ছোয়া লেগেছে।সেদিন ছিল ১২ তারিখ। রাতের বেলা ফোনে টেক্সটিং করছি। মনে মনে ভাবছি আর কতো, এবার নাহয় বলেই দিই, সহ্য হচ্ছিলো না অপেক্ষার প্রহর গুনতে।
প্রতিদিন সকালে গুড মর্নিং আর রাতে হাল্কা কথা বার্তা বলেই গূড নাইট জানিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। আজ শেষ টেক্সট টা ছিলো-
I have no regrets.
I will never regret loving someone because the feeling of love for five minutes is greater than an eternity of hurt.
|143 sithi|

আজও এই মেসেজটা মোবাইলে রয়ে গেছে। মুছে দিতে পারিনি। তারপর দেখি সিথি কোন উত্তর দেয় না। চিন্তায় পড়ে গেলাম,যে ধরনের মেয়ে দেখলাম যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে তো বাজি হেরে যাব। সাহস নিয়ে আরেকটা মেসেজ পাঠালাম- '' ans diba na'' । উত্তর এলো এবার - '' vebe dakhi'' । মনে মনে একটু হতাশ হয়েই ভাবলাম, তুমি বসে বসে মন কলাই খাও। রিলেশনে যাওয়া লাগবে না।
পরের দিন পহেলা ফাল্গুন, সারা দিন কোন কথা নাই। আজ আর কোন সতর্কতা নেই। ফোন দিয়েই বলে ফেললাম '' আমি তোমাকে ভালোবাসি'' তুমি কি আমাকে ভালোবাসবে? ''। সিথি কিছুটা হতচকিত হয়ে এবারো বলল পরে বলব। মেজাজটা খুব চটে গেলো।আর কোন কথা নাই। ফোনটা কেটে দিল। রাত দেড়টা একটা মেসেজের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো- '' kal school er samne 1ty dekha korba. mbk te bosbo''
মনটাই ভালো হয়ে গেলো। আনচান আনচান করছে। কখন কাছে পাবো সিথিকে? সে রাতে যেন ঘুমই আসতে ছিল না। সকাল বেলা সাদি আর কায়সারকে ফোন দিয়ে আসতে বললাম । ওদের কে বললাম রাতে ঘটনা। দুপুর বারটার দিকে রিক্ষা নিয়ে গেলাম কাংখিত জায়গায়। সিথি ফোন ব্যবহার করত না বলে দোকান থেকে ফোন দিয়ে বলল ও আসছে। একটু দেরি হবে। আমিও সুযোগ বুঝে তিনটা লাল গোলাপ আর একটা ক্যাডবেরি সিল্ক কিনে নিলাম।উপহার দিবো বলে। বসে আছি তিন বন্ধু মিলে।

অনেক সময় পরে মহারানীর উপস্থিতি লক্ষ্য করলাম। সিড়ি দিয়ে উঠছেন উনি। সামনে এসেই একটা ভ্যালেন্টাইন কার্ড ধরিয়ে দিল। সাথে অনেক গুলা চকলেট। কার্ডটা ওর সামনেই খুললাম। ভেতরে খুব সুন্দর করে গোলাপি কালি দিয়ে লিখা '' HAPPY VALENTINES DAY'' "[ I LOVE YOU] । তখনকার মুহুর্তটা অনেকটা অমৃতের মত। জীবনের প্রথম কেউ বিশেষত কোন মেয়ের কাছ থেকে উপহার পাওয়া কিংবা ভালবাসার কথা শোনা। সেদিনটা আজও ভুলব না। না ভোলার মতই একটি দিন। ওর হাতটা ধরে অনেক্ষন বসে ছিলাম সেদিন।

আমাদের কাছে আসার গল্পের শুরু এখানেই, ১২ই ফ্রেব্রুয়ারি ২০১৪। বেশ ভালো দিন।
বেশ কয়েকটি মাস কেটে গেল। মেয়েটা খুব ভালো। যদিও সব কিছু প্রকাশ্যে বোঝাতে পারে না বা অনেক কিছুই বোঝে না তবুও, এরকম একটি মেয়েই চায় সবাই।

