somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্তমান ছায়া সরকার সংবাদ পত্র, বিরোধীদল নাকি ম্যাঙ্গো পিউপল! - একজন অবিষজ্ঞের অপালোচনা।

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংবাদপত্র সময়ের দর্পণ। বর্তমান সময়কে অতিক্রম করে আমরা অতীত হিসেবে ফেলে রেখে পা বাড়াই ভবিষ্যতের পথে। অনেক বোদ্ধা জন বলে থাকেন সময়কে ইতিহাসের ফ্রেমে বেঁধে রাখে পত্রিকার পাতা। প্রতিদিন পৃথিবীর প্রান্তে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা ফুঁটে ওঠে সংবাদপত্রের কলামে কলামে পাতায় পাতায়। সংবাদপত্র কি সবসময় সত্যি কথা বলে। পাশাপাশি দুই তিনটি পত্রিকা রেখে আপনি যদি যাচাই করেন তবে দেখতে পাবেন তারা যে সবাই একই খবর দিলে খবর পরিবেশনে থাকছে ভিন্নতা। দুই বাবুর্চীর তরকারীর স্বাদ দুইরকম হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই টুকু আমরা আশা করতে পারি যেন খাওয়ার পর আমরা অনুধাবন করতে পারি খাসীর মাংস না ভেড়ার মাংস দিয়ে ভাত খেলাম।

একটি গ্লাসে ৫০/৫০ পানিতে পূর্ন থাকলে কেউ বলবে অর্ধেক খালি আবার কেউ বলবে অর্ধেক ভরা। আমরা চাই সংবাদ পরিবেশনে এই ভিন্নতাটুকু থাকুক, কিন্তু যেন কেউ সংবাদের নামে মিথ্যাচার না করে। সরকারের গোলামী না করে। আমি আওয়ামী সরকারের বাকশালী নীতি দেখিনি। কিন্তু আজকালকার দিনে যখন দেখি বিপক্ষে কেউ কিছু লিখলেই সরকার হুমকি দিয়ে ওঠে, সম্পাদককে জেলে নিয়ে তেলে ভাজতে চায় তখন মনে মনে বলি এটাই কি বাকশালী নীতি। অবশ্য বাকশালী নীতি থেকে সে আওয়ামী লীগ বলেন আর বিএনপি বলেন কেউ বের হতে পারেনি। বিএনপির শাসনামলে শুনতে পেতাম কেউ একজন নিয়মত প্রথম আলোর অফিসে আগুন দিতে চাইতেন। এমনি আমাদের গণতান্ত্রিক উদারতা। প্রথম আলো! প্রথম আলোর প্রতি আমার একটা ভালোভাগা আছে। অস্বীকার করবো না। ওই যে বলেছিলাম তুলনামূলক ভাবে পড়লে বোঝা যায় কারা কতটা নিউট্রাল। সেজন্যই প্রথম আলোর সংবাদ আমার ভালো লাগতো। আমি বলবো না প্রথম আলো নিরপেক্ষভাবে সংবাদ পরিবেশন করে। একটি পত্রিকার কোন দল থাকতে পারে না, রাজনৈতিক আদর্শ থাকতে পারেনা। কিন্তু মানুষের আদর্শ থাকে, অন্ততপক্ষে থাকা উচিত। মানুষের থাকে রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ। কারো ভালো লাগে আওয়ামী লীগ কারো বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীও লাগতে পারে। এরশাদের পক্ষে দুয়েকজন এখনো থাকবেনা তা কিন্তু নয়। তবে অনেক সাংবাদিকদের ভেতরে লাল পতাকার প্রচ্ছায়া থাকে।

বলছিলাম প্রথম আলোর কথা। প্রথম আলো আমার ভালো লাগে কারণ সরকারী দলের প্রতি সবসময় এরা একটা বিরোধীভাব পোষন করে খবরের পাতায়। সরকারী দলের সাফল্য প্রচার করার জন্য তো বিটিভির রাত আটটার সংবাদ আছেই। কোন মন্ত্রী বড়ইপাতা দিয়ে কুলিকুচা করলেন, কে বরই ভর্তা করে খেলেন সব ধরনের সংবাদ থাকে সেখানে। বিটিভির খবরে বিরোধীদল বলে কিচু থাকেনা। আসলে বাংলাদেশে বিরোধীদল বলে কিছু নেই। বিরোধীদল একটা ছায়া সরকার। গণতন্ত্রে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশের প্রধান দুই দল এই ছায়া সরকারের ভূমিকা পালনে চরমভাবে ব্যর্থ। সংসদ বর্জন এখন এখানে একটা ফ্যাশান, প্রেস্টিজের ব্যাপার। বিরোধীদলকে ফ্লোর না দেয়া রীতির পর্যায়ে পড়ে। সরকার যুদ্ধোংদেহী মনোভাবে থাকে। বিরোধীদল সমালোচনা করলেই তাদের চৌদ্দ দুগুনি আঠাইশ গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ে। সরকারের মন্ত্রীগুলো যেন একেকটা কলের পুতুল। সুইচ টিপলেই একই কথা বলে। কোন কিছু ঘটলে তারা একই বিবৃতি দিতে থাকে। অথচ স্বাস্থ্যখাতে কিছু ঘটলে সেটা নিয়ে যোগাযোগমন্ত্রীর বিবৃতি দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। নিজের লুঙ্গি সামলাতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সে যায় অন্যের হয়ে বিবৃতি দিতে।

