somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপজাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

০৩ রা জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও জনবহুল রাষ্ট্র। বেশিরভাগ বাঙালি হলেও রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপজাতি। সমগ্র জনগোষ্ঠির এক শতাংশ মাত্র। ১৯৮৪ সালের বিবিএস রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে উপজাতি জনগোষ্ঠির সংখ্যা ৮,৯৭,৮২৮ প্রায়। ১৯৯১ সালের রিপোর্টে ২৯টি উপজাতির জনসংখ্যা ১,২০,৫৯৭৮ জন বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ উপজাতিক গোষ্ঠী হল চাকমা। উপজাতিরা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রাজশাহী অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। উপজাতিগুলো হল সাঁওতাল, ওঁরাও, পাহড়িয়া, মুণ্ডা, রাজবংশী, কোঁচ, খাসিয়া, মণিপুরি, টিপরা, প্যাংখো, গারো, হাজং, মারমা, চাকমা, তংচঙ্গা, চাক, সেন্দুজ, স্ম্রো, খিয়াং, বোম, খামি, লুসাই, বুনা, ত্রিপুরা, মুরং, উরুয়া।

সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা বলছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টিতেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সংখ্যা কমেছে। অন্য ১৭ জেলায় বেড়েছে ১,৭৫,৯৭২ জন। তবে বস্তবে এই হিসাবের কোন মিল নেই। ২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদনে “এথনিক পপুলেশন” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

উপজাতি জনগোষ্ঠীদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। জাতি ভেদে, এমনকি স্থানভেদে একই উপজাতির বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সংস্কৃতির পার্থক্য দেখা যায়। তবে কিছু কিছু বিষয় সকল উপজাতির মধ্যেই প্রায় অভিন্ন। যেমন উপজাতিরা সাধারণভাবে সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাস করে। আবার কিছু কিছু বিষয় কেবল একেকটি উপজাতির নিজস্ব ব্যাপার। যেমন রাধাকৃষ্ণের প্রেম অবলম্বনে গোপনারীদের যে রাসনৃত্য তা মণিপুরীদের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব। আবির দিয়ে বসন্ত উৎসব পালন করে মণিপুরী, সাঁওতাল এবং ওরাওঁ উপজাতিরা। ফাগুয়া অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে ওরাওঁদের বর্ষ গণনা শুরু হয়। ওরাওঁ যুবক-যুবতীরা অগ্নিখেলার মধ্য দিয়ে বছরের প্রথম রাতটি উদ্যাপন করে। এসব উৎসবে বাদ্যযন্ত্র হিসেবে থাকে ঢোল, মাদল, করতাল ও বাঁশি।



বাসগৃহ সব পাহাড়ি উপজাতিই মাচার উপর বাঁশ, বেত, কাঠ ও পাতা দিয়ে ঘর তৈরি করে। ঘরে ওঠার জন্য থাকে মই। হিংস্র জন্তু-জানোয়ার যাতে উপরে উঠে আসতে না পারে সেজন্য রাতের বেলা মই সরিয়ে ফেলা হয়। মগরা বাড়ি করে সমতলে। ওরাওঁরা গোবর দিয়ে লেপেপুছে বাড়ি পরিষ্কার রাখে। তাদের ঘরগুলি সাধারণত খড়ের ছাউনিযুক্ত মাটির ঘর, তবে শোলার বেড়ার ঘরও আছে। মাটির দেয়ালে তারা লতাপাতার নকশা আঁকে। বাংলাদেশের এ উপজাতীয় সংস্কৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশের লোকসংস্কৃতিতে লক্ষণীয়।