সিথি আর আমার জীবনের প্রথম পহেলা বৈশাখ। কোচিং ফাকি দিয়ে বের হলাম দু জন। সাথে সাদি, আর আমার হাতেই তৈরী আরেক প্রেম যুগল। সকালে বেলা কড়া রোদ ছিল সেদিন। সকালে পরিবারের সবার সাথে পান্তা খেয়ে সিথি কে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। সিথি সেদিন লাল-সাদা স্যালোয়ার কামিজ পরেছিলো। সাথে লাল লিপ্সটিক। ওকে বেশ অপ্সরির মতন লাগছিলো। আজ বোধহয় বাজি'র প্রেম সত্যিকারের প্রেমেই রুপ নিয়েছে। অনেক ঘোরা ঘুরি করলাম সবাই মিলে। ফেরার সময় গুরি গুরি মেঘ ডাকছিলো,সাথে ইলশে গুরি বৃষ্টি। আমি আর সিথি রিক্সা করে বাসায় ফিরছিলাম। ও বাইরের দিকে তাকিয়েছিলো। কোন কারনে আমার দিকেও তাকাতে পারতো না। আমার চোখ দেখলে নাকি খুব ভয় লাগে ওর, এবার সিথির মুখ ধরে আমার দিকে করলাম। বললাম ভালোবাসি। ও চোখ বন্ধ করে ফেললো। হঠাত ঠান্ডা বাতাস। শিহরিয়ে উঠল দুজনের মন, আলতো করে ভালোবাসা বিনিময় করলাম। ্পার্থিব জগতের অমিয় সুখ আজ আমি পেয়ে ফেলেছি। সেদিন থেকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালবেসে ফেলেছিলাম ওকে।

অনেক চড়াই উৎড়াই করে পার হলাম আরো বেশ কয়েকটা মাস। এখনো একবারো বাসায় বা কোচিংএ প্রেম করতে গিয়ে ধরা পরিনি। কিন্তু সুখের দিন মনে হয় বেশি দিন থাকে না। কপালে দুর্গতি যখন আসে সব একসাথে আসে। পড়াশুনার রেজাল্টে প্রেম ইফেক্ট পড়ার কারণে বাসায় অনেক বকা-ঝকা শুনতে হচ্ছিলো। তার মধ্যে একদিন গোসল করতে গিয়েছি। এসে দেখি সর্বনাশ; আমার ফোন আম্মুর হাতে আর আম্মু বসে আমার মেসেজ গুলো পড়তেছিলো। রক্ষনশীল পরিবারে এর পরের ঘটনা মনে হয় আর বলে বোঝাতে হবে না। ছেলে মেয়ে দু'পরিবারের সাথেই তুমুল আলোচনা। কিন্তু সমস্যার বিষয় হলো। সিথির পরিবারের সাথে যখন কথা বলা হয় তখন নাকি উনারা খুব অকথ্যভাষায় কথা বলেছেন। টাকার দাপট দেখিয়েছেন। মা সেদিন অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। যে, আমাদের তো কম কিছু নাই- এমন একটা পরিবারের মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছ যাদের মনমানসিকতা এতোটা নিম্ন মানের। সেদিন ওয়াদা করিয়েছিলো যেন আর কোনদিন যোগাযোগ না করি সিথির সাথে। সাথে সাথে ফোনটাও বাজেয়াপ্ত করল বাবা। প্রেমে কি আর তখন কোন বাধা মানে? সপ্তা খানেক যোগাযোগ হয়নি এর মধ্যে সিথি আমার এক বন্ধুর ফোনে ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলার জন্য বলছে। ভাগ্যক্রমে বন্ধুটা আমার সাথেই ছিল। কথা বলার সময় কেদেইঁ দিল সিথি। একটা চাপা অভিমানের কান্না। সেদিন আমার এতোটাই অন্তর ছুয়ে গিয়েছিলো যে দৌড়ে ওর স্কুলেরসামনে যেয়ে দেখা করেছিলাম।

