somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ববির শূন্যবাকসো

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাতসকালে জেনি আমাকে একটা সুসংবাদ(!) দিলো।সে আর তার বয়ফ্রেন্ড কোর্ট ম্যারেজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাকে সাক্ষী হিসেবে যেতে হবে। যদিও তখন আমার তেমন একটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব ছিলোনা কিন্তু আমি শুনেও হ্যাঁ হ্যাঁ হু হু করে রেখে দিলাম। ফোনটা রাখার পর আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো।জেনি, এতদিন আমার সাথে ফ্লার্ট করলো, প্রায় প্রেমপ্রেম অবস্থা। তা ফ্লার্ট করবি , তোর যে একটা নায়ক আছে সেটা বলা লাগবে না? আমার যোগ্যতা কি এতই কম যে আমাকে সাইডনায়ক হতে হবে। শালার জীবন! এখন আর কী করা। পাঞ্জাবীটা আয়রন করতে হবে, জুতোর সোল সেলাই করতে হবে। তারপর গোপন বিষাদ চেপে রেখে বরের সাথে হ্যান্ডশেক করে শুভকামনা জানানো! কী প্যাথেটিক! ওহ, ওদের বিয়ের দিনে তো কিছু গিফটও কিনতে হবে। মাসের শেষ... এক কাজ করা যায় পুরোনো কিছু উপহার র্যা পিং পেপারে মুড়িয়ে নিয়ে যাই। বেশ কিছু টাকা বেঁচে যাবে।

শালার জেনি! এইরকম একটা কাজ আমার সাথে করতে পারলো! আমাদের তো কোন হিডেন ক্যাম ভিডিও বা পিকচারও নেই যে ব্ল্যাকমেইল করা যাবে। থাকলে সেটাই উপহার হিসেবে দিতাম। হাহাহা! তবে এখন যেটা নিয়েছি সেটাও কম না। আশা করি কার্য ভালোভাবেই সমাধা হবে। ভেবে ক্রূর হাসি দেই একটা।

তিনটার সময় পৌঁছোনোর কথা ছিলো। আমি পাঁচ মিনিট আগেই পৌঁছুলাম। জেনি একটা মেকি পাংশুঁটে মুখ করে বসে আছে। আমাকে দেখেই সে চিৎকার করে উঠলো,
-আরে ববি। তুই কবে থেকে এরকম সময়নিষ্ঠ হলি! তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। এ আমার ইয়ে মামুন
-গ্ল্যাড টু মিট ইউ মামুন।
মামুন বেশ সপ্রতিভ ছেলে। অল্পেই বেশ জমিয়ে নিয়েছে। আমিও ওর সাথে আড্ডায় মজে গেলাম। অবশ্য এই মৌজমাস্তি বেশিক্ষণ থাকবে না। উপহার পাওয়ার পর ওর মনের অবস্থা কী হবে ভাবছি। ৩.৩০টা বাজে। এখনও সাক্ষী দুজনের কেউ আসে নি। না আসলেই ভালো। সাক্ষী দুজনকে আমার রীতিমত দুর্জন মনে হতে থাকে। অবশেষে আশপাশ থেকে দুইজনকে ধরে এনে সাক্ষী বানানো হলো।
কবুল। কবুল কবুল!
এই শব্দ তীরগুলো আমার বুক বিদীর্ণ করে দিলো। দুঃখজনক ব্যাপার এই, মামুন আর জেনিকে আবারও শুভেচ্ছা জানাতে হলো। সাক্ষী সাবুদরা চলে গেছে। এখনই মোক্ষম সময়। বাক্সটা খুললাম। কিছু নেই। আরো খুললাম, কিছুই নেই। আবারও খুললাম, কিছু নেই। এই হচ্ছে তোমাদের উপহার।
-মানে কী! জেনি আর মামুন সমস্বরে জিজ্ঞেস করে।
-এর মধ্যে আছে একটা শূন্য হৃদয়ের হাহাকার। একে যত্ন করে রেখে দিও।
-কী বলছো এসব?
-দেখুন মিস্টার ববি, আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে এখন খামোখাই এসব সিনক্রিয়েট করবেন না।বলতে না বলতেই টেবিলে রাখা ভারী ফুলদানীটা মামুনের মাথায় গোপনাঙ্গে ভাঙলাম। এতে অবশ্য সে মারা যাবে না। তবে পুরুষত্ব হারাবে।
-শূন্যকে অবহেলা করো না জেনি। শূন্য থেকেই সবকিছুর শুরু। আমার ব্যাগে কী ছিলো? শূন্যতা। আমার হৃদয়ে কি ছিলো? শূন্যতা। তোমাদের এই শূন্যতা উপহার দেয়ার পর আমার ভারমুক্ত লাগছে। দুইটা বছর! কম সময় তো আর না! আমার শূন্যতার এমন কিছুই করার অপেক্ষায় ছিলো!
জেনি তখন কাঁদছে। কাঁদাটাই স্বাভাবিক। কাজী সাহেবের হাত পা বেঁধে রেখেছি। ওর তরফ থেকে কোন সমস্যা নেই। জেনি আমার সাথেই বের হলো।
-এমন একজন ইমপোটেন্ট মানুষের সাথে কি ঘর বাঁধা যায় বলো?
জবাবে জেনি কিছুই বললোনা। হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগলো।

