somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় বিভিন্ন ধর্মতত্বে ঈশ্বরের ধারনা ( নাস্তিক-আস্তিক ব্যবচ্ছেদ )

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৌদ্ধ দর্শন
ভারতীয় দর্শনগুলোর ভিতর গৌতম বুদ্ধ প্রণিত বৌদ্ধ দর্শন হলো নাস্তিক সম্প্রদায়ভুক্ত দর্শন । দার্শনিক অর্থে আমরা যা বুঝি সেই অর্থে বুদ্ধদেব দার্শনিক ছিলেন না । তিনি ছিলেন নীতিতত্ত্বের সংস্কারক ও প্রচারক । দার্শনিক তত্ত্বালোচনা তাঁর উদ্দেশ্য ছিলনা বরং তিনি এর বিরোধীই ছিলেন । তাঁর যুক্তি ছিল এই তাত্ত্বিক প্রশ্নের চূরান্ত মীমাংশা কোন মানুষের দ্বারা সম্ভব নয় । তদুপরি এই সকল প্রশ্নের সমাধান করতে গেলে মতভেদের সৃষ্টি হয় । সুতরাং তাঁর মতে দার্শনিক সমস্যার সমাধানের চেষ্টা অনর্থক ও নিষ্ফল ।

এখন প্রশ্ন হলো বৌদ্ধগণ ঈশ্বরের বিষয়ে তাঁদের মত কিভাবে তুলে ধরেন । বৌদ্ধরা ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয় । তাই বৌদ্ধ দর্শনে ঈশ্বরের স্হান নেই । বৌদ্ধগণ বলেন প্রত্যেক কার্যরেই কারন আছে । কিন্তু পরিনতি কারন (final cause ) বলে কিছু নাই । সুতরাং পরিনতি কারন রুপে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করবার কোন কারন নেই ।

নৈতিক অগ্রগতির জন্যও ঈশ্বরের সাহায্যের কারন নেই । অধিকিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস নৈতিকতার ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি করে । ঈশ্বর যদি সকল কিছুরই কারন হন তানি যদি সরবশক্তিমান হন এবং তাঁহার ইচ্ছায় যদি সকল কিছু ঘটে থাকে তবে মানুষর ইচ্ছার স্বাধীনতা (freedom of will ) কোথায় ? এবং মানুষ ধর্ম বা সৎ আচরনের ও চরিত্র গঠনের কোন প্রয়োজন অনুভব করবে না ।

গৌতম বুদ্ধ কর্ম নিয়ম কে সকলের উপরে স্হান দিয়েছেন । কর্ম নিয়মের সাহায্যে জগতে জীবের দুঃখ দুর্দশার ব্যাখা করা যায় , কর্মের ফলে জীবের জন্ম হয় । সুতরাং সৃষ্টিকর্তা রুপে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের কোন প্রয়োজন নেই ।

বৌদ্ধগণ বলেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানের জন্য যে সকল যুক্তি সাধারনত দেয়া হয় সেগুলি গ্রহনযোগ্য নয় । ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন প্রমানের ভিতর একটি প্রমান হলো আদি কারন - বিষয়ক যুক্তি ( the cosmological or causal argument ) । এই যুক্তি অনুসারে জগতের একটি স্বয়ংসৃষ্ট আদি কারন ( first cause ) বা পরিনতি কারন (final cause ) আছে । কিন্তু প্রাাচীন বৌদ্ধগণ এই পরিনতি কারনে বিশ্বাস করেন না । তাঁদের মতে জগতের কারন জগতই । তা ছাড়া স্বয়ংসৃষ্ট পরিনতি কারনের ধারনা আত্মবিরোধপূর্ণ ।

ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে আর একটি প্রমান দেয়া হয় । এই প্রমানকে বলা হয় উদ্দেশ্যবাদ বিষয়ক যুক্তি । এই যুক্তি অনুসারে ঈশ্বর জগতের সৃষ্টিকর্তা । আমরা জানি ঈশ্বর পূর্ণ ( perfect ) এবং জগত অপূর্ণ । ঈশ্বর যদি পূর্ণ হন , তবে তিনি কেমন করে অপূর্ণ জগত সৃষ্টি করেন ? খেয়ালবশতও ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করতে পারেন না । কারন জগতে নিয়ম শৃঙ্খলা বিদ্যমান । খেয়ালবশত যে কাজ করা হয় তাতে নিয়ম শৃঙ্খলা থাকেনা ।