কিছুদিন পরে ওর পরিবার আবারো বিষয়টা জানতে পারে। ওর রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারোনে আরো বেশি মন খারাপ করে থাকে সিথি অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। এ সময় কোন একটা কারণে আমি ওর সাথে ঝগড়া করি। বেশ বড় ধরনের। কিন্তু কে জানত যে এই ধরনের কিছু হবে ঝগড়ার মাসুল হিসেবে। সেদিন সারাদিন কোন কথা বলিনি। পরের দিন বিকালে সাদি খুব রাগের সাথে আমাকে ফোন দিয়ে ঘর থেকে বের হতে বলে। আমি বের হবার পড় সাদি আর শুভ এসে প্রায় আমাকে আজ মারবে এরকম একটা ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করাতে সাদি বলল যে, সিথিগতকাল রাতে সুইসাইড এটেমট করেছে। এখনো হাসপাতালে, তেমন কিছু জানা যায়নি। সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম ভালবাসার অর্থ। সিথি আমাকে বুঝিতেছিলো ভালবাসা কি? যদিও কাজটা যুক্তি সংগত ছিলো না। পরের দিন ওর বড় বোন ফোন করে অনেক হুমকি দিল। সেদিন বিকালে জানতে পারলাম সিথি সুস্থ আছে । বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। মনে অনেকখানি শান্তি পেলাম ।

জীবনটা তখন কবিতার মত-

ছড়া কিংবা কবিতা,কখনো পড়তে ভাল লাগেরূপকথার গল্প কথিকা।
উদাস দুপুরে শুনি কভুপ্রিয় শিল্পীর গান,মনের অজানে দিয়ে উঠিদুই একটি টান।
ছাদে উঠে মাঝে মাঝেরাতের বেলায় হাঁটি,চুপিসারে নিজের সাথেনিজেই কথা বলি!
একাকী কথা বলি দেখেলোকে পাগল ভাবে,
যার জা ইচ্ছা ভাবুক,আমার কি যায় আসে!
মাঝে মাঝে ঘোর বৃষ্টিতেভিজতে ভাল লাগে,
জ্যোৎস্না রাতে চাঁদ দেখতেভীষণ লাগে ভাল।
ছুটির দিনে সকাল বেলাদেরী করেই উঠি,
সবার সুখে সুখী হই,সবার দুখে দুখী।
বিপদে আপদে আমি কভুহারাইনা মনোবল,
কষ্ট ব্যথা হোক না কেনযতই কঠিন প্রবল।
একে একে অনেকেই তোছেড়ে গিয়েছে দূরে,
ওদের কথা সর্বদাই যেখুব মনে পড়ে......

বছরটা কেটেই গেল প্রায়। খুব ভালো আছি। নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষগুলোর মধ্যে একজন মনে হয়।



১লা জানুয়ারি ২০১৩
বছরের প্রথম দিন। haapy new year উইশটা সিথিই প্রথমে করেছিলো। নতুন একটি বছর। নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা।

খুনসুটি; হাসি-কান্নার মাঝে ভালোই যাচ্ছিলো দিন গুলো। কিন্তু সিথির মাঝে একটু পরিবর্তন এসেছে। ও ঠিক আগের মত নেই। কেমন যেন এড়িয়ে যাওয়া একটা ভাব। একদিন সিথি কে অনেক্ষন ধরে ফোন দিচ্ছিলাম কিন্তু ব্যাস্ত দেখাচ্ছিলো। অনেকক্ষন পড়ে ফোন ধরে বলল আসিফ নামের এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলো। পরিচয় কিভাবে জানতে চাইলে বলল রং নাম্বারে পরিচয়।
আমি একটু বাধ সাধলাম , অপরিচিত মানুষের সাথে এভাবে যোগাযোগের কোন মানে হয় না। ও বলল ঠিক আছে। আর হবে না কোনদিন এরকম। আমিও এর পরে কোনদিন সিথিকে জিজ্ঞাসা করি নাই আসিফ সম্পর্কে। অনেক বিশ্বাস করতাম বলেই হয়ত কিছু জিজ্ঞাসা করি নাই।
এর ভালোবাসা দিবসে কোন বিশেশ স্মৃতি নেই। পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত দু’জনেই। সময়ও নেই। সামনেই পরীক্ষা। যোগাযোগটা বেশ কমে এসেছিল। আগের মত দেখা করা বা ঘুরতে যাওয়াও হত না। একটু একটু অনুভব করা শুরু করলাম। বুঝতে পারলাম এই মেয়েটি আমার জীবন । ওকে ছাড়া চলতেই পারব না।

