somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরবন মাথা নোয়াবার নয়

০৯ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পল্লব মোহাইমেন | তারিখ: ০৬-১১-২০১১
Click This Link
প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে আনিসুল হকের কলাম ‘আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছি’ একেবারে আমার মর্ম স্পর্শ করেছে। তিনি সিডরের মতো ঝড়েও যে সুন্দরবন আমাদের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন। সুন্দরবনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে সুন্দরবনকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে। এতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে। অনেকের মনে এ আয়োজন নিয়ে যে প্রশ্ন, সে ব্যাপারে আনিসুল হকের বক্তব্য নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য। আয়োজক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বাণিজ্যিক—এও আছে তাঁর লেখায়।
আমি বলতে চাই আনিস ভাই, এই আয়োজক বা তাদের কাজ নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের অবকাশ নেই। আমি নিজে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনপ্রক্রিয়া ফলো করছি ও খবরাখবর লিখে আসছি। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশনের এসব কর্মকাণ্ড মানে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার কাজে ধারাবাহিকতা আছে। ২০০৭ সালের ৭ জুলাই যখন পর্তুগালের লিসবনে একটি জমকালো অনুষ্ঠানে মানুষের তৈরি করা সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের ফলাফল দেওয়া হয়, তখনই প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনপ্রক্রিয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। চার শতাধিক প্রাথমিক মনোনয়ন থেকে ২০০৯ সালের ৭ জুলাই ৭৭টি স্থানের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর বিচারকদের রায়ে ২১ জুলাই এখান থেকে ২৮টি স্থান চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হয়। এখন ঠিক করা হয়েছে আগামী ১১ নভেম্বর গ্রিনিচ মান সময় বেলা ১১টা ১১ মিনিট পর্যন্ত ভোট দেওয়া যাবে। একই দিন রাতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত সাতটি স্থানের নাম ঘোষণা করা হবে। আর এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে নতুন প্রচারণা ‘নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স অব সিটিস’ চালু হয়ে গেছে।
নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্সের প্রধান কার্যালয় জুরিখে। এটি একটি বেসরকারি উদ্যোগ। যদিও ওয়েবসাইটে বলা আছে, এটি অলাভজনক। তবুও ধরে নিচ্ছি এটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তাতে কী হয়েছে? প্রতিষ্ঠানটি তো আর আমাদের সুন্দরবন দখল করতে আসছে না বা সুন্দরবন বিক্রি করে দিচ্ছে না। গোটা দুনিয়ার মানুষের ভোট আর বিশেষজ্ঞ বিচারকমণ্ডলীর রায়ে যে সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন করা হয়, তাতে স্থানগুলো বা দেশগুলোই তো লাভবান হয়েছে। যেদিন নতুন সপ্তাশ্চর্যের ঘোষণা দেওয়া হলো, সেদিন এপি, এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএনসহ পৃথিবীর তাবত্ সংবাদমাধ্যম তা প্রচার করেছে। আমরাও সে খবর ছেপেছি, জেনেছি। প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের দ্বিতীয় পর্বের ফলাফল ঘোষণাও সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে এসেছে। সেদিন সুন্দরবনের নামটাও কিন্তু জেনে গেছে গোটা দুনিয়া। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এ নির্বাচনে শীর্ষ ৭৭-এর মধ্যে ছিল। তখন ব্যাপক প্রচারের কারণে ২০০৮-এর পর থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে এটা চোখের সামনেই দেখা যায়।
অনেকে বলছেন, ইউনেস্কো তথা জাতিসংঘের কোনো সংস্রব নেই প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের সঙ্গে। তাতে কী এল গেল? ফিফা, অস্কার, অলিম্পিক কোনটার সঙ্গে জাতিসংঘ আছে? তার পরও ব্যাপক আলোড়ন দেখে সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের একদিন আগে ২০০৭ সালের ৫ জুলাই ইউনেস্কো এই উদ্যোগকে সমর্থন দেয়। চলতি বছরে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে ইউনেস্কো। এটা তো ব্যাপার না। বেসরকারি একটা উদ্যোগে জাতিসংঘের অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান কতটা জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ—এ প্রশ্ন অবান্তর।
তার পরও যদি বিশ্বস্