somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেগম রোকেয়ার ‘নারীস্থান’, সৌরশক্তি'র স্বপ্ন ও আমাদের ‘দীনতমা শ্মশান’

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারী জাগরণের অগ্রদূত বলে পরিচিত বেগম রোকেয়া আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি আগে সৌর শক্তি ব্যাবহার করে গোটা দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তার সেই স্বপ্ন আমদানী বা বিদেশী প্রযুক্তি নির্ভর ছিলনা, দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নানাবিধ বৈজ্ঞানিক অনুশীলনে’র মাধ্যমেই তা অর্জনের কথা সে সময় তিনি বলেছিলেন। প্রখর যুক্তিবাদি ও বিজ্ঞানমনষ্ক এই সংগ্রামী মানুষটি’র দুরদর্শীতা ও স্বপ্ন দেখবার ক্ষমতা দেখে বিষ্মিত হতে হয়। আজ ৯ ডিসেম্বর, তার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে তাকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

রোকেয়া ১৯০৫ সালে ইন্ডিয়ান লেডিস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘সুলতানাজ ড্রিম’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামের লেখায় “নারীস্থান” নামের এমন একটি দেশের ছবি একেছেন যেখানে রীতিমত সোলার হিটার ব্যাবহার হয়-

“‘আপনারা রাধেন কিরুপে? কোথাও তো অগ্নি জ্বালাবার স্থান দেখিতেছিনা?’
তিনি বলিলেন, ‘সূর্য্যাত্তাপে রান্না হয়’। “


নারীস্থানে এভাবে ‘সোলার হিটার’ ব্যাবহার ছাড়াও ‘সোলার কালেক্টর’ ব্যাবহার করে আহরিত শক্তি ‘থারমাল রিজার্ভার’-এ রাখার ব্যাবস্থা আছে-

“তাহারা অল্পকালের মধ্যে একটি যন্ত্র নির্মাণ করিলেন, তদ্দারা সূর্য্যাত্তাপ সংগ্রহ করা যায়। কেবল ইহাই নহে- তাহারা প্রচুর পরিমাণে ঐ উত্তাপ সংগ্রহ করিয়া রাখিতে এবং ইচ্ছামত যথা তথা বিতরণ করিতে পারেন।”

সূর্যতাপ ব্যাবহারের আকাঙ্খার ইতিহাস বহুপ্রাচীণ হলেও বেগম রোকেয়া যে সময়ে শক্তির উৎস হিসেবে সূর্যতাপ এবং হাইড্রোজেনের ব্যাবহারের মাধ্যমে একটা গোটা দেশের রান্না-বান্না থেকে শুরু করে পরিবহন এমনকি প্রতিরক্ষার জন্য সৌর শক্তি নির্ভর যুদ্ধাস্ত্রের কথা পর্যন্ত ভাবতে পেরেছিলেন তখন শুধু ভারতবর্ষই নয়, গোটা দুনিয়ায় খুব কম মানুষ পাওয়া যাবে যারা তার মতো অতো দূর দেখতে পেরেছিলেন। অথচ আজও বাংলাদেশের তথাকথিত বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, শাসক ও পরিকল্পনাবিদেরা এমনকি সারা দুনিয়া ব্যাপি নবায়ণ যোগ্য জ্বালানি’র ব্যাপক বিকাশ দেখেও এ ক্ষেত্রে জাতীয় সক্ষমতা অর্জনের কথা ভাবতে পারেন না, বিদেশ থেকে সোলার প্যানেল আমদানী করে গ্রামে গঞ্জে দুই চারটা বাতি জ্বালানো পর্যন্তই এই কমিশনজীবিদের দৌড়!

বেগম রোকেয়ার ‘নারীস্থান’-এর এই প্রযুক্তি কিন্তু বিদেশী কোম্পানি নির্ভর নয়-

“যৎকালে এদেশের রমণীবৃন্দ নানাবিধ বৈজ্ঞানিক অনুশীলনে নিযুক্ত ছিলেন, পুরুষেরা তখন সৈনিক বিভাগের বলবৃদ্ধির চেষ্টায় ছিলেন। যখন নরবীরগণ শুনিতে পাইলেন যে, জেনানা বিশ্ববিদ্যালয়দ্বয় বায়ু হইতে জলগ্রহণ করিতে এবং সূর্য্যাত্তাপ সংগ্রহ করিতে পারে, তাহারা তাচ্ছিল্যের ভাবে হাসিলেন। এমনকি কি তাহারা বিদ্যালয়ের সমুদয় কার্যপ্রণালীকে ‘স্বপ্ন-কল্পনা’ বলিয়া উপহাস করিতেও বিরত হন নাই।”

আজকের বাংলাদেশেও এমন বিশেষজ্ঞ’র অভাব নাই যারা জ্বালানি খাতে জাতীয় সক্ষমতার কথা তুললে ‘স্বপ্ন-কল্পনা’ বলে উড়িয়ে দিতে চান। বেগম রোকেয়া যেন তাদের উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন-

“কোন দেশ আপনা হইতে উন্নত হয় না, তাহাকে উন্নত করিতে হয়। নারীস্থানে কখনও স্বর্ণ বৃষ্টি হয় নাই, কিম্বা জোয়ারের জলেও মণিমুক্তা ভাসিয়া আইসে নাই?”

তিনি নারীস্থানবাসীকে প্রশংসা করে নিজের দেশ সম্পর্কে হতাশা ব্যাক্ত করে বলছেন-

“ত্রিশ বৎসরে আপনারা একটা নগণ্য দেশকে সুসভ্য করিলেন,- না, প্রকৃত পক্ষে দশ বৎসরেই আপনারা এদেশকে স্বর্গতুল্য পুণ্যভূমিতে পরিণত করিতে পারিলেন। আর আমরা একটি সুসভ্য রত্নগর্ভা দেশকে ক্রমে উন্নত করিব দূরের কথা,- বরং ক্রমশ: তাহাকে দীনতমা শ্মশানে পরিণত করিতে বসিয়াছি।”

বেগম রোকেয়া সেই ১৯০৫ সালে যে “সুসভ্য রত্নগর্ভা” দেশকে “দীনতমা শ্মশানে” পরিণত করার কথা বলেছিলেন সে কি আজকের বাংলাদেশ নয়? পার্থক্য হলো তখন বাংলাদেশ পরাধীন ছিল-ক্রমে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হলেও দেশীয় শাসকদের লুটপাট ও বিদেশী কোম্পানি’র হয়ে দালালি’র ফলে ‘সোনার বাংলা’ আজও ‘দীনতমা শ্মশান’

বিজয়ের এই মাসে রোকেয়া দিবস তাই নতুন তাৎপর্য নিয়ে রোকেয়ার ‘নারী স্থান’-এর আদলে শোষণ মুক্ত দূষণ মুক্ত এক ‘সুখস্থান’ গড়ার লড়াইয়ের ডাক দিয়ে যায়।

৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×