বানিজ্য মেলা চলছে শুম পড়ে গেছে মেলায়। সিথিকেও নিয়ে গিয়েছিলাম । কয়েকদিন পর ওর এক বান্ধবীর কাছে শুনতে পাই ফাহিম নামের এক ছেলের সাথে নাকি ও আর ওড় একটা বান্ধবী বানিজ্যমেলাত ঘুরতে গেছে। অথচ যে দিনের কথা বলেছে সেদিন আমাদের ঘুরতে বের হবার কথা ছিলো। কিন্তু সিথি'র কোন একটা সমস্যা ছিলো। যে কারনে সিথি বের হতে পারেনি। খুব কষ্ট পেলাম। সিথিকে হারানোর ভয় মনে জেকে বসেছে, নাহ আমি সেদিন কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। ওকে ফোন দিয়ে বসলাম অনেক বকা ঝকা করলাম। ও আবারো বলল তারা নাকি শুধুই বন্ধু ছিলো। হুটকরেই দেখা হয়ে গিয়েছিলো নাকি। মনটা অনেক খারাপ হয়েছিলো সেবার। এই প্রথম আমি সিথিকে সন্দেহ করতে বাধ্য হচ্ছি। ও কি অন্য কারো সাথে...... নাহ! ভাবতেই যেন কেমন লাগছে। দেখি কিছুদিন অপেক্ষা করে কি হয়।