মগ যুবক-যুবতীরা নববর্ষ পালন উপলক্ষে ঘনিষ্ঠ মেলামেশার সুযোগ পায় এবং তখন তারা অভিভাবকদের অনুমোদন সাপেক্ষে জীবনসঙ্গী বেছে নেয়। গারো, খাসিয়া, তিপরা ও মগ মেয়েরা বাজারে কেনা-বেচা করতে যায়। এ সুযোগে যুবক-যুবতীদের মধ্যে মনের মিল হয় এবং পরে অভিভাবকদের অনুমোদনক্রমে তাদের বিয়ে হয়। গারো ও মণিপুরীদের মতো সাঁওতাল এবং আরও কিছু উপজাতীয় যুবক-যুবতী একসঙ্গে মাঠে কাজ করার সময় জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়।



চাকমা ও তঞ্চংগাদের পালাগান বিশেষ জনপ্রিয় সঙ্গীত। মণিপুরী ও গারোদের মাধ্যে ঋতুভিত্তিক আচার-অনুষ্ঠান সবচেয়ে বেশি। দোল পূর্ণিমার মধ্যরাত থেকে মাসাবধি মণিপুরী যুবক-যুবতীরা মুক্তমাঠে নৃত্য করে। ধান কাটার সময়ও কর্মরত যুবক-যুবতীরা পরস্পর গান ও ছড়া কাটার মাধ্যমে আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। মালপাহাড়ি যুবক-যুবতীরাও মাতাল হয়ে রাতভর নাচগান করে। সাঁওতালরা শস্য তোলার উৎসব ‘সাহরাই’ ৩-৪ দিন ধরে সাড়ম্বরে পালন করে। এ উৎসবে সাঁওতাল যুবক-যুবতীরাও মণিপুরীদের ন্যায় নাচগান করে। এতে বাদ্যযন্ত্র থাকে মাদল, দমা ও বাঁশি।

মণিপুরী ও সাঁওতালদের ন্যায় গারো যুবক-যুবতীরা ‘ওয়াংগালা’ অনুষ্ঠানে সম্মিলিত নাচগান করে। শস্য বপন ও আহরণের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক রয়েছে। গোটা উপজাতিটি এ সময় আনন্দে মেতে ওঠে। গভীর রাতে গারো যুবক-যুবতীরা মদ্যপাত্র হাতে নিয়ে নৃত্য করে। এ নৃত্যে মহিষের শিংয়ের শিঙ্গাউচ্চস্বরে বাজে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজনা ও নৃত্যও উদ্দাম হয়। যুবক-যুবতীরা নৃত্যের তালে-তালে স্ব-স্ব প্রিয়জনের মুখে বারংবার মদ ঢেলে দেয়। গারোদের এ ওয়াংগালা অনুষ্ঠানে যে তান্ডব নৃত্য করা হয় তার লক্ষ্য অশরীরী অপশক্তিকে ভয় দেখিয়ে বশ করা। তারা ভোগ দিয়েও অপশক্তিকে বশ করার চেষ্টা করে। মগরা গানবাজনা, নৃত্য ও মদ্যপানে মত্ত হয়ে মগি (মঘি) সালের প্রথম তিন দিন অতিবাহিত করে।


বিবাহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপজাতিতে সাদৃশ্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বৈসাদৃশ্যও। পূর্বরাগ উপজাতীয় বিবাহের মূল সূত্র, তবে তা অবশ্যই প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী হতে হবে। ওরাওঁদের মধ্যে বাল্যবিবাহ এবং চৈত্র, ভাদ্র ও পৌষ মাসে বিবাহ নিষিদ্ধ। বরপক্ষ কনেপক্ষকে পণ দেয়। পাত্রীদেখা, পানচিনি, গায়ে হলুদ ইত্যাদি তাদের প্রাকবিবাহ অনুষ্ঠান। বিবাহের দিন উভয় পক্ষের মেয়েরা বিয়ের গীত গায়। ওরাওঁ ও মণিপুরীরা বর্ণাঢ্য বিবাহমন্ডপ তৈরি করে। ওরাওঁ’রা মঙ্গলঘট বসায়। মন্ডপে বর-কনে পরস্পরের কপালে সিঁদুর দেয় এবং উভয় পক্ষের মেয়েরা তখন উলুধ্বনি দেয়। ওরাওঁ ও মণিপুরীদের মধ্যে বিয়ের পূর্বক্ষণে বর-কনে মন্ডপ প্রদক্ষিণ করে এবং ধান-দুর্বা দিয়ে তাদের বরণ করা হয়।