তবে আমি জানি, খুব ধীরে... ধীরে...ধীরে...ধীরে ওর শোক কেটে যাবেই।

১ মাস পর
ঘুমের ঔষধ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবে।

২ মাস পর
কাজিনদের সাথে নেপালে ঘুরতে যাবে।

৩ মাস পর
তার আচরণ পুরোপুরি স্বাভাবিক।

৬ মাসের মাথায় সে আবার বিয়ে করার ইন্তেজাম করবে।

তবে এবার সে যে আমাকে কার্ড দেবেনা নিশ্চিত, তাতে কোন অসুবিধা নেই। আমার বাক্সটায় আরো অনেক অনেক শূন্যতা রয়েছে। এবার অবশ্য বিশাল একটা কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে। কাজটা বেশ কঠিন হবে। তবে কোন একটা উপায় আমি বের করে ফেলবোই। জেনির সাথে আমার চোখাচোখি হলো। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি দেখেও না দেখার ভান করলাম। শূন্যতার বাক্সটা খুলেই দিবো নাকি? জেনির চোখে কাতরতা... না না!
আমি শূন্যতার বাক্সটা খুলে সেখান থেকে অল্পবিস্তর শূন্যতা নিয়ে জেনির বরের দিকে যাবার আদেশ করলাম।
-উফ কী গরম! এইসব জবরজং আর পড়ে থাকতে ভালো লাগতেসে না। আমি একটা টিশার্ট আর জিন্স পরবো।
বলেই জেনির স্বামি সব খুলতে শুরু করলো।
চারিদিকে একটা হৈ হৈ রব।
"ছেলে পাগল সেটা আগে বলেন নি কেন?"
"ইমপসিবল! এই বিয়ে হতে পারে না!"
"আপনারা শান্ত হোন, কী ব্যাপার আমি দেখছি"
"আরে রাখেন আপনার ব্যাপার!"
বিয়েটা ভেঙে যাচ্ছে নিশ্চিত। কোন এক নির্জন স্থানে গিয়ে আমাকে জেনি বললো,
"তুমি আমাকে এত ভালোবাসো, এত করে পেতে চাও, আগে বলো নি কেন?
"তোমাকে আমি ভালোবাসি, কিন্তু পেতে চাই কথাটা ঠিক বললে না। তুমি আমার কাছে একটা দেবীর মতো। প্রতিদিন ইচ্ছে করে তোমার দেবমন্দিরে অর্ঘ্য দিয়ে আসতে। কিন্তু বিয়ে করলে তো তুমি এমনটি থাকবে না। নুন, ঝোল, তেল, বাচ্চা সামলানো, ওজনদার হওয়া, সেই তোমাকে আমি চাই না। তুমি এখন যেমন আছো, তেমনই থাকবে চিরকাল"
"পাগল! সবসময় কি আর একরকম থাকা যায়? আমি বুড়িয়ে যাবো, চামড়ায় ভাঁজ পড়বে। তখন কী আর আমাকে এতো ভালো লাগবে?
"সেটা নিয়ে এখনও ভাবিনি, হয়তো বা তখন আমি মরে যাবো।
"আচ্ছা তোমার শূন্য কলের রহস্যটা কি বলোতো?"
"কিছুই না। একবার তোমার কাছ থেকে ব্যাগটা নেয়ার পর, তোমার স্পর্শ পাবার পর আমি নিয়মিত ধ্যান করি এটা নিয়ে।
"হাহাহা! সাচ এ কিডার ইউ আর! শোনো, মামুনের সাথে বিয়েতে তুমি আসোনি আমার পরিবারও মেনে নেয়নি। আর আমার বর্তমান বরের প্রেসার একটু হাই হয়ে গেছে, তাই এই অবস্থা। কতদিন আর কল্পলোকে থাকবে ববি?
রোস্টের স্বাদটা ভালো ছিলো। আমি আরেকটা চেয়ে নিই। আমার শূন্যবক্সটা যে কোথায় গেলো? ওদিকে জেনি আর তার নতুন বর ক্রমাগত হাস্যজ্জ্বল ভঙ্গিমায় ছবি তুলছে।
২২টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×