জুনের মাঝামাঝি সময়। আমার তখন ব্যবহারিক ক্লাস হয়। কিন্তু মাধ্যমিকের ব্যবহারিক তেমন কঠিননা দেখে ক্লাস না করে ঘুরে বেড়াই। সেদিন সিথিকে ফোন করে বললাম বসুন্ধরা সিটিতে যাব,ও আমতা আমতা করে বলল যে যাবে না কি যেন কাজ আছে। আমি আর আমার কিছু বন্ধু মিলে গেলার বসুন্ধরা সিটিতে আড্ডা দিব আর বিলিয়ার্ড ক্লাবে যেয়ে কিছুক্ষন খেলব। পকেটে খুব একটা বেশি টাকা নিয়ে বের হই নাই সেদিন। আর বন্ধুদের সাথে বের হলে তেমন প্রয়োজন ও পড়েনা। সিথি তো আসবেই না বলে দিল। আট তালায় উঠব আমরা। আমি একটু পিছে হাটছিঁ ফেইসবুকে তখন একটু বেশি সময় দিচ্ছি। হঠাৎ করেই চোখটা আটকে গেল পাচঁ তালার এক্সকেলেটর এর দিকে, সিথির মত লাগছে ,সাথে একটা ছেলে। ছেলেটাকেও চিনি আমাদের এলাকারই বড় ভাই। খুব হাসি খুশি ওরা দু'জন একটু বেশিই ফ্রেনডলি মনে হচ্ছে ওদেরকে। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না। ওদের আসে পাশে থেকেই ফলো করতে থাকলাম। শেষ মেষ দেখি ওরা দুজন রিক্সায় উঠে বাড়ি ফেরার পথে রওনা দিলো। হাত ধরে রেখেছে দেখলাম। কষ্ট পাবার থেকে এবার রাগ উঠল অনেক। বাসায় এসেই ফোনে জিজ্ঞাসা করলাম যে তোমাকে আমার এক বিন্ধু দেখছে ঘটনা কি সত্যি নাকি। ও প্রথমে অস্বীকার করলেও পড়ে স্বীকার করল কিন্তু সেটা নাকি শুধু ফ্রেন্ড অন্য কিছু নাকি নয়। এবার আর ছেড়ে কথাবললাম না।অনেক কথা কাটাকাটি হলো। যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম। প্রায় সপ্তাহ পড়ে সিথি ফোন দিয়ে অনেক কান্নাকাটি করে বলল যে সে কোন দিন আর এরকম করবে না। কিন্তু ভাঙ্গা আয়না জোড়া লাগলেও দাগ একটা রেখেই যায়।
এর পরও ফেইসবুক ইউজ করা শুরু করল, প্রথম দিকে কিছুই বুঝত না কিভাবে ইউজ করতে হয়। আমার কাছ থেকেই শিখে নিত। আমিই আইডি খুলে দিয়েছিলাআম ওকে। হয়ত এটাই ছিলো আমার জীবনের অনেক বড় ভুল। আমার কাছে ওর ফেইসবুকে পাসওয়ার্ড থাকত কখনো চাইঞ্জ করত না। কিন্তু একদিন দেখি চেইঞ্জ করে রেখেছে সন্দেহ হলো। দু’দিন পরে ইমেইল এর পাসওয়ার্ড থাকার সুবাদে আইডিতে ঢুক্তে অসুবিধা হল না। কিন্তু আমার মাথায় হাত!! এগুলো কি?? এতো ছেলের সাথে লুতুপুউ ধরনের কথা বার্তা! অর্নব নামের একটা ছেলের সাথে আমার কাছ থেকে লুকিয়ে দেখা করেছে। আমি এবার আর মেনে নিতে পারলাম না। ব্রেআপটা করেই ফেললাম। ও অনেকবার ফোন দেয়া সত্বেও ধরিনি। শুধু বলেছি আমার দ্বারা তোমার মতো মেয়ের সাথে রিলেশন করা সম্ভব নয়।
এর মধ্যে আমি ওকে জেলাস করার জন্য অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করা শুরু করি, ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে অনেক কাজ করি যা দেখলে হিংসা হবারই কথা।
আমার পরীক্ষা সামনে। তাই ভেবেছি যদি প্যাচআপ করি পরীক্ষার পরে করব। এ কয়দিন চিন্তা মুক্ত থাকি। কয়দিন পরে দেখি আমি যাদের সাথে ফ্লার্ট করেছি সেগুলার খবর পেয়ে ও অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আমাকে ফিরে পাবার জন্য অনেক অনুন্য় বিনয় করছে। কিন্তু আমি এবার একটু শক্ত রইলাম। দেখি আরেকটু বাজিয়ে। এর আগেই দেখি সথি অর্নবের সাথে রিলেশনে চলে গেসে। আইডি হ্যাক করে দেখলাম সব কিছু। এবার অনেক গুলা কথা শুনালাম ওকে। মজার বিষয় হচ্ছে ওর সেই কথিত বয়ফ্রেন্ড আমার কাছে এসেই বলতেছে সিথি নাকি তার গার্লফ্রেন্ড। আমি যেন ওকে কিছু না বলি। মেজাজটা চটে গেলো, সিথিকে ফোন দেয়ার পর অনেক কিছু বললাম –অ বলল যে রকম কিছু নাই ওদের মাঝে। অর্নব নাকি এমনিতেই বলছে। এর পর একটা প্রলয় অনেক বকা।গালি।ঝগড়া অনেক কিছু।
পরীক্ষা হাতের কাছে। তাই আর বেশি দূর এগুলাম না।পরীক্ষা শেষে আমি নিজেও আর থাকতে পারলাম না ।সেদিন লিপ্সটিক খেয়ে পেট খারাপ হয়ে গেসে। সব মিটিয়ে নিলাম ওর সাথে। ভালই চলছিলো সব। কিন্তু কুকুরের লেজে যত তেলই দেয়া হোক সেটা কখনোই সোজা হবে না। এতোদিনে সিথি ফোনঅ ব্যবহার করা শুরু করেছে। এবার যেন হাতের নাগালের বাইরে তিনি। লফাঙ্গা সব কর্মকান্ড। কোন বাধ বিচার নেই। যার তার সাথে কথা বলছে। দেখ করছে। আমি কিছু বললে বলে যে আমি ওকে কি দিয়েছি? কিছুই নাকি দি নাই। ও খালি নিজেই আমাকে সত্যিকারের ভালোবেসেছে। আমি নাকি শুধু কষ্টই নাকি দিয়েছি ওকে। কথা গুলো থিক মেনে নিতে পারতামনা। মন উঠে যেতে থাকলো সিথির উপর থেকে। শুন্যতা পুরণ করতে অনেক অবলম্বন বেছে নিতাম। কিন্তু রাত শেষে সেই পুরোনো স্মৃতি! নির্ঘুম রাত্রি। এভাবে আর থাকা যায় না। অনেক হয়েছে অনেক কিছু। এর মধ্যেই অন্তরঙ ভাবে তোলা বিভিন্ন মানুষের সাথে তোলা পিক আমার হাতে আসে। যদিও খারাপ কিছু ছিলো না। তবুও আমার ভালো লাগেনি।