চাকমাদের মধ্যে অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও গ্রহণের সময় বিবাহ নিষিদ্ধ। ওরাওঁ, সাঁওতাল, খাসিয়া, গারো এবং মণিপুরীদের মধ্যে গোত্রবিবাহ নিষিদ্ধ। মণিপুরীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় না। গারোদের সমগোত্রীয় যুবক-যুবতীদের মধ্যে থাকে ভাই-বোনের সম্পর্ক। মগদের গোত্রবিবাহ বিধিসম্মত, বরং আন্তঃগোত্রীয় বিবাহ তাদের অপছন্দ। তবে চাচাতো-মামাতো বোন ও খালা-ফুফুকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ।

মণিপুরী বিবাহে মন্ডপে প্রদীপ জ্বালিয়ে বরকে স্বাগত জানানো হয় এবং একজন কিশোর তার পা ধুইয়ে দেয়। এ সময় কীর্তন আর বাজনা চলে এবং উভয় পক্ষের দুজন মহিলা দুটি টাকি মাছ পানিতে ছেড়ে দেয়। বর-কনের প্রতীক এ মাছ দুটি পাশাপাশি চললে শুভ, অন্যথায় অশুভ। অনুরূপ একটি অনুষ্ঠান গারোদের মধ্যেও প্রচলিত। তারা একজোড়া মোরগ-মুরগি জবাই করে ছেড়ে দেয় এবং সেদুটি দাপাদাপি করে একত্র হলে শুভ, না হলে অশুভ। অশুভ হলে খামাল (ওঝা) অশুভ দূর করে। বিবাহের শুভ কামনায় অনেক সময় দেবতাকেও ভোগ দেওয়া হয়। বিবাহের পঞ্চম দিনে মণিপুরী কনে প্রথম পিতৃগৃহে আসে। এ উপলক্ষে তখন ভূরিভোজ হয়। উপজাতিদের প্রত্যেক অনুষ্ঠানেই গোত্রের সকলে নিমন্ত্রিত হয় এবং নিমন্ত্রিতরা চাল, মাংস, মোরগ, শূকর, টাকা, মদ ইত্যাদি উপহার দেয়।

সাঁওতাল বধূরা স্বামীর গোত্রভুক্ত হয়। স্ত্রী বন্ধ্যা কিংবা পাগল না হলে মগ পুরুষদের পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ, তবে বিধবাবিবাহ সিদ্ধ। ওরাওঁদেরও তাই। গারো মেয়েরা অনেক সময় পছন্দসই যুবককে ধরে নিয়ে বিয়ে করে ঘরজামাই করে রাখে। এরূপ বিবাহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন আর না থাকলেও কোনো কোনো উপজাতিতে স্বেচ্ছায় পলাতক বিয়ে হয় এবং পরে অভিভাবকরা তা অনুমোদন করে। ওরাওঁদের মধ্যে এরূপ বিবাহের প্রাচুর্য দেখা যায়। ওরাওঁ ও সাঁওতাল বধূরা সিঁদুর পরে। উভয় উপজাতির মধ্যেই সিঁদুরের ব্যবহার ব্যাপক। মগ ছাড়া অন্য সব উপজাতির মধ্যে স্বগোত্রে বিবাহ অপমানজনক এবং এজন্য সংশ্লিষ্টদের গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়।

