somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্পের কিছু অণু ভাবনা

২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখন প্রায় সব পত্র পত্রিকায় বিশেষত লিটিল ম্যাগাজিনে গল্প কবিতা প্রবন্ধের সাথে অণুগল্পও লেখা হচ্ছে। ফেসবুক এবং ইপত্রিকাতেও অণুগল্প লেখা হচ্ছে। অণুগল্প নিয়ে কিছু বই আছে। এবং অনেকেও টিপস দিচ্ছেন। তার মাঝে আমার ক্ষুদ্র বক্তব্য।

অণুগল্পের মধ্যে যেহেতু গল্প কথাটি যুক্ত আমার মনে হয় যেভাবেই হোক আপনাকে গল্প পরিবেশন করতে হবে। গল্পটি স্পষ্ট প্রতীয়মান না হলে তা অণু তো হবেই না। অন্য কিছু হয়ে যাবে।

এই গল্প বলার প্রেক্ষিত ও বিষয়, ভাবনায় জারিত হয়ে একেবারে নির্যাসটুকু পাঠকের সামনে পরিবেশিত হতে হবে। অর্থাৎ গল্প আপনি কিভাবে বলবেন সেটা আপনার বিষয়। কিন্তু গল্প বা গল্প ভাবনা যেন স্পষ্ট হয়।

এই গল্প বা গল্প ভাবনা স্পষ্ট করার জন্য আপনাকে প্রথমে নিজস্ব বাঙ্ময় অনুভূতির সাথে পরিচিত হতে হবে। ধরুন এখানে খুন হল। খুনের কারণ, প্রেক্ষিত, অবস্থান, ন্যায়, অন্যায় ইত্যাদি নানান ব্যাপার আসবে। তার মাঝে আপনার সরল অনুভূতি, আত্মভাবনা কি? তা স্পষ্ট করুন। তারপর সেই অনুভূতিকে ঘটনার বর্ণনা বা ভাবের আকারে না এনে গল্পের আকারে ভাবুন আর পরিবেশন করুন।

কিংবা ধরুন চুরি হল চোর ধরা পড়ল। কোটি কোটি চুরি করা স্যুট বুট তাকে মারছে। মেয়েটিকে বিপথে ঠেলে দিয়ে ধড়িবাজ সাধু সাজচ্ছে। এ রকম আরও কত কি? সবক্ষেত্রে আপনি শুভ বুদ্ধি ভাবনায় কলমে হাত দিয়েছেন। তাই এই সব ঘটনা তুলে ধরুন গল্পের আকারে কিন্তু ভাবনায় জারিত করে। যত বেশি ভাবনায় জারিত হবে ততটাই গল্পটি (কখনই ভাবটি নয়) অণুগল্প হয়ে উঠবে।

এর পর আছে উপস্থাপনা। কিভাবে পরিবেশন করবেন? পরিবেশনের গুনে ডাল আলুসেদ্ধ ভাতও অমৃত হয়ে যায়। অর্থাৎ যা আপনি বলতে চাইছেন তা কতটা স্পষ্ট করতে পারলেন। অনেকেই বলেন এখানে বেশি লেখার অবকাশ নাই তাই ধোঁয়াশা রাখা দরকার। আসলে তিনি স্বচ্ছ ভাবনা প্রস্তুত করতে পারেন নি। অণুগল্প লিখছি তাই যতটা সম্ভব অল্পেতে শেষ করা যায়।

তা কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই মান্যতা পায় না। যতই সেই সব ধোঁয়াশা লেখা বাহবা পাক। সাধারণের কাছে তা ব্রাত্য। ধোঁয়াশা কোন লেখাতেই না পসন্দ। সে কবিতা গল্প উপন্যাস যাই হোক না কেন। বর্তমানে কবিতার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে শব্দের বাঁধন খুব সুন্দর। পড়তেও দারুণ। কিন্তু কি বলতে চাইছে তা কিছুতেই বোঝা গেল না। কোন সাহিত্য বা লেখা হৃদয়গ্রাহী হওয়া জরুরী। এই হৃদয়গ্রাহীতা উপস্থাপনার গুণে সঠিক ভাবনায় গড়ে ওঠে। তাই উপস্থাপন করা আপনি শিখে যাবেন যদি ভাবনা গল্পের আকারে স্পষ্ট করেন।