এভাবে ’১৩ থেকে ১৪’ এসে প্রায় শেষ হতে চলল। সিথির সাথে কোন যোগাযোগ নেই। ওকে ব্লকলিস্টে ফেলে রেখেছি। যোগাযোগের কোন মাধ্যম খোলা রাখিনি।


প্রায় তেরটা সিগারেট শেষ কথা গুলো ভাবছিলাম আর ডায়েরিতে লিখছিলাম। সন্ধ্যা নেমে এসেছে প্রায়। আলো আর বেশিক্ষন থাকবে না। একটা হিমেল হাওয়া বইছে দিঘীর পারে। প্রেমিক-প্রেমিকারা আলিংগনে আবদ্ধ। যেন কারো গায়ে ঠান্ডা না লাগে। দিঘির ওপারের বড় গাছটার পিছে এক যুগল ভাত রোমাঞ্চ করছে। সেদিকে না তাকানোই ভালো। কখন কি চোখে পড়ে যাবে।
আমি তো কখনো এমন করি নি। খোলা আকাশের নিচে এভাবে বাহুডোরে আবদ্ধ হইনি। তবে আমার কেন এরকম হল? কিংবা নষ্টামির শীর্ষে চলে যাইনি। এজন্যই বোধহয় কোন প্রকার টান অনুভব করেনি সিথি।

২০১৫ এর শুরু, আগেই বলেছি আমার জন্মদিন এ মাসেই।আনিকা নামের পারিবারিকভাবে এক মেয়ে আমাকে পছন্দ করতো। বয়সে প্রায় বছর চার-পাচেঁক ছোট হবে। আধুনিক সময়। মানুষ গুলাও আধুনিক তাই হয়ত এরকম। আনিকা আবার কোন একভাবে সিথির সাথে যোগাযোগ করে ফেলেছিলো। এর পর ওর সাথে অনেক কথা বলে আমাকে নিয়ে। দু’জন ই আমাকে পছন্দ করে। আমার জন্মদিনে সিথি কে বোকা বানিয়ে আমাকে সিথিকে দিয়ে ডাকিয়ে নিজেই আসে নাই ঐ দিন। বেশ ভালো কাজটাই করেছিলো। সেদিন অনেকটা খুশি হয়েছিলাম। এত দিন আনিকা অনেক জ্বালিয়েছে। প্রথমবারের মত আমাকে খুশি করলও । কিন্তু এই খুশি সহ্য হয় নাই বেশিক্ষন।
হাটতেঁ হাটতে প্রায় সিথির বাসার গলির দিকেই চলে এসেছি। কেউ দেখে ফেলার ভয়ও হচ্ছে না। আজ মনে হয় মনেরটান একটু বেশিই। যদিও আগের মত প্যাচআপ বা তেমন কিছু হয় নি। সিথি আমার হাত ধরে আছে। হটাৎই ওর বাবা সামনে এসে পড়ল।