খাসিয়াদের বিয়ে না করা পাপ। স্বামীর নপুংসকতা কিংবা লাম্পট্য, অধিক সন্তান, যৌনস্পৃহা ইত্যাদি কারণে খাসিয়া রমণীরা একসঙ্গে একাধিক স্বামী রাখতে পারে, তবে এরূপ ঘটনা বিরল। অন্য কোনো উপজাতিতে স্ত্রীর একাধিক স্বামী কিংবা উপপতি রাখা কঠিন শাস্তিযোগ্য। খাসিয়া যুবতীরা অনুমোদিত গোত্র থেকে পছন্দসই কোনো যুবককে আমন্ত্রণ করে এনে কয়েকদিন সহাবস্থানের পর সন্তোষজনক মনে হলে উভয় পক্ষের আলোচনাক্রমে তাকে বিয়ে করতে পারে। এদের বিবাহে মহিলারা বরযাত্রী হতে পারে না, কিন্তু ওরাওঁ উপজাতিতে পারে।

মা ও মুরবিবদের আশীর্বাদ নিয়ে পাগড়ি ও ধুতি পরিহিত খাসিয়া বর মাতৃগৃহ ত্যাগ করে; সঙ্গে থাকে বরযাত্রীরা। তাদের বিবাহভোজ হয় ভাত-শুঁটকি দিয়ে, তারপর মদ্যপান। নবদম্পতির মঙ্গল কামনায় দেবতার উদ্দেশ্যে তিন টুকরা শুঁটকির ভোগ দেওয়া হয়। মাতৃতান্ত্রিক খাসিয়া ও গারো উপজাতিতে বর হয় ঘরজামাই। চাকমাদের দু পক্ষের মধ্যে মদ্য বিনিময়ের পর কনের বাড়িতে বিবাহ অনুষ্ঠান হয়। মণিপুরীদের বিবাহবেশ হচ্ছে বরের ধুতি-পাগড়ি ও কপালে চন্দনতিলক, আর কনের পোশাক রাসনৃত্যে গোপিনীদের মতো।

কতিপয় উপজাতিতে তালাক দেওয়ার রীতি থাকলেও তা বিরল। সাঁওতাল এবং ওরাওঁদের মধ্যে তালাক সিদ্ধ, তবে অকারণে তালাক ঘৃণ্য। মনোমালিন্য, যৌন-অক্ষমতা, স্ত্রীর পরকীয়া প্রেম ইত্যাদি তালাকের কারণ। ওরাওঁ, খাসিয়া, চাকমা ও মগদের মধ্যে তালাক বিধিসম্মত হলেও তা কদাচিৎ হয়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বর-কনে উভয়ের এবং গোত্রপতিদের সম্মতিতে তালাক হয়। এজন্য দায়ী ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। চাকমা ও মগদের বিধান হলো, তালাক দেওয়া মায়ের শিশুসন্তান থাকলে তাদের খোরপোষের ভার পিতার। খাসিয়া সমাজে প্রথমে স্বামী-স্ত্রী কিংবা যে-কোনো একজন সংশ্লিষ্ট সমাজপতিকে তালাকের কথা জানায়। তিনি সমঝোতার জন্য তাদের সময় দেন এবং তারা সমঝোতায় ব্যর্থ হলে তালাকের ঘোষণা দেওয়া হয়। তালাকের জন্য দায়ী ব্যক্তি অপর জনকে কিছু জরিমানা দিতে হয়। খাসিয়াদের মধ্যে সাধারণত স্ত্রীর কারণেই তালাক হয়। আর স্বামীর কারণে যদি তালাক হয় তাহলে তাকে বেত ও জুতা মারা হয় এবং মুখে চুনকালি মাখিয়ে ও মাথা কামিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়। সন্তানসম্ভবার তালাক নিষিদ্ধ। স্বামীর মৃত্যুর এক বছর পর বিধবাবিবাহ সিদ্ধ।

