মোটর সাইকেলের নম্বরপ্লেটের স্থানে কেউ লিখে রেখেছেন ‘জরুরি ডিশ’ (কেবল ব্যবসা)। আবার কেউ ‘বিদ্যুৎ’। কেউ ‘পুলিশ’, কেউ ‘গ্রাম পুলিশ’। আবার কেউ ‘সাংবাদিক’। ‘অন-টেস্ট’ লিখেছেন অসংখ্য ব্যক্তি। মোটরসাইকেলের বিক্রয়কেন্দ্রের নাম লেখা নম্বরপ্লেটের সংখ্যাও কম নয়। ঝিনাইদহের মোটরসাইকেলের চালকেরা এভাবে নিবন্ধন না করেই মাসের পর মাস ধরে চলাচল করছেন। সব দেখে মনে হচ্ছে এগুলো দেখার কেউ নেই।
আর এই রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মোটর সাইকেলের কারণে একদিকে যেমন সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলার অবনতিও হচ্ছে। কারণ সন্ত্রাসীরা নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে এই নম্বর বিহীন মোটর সাইকেল ব্যবহার করছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী যাদের এগুলো রোধ করার দায়িত্ব তারাও স্বীকার করছেন বিষয়গুলো, তবুও যেন কিছুই করার নেই। অনেক কর্মকর্তা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কথা বলে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানালেন।
ঝিনাইদহ বিআরটিএ কার্যালয়ে ঝিনাইদহ জেলা বিআরটিএ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৩ হাজার মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে। আর রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মোটর সাইকেল রয়েছে এর দ্বিগুন। এমন অনেক সাইকেল রয়েছে যেগুলো রেজিষ্ট্রেশন না করেই বয়স শেষ হয়ে গেছে।
খোজ নিয়ে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার ৬ টি উপজেলায় প্রায়ই চোখে পড়ে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন শত শত মোটর সাইকেল। এগুলোর মধ্যে বেশীর ভাগ রয়েছে অন-টেষ্ট আর শো’রুমের নাম। এছাড়াও রয়েছে নানা কথা লেখা নম্বার প্লেট। যেমন রয়েছে জরুরী ডিশ কাজে নিয়োজিত, জরুরী বিদ্যুৎ। প্রশাসনের কেউ কেউ লিখে রেখেছেন পুলিশ। অনেক সংবাদকর্মী লিখে রেখেছেন প্রেস। বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের অফিসের নাম লিখে রেখেছেন। এগুলো সব সময় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চোখের সামনেই চলছে, কিন্তু প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নেই। মাঝে মধ্যে রাস্তায় ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের চেকপোষ্ট বসাতে দেখা যায়। কিন্তু মোটর সাইকেল মালিকরা যেন এর বাইরে থেকে যায়।
অবশ্য একাধিক মোটর সাইকেল মালিক জানিয়েছেন, তারা কষ্ট করে মোটর সাইকেল কেনার পর রেজিষ্ট্রেশন করতে বিআরটিএ অফিস গেলে অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয়। এছাড়াও কাগজপত্রের ত্রুটি দেখিয়ে চলে নানা হয়রানী। যে কারনে তারা রেজিষ্ট্রেশন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কষ্ট করে সাইকেল কেনার পর ঘুষ দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা তাদের জন্য দূঃখজনক ঘটনা বলে মনে করেন অনেকে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ ট্রাফিক বিভাগের প্রধান সালাউদ্দিন আহম্মদ এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, তারা মাঝে মধ্যেই অন-টেষ্ট সাইকেলগুলো আটক করে থাকেন। অনেকে রেজিষ্ট্রেশন করে তারপর সাইকেল নিয়ে যান। এভাবে পূর্বের চেয়ে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সাইকেল অনেক কমে এসেছে। আগামীতে আরো শক্ত ভাবে এগুলো রোধ করা হবে বলে তিনি জানান। আর বিভিন্ন কথা লিখে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো যাতে না থাকে যে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।
ঝিনাইদহ বিআরটিএ সহকারী সার্কেল শেখ সেলিম বক্স জানান, রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সাইকেল আটকের দায়িত্ব পুলিশের। এগুলো ঠিকমতো না ধরার কারনে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছেন, তেমনি আইনশৃঙ্খলার অবনতিও হচ্ছে। ধারাপ লোকেরা এগুলো ব্যবহার করে নানান খারাপ কাজ করে বেড়াচ্ছেন। রেজিষ্ট্রেশন করতে গেলে হয়রানী বা বাড়তি টাকা নেওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন। বরং দাবি করেন এখন একদিনেই নাম্বার দিয়ে দেওয়া হয়।
- See more at: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫০