আপনার বই দ্য গড ডিলিউশন সম্পূর্ণ ঈশ্বরবিশ্বাস নিয়ে লেখা। ঈশ্বরবিশ্বাস নিয়ে আলোচনা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আমার মনে হয় এটা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ সারা পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনো উপায়ে কোনো ঈশ্বর নামক কোনো এক মহান শক্তিকে বিশ্বাস করে থাকে। আমার মনে হয় তাদের এরকম ধারণা ভুল। আমার বইতে আলোচনা করেছি এরকম প্রমাণ-বিহীন বিশ্বাস কিভাবে মানুষের ক্ষতিও করতে পারে।
ঈশ্বরবিশ্বাস কি বিজ্ঞানের এক্তিয়ারে পড়ে?
আমার বইয়ের একটি মুখ্য আলোচ্য বস্তু ছিল যে কেন ঈশ্বরবিশ্বাস বিজ্ঞানের এক্তিয়ারে আসা উচিত। কারণ বিজ্ঞানের কাজ হল বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড সম্পর্কে সমস্ত তথ্য আর সূত্র উন্মোচন করা। এখন, যদি আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি তাহলে আমাদের বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড সম্পর্কে তত্ত্বগুলোই অন্য চেহারা নেবে। ঈশ্বরবিহীন এক দুনিয়া, যাতে আমি বিশ্বাস করে থাকি, শুরু হয়েছে খুব সরল অবস্থা থেকে এবং ক্রমাগত জটিল অবস্থার দিকে এগিয়ে গেছে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (যেমন বিগ ব্যাং বা বিবর্তন)। অন্যদিকে, ঈশ্বরযুক্ত একটা দুনিয়া শুরুই হয় এক জটিল ও বুদ্ধিমান সত্ত্বার উপস্থিতিতেই - বা তার প্রচেষ্টার ফল হিসাবে। সুতরাং, সরল থেকে জটিল হবার পদ্ধতি দ্বিতীয় ক্ষেত্রে একেবারেই জরুরী নয়।
বিবেকবান হতে গেলে ধর্মের প্রয়োজন - একে কি আপনি অস্বীকার করেন?
এটা একটা অদ্ভূত ধারণা যে বিবেক বিকাশের জন্য ধর্মের প্রয়োজন। সহজ কথায় বললে, দুভাবে ধর্ম আমাদের বিবেকবান হতে সাহায্য করে থাকতে পারে - ধর্মীয় বই পড়ে বা ঈশ্বরের ভয়ে। প্রথম ক্ষেত্রে বলতে পারি যে অক্ষরে অক্ষরে কেউই এখন আর ধর্মীয় বই ব্যবহার করে না নিজের বিবেক বিকাশের জন্য - বরং বেছে বেছে বলে ধর্মে এই লেখা আছে, ওই লেখা আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই বাছাবাছির কাজে তারা আবার নিজেদের বিবেক ব্যবহার করে - কোনটা উদ্ধৃতি দেওয়া উচিত আর উচিত না তা এভাবেই ঠিক করে। সুতরাং তারা নিজেদের বিবেক - যা সব মানুষের মধ্যেই জন্ম থেকে বড় হবার সময় পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কল্যাণে তৈরী হয় - তাকেই ব্যবহার করে চলে। সে জন্যই একই ধর্মাবলম্বী সবার বিবেকও একইরকম হয় না - সবাই নিজের নিজের মত আলাদা হয়।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বলা যায় যে আমরা বিবেকবান হতে বাধ্য হই ঈশ্বর বা সর্বশক্তিমানের ভয়ে - যে আমরা তার কথামত না চললে তিনি আমাদের নরককুন্ডে নিক্ষেপ করবেন। অন্যভাবে বললে, স্বর্গের লোভেই আমরা বিবেকবান হই। আমার তো মনে হয় কারোর ভয়ে বিবেকবান না হয়ে নিজের উদারতার গুণে বিবেকবান হওয়াই প্রশংসাযোগ্য। রাজার ভয়ে আইন যে মানে সে তো রাজার অনুপস্থিতিতে চুরি করে, কিন্তু যে স্বঃপ্রণোদিত হয়ে আইন মানে তার আইন ভাঙার প্রশ্নই নেই। তাই বিবেকবান হবার জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে বা ধর্মীয় বই না পড়ে সরাসরি মানবিকতার বিকাশে নজর দিলেই হয়।
[শেষ প্রশ্নের উত্তর পরিবর্ধিত ডকিন্সের আগের প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে ... নিচে দেখুন ভিডিও]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৬