গারোদের সাংসারেক এবং চট্টগ্রামও পার্বত্য চট্টগ্রামের কতিপয় উপজাতির বৌদ্ধধর্ম ছাড়া অন্য কোনো উপজাতির সুনির্দিষ্ট কোনো ধর্ম নেই। প্রাচীনকাল থেকে প্রচলিত সংস্কার, বিশ্বাস ও প্রথাই তাদের ধর্ম। গারোদের সাংসারেক ধর্মও এখন বিলুপ্তপ্রায়। তাদের অধিকাংশই এখন খ্রিস্টধর্মাবলম্বী। তবে সাংসারেক ধর্মের পর্ব-পার্বণও তারা কিছু কিছু পালন করে। সাঁওতালরা অধিকাংশই খ্রিস্টান, কিন্তু তারা স্ব-স্ব প্রচলিত প্রথা মেনে চলে। ওরাওঁ, মণিপুরী এবং বৌদ্ধ উপজাতিগুলির মধ্যে অমাবস্যা-পূর্ণিমা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পূর্ণিমায় তারা বহুবিধ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করে। ওরাওঁরা ডাক ও খনার বচনে বিশ্বাসী। যাত্রার শুভাশুভ সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস খনার বচনের অনুরূপ, যেমন যাত্রাকালে হোঁচট খাওয়া, পিছু ডাক, টিকটিকির ডাক, মৃত্যুসংবাদ, লাশ দেখা, মরাডালে কাকের ডাক, শূন্য/পূর্ণ কলস দর্শন ইত্যাদি সংস্কার তারা মেনে চলে।

ওরাওঁ’রা পূর্বদিক থেকে হাল চালনা করে এবং শুভদিন দেখে গৃহ নির্মাণ করে। রাতে কেশবিন্যাস করা, মহিলাদের চুল বাইরে ফেলা, সূর্যাস্তে ঘর ঝাড়ু দেওয়া, সন্ধ্যাবেলা কাউকে কিছু দেওয়া, রাতে পেঁচার ডাক ও কুকুরের কান্না ইত্যাদি তাদের নিকট অশুভ। রমণী বশীকরণ, গাভীর প্রথম দোহনের দুধ দান করা, প্রসূতি ও ঋতুবতীর গোশালায় না যাওয়া, ভাসুরের নাম উচ্চারণ না করা, মন্ত্রতন্ত্র ও ডাইনিতে বিশ্বাস করা ইত্যাদিও ওরাওঁ সমাজে প্রচলিত রীতি।

ওরাওঁদের বিশ্বাস মানুষের রোগবালাই, অকালমৃত্যু ইত্যাদির জন্য ডাইনিরাই দায়ী। তারা ডাইনিদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কবিরাজের শরণাপন্ন হয়। ওরাওঁদের বিশ্বাস, মৃতভূমিষ্ঠ শিশুর প্রেতাত্মাও পুনর্জন্ম নেয়। কবিরাজরা এসব অনভিপ্রেত শক্তির আবির্ভাবকে বন্ধ করতে পারে। ওরাওঁ গর্ভবতীর ইঁদুর ও বাইন মাছ খাওয়া নিষেধ। এতে জাতক কদাকার হবে বলে তাদের বিশ্বাস। প্রসবের পর ওরাওঁ প্রসূতির খেসারির ডাল, আলু, ঠান্ডা পানি ও বাসি খাবার খাওয়া নিষেধ। মণিপুরীরা খোলা চুলে গর্ভবতীকে বাইরে যেতে দেয় না; রাতে দূরে কোথাও যাওয়া এবং নদী/সাঁকো পার হওয়াও তাদের জন্য নিষিদ্ধ।