গৌতমবুদ্ধকে তাঁর এক শিষ্য জিজ্ঞাসা করেছিলেন , আপনি কী ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন ? গৌতমবুদ্ধের উত্তর , আমি কী কোথাও বলেছি আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি ।
এরপর সেই শিষ্যের প্রশ্ন , তাহলে আপনি কী ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন ?
আবারো গৌতমবুদ্ধের উত্তর , আমি কী কোথাও বলেছি আমি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করি ।

পরবর্তিতে বৌদ্ধ ধর্মের ভিতর দুভাগ হয়ে যায় একভাগকে বলা হয় হীনযান এবং অন্য ভাগকে মহাযান বলা হয় । উপমহাদেশে মহাযান অংশের বসবাস । মহাযানরা গৌতমবুদ্ধকে ঈশ্বর হিসেবে মনে করে থাকে অপরদিকে চীন জাপানে হীনযানদের বসতি । হীনযানপন্হীরা মনে করেন , নির্বান সবসময় ব্যক্তিগত , অর্থাৎ নিজের মুক্তিই কাম্য হওয়া উচিত । মুক্তিরপথ সবসময় একজনর জন্য মনে করেন বলে এই সম্প্রদায়কে হীন ( সংকীর্ন ) যান (পথ) বাদী বলা হয় । আর মহাযান সম্প্রদায় মুক্তিরপথ সবার জন্য বলে মনে করেন বলে তাঁরা মহাযান বলে বিবেচিত হয়ে থাকেন ।
বৌদ্ধদের হীনযান সম্প্রদায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব একেবারেই স্বীকার করেননি কিন্তু মহাযান সম্প্রদায় বুদ্ধদেবকেই ঈশ্বরের আসনে বসান । তাঁদের মতে বুদ্ধদেবই পাপীতাপীর ত্রাণকর্তা ।সুতরাং দেখা যাচ্ছে মহাযানী মতে বুদ্ধদেব ঈশ্বরের স্হলাভিষিক্ত ।








চার্বাক দর্শন
জড়বাদী চার্বাকদের মতে প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমান এবং যাহা প্রত্যক্ষগোচর নয় তাহার অস্তিত্ব নাই । যেহেতু ঈশ্বর প্রত্যক্ষগোচর নয় , সেহেতু ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা যায় না । তাঁরা আরো বলেন , ক্ষিতি , অপ , তেজ ও মরুত্ এই চার রকমের জড় উপাদানের স্বাভাবিক পরিনতিই হলো জগৎ , অর্থাৎ চতুর্ভূতের স্বাভাবিক মিশ্রণের ফলেই জগতের সৃষ্টি হয়েছে । তাই জগত স্রষ্টারুপী ঈশ্বরের অনুমান করার কোন প্রয়োজন নাই । তাঁদের উল্লেখযোগ্য একটি বাণী হলো -
ঋণ করে হলেও ঘি খাও , যতদিন বাঁচো সুখে বাঁচো । ( ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ , যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ )



জৈন দর্শন

জৈনগণও নিরীশ্বরবাদী । তাঁরা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করেন না । তাঁরা বলেন , কী প্রত্যক্ষ , কী অনুমান কোনটির সাহাজ্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমান করা যায় না । জৈনমতে জগত সৃষ্টির নিমিত্ত কারন হইলো অদৃষ্ট - শক্তি এবং উপাদান কারন হলো পুদগল । তদুপরি , ঈশ্বরকে পূর্ণ বলা হয় । তিনি যদি পূর্ণ হন , তবে তাঁহার তো কোন অভাব থাকতে পারে না । আর অভাব যদি না থাকে , তিনি জগত সৃষ্টি করবেন কেন ? দয়া পরবশ হয়ে ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেছেন , এটা মনে করার কোন যুক্তি নাই , কারন তা যদি হয় , তবে জগতে এতো দুঃখ কেন ? তাই জৈন দার্শনিকরা বলে থাকেন , জগত স্রষ্টারুপে কোন ঈশ্বরের কল্পনা অযৌক্তিক । তবে জৈন দর্শনে সর্বজ্ঞাতা ( omniscience ) , সর্বশক্তিমত্তা ( omnipotence ) প্রভৃতি ঐশ্বরিক গুণে বিভূষিত তীর্থঙ্করগণ ঈশ্বরের স্হান অধিকার করেছেন ।



সাংখ্য দর্শন

সাংখ্যদর্শনকেও নিরীশ্বরবাদী দর্শন বলা হয় । সাংখ্যদার্শনিকেরা বলেন , ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমান করা যায় না । এমন কি জগত সৃষ্টির ব্যাখার জন্যও ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকারের কোন প্রয়োজন হয় না । প্রকৃতিই জগতের কারন । প্রকৃতি হইতেই জগতের অভিব্যক্তি । যে কোন কারন নিজের পরিবর্তন ছাড়া কোন কার্যের উত্পাদন করতে পারে না । তাই ঈশ্বর অপরিবর্তনীয় বলিয়া তিনি জগতরুপ কার্যের কারন হতে পারেন না । তবে বিজ্ঞানভিক্ষু ও কোন কোন সাংখ্য ভাষ্যকার পরম পুরুষরুপে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন , যদিও এই মতবাদ খুব বেশি স্বীকৃতি পায় নাই । বিজ্ঞানভিক্ষুদের মতেও ঈশ্বর জগতের স্রষ্টা নহেন ,সাক্ষী বা দ্রষ্টা মাত্র ।




মীমাংশা দর্শন

মীমাংশা দর্শন জগত্ স্রষ্টরুপে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে না । প্রাচীন মীমাংশকগণ ঈশ্বরের কোন প্রয়োজন অনুভব করেন নাই এবং তাঁহাদের আলোচনায় ঈশ্বরের কোন উল্লেখ নাই । প্রভাকর এবং কুমারিল ও জগত্ স্রষ্টারুপে বা কর্মফল দাতারুপে বা পাপ পুণ্যের নিয়ামকরুপে বা বেদের রচয়িতারুপে কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন নাই । অধিকন্তু মীমাংশকেরা বলেন যে , ঈশ্বর যদি জগত্ স্রষ্টা হন , তবে তাঁহাকে পক্ষপাতিত্ব দোষে দুষ্ট বলিতে হয় , যেহেতু তিনি কাহাকেও সুখী এবং কাহাকেও দুঃখী করেছেন । কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষপাতিত্ব দোষ আছে একথাও স্বীকার করা যায় না । কেউ কেউ বলেন যে , মীমাংসা দর্শন যেহেতু বৈদিক দেবতাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করতে নির্দেশ দেয় , সেহেতু তাঁরা বহুদেবতায় বিশ্বাসী । অর্থাত্ মীমাংসা বহুঈশ্বরবাদী দর্শন , কিন্তু আসলে মীমাংসা বহু ঈশ্বরবাদী নয় , কারন যে সকল দেবতাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করা হয় তাঁরা ব্যক্তি নন । মীমাংসকদের মতে যজ্ঞ বিধাতা কেবল গুনবাচক মন্ত্র । ঈশ্বরের মহিমা কীর্তন মীমাংসকেরা কোনদিন করেন নাই । সুতরাং এটা স্বীকার করতে হয় যে মীমাংসা নিরীশ্বরবাদী ।


যোগ দর্শন

যোগদর্শন ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে । যোগদর্শনের মতে ঈশ্বর সর্ব দোষমুক্ত , ক্লেশমুক্ত , সর্বত্র বিরাজমান , সর্বজ্ঞ , নিত্য , অনাদি ও অনন্ত । ঈশ্বরের অস্তিত্বেয় পক্ষে তাঁরা কয়েকটি যুক্তি দিয়ে থাকেন । এগুলো হলো ,

১. যাহারই মাত্রা আছে তাহারই সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন স্তরও আছে । আমাদের জ্ঞানেরও মাত্রা আছে । জ্ঞানের চরম মাত্রা হলো সর্বজ্ঞতা , এই সর্বজ্ঞতা যাঁর আছে তিনিই ঈশ্বর । সুতরাং ঈশ্বর আছেন ।

