somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম বনাম কথিত জঙ্গি সংগঠন দুটি নামের সাথে কাজের কতটুকু মিল???

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েক বছর ধরে ইসলামী টেররিস্ট অথবা ইসলামী জঙ্গি ইত্যাদি যে নামেই হোক না কেন বেশ ভালো ভাবে আলোচনা হচ্ছে প্রতিটি পর্যায়ে। যাই হোক এ বিষয়টি যখনই সামনে আসে চোখের সামনে ভেসে উঠে ইসলামী বেশভূষার আদলে কিছু সন্ত্রাসীর প্রতিচ্ছবি।বর্তমানে এই “ইসলামী জঙ্গি” নামটির সাথে পরিচিত নয় এমন কাউকে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু –
১. ইসলাম কি আসলেই সন্ত্রাসবাদের অনুমতি প্রদান করে? অথবা,
২. ইসলাম কি আসলেই কাউকে বিনা কারণে বা কারণবশত হত্যার অনুমতি প্রদান করে?
প্রশ্ন গুলি ছোট হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যুগোপযোগী।কেননা যেকোন মানুষ সে যে ধর্মেরই হোক না কেন হত্যা ব্যাপারটাকে অবশ্যই ঘৃণার চোখে দেখার কথা। উক্ত প্রশ্নগুলির উত্তর জানার আগে একটু পেছনে যেতে চাই জঙ্গিবাদ বিষয়টির সাথে আমরা কবে থেকে পরিচিত হলাম? আমার স্বল্প জ্ঞানে মনে পড়ে যে গত ১১ই সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস করার মাধ্যমে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের নিজেদের প্রকাশ ঘটায়। যা নাকি সবার কাছে আল কায়দা নামে পরিচিত।অবশ্য এরপরে বিভিন্ন ছোট বড় অনেক জঙ্গি দল বিভিন্ন দেশে নিজেদের কার্যকলাপ চালিয়েছে। স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন আমার মগজ তখন একটি প্রশ্নই আমাকে করে যে, “এর আগে কি ইসলাম ধর্ম পৃথিবীতে ছিলনা?” উত্তর হচ্ছে এর আগেও তো ইসলাম পৃথিবীতে ছিল। তখন তো ইসলাম এর নাম করে এরকম কোন হানাহানি মারামারি দেখা যায়নি। অন্তত আমার এই ছোট্ট জীবনে আমি দেখিনি। যদি এমনই হয় যে , ইসলাম ধর্ম ধর্মের নাম করে মানুষ হত্যাকে উৎসাহ দেয় তাহলে সেই ২০০১ সালের আগে কোথায় ছিল সেই সব ইসলামী নামধারী লোকেরা? ২০০১ সালের আগে কি ইসলাম ধর্মকে কটু কথা শুনতে হয়নি? অবশ্যই হয়েছে। তবে তখন কেন তাদের এভাবে কঠোর হাতে দমন করলেন না আমাদের তথাকথিত ইসলাম রক্ষাকারী সেই সব সংগঠন। বিষয়টি থেকে তাহলে একটি উপসংহারে আসা গেল যে, সেই ২০০১ সালের আগেও ইসলাম পৃথিবীতে ছিল এবং আমরা জানি ইসলামের শিক্ষা চিরাচরিত এবং তা পরিবর্তন হবেনা। সুতরাং যেহেতু ২০০১ সালের আগেও ইসলামী কোন সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজেদের প্রকাশ করেনি এখনো করবেনা। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, তাহলে এরা কারা যারা নাকি নিজেদের ইসলামী সংগঠন পরিচয় দিয়ে এভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে? তারা কি আদৌ ইসলাম কে মানে? উত্তর এক কথায় “না।” তারা কোন ভাবেই ইসলামী শিক্ষার কোন নিয়ম মেনে চলেনা। ফিরে যাই সেই দুটো প্রশ্নের কাছে। উত্তর খুজি খোদ ইসলাম থেকে। বিনা কারণে হত্যার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ কি বলে? পবিত্র কুরআন এর সূরা মায়েদার ৩৩ নম্বর আয়াতে (বিসমিল্লাহকে ১ম আয়াত গণনা করে) মহান আল্লাহতা’লা বলেন,
“এ কারণে আমরা বনী ইসরাঈলের জন্য এ (বিধান) জারী করেছিলাম, (হত্যারবদলা) ছাড়া অথবা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির (অপরাধ) ছাড়া কেউ যদি কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে তাহলে সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করলো। আর যে তাকে জীবিত রাখলো সে যেন গোটা মানবজাতিকেই জীবিত করে দিল। আর আমাদের রসূলরা অবশ্যই তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ এসেছিল। এরপরও তাদের অনেকেই নিশ্চয়ই পৃথিবীময় বাড়াবাড়ি করে চলেছে।”