গারোদের মধ্যে ডাইনি-বিশ্বাস না থাকলেও তাদের বিশ্বাস, কোনো কোনো মানুষ রাতে বাঘ হয়ে গৃহপালিত পশু ধরে নিয়ে খেয়ে ফেলে; হিংস্র জন্তুর আক্রমণে নিহত ব্যক্তি জন্তু-জানোয়ার হয়ে পুনরায় জন্মগ্রহণ করে বলে তারা বিশ্বাস করে। মালপাহাড়িদের বিশ্বাস বিবাহ ও সন্তান প্রসবের সময় মা ও শিশুকে ভূতে ধরতে পারে। সেজন্য তারা সব সময় সতর্ক থাকে। খাসিয়া ও মুন্ডাদের বিশ্বাস, মৃতশিশু ও পূর্বপুরুষদের প্রেতাত্মা ঘরে আসতে পারে। এজন্য তারা প্রেতাত্মার উদ্দেশ্যে পাথরের বেদি নির্মাণ করে। সব উপজাতিই গৃহদেবতায় বিশ্বাসী। তাদের মঙ্গলামঙ্গল এ গৃহদেবতার খুশি-অখুশির ওপর নির্ভর করে।

সৃষ্টিতত্ত্ব গারোদের মতে নাস্ত্তনপান্তু নামক এক রমণী সাগরতলা থেকে কচ্ছপের আনা এক মুঠো মাটি দিয়ে ভূমি তৈরি করে এবং সূর্যদেবের সাহায্যে শুকিয়ে তা বাসোপযোগী করে। মণিপুরী পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে পরম পুরুষ গুরু শিদারা ভূমন্ডল সৃষ্টির পরিকল্পনায় প্রথমে ৯+৭ জন দেবদেবী সৃষ্টি করেন। পৃথিবী তখন জলমগ্ন। দেবতারা স্বর্গ থেকে মাটি নিক্ষেপ করতে থাকেন, আর দেবীরা চক্রাকারে নৃত্য করে নিক্ষিপ্ত মাটি সমান করে ভূতল সৃষ্টি করেন। খাসিয়াদের বিশ্বাস থ্যু ব্লৌউ প্রথমে পৃথিবী, তারপর একজোড়া নর-নারী সৃষ্টি করেন। এভাবেই মানব জীবনের উদ্ভব ঘটে। তাদের বিশ্বাস, মা থেকেই মানব জাতির উদ্ভব।

কৃষিকাজ কোনো কোনো উপজাতি ভূমিকে মা মনে করে, তাই শস্য বপনের সময় তারা ভূ-মাতার পূজা করে। ওরাওঁরা শস্যক্ষেত্রকে আভূমি প্রণাম করে। তারা এও বিশ্বাস করে যে, ভূ-মাতার ঋতুস্নান হয় বলেই শস্য উৎপাদিত হয়। এজন্য তারা ভূ-মাতার ঋতুকালে বিভিন্ন পর্ব পালন করে। কোনো কোনো উপজাতি ভূমিকে গর্ভবতী নারীর মতো সাধ খাওয়ায়। ওরাওঁ এবং সাঁওতালরা কৃষিযন্ত্র পাতিতে শ্রদ্ধাবশত সিঁদুরের ফোঁটা দেয়। গারো ও মণিপুরীদের মতো সাঁওতাল এবং আরও কিছু উপজাতীয় নারী-পুরুষ একসঙ্গে মাঠে কাজ করে। জঙ্গল সাফ ও চাষের কাজ করে পুরুষরা, আর উৎপাদনের প্রতীক মেয়েরা করে বপন-রোপণের কাজ। শস্য বপন ও কর্তনের সময় প্রায় সব উপজাতিই স্বকীয় পদ্ধতিতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান পালন করে। যুবক-যুবতীরা পরস্পর গান ও ছড়া কাটার মাধ্যমে মাঠ থেকে পাকা ফসল ঘরে তোলে।