আমি খেয়াল না করার ভান করে অন্য রাস্তা দিয়ে তাড়াতাড়ি হেটে চলে এলাম। পড়ে সিথি অনেক বার ফোনদিয়ে বলল যে ওর বাবা নাকি আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো। আমি পড়ে ঠিকই গিয়েছিলাম সে জায়গায় কিন্তু ওরা কেউ ছিল না। মনে মনে একটা অশনি সঙ্কেতের ডাক পাচ্ছিলাম। রাতে ঠিকই হলো আমার বাসায় ওর মা’র ফোন। কিন্তু আমার মনে হয় উনি কোন ভদ্র পরিবার থেকে নির্গত হননি। কোন বস্তি এলাকার মানুষের মত । অনেক দাপট, অনেক বাজে কথা বলল । এমন ভাব যেন উনার প্রধানমন্ত্রীর সহোদর। আমরা যেন নদীর জলে ভেসে এসেছি। অনেক কষ্টে বাবা-মা তাদের সাথে কথা বলতে যেয়ে মুখ সংযত রেখেছিলো। কিন্তু এ সংযত রাখাটাকে দুব্বলতা মনে করে আরো বেশিঅকথ্য ভাষা ব্যাবহার করতে ছিল। এবার আর আমি ঠিক থাকতে পারলাম না। নিজেই ফোনটা নিয়ে যা মিখে আসল সেভাই বললাম। কিন্তু বয়সে বড় দেখে কোন গালি দিলাম না। ভদ্র ভাষায় যতটুকু অপমান করা যায় করলাম। এর কিছুক্ষন পরে সিথি ফোন দিয়ে আমাকে যা বলল সেটা শোনার জন্য কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। যে ও আমাকে এভাবে বলতে পারে এভাবে।এতো বাজে ভাষা। এবার আমার মনের অবস্থা ভেঙ্গে পড়লেও মাথায় রক্ত উঠে গেছে। আমিও তিন বছরের রাগ সব শোধ নিলাম।
পরের দিন সিথি ওর এক বান্ধবীকে দিয়ে ফোন দিয়ে বলল যে সিথিকে নাকি জোর করে সব করিয়েছে। ওর বাবা- মা। ও নাকি ইচ্চা করে করেনি। বাধ্য করছে বলতে। কিন্তু আমি নিশ্চুপ ছিলাম। কথা একটাই বললাম আমার দ্বারা ওর মত মেয়ে আর পরিবারের সাথে সম্পর্ক করা সম্ভব না। আমার এতটুকু হলেও মানসম্মান আছে। সেই ছিল শেষ কথা। অনেকবার ফোন দিয়েছে কিন্তু যোগাযোগ করার চেষ্টাও করিনি।

আজ খুব মনে পড়ছে সিথিকে। ভাবছি একটা টেক্সট করব। উইশ করে। আমার করার আগেই ও করেছে। আমার রাগ পড়ে গেলো। হঠাৎ করেই। কিছুটা ভালোভাবেই কথা বললাম। ভেবেছিলাম যে আজ সব মিটিয়ে ফেলব।
টেক্সট গুলো ছিলো এরকম-

-তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসো?
-হুম ! ( আমি ) - একটা জোরে হাগ করবা?
- হুম !অনেক জোরে!
- আজ দুটি অধরা এক করে অনেক্ষন জড়িয়ে ধরে থাকতে ইচ্ছে করতেছে।
- হুম কর!
-আচ্ছা ফেইসবুকে এড কর আমাকে কথা আছে।
-উম! ওকে