কেন না আপনাকে যদি কেউ বলে, ভাই ওদিকে কি হয়েছে? এত গণ্ডগোল কেন? আপনি সেই অবস্থান দেখে এসেছেন। তাই উত্তেজনার মুহূর্তে আপনি যতটা সংক্ষেপে পারবেন নিশ্চয় বলবেন। ধাপে ধাপে বর্ণনা নিশ্চয় করবেন না। গল্পের মত বলার সুযোগ পাবেন না। আবার আপনার নিজস্ব উপলব্ধিও নিশ্চয় রাখবেন। হাতি ঘোড়া গাছ পালা গরু ছাগলের বর্ণনা দিলে কেউ শুনবেও না। সেখানে আপনাকে সব বলতে হবে অথচ অতি সংক্ষিপ্ত। যাতে গণ্ডগোল সম্পর্কে প্রশ্নকর্তা সম্যক উপলব্ধি করতে পারে। আবার ঘুরে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ পাবে না। এবং সেটাই অণুগল্প।

আর একটা ব্যাপার সেই গণ্ডগোলের অবস্থান আপনি যদি সঠিক নিরীক্ষণ না করেন তাহলেও ঠিক করে প্রশ্নকর্তাকে বোঝাতে পারবেন না। তাহলে যে কোন বিষয় সম্পর্কে আপনি যতবেশি ওয়াকিবহাল হবেন ততটাই আপনি গল্প লিখতে পারবেন এবং সেই গল্প (বর্ণনা নয়) ভাবনা ও উপলব্ধিতে অণুগল্প হয়ে উঠবে।

আর উপস্থাপন করতে একটা ঘাত বা মোচড় দেওয়া খুবই জরুরী। সেটা আগেও ছিল। এখনও আছে। যত বিখ্যাত গল্প উপন্যাস আছে সবেতেই এই মোচড় বা ঘাত পাঠকের কাছে দারুণ উপজীব্য। কোন মোচড়বিহীন রচনা অনেকটাই ম্যাড়ম্যাড়ে। এই ঘাত বা মোচড় পরিস্থিতির উপর লেখকের সঠিক নিরীক্ষণ ও বলিষ্ঠ অভিজ্ঞতার রূপায়ন।

একই ঘটনার বিভিন্ন দিক। কোনদিকে আপনার অবস্থান সেটা নিজেকে ভাবতে হবে। আবার সবদিকও হতে পারে। কেন না নিরপেক্ষও একটা দিক। এই নানান দিকের মধ্যে আছে হ্যাঁ-গল্প, না-গল্প, না-হ্যাঁ-গল্প এবং শুধুই গল্প আছে। আপনি ঘটনার অবস্থান ও স্পষ্ট দিশাকে গল্পের আকারে( কখনওই ঘটনার বর্ণনা নয়) ভাবুন, লিখুন আর আমাকে বোঝান যাতে আমি পাঠক যেন ঘুরে প্রশ্ন না করে ভাবতে ভাবতে নিজেকে ভাবাতে পারি। তাহলে দেখবেন উপরের যে কোন একটি গল্পে আপনার বিষয়টি দাঁড়িয়ে গেল।

আমাকে আপনি যতটা ভাবাতে চাইছেন তার চেয়ে দশগুণ বিশগুণ একশগুণ নিজে লেখক হিসেবে ভেবেছেন তো? অবস্থানের মাত্রা নিজের কাছে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে তো? তাহলে নিশ্চয় আমি সেই রসে আরো জারিত হব।

তখন দেখবেন গল্প আর শুধু গল্প থাকল না। আরো অনেক দিকে ছড়িয়ে পড়ল। এবং হয়ে গেল অণুগল্প।
অনেকেই ধোঁয়াশা রেখে উহ্য ভাসা ভাসা অবস্থানে পাঠককে ছেড়ে দিতে চাইছেন। এবং তাকেই অণুগল্প বলে বাহবা পাচ্ছেন এবং বাহনা নিচ্ছেন। বলছে পাঠক ভাবুক না। তার মানে লেখক নিজেও সঠিকভাবে ভাবে নি। অণুগল্পে আমি সিদ্ধহস্ত। অতএব কোন কথা হবে না। পাঠকও বিভ্রান্ত। ভাবে, তাই হবে বোধ হয়।

গল্প ভাবনার ক্ষেত্রে যা সঠিক নয়। অণুগল্পের ক্ষেত্রে তো নয়ই।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×