পোশাক-পরিচ্ছদ ওরাওঁসহ আরও অনেক উপজাতির সাধারণ পোশাক ধুতি-শাড়ি। এক সময় কোনো কোনো উপজাতি দেহের নিম্নাংশে বৃক্ষপত্র এবং গারোরা পাতলা কাপড়ের ন্যায় এক প্রকার বৃক্ষবল্কল পরিধান করত। নিম্ন স্তরের গারোরা আজও নেংটি পরে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বর্তমানেও কোনো কোনো উপজাতির কটিবসন বৃক্ষপত্র। সাঁওতালি পোশাকের নাম পাঁচি, পাঁচাতাত ও মথা। চাকমাদের প্রধান পরিধেয় লুঙ্গি; শার্টের ওপর পরা হয়। গামছা তাদের একটি চিরাচরিত পোশাক। মেয়েদের পোশাক একখন্ড লাল-কালো কাপড়, চাকমা ভাষায় যাকে বলা হয় পিন্ধন; আর গায়ে পরা হয় ব্লাউজের মতো সিলুম। মগরা বুক থেকে হাঁটু পর্যন্ত থামি এবং ফুলহাতা ব্লাউজ পরে।


সাজসজ্জা উপজাতীয়দের অলঙ্কারে বৈচিত্র্য কম। উত্তরবঙ্গীয় উপজাতীয়দের গহনাপত্র প্রায় একই রকম। সাঁওতাল ও ওরাওঁরা হাত, পা, নাক, কান ও গলায় গহনা পরে। ওরাওঁরা চূড়া করে চুল বাঁধে এবং টিকলি পরে। চাকমা মেয়েরা চুড়ি, খাড়ু, গলায় টাকার ছড়া এবং বড়ো ছিদ্র করে কানবালা পরে। গারো মেয়েরা খোপায় ফুল গোঁজে। মগ মেয়েরা ‘সানাকা’ নামক এক প্রকার বনজ পাউডার মেখে মুখ উজ্জ্বল করে।

খাদ্যপানীয় উপজাতিরা তাদের টোটেম ছাড়া আর সবই খায়। বিড়াল গারোদের টোটেম, তাই তারা বিড়াল খায় না। মগ, চাকমা ও খাসিয়ারা গোমাংস এবং গারোরা গোদুগ্ধ খায় না। মগ ও চাকমা নর-নারী ধূমপানে অভ্যস্ত। টক ও পচা চিংড়ির প্রস্ত্তত খাদ্য তাদের প্রিয়। ওরাওঁরা ইঁদুর, বাইন মাছ, আলু, খেসারির ডাল ইত্যাদি খায়। ভাতপচানো মদ সব উপজাতিরই প্রিয় পানীয়।

সামাজিক বিধিবিধান মাতৃতান্ত্রিক উপজাতিতে পুরুষ সম্পত্তির ওয়ারিশ নয়। ছেলেরা যেমন মাতৃগৃহে, তেমনি স্ত্রীগৃহেও অবহেলিত। মায়ের মৃত্যুর পর গারো কন্যাদের পিতার প্রতি কোনো দায়িত্ব থাকে না, কিন্তু খাসিয়াদের মধ্যে তা অবশ্য পালনীয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি ও সাঁওতালরা গোত্র প্রধানকে বলে রাজা, আর খাসিয়ারা বলে মন্ত্রী। প্রায় সব উপজাতিতেই যৌন-ব্যভিচার দোষণীয়। প্রাকবিবাহ যৌনসম্পর্ক হলে সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বিবাহ অবশ্য কর্তব্য। ওরাওঁরা নবজাতকের মুখে প্রথম দেয় ছাগী কিংবা মায়ের দুধ, অন্যরা দেয় মধু; আর প্রসূতিকে খেতে দেয় হলুদ-পানি।