আমার লেখায় আমি মনে হয় প্রথম আলোর পক্ষে কথা বলে ফেলছি। বাংলা ব্লগের পাতায় পাতার পরিভ্রমনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি এখানে প্রথম আল অপছন্দ করেন এরকম বহু মানুষ আছেন, যারা ভালোবেসে প্রথম আলোকে প্রথম আলু বলেন। ব্যক্তিগত পছন্দ বিভিন্ন রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। প্যারোডি করা ভালো কিন্তু বিকৃতির প্যারোডে হাঁটা শিক্ষিত ভদ্রজনের জন্য সমুচিত কাজ নয় বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি প্রথম আলো বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের ভুমিকা পালন করে। বিরোধীদলের যে কাজ করা উচিত সেই কাজটাই প্রথম আলো করে। একজন আবুল হোসেনের জন্য আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজো স্বপ্ন রয়ে গেলো। বাঙালী স্বপ্ন প্রিয় জাতি। তাদের স্বপ্ন দেখায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য সরকার মহাশয় পদ্মা সেতু করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেন না। তারা দুষ্টু ছেলে ছিহ, এমনটা করে না বলে আবুল হোসেনকে শাসন করে বাসায় নিয়ে ক্যাডবেরি মিল্ক চকোলেট দিয়ে আটকে রাখলেন। বিরোধীদলের উচিত ছিলো এই বিষয়ে প্রকট আন্দোলন গড়ে তোলা। কিন্তু তারা পারেনি। তারা পারেনি এরকম একটি সেনসেটিভ ইস্যুকে কাজে লাগাতে। পুরো বাংলাদেশ তাদের পাশে দাঁড়াত এই ব্যাপারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত একমত না হয়ে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। অথচ তারা কিছুই করতে পারলেন না। বিএনপির মন্ত্রীরা টিন চুরি গম চুরির মামলায় জেলে পঁচে মরছেন অথচ এদিকে সেতু চুরি, রেল চুরি, ব্যাংক চুরি সব হয়ে গেলো তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমালেন। কি আফসোস করা উচিত তাই আজকাল বুঝে উঠে পারিনা। প্রথম আলোসহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম সরকারের এই সব দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ভাবে লিখে গেলো। আর আমাদের বাহারী মন্ত্রীসভার মন্ত্রীরা যেখানে ডাক্তার হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যার সারাজীবন কেটেছে রোগীর প্রেসার দেখে তারা সবাই মাইক্রোফোন গরম করে রাখলেন মুখনিঃসৃত বাক্যয্যোজনায়।

ধ্যুর! আমি কখনো ব্লগার হতে পারবো না। ধান ভানতে শিবের গীত শুরু করি। যা বলতে চাই সেটা বাদ দিয়ে অন্য কিছু নিয়ে প্যাঁচাল শুরু করি। প্রধান সড়ক দিয়ে হাটতে ইয়ে দেখি আমি কানাগলির ভেতর ঘুরছি। বাংলাদেশে ব্লগিং করা একটা সম্মানজঙ্ক পেশা। মেয়ে দেখতে গিয়ে যখন পাত্রীর বাপ আমাকে জিজ্ঞেস করবে বাবা তুমি কি করো, তখন আমি চাকরী না করি বলে বলবো আমি ব্লগিং করি। ব্লগারদের সরকার নিরাপত্তা দেন। সে তো আর যাই তাই পেশা নয়। তবে একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি। যে কয়েকজন ব্লগারকে নিরাপত্তা দেয়ার তালিকা তৈরী হয়েছে তাদের বেশীরভাগ একটি নির্দিষ্ট জিনিসের বিপক্ষে লেখেন। ওই জিনিসটার বিপক্ষে লেখার মত সৎ সাহস আমি আজো অর্জন করতে পারিনি। তাই পুলিশি প্রোটেকশান আমার কপালে ইহকালে জুটবেনা। পরকালের ব্যাপারটা আমি কইতে পারিনা মামু। দিন যায় রাত আসে, রাতের পরে দিন। এভাবে সময় বদলে যায়। আমার পছন্দের প্রথম আলো কি বদলে গেলো! যে প্রথম আলোকে আমি বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদলের তকমা দেই তারাও যেন কেমন হয়ে গেছে বছরখানেক হলো। সরকার বিরোধী লেখা লিখে তারা মনে হয় আজকাল আর জোশ পায় না। পূঁজিবাদী এই সমাজ ব্যবস্থায় আদর্শ আজকাল আদর্শ ঠুনকো হয়ে গেছে। সবাই দেখি চাটুকারিতায় ব্যস্ত। আমি তার মানে এটা বলতে চাচ্ছি না যে প্রথম আলো সবসময় সরকারের বিরুদ্ধে লেগে থাকবে। কমপক্ষে দিনকে দিন, রাতকে রাত বলার মত মানসিকতা থাকা উচিত। তা না হলে নাম পরিবর্তনের এই যুগে প্রথম আলোর নাম পালটে “ডৈনিক সরকারী আলো” রাখা যায়।

বিঃদ্রঃ সরকারী দল বলতে আমি আওয়ামী লী , বিএনপিকে আলাদা করে বোঝাচ্ছি না, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তারা এই একই চরিত্র বহন করে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×