somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিয়ার দালান, ঝিনাইদহ

২৪ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুমমেট এখন ছাত্রজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষ করে আমরা যারা পড়াশোনা করতে বাড়ির বাহির হয়ে পড়েছি। এসএসসি পাশ করার পর সেই যে বাড়ির বাহির হলাম , তারপর আর সেভাবে বাড়ি ফেরা হলো না। বিবাহিত মেয়েদের মত মাঝে মাঝে পিতৃগৃহে বেড়াতে যাই। মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার লোভ তাই ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

আমি আড়াই বছরের মত ঝিনাইদহ ছিলাম। স্থানীয় লোকেরা উচ্চারন করে ঝিনেদা। ঝিনুকদহ থেকে ঝিনাইদহ নামটা ব্যুৎপত্তি লাভ করেছে। পাগলা কানাই মোড়ে একটা মেসে উঠি। মেসের কোন নাম ছিলো না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা ১৩ জন ছাত্র মিলে দোতলার ফ্লাট নিয়ে থাকতাম। খুলনায় আমাদের পাশের বাড়ির মোকলেস কাকুর ছোট শ্যালকের মাধ্যমে আমি এই মেসের সন্ধান পাই।

মেসে ওঠার পর রুমমেট হিসেবে পাই মোজাম নামের একটা ছেলেকে। ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলায় বাড়ি। খুব সহজ সরল একটা ছেলে। মনের মধ্যে তেমন কোন প্যাঁচগোঁচ ছিলো না। খেতে ভালোবাসত । তরকারী যাই হোকনা কেন এক গামলা ভাত সে অনায়াসে খেয়ে ফেলতে পারতো। এই ছেলের দ্বারাই খাওয়াকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করতাম। তার আরেকটা নেশা ছিলো। সিনেমা হলে গিয়ে ম্যুভি দেখা। প্রতি সপ্তাহে সে একটা করে ম্যুভি দেখত। একহাজার চলচিত্র দেখলে পরিচালক হওয়া যায় এই ডায়ালগ আমি মোজাম্মেলের মুখেই প্রথম শুনি।

মোজাম্মেল নিজে থেকে প্রস্তাব করলো মিয়ার দালান দেখতে যাওয়ার্। তার ধারনা আমি এগুলো দেখে আনন্দ পাবো। কি দেখে ধারণা করলো বলতে পারবো না।

সময়টা ২০০৬ এর নভেম্বর এর দিকে। একদিন দুপুরের খাওয়া সেরে মোজাম আর আমি বেড়িয়ে পড়লাম। পাগলা কানাই থেকে বাসে করে আরাপপুর বাসস্ট্যান্ডে নামলাম। তারপর রিকশা নিলাম। ক্যাডেট কলেজের পেছনের গ্রামের ভেতর দিয়ে রিকশা এগিয়ে চলেছে। দুপাশে বাশ ঝাড়। ঝিনাইদহ সদর থেকে মিয়ার দালানের দূরত্ব তিন কিলোমিটারের মত। অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম। নবগঙ্গা নদীর পাশে অবস্থিত ভগ্নপ্রায় এক ভবন। খুব সম্ভবত দ্বিতল ছিলো।

মোজাম মিয়ার দালানের ইতিহাস বলতে পারলো না। এটুকু জানে এটা কোন প্রাচীন জমিদার বাড়ী। ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখলাম। সাপখোপের বাসা হয়ে আছে। মেঝেতে গাঁজাখোরেরা তাদের নিদর্শন রেখে গেছে। আমার মনে হতে লাগলো আমি ইতিহাসের খুব কাছে এসেছি। এর আগে ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমনের অভিজ্ঞতা বলতে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি এবং বাগেরহাটের খান জাহান আলী (র:) এর মাজার ও ষাটগম্বুজ মসজিদ ভ্রমনের অভিজ্ঞতা।

এই যেমৃতপ্রায় নবগঙ্গা নদীর পাড়ে ঘাট, এই ঘাটে বসে জমিদার কন্যা স্নান করত, সখীদের সাথে নিয়ে জল ছিটিয়র খেলা করত। মুরদ্দায় অবস্থিত এই দালানের খোদাই করা লিপি থেকে জানা যায় ১২৩৬ বঙ্গাব্দে। মোজাম জানালো এই দালানের সাথে একটা সুড়ঙ্গ আছে। আমাকে দেখানোর জন্য কিছুক্ষণ খোঁজাখুজি করলো। কিন্তু খুঁজে পেলো না।

শীতের সূর্য্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। আমরা ফেরার পথ ধরলাম। ধান খেতের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আরাপপুর চলে এলাম।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×