প্রায় সব উপজাতিই অশরীরী অপশক্তি থেকে শিশু ও মাকে রক্ষার জন্য ঘরের চতুর্দিকে কাঁটার বেড়া দেয়; ওঝা-বৈদ্যরা ঘর বন্ধন করে এবং ঝাড়ফুঁক দেয়। ওরাওঁরা শিশুর শিয়রে দা, তীর ইত্যাদি রাখে, কখনও কখনও তীরও ছোঁড়ে। চাকমা এবং মগ প্রসূতিরা প্রসবের পর কয়েকদিন গোসল করে না। জন্মের ৬ষ্ঠ দিনে মণিপুরীরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জাতক, প্রসূতি ও প্রসূতিগৃহ পরিশুদ্ধ করে। জন্মের পরই শিশুর কানের লতি ফুঁড়ে দেয়। গারোরা শিশুর সুন্দর নাম রাখে না প্রেতের কুদৃষ্টি এড়াবার জন্য। ওরাওঁরা সাধারণত জন্মের ৫ম দিনে পূর্বপুরুষের নাম কিংবা জন্মবারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিশুর নামকরণ করে। শূকর, কুকুর, মোরগ ইত্যাদি উপজাতীয়দের গৃহপালিত পশু। ওরাওঁরা গরুর খুব যত্ন নেয়। কোনো কোনো উৎসব উপলক্ষে তারা গরুর গা ধুইয়ে তেল মেখে দেয়। বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে তারা আঙ্গিনায় আল্পনা আঁকে, গোশালায় ধূপ জ্বালায় এবং প্রতি অমাবস্যার পরদিন কৃষি যন্ত্রপাতি ধুয়ে তাতে সিঁদুর লাগায়।


মৃতের সৎকার পূর্বপুরুষের অসন্তুষ্ট আত্মা যাতে কোনোরূপ বিঘ্ন সৃষ্টি না করে সেজন্য মৃতের উদ্দেশ্যে উপজাতিরা পশু উৎসর্গ করে এবং কান্না করে। তারপর সাধ্যমতো উপঢৌকনসহ মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ও শ্রাদ্ধকর্ম করে। প্রেতসন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক সময় তারা মানুষও উৎসর্গ করত। উপজাতি ভেদে এসব প্রক্রিয়া কিছুটা ভিন্নতর হলেও একটা মৌলিক ঐক্য রয়েছে। কুষ্টিয়ার আদিবাসীরা মৃতদেহকে অবিলম্বে কবরস্থ করে এবং শবযাত্রীরা নদীতে গোসল করে বাড়ি ফেরে।

মগ ও চাকমারা শব দাহ করে। তার আগে লাশ দু-তিন দিন ঘরে রেখে দেয়; পুরোহিতের লাশ দু-তিন মাসও রাখে। মণিপুরীরা মুমূর্ষু ব্যক্তিকে ঘরের বাইরে কলাপাতায় শুইয়ে হরিনাম কীর্তন করে। মৃত্যুর পর উত্তরমুখী করে শুইয়ে শব ধৌত করে এবং কীর্তন করতে করতে শ্মশানে নিয়ে যায়। পূর্বে মণিপুরীরা মৃতদেহ কবর দিত, বর্তমানে কিশোর বয়স পর্যন্ত কবর দেয় এবং তদূর্ধ্ব বয়সীদের দাহ করে। সৎকার শেষে শবযাত্রীরা স্নান করে আগুনে হাত সেঁকে ঘরে ঢোকে।

মৃতের উত্তরাধিকারী অশরীরী অপশক্তির হাত থেকে বাঁচার জন্য হাতে কিছুকাল একটা দা রাখে। সৎকারের পর পরিবারের লোকেরা বারোদিন নিরামিষ এবং দুদিন দুধ-কলা খায়। তারপর শ্রাদ্ধ ও সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। বাৎসরিক শ্রাদ্ধ ও প্রতি ভাদ্রমাসে তর্পণ অনুষ্ঠান হয় এবং তখন ভুরিভোজ ও বিগত পাঁচ পুরুষের উদ্দেশ্যে ভোগ দান করা হয়। ওরাওঁদের মধ্যে মৃতের সৎকারের পর পরিবারের লোকেরা মাথা মুন্ডন করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×