২. পুরুষ এবং প্রকৃতির সংযোগের ফলে জগতের অভিব্যক্তি এবং বিয়োগের ফলে জগতের বিনাশ হয় । কিন্তু পুরুষ এবং প্রকৃতি বিরুদ্ধ স্বভাবের । সংযোগ এবং বিয়োগ এদের স্বাভাবিক ধর্ম নয় । অতএব যে সর্বজ্ঞ , সর্বশক্তিমান ও পরিপূর্ণ পুরুষ এদের সংযোগ এবং বিয়োগ সাধন করেন , তিনিই ঈশ্বর ।

৩. বেদ , উপনিষদে ঈশ্বরের কথা বলা হয়েছে । যেহেতু এই শাস্ত্রগুলি অভ্রান্ত । তাই উক্ত যুক্তিতে ঈশ্বর আছেন ।



নৈয়ায়িক দর্শন


নৈয়ায়িকগণও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন । তাঁদের মতে ঈশ্বর জগতের স্রষ্টা , রক্ষক ও সংহারক । তিনি জগতের নিমিত্ত কারন , উপাদান কারন নন । ক্ষিতি , অপ , তেজ ও মরুত্ এই চাররকমের পরমানু , দেশ , কাল , ব্যোম , আত্মা এই সবকিছুর সাহাযে ঈশ্বর জগত সৃষ্টি করেন । ঈশ্বর জীবের পাপ পুণ্যের যথারীতি ফল ভোগের ব্যবস্হা করেন ।নৈয়ায়িকগণ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রায় দশটি প্রমান দিয়েছেন । তার ভিতর চারটি প্রমান গুরুত্বপূর্ণ

১. কারন বিষয়ক যুক্তি - চন্দ্র , সূর্য , পর্বত , সমুদ্র ইত্যাদি সবই বিভিন্ন উপাদানের দারা সৃষ্ট । এই বস্তুগুলির উপাদান কারনগুলো নিজে নিজে সংযুক্ত হওয়া সম্ভব নয় । একটি নিমিত্ত কারন প্রয়োজন । সেই নিমিত্ত কারন হলো ঈশ্বর ।

২. নৈতিক যুক্তি - মানুষের অদৃষ্ট হলো তার কর্মফলের ভান্ডারখানা । অদৃষ্ট এক অচেতন নিয়ম । তাই মানুষের কর্ম অনুসারে তার অদৃষ্টরুপ ভান্ডার হতে কর্মফলের ব্যবস্হা করবার জন্য একজন সচেতন নিয়ন্তার প্রয়োজন । সেই নিয়ন্তাই হলেন ঈশ্বর ।

৩. বেদের কর্তা রুপে ঈশ্বরের অস্তিত্ব - বেদ অভ্রান্ত গ্রন্হ । মানুষ সম্পূর্ণরুপে অভ্রান্ত নয় বলেই মানুষ বেদের প্রণেতা হতে পারে না । সুতরাং বেদের কর্তারুপে অভ্রান্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয় ।

৪ . শ্রুতির যুক্তি – বেদ অভ্রন্ত , বেদে ঈশ্বরের অস্তিত্বের ঘোষণা করা হয়েছে , সুতরাং ঈশ্ব আছেন ।



বৈশেষিক দর্শন

বৈশেষিক দর্শনও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে । বৈশেষিকদের মতে জড় জগতের যাবতীয় যৌগিক বস্তু ক্ষিতি , অপ্ , তেজ ও মরুৎ পরানুর সংযোগে উৎপন্ন হয় এবং এই পরমানুগুলির বিযুক্তিতে বিনষ্ট হয় । পরমানুগুলোর চেতনা নাই বলে তারা নিজে নিজে সংযুক্ত বা বিযুক্ত হতে পারে না । সুতরাং কোন বুদ্ধমান চেতন সত্তা আছেন যিনি পরমানুগুলোকে সংযুক্ত বা বিযুক্ত করতে পারেন । বৈশেষিকগণের মতে সেই চেতন সত্তাই হলেন ঈশ্বর । বৈশেষিকগণ আরও বলেন , জীব যাতে তার কর্মফলজাত অদৃষ্ট অনুসারে পুণ্যের জন্য পুরষ্কার এবং পাপের জন্য শাস্তি ভোগ করতে পারে এবং জীবাত্মা যাতে মুক্তিলাভ করতে পারে তার জন্য ঈশ্বর জগৎ সৃষ্টি করেন । বৈশেষিকদের মতে ঈশ্বর মানুষের অদৃষ্টকেও নিয়ন্ত্রিত করেন ।



