somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প- এক বর্ণও সত্য নয়

২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জন্মের বারো বছর পর মা মারা যায়। বাবা অন্যত্র বিয়ে করে। ঘরে সৎমা থাকলে যা হয় আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। সৎমায়ের অত্যাচার চলতে লাগল, কখনো মুখে কখনো হাতে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে চলে আসলাম নানার বাড়ী। নানা নানী তখনো জীবিত। নানা-নানীর কাছে ছিলাম ভালই। অভাগার সে সুখ সইবে কেন? পাঁচ বৎসরের মাথায় নানা-নানী মারা গেল। আশ্রয় হলো বড় মামার সংসারে। সেখানে আদর-অনাদরে বড় হতে থাকি।

মামী ছিলেন বারো মাসের রুগী। বাড়ীর ফায়-ফরমাস খাটা, আরও একটু বড় হয়ে রান্না-বাড়া করা, ঘর সামলানো, মামার সংসারে সবই করতে হতো। সাথে সাথে আমি লেখা-পড়াটাও চালিয়ে যেতে থাকি এবং মোটামুটি একটা সম্মানজনক পর্যায় পর্যন্ত সেটা চালিয়ে যেতে পারি।

আমার মামার বাজারে টিভি ফ্রিজের শো-রুম ছিল। সেখানকার এক কর্মচারী কাজ করতো। দোকানে কাজ করলেও খাওয়া-দাওয়া করতো বড় মামার বাড়ীতে। তাকে খাওয়া-দাওয়া করানোর দায়িত্ব বর্তায় আমার উপর। সে সূত্রে টুকটাক কথা-বার্তা হতো ওর সাথে।

একদিন সে আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়ে বসল। অষ্টম শ্রেণী পাশ করা একটা ছেলে, সামান্য দোকান কর্মচারী এমন একটি প্রস্তাব দিল! স্নাতক ডিগ্রিধারী একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে তার বুক এতটুকু কাঁপল না! তার এ প্রস্তাবে আমি হাসবো না কাদবো বুঝে উঠতে অনেকটা সময় লাগল। শেষ পর্যন্ত কি এক দোকান কর্মচারীকে বিয়ে করতে হবে? কেন এমন হ’ল? মা-বাবা ছাড়া মামা-মামীর চরম অবহেলার কারনেই কি ও এধরনের একটি প্রস্তাব দেওয়ার সাহস করল?

এরপর থেকে ওকে দেখলেই আমার সাড়া শরীর ঘেন্নায় রিরি করে উঠতো। ওর কথা-বার্তা, আচার-আচরণ আমার কাছে অসহ্য ঠেকতে লাগল। কিন্তু আমি নিরূপায় অবলা নারী। না সইতে পারি না পারি কিছু কইতে। মা মরা, বাবার অন্যত্র বিয়ে করা এক দূর্ভাগা মেয়ের জন্য পৃথিবীটা যে কতটা কঠিন তা কিভাবে বুঝাই।

বিষয়টা কিন্তু চাপা থাকলো না। একান ওকান করে সবাই জেনে গেল। আমার ধারণা মামা-মামীও বিষয়টি জানতো। তারা ওকে এজন্য শাসন কিংবা শাস্তি কোনটিই দেয়নি। কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

বিষয়টি নিয়ে আত্নীয়-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী, গ্রামবাসী আড়ালে হাসাহাসি করতে লাগল। সে যে কি লজ্জা! হে খোদা তুমি মাটিকে দু’ভাগ করে দাও সেখানে ঢুকে আমি এ লজ্জার অবসান ঘটাই।

ঐ ইতরটা কিন্তু আমার পিছু ছাড়লো না। নানাভাবে উত্যক্ত করতে লাগল। ঘটনার পর ইতরটার প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ঘনঘন বাড়ী আসতে লাগল। নির্লজ্যেও মতো নানা অঙ্গভঙ্গী করতো। মামা কিন্তু চাইলেই তাকে চাকুরী হতে বাদ দিতে পারতো কিন্তু মামা সেটা করেনি। আমার ধারণা মামা-মামীর প্রচ্ছন্ন আসকারা ছিল ওই বাদরটার প্রতি। হয়তো তারা চাইতো যেকোন প্রকারে আমাকে বিদেয় করে দিতে।

কি আমার অপরাধ। কালো হয়ে জন্ম নেওয়া! কেন আমি কালো হলাম? কালো কি আমি নিজে থেকে হয়েছি না বিধাতা বানিয়েছেন। আমার এ রাত জেগে পড়ালেখা করে অর্জন করা স্নাতক ডিগ্রির কি কোন মূল্যই নেই? আমাকে কি আট কাস পাশ করা এক দোকান কর্মচারীকে বিয়ে করতে হবে? তবে এ লেখা-পড়ার মূল্য রইল কোথায়?

এদিকে সেই নির্লজ্য বেহায়াটা মাত্রাতিরিক্ত বেহায়াপনা দিনদিন বাড়তে লাগল। ওই পশুটা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে লাগল। সে যেন ভূলেই গেল যে সে একজন সামান্য দোকান কর্মচারী ভিন্ন কিছু নয়।

অবস্থা এরূপ হলো যে এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচি। হায় যদি কোথাও চলে যেতে পারতাম! তবে কি আমি বাড়ী ছেড়ে পালাবো? এ পৃথিবীতে যে আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। একটা মেয়ে যার মা নেই-বাপ থেকেও নেই সে যাবেই বা কোথায়?

আমি মনেপ্রাণে চাচ্ছিলাম এ নরক থেকে উদ্ধার পেতে। ঠিক এই সময় দেবদূতের মতো আসে লোকটি। আমি কামনা করছিলাম যেন তার মনে একটু করুণা হয়। যেন সে আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়।

পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা মানুষ কল্পনাতেও ভাবে না। আমার ক্ষেত্রেও ঘটল সেই ঘটনা।

আজ থেকে তেরো বছর আগে ২০০১ সালের ১৩ই অক্টোবর আমার বিয়ে হয় সেই ভদ্রলোকের সাথে। আনলাকি থার্টিনে।

আমি যখন লোকটির সামনে দাড়ালাম সে শুধু একবার মাত্র আমার দিকে তাকালো। সেই একবারই। তবে কি সে আমার অসহায়ত্ব বুঝতে পেরেছিল? হয়তোবা। জানতে চাইনি কখনো।

ঘটনা কিন্তু সত্য এক বর্ণও মিথ্যে নয়।

ওগো শুনছো, তুমি কিন্তু বাবুকে এখনো পড়াতে বসাও নি।

... সমাপ্ত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×