somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন ‘পরিবর্তন চাই’?

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৯জানুয়ারী আমার পরিবার সহ ঢাকার বাইরে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। ব্যাগ গোছগাছ করে সবাই তৈরী। প্রতিবছরই অন্তত একবার এসময়ে আমরা কোথাও বেড়াতে যাওয়ার চেষ্টা করি। তার উপর আগের অন্তত তিনমাস নিজের ব্যবসা, পরামর্শকের চাকরী এবং সর্বোপরী ‘দেশটাকে পরিষ্কার করি দিবস ২০১৪’ আয়োজক কমিটির একজনের দায়িত্ব পালনে এতো ব্যস্ত ছিলাম যে নিজের ও পরিবারের প্রতি একদমই সময় দেয়া সম্ভব হয়নি। আমার তাই একটা ছুটির খুব পাওনা ছিল।

কিন্তু আমরা যেতে পারি নাই। কারন সেদিন টানা পঞ্চম দিনের মতো ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে অবরোধ চলেছে। সে থেকে আজ অবধি টানা অবরোধ চলছেই। গতকাল ৪ই ফেব্রুয়ারী টানা অবরোধের এক মাস পূর্ন হলো।

২০১৩ এর নভেম্বর-ডিসেম্বরের জ্বালাও পোড়াও ঘটনাগুলো আমার খুব ভাল মনে আছে। আসলে সে সময়ই আমরা কয়েকজন ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে একত্রিত হই। আমরা অনুভব করি আমাদেরকে অবশ্যই এ অরাজকতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। শুরু হয় “পরিবর্তন চাই” এর পথচলা।

আমরা সিদ্ধান্ত নেই সকল অনিয়ম, অরাজকতার আর অসংগতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে পরিবর্তন চাই। আমরা সিদ্ধান্ত নেই পরিবর্তন চাই কখনোই কোন রাজনৈতিক দলে পরিনত হবে না। কিন্তু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সহ সমাজের ও দেশের সকল দৈন্যতা, অনিয়ম আর অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে পরিবর্তন চাই। এ লেখায় আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন কোন পরিবর্তন চাই এবং কেন চাই তার একটি লিষ্ট করার চেষ্টা করব।

রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে:
রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মনে হয় সেটা হলো দলগুলোর মধ্যে গনতন্ত্রের চর্চার কোন বালাই নেই। দলগুলো এবং তাদের অংগসংগঠনগুলো কখনোই কোন গনতান্ত্রিক চর্চার ধার ধারে না। কেবলমাত্র ছাত্র সংগঠনগুলো যদি প্রকৃত গনতন্ত্রের চর্চা করতে পারত তাহলেও দেশের রাজনীতিতে অনেক গুনগত পরিবর্তন আসতে থাকত।

আমি দেশের রাজনীতিতে অন্তত এ পরিবর্তনটি চাইই চাই।

অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে:
গত ২৪ বছরে গণতান্তিক(?), আধাগণতান্তিক ও অগণতান্ত্রিক শাসনামলে জিডিপির হার সবসময় মোটামুটি ৫ থেকে ৬ এর মধ্যেই ছিল। তারমানে এ সময়কার সবচেয়ে ভাল সরকারটির সবচেয়ে খারাপটির থেকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অর্জন জিডিপির মোটামুটি ১ শতাংশ এর মতো।

এ কথাটি আরেকটু সরাসরি ভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের নিয়মিতভাবে মোটামুটি উচ্চ জিডিপি অর্জনের ক্ষেত্রে সরকারগুলোর আসলে তেমন কোন ভূমিকা নেই। বরং এ অর্জনে মূল ভূমিকা রেখেছে এ দেশের কৃষক, প্রবাসী শ্রমিক, পোশাক কর্মীরা।

আমি এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। বাংলাদেশ দুই অংকের জিডিপি অর্জন করুক। যেখানে সরকার ও বেসরকারি উদোক্তা সকলের সমান অংশীদারিত্ব থাকবে। আমি চাই দেশে যথেষ্ট পরিমাণে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে। গভীর সমুদ্র বন্দর হবে, ঢাকা থেকে প্রতিটি জেলায় সবোর্চ্চ তিন ঘন্টায় পৌঁছানো যাবে নিরাপদে, দেশ প্রকৃতই আধুনিক এবং বসবাসের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হবে।

সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে:
সামাজিক সূচকগুলোতে বাংলদেশের অর্জন প্রভূত। আমার প্রশ্ন হলো এরচেয়ে ভালো কি হতে পারতো না?

অবশ্যই পারত। এখনো এদেশের মেয়েরা একাকী চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। প্রতিটি সড়ক ও রেল, বাস স্টেশন জুড়ে ভবঘুরেদের মেলা ,ফুটপাত জুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় কিছু দামী এবং বেয়াদব মোটরসাইকেল। যেখানে সেখানে ময়না ফেলার ক্ষেত্রে কোনরকম দ্বিধাবোধ আমাদের মধ্যে কাজ করেনা, ম্যানহোলের ঢাকনা ও চুরি হয়ে যায়, চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছুঁড়ে মানুষ মারার ঘটনা ও এ দেশে ঘটছে। ধর্মগুরুদের দ্বারা বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েদের যৌন. হয়রানির ঘটনা এ দেশে প্রচুর।

এ সমস্যা গুলো পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। সমস্যা হলো প্রায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে ঘটনা গুলোর কোন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেই, প্রতিকারতো আরও নেই।

আমি এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। চাই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তার নিজ নিজ পেশাগত ও অন্যান্য দায়িত্ব সততার সাথে পালন করতে পারবে। কাউকে অনিচ্ছাস্বত্তেও অসৎ পন্থা অবলম্বন করতে হবে না, মামা চাচার দোহাই দিতে হবে না। নিজ নিজ যোগ্যতার বলেই সবাই নিজের অবস্থান তৈরি করবে। সঠিক ও ন্যায় কাজ করার জন্য কাউকে তিরস্কৃত হতে হবে না।

পরিশেষ:
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অর্জন কোন সন্দেহ নাই এতে। আমরা তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের গৌরব থেকে বঞ্চিত। কিন্তু আমরা যদি উপরের পরিবর্তন গুলো সত্যিকার অর্থেই আনতে পারি, তবে সে অর্জন ও কোন অংশে মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে কম হবে না। বরং এ অর্জন আমার দৃষ্টিতে আরো অনেক বড় অর্জন।

নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারা কি এ পরিবর্তনগুলো আনার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত?

পরিবর্তন চাই্ এর লিংক এখানে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×