রাজনৈতিক বন্দী
ঢাকা জেল
১২-১১-৫৮
আব্বা,
আমার ভক্তিপূর্ণ ছালাম গ্রহণ করবেন ও মাকে দিবেন। মা এবার খুব কষ্ট পেয়েছিল, কারণ এবার তার সামনেই আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। দোয়া করবেন মিথ্যা মামলায় আমার কিছুই করতে পারবে না। আমাকে ডাকাতি মামলার আসামীও একবার করেছিল। আল্লা আছে, সত্যের জয় হবেই।
আপনি জানেন বাসায় কিছুই নাই। দয়া করে ছেলেমেয়েদের দিকে খেয়াল রাখবেন।বাড়ি যেতে বলে দিতাম।কিন্তু ওদের লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাবে। আমাকে আবার রাজবন্দী করেছে, দরকার ছিল না। কারণ রাজনীতি আর নাই, এবং রাজনীতি আর করবো না। সরকার অনুমতি দিলেও আর করবো না। যে দেশের মানুষ বিশ্বাস করতে পারে যে আমি ঘুষ খেতে পারি সে দেশে কোনো কাজই করা উচিত না।এ দেশে ত্যাগ আর সাধনার কোনো দামই নাই। যদি কোনদিন জেল হতে বের হতে পারি তবে কোন কিছু একটা করে ছেলেমেয়ে ও আপনাদের নিয়ে ভাল ভাবে সংসার করবো। নিজেও কষ্ট করেছি, আপনাদেরও দিয়েছি। বাড়ির সকলকে আমার ছালাম দিবেন। দোয়া করতে বলবেন। আপনার ও মায়ের শরীরের প্রতি যত্ন নিবেন। চিন্তা করে মন খারাপ করবেন না। মাকে কাঁদতে নিষেধ করবেন। আমি ভাল আছি।
আপনার স্নেহের
মুজিব
NB: গোপালগঞ্জের বাসাটা ভাড়া দিয়া দেবেন। বাসার আর দরকার হবে না।
মুজিব
--------------------------------------------------------------------
বঙ্গবন্ধুর এ চিঠিটা খুবই গুরুত্বপূর্ন ছিল। উনি দেশের মানুষের প্রতি একটা অভিমান পোষন করছিলেন এবং সে অভিমান থেকে রাজনীতি ছেড়ে দেবারও চিন্তা করছিলেন। ভাল যে উনি শেষ পর্যন্ত সেটা করেননি আর আমরা তাই জাতির পিতাকে পেলাম।
আমাদের দেশে যখন এখনো ৫০ ভাগের মতো লোক লিখতে পড়তে জানে না, ৬০ ভাগের বেশী লোকের বয়স ৩০ এর কম, তখনও যোগ্য লোকরা ঠিক মতো মুল্যায়িত হবেন, সবসময় তা আশা করি না। বরং যোগ্য লোকদের একটা কিছু করার উদ্যোগ যদি বাধাগ্রস্থ না হয় বা অতি উৎসাহী কারো দ্বারা ক্ষতির সম্মুখিন না হয়, তাহলে বরং আমি অবাকই হবো।
বঙ্গবন্ধুর বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার পথটা মোটেই সহজ ছিল না। এখনো নতুন কারো নেতৃত্বের যোগ্যতার প্রমান দেয়া সহজ নয়। কিন্তু তাই বলে কেউ যেন হাল ছেড়ে না দেই। বরং দ্বিগুন উৎসাহের সঙ্গেই যেন স্বীয় উদ্যোগে লেগে থাকি।
দেশপ্রেমের প্রমান আপনার কি অর্জন সেটা নয়। বরং আপনি কতখানি বাধা বিঘ্ন সহ্য করে দেশের প্রতি আপনার সবগুলো দায়িত্ব পালনে কতখানি চেষ্টা করে গেছেন সেটাই। বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্ম অনেক ভাল নেতা পাবার অধিকার রাখে। আশা করছি এখন যাদের আমরা সামনের দিকে আনার বা আমাদের নেতৃত্ব দেবার জন্য তৈরী করতে চাচ্ছি, তারা কিছু বাধা বিঘ্নতে একেবারে মুষড়ে পড়ে হাল ছেড়ে দিবেন না কখনো।
জয় বাংলা।