উক্ত আয়াতটির দিকে গভীরভাবে মনযোগ দিলে দেখা যায় যে, হত্যার বদলা অর্থাৎ কেউ যদি কাউকে খুন বা হত্যা করে তখন তার দোষ প্রমাণিত হলে তাকে হ্ত্যার অনুমতি আছে। প্রতিটি দেশেই আইন আছে হত্যার অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন জেল হওয়ার। সুতরাং এখানে মুসলমানদের কোন বিশেষ দলের প্রয়োজন নেই যে তারা হত্যার বিচার করবে।কেননা দেশের আইনের আওতায় এনেই তার বিচার সম্ভব। এরপর বলা আছে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীর কথা। সেখানেও একই ভাবে আইন প্রয়োগেই বিচার সম্ভব নতুন কোন সংগঠনের প্রয়োজন নেই। সবশেষে উক্ত আয়াতে বলা আছে যে, এই সকল কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা এতবড় পাপ যে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করার মত। এখন যদি আমরা বর্তমানে যে সকল তথাকথিত ইসলামী জঙ্গি সংগঠন আছে তাদের দিকে লক্ষ্য করি, তারা কী কী কারণে মানুষ হত্যা করছে ??? কয়েকটি বিশেষ কারণ নিম্নে পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করছি:
১. মহানবী (সা: ) কে গালি দেয়া বা অপমান করা
২. আল্লাহকে গালি দেয়া বা অপমান করা
৩. ইসলামবিদ্বেষী গুজব ছড়ানো ইত্যাদি।
লক্ষ্য করি এর একটি কারণও মহান আল্লাহতা’লা উক্ত আয়াতে করেন নি যাতে সেই ব্যাক্তিকে হত্যার অনুমতি পাওয়া যায়।
আমরা যদি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা: ) এর জীবন চরিত এর দিকে নজর দেই দেখতে পাবো যে, মক্কার লোকেরা তাকে কতই না দু:খ কষ্ট দিয়েছে প্রতিদানে তিনি (সা: ) শুধু তাদের জন্য দোয়া করেছেন। পাল্টা আক্রমণ করেননি। ইসলামের ইতিহাসে যত গুলি যুদ্ধের কথার উল্লেখ পাওয়া যায় প্রতিটিতেই একেবারে যেখানে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বিষয় ছিল সেখানে মুসলমানগণ প্রতিহত করেছেন অস্ত্রের মাধ্যমে। এ কথার সাথে সকল ধর্মের লোকেরা একমত হবেন আশা করি। লক্ষ্য করা দরকার আমি “প্রতিহত” শব্দটি বাছাই করেছি। আক্রমণ নয়, প্রতিহত তখনই করা হয় যখন কেউ তোমাকে আক্রমণ করে। সুতরাং বলা যায় মুসলমানরা নিজে থেকে কখনোই কাউকে আক্রমণ করেনি বরং প্রতিহত করেছে।
আলোচনার এ পর্যায়ে এসে মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে এরা কারা? যারা নিজেদের ইসলামী দল বলে অথচ ইসলাম পরপন্থি কাজ করে? কীই বা তাদের উদ্দেশ্য? দীর্ঘ আলোচনায় সেই উত্তর গুলি নিশ্চয়ই পেয়ে যাওয়ার কথা। তবু উত্তর গুলি পয়েন্ট আকারে দেই।
১. এরা আসলে কেউই প্রকৃত ইসলামের ধারক বাহক কোনটিই নয়।
২. তাদের মূল উদ্দেশ্য কখনোই ইসলামের প্রতিষ্ঠা নয় কেননা তাহলে অবশ্যই ইসলাম বিরোধী কাজ তারা করতো না।
৩. তাদের উদ্দেশ্য একমাত্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি।
পরিশেষে সকলের কাছে একটি আবেদন গল্প আকারে দিয়ে শেষ করতে চাই।
তোমার কাছে একটি ছুরি আছে।তুমি তা দিয়ে একটি আপেলও কেটে খেতে পার অথবা কাউকে খুনও করতে পারো।বিবেচনা ও দায়িত্ব সম্পূর্ণ তোমার।এখন যদি তুমি আপেল কেটে খাও সেক্ষেত্রে যেমন তুমি তোমার ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের জন্য ছুরিটিকে ধন্যবাদ দিবে না ঠিক তেমনি কাউকে যদি খুন কর সেক্ষেত্রেও খুন করার জন্য ছুরিটিকে দোষারোপ করতে পারবেনা। কেননা পছন্দ তোমার।সুতরাং দায়িত্বও তোমার।
অতএব কেউ যদি ইসলাম এর নাম করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালায় আমাদের কখনোই উচিত হবেনা সেই সব সন্ত্রাসীদের জন্য ইসলামকে দোষারোপ করা। কেননা এখানে ইসলামের কোন সম্পর্কই নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×