ফেইসবুকে এখন কথা হচ্ছে সিথির সাথে প্রায় অনেকদিন পরে। কিছু কথা বলে আমি ডিনার করতে গেলাম। হঠাৎ স্মরনের মেসেজের কারণে ফোনটা হাতে নিলাম। ফেইসবুক মেসেঞ্জারে একটা স্ক্রিনশট- সিথি ইন আ রিলেশশিপ উইথ **** কেউ একজন। ভাতের লোকমাটা হাতে থেকে পড়েই গেলো। ভিতরে আর কিছু ঢুকবে না আজকে। খাবারে প্লেটটা রেখে হাত ধুয়ে সিথিকে মেসেজ করলাম এসব কি? একটু আগে তুমি আর এই তুমির মাঝে পার্থক্য এতোটা কেন উত্তরে শুধু এটুকুই ‘’ তুমি কখনোই আমাকে তমার পরিবারের সামনে আনতে পারবা না, তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে সব কর; আমি সবার সামনে করি, দোয়া কইরো যেন তোমার সাথে মানে প্রথম রিলেশনের মত যেম এ রিলেশন টা না হয়’’ । আমি শুধু বললাম ভালবাসার মর্যাদা ভালো করেই দিলা।ভাল থেকো।

কি যেন একটা নাই মনে হচ্ছে- শুধু দু’ফোটাঁ অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ল সবার অজান্তে। কি করব বুঝতে পারছিনা। আত্মহত্যা ছাড়া মনে হয় আর কোন উপায় নেই । হ্যা সেটাই করব আমি।
আজ আমার ভালবাসার স্মৃতি গুলোকে নিজ হাতে মেরে ফেলেছি আমি। হয়ত আর কোন দিন কাউকে ভালবাসতে পারব না বা কেউ আমাকে আমার মত করে ভালোবাসবে না। অতঃপর আত্মহত্যা – একটি অন্তরহীন সজীব দেহ পড়ে আছে বিছানায়। কষ্টগুলো ভুলতে শুরু করেছি। নিকোটিন আর সবুজ পাতার প্রভাব কাজ করতে শুরু করেছে…… দু’টো ঘুমের ওষুধ মাত্র গিললাম অনেক কষ্টে। আজ আমি জীবিত থেকেও মৃত।
তন্দ্রাচ্ছন চোখ হঠাৎ একটি মেসেজ-
I am sorry... Ami tmk jealous krta chaisilam Bt tmi je atota hurt hba Ami vabtew pari Na. TMI jkn req dita blsila tkn dclam req kub valoi choltasilo Bt tmi jkn blla Kawk blta Na kub kub rak othsilo tai shamlate Na pere natok ta krta hoisa.. Ami chai Ni tmi hurt how. Just chaisilam jealous how... Actually Ami tmk vulta parse Na... Tai hoitw kaj gula krsilam. Plz shotti ta bollam taw aktw halka lagtase ghumate partasilam Na. Sry.. R rltn amr dara r psble hbaw Na. Bcz tmi hoitw amr knw kisu te impress hoa love krsila. Bt Ami Mon thaka krsilam. Tai vuli nai. Ami r knw din contact krbo Na tmr sate... Atai last. Dua koiro jnw strong thaki.. Allah hafez..

আমার উত্তরে ছিল- অপু আজ মারা গেসে! ওর ভালোবাসার সত্ত্বাকে তুমি মেরে ফেলেছ । বেচে আছি তবে অনুভুতি শুন্য অসাড় মনে নিয়ে। তোমার কথা গুলো তোমার কাছেই রাখ। ভাল থেকো।


একটি প্রেম। প্রেমের উথান। প্রেমের পতন। আমি আজ নির্বাক রই ঐ দূর আকাশের পানে । পাখি উড়ছে, হাওয়া বইছে………
ভাল আছি আমি। বেশ ভাল আছি। কোন পিছিটান নেই। খুব ভালো আছি…।।


যাত্রার সময়কালঃ ১৪-০২-১২ থেকে ১৪-০২-১৫ | ভালবাসার মৃত্যু


[ ঘটনাটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক; যদি কোন ব্যক্তির জীবনের সাথে মিলে যায়, তা সম্পুর্ণ কাকতালীয়। ইহার জন্য Shihab A. Mamun কোন ভাবেই দায়ী নয়


fb: Shihab A. Mamun [ http://www.facebook.com/shihab.dipu]
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×