উল্লেখ্য যে ভারতীয় দর্শনে আস্তিক এবং নাস্তিক যে দুটো ধারা গড়ে উঠেছে তা আমরা প্রচলিত অর্থে যা বুঝি সে অর্থে বুঝানো হয়না । ভারতীয় দর্শন মূলত বেদ কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে । তাই এই দর্শনে যে সকল সম্প্রদায় বেদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে এবং বেদের কথা সত্য বলে মানে তাঁরা আস্তিক আর যে সকল সম্প্রদায় বেদের প্রাধান্য স্বীকার করে না তারা নাস্তিক । অর্থাৎ ঈশ্বর বিশ্বাস করেন কিন্তু বেদে অবিশ্বাসী তিনি নাস্তিক । আবার ঈশ্বরে অবিশ্বাসী এবং বেদে বিশ্বাসী সেই সম্প্রদায় আস্তিক সম্প্রদায় ।



এখন দেখা যাক বেদে ঈশ্বর সম্পর্কে কী বলা হয়েছে

বেদ চার প্রকার – ঋক , যজুঃ , সাম ও অথর্ব । এর ভিতর ঋগ্ বেদই মূল বেদ । ঋগ্বেদের বিভিন্ন মন্ত্রে ইন্দ্র , অগ্নি , বরুণ বিভিন্ন বহুদেবতার স্তুতি করা হয়েছে এবং এই সকল দেবতাকে প্রাকৃতিক জগতের বিভিন্ন বস্তুর অধিকর্তা কল্পনা করা হয়েছে । ঋগ্বেদের বিভিন্ন মন্ত্রে বহুদেবতার স্তুতি করা হলেও বেদ সাধারন অর্থে বহুঈশ্বরবাদী ( Polythism ) নয় , যদিও কেও কেও মনে করেন । বিভিন্ন দেবতাকে একই সত্তার বিভিন্ন প্রকাশ – এই বর্ননা ঋগবেদের বিভিন্ন মন্ত্র পাওয়া যায় । যেমন –

“ একং সৎ বিপ্রা বহুধা বদন্তি

অগ্নিং যমং মাতরিশ্বান মাহুঃ “


অর্থাৎ একই পরম তত্বকে বিপ্রগণ বা তত্বদর্শীরা অগ্নি , যম , মাতরিশ্বা ( বায়ু ) নামে অভিহিত করেন ।
এই সব দৃষ্টে ম্যাক্সমুলার বলেন , বৈদিক বহু দেবতাবাদকে বহু ঈশ্বরবাদ (Polythism ) না বলে একস্হ বহু ঈশ্বরবাদ ( Henothism ) ( অর্থাৎ এক পরমসত্তায় বহুদেবতার মিলন ) বলাই শ্রেয় । ঋগবেদে এমন কথাও বলা হইয়াছে যে , একই পরমসত্তা সমস্হ বিশ্বজগৎকে ধারন করে আছে । ঋগবেদের পুরুষ – সূক্ত হতে একটি মন্ত্র উল্লেখ করা যেতে পারে –

“ সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ ।
স-ভূমিং সর্বতো বৃত্বাত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্ ।। “


অর্থাৎ তাঁর সহস্র মস্তক , সহস্র নয়ন , সহস্র চয়ন , তিনি বিশ্বব্যাপি হয়েও বিশ্বতিরিক্ত



তথ্যসূত্র :

ভারতীয় দর্শন – অর্জুন বিকাশ চৌধুরী
ভারতীয় দর্শনের ইতিবৃত্ত – রমেন্দ্র নাথ ঘোষ
বৌদ্ধ দর্শন - ড আকতার আলী
ভারতীয় ধর্ম ও দর্শন - ড রশীদুল আলম

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:২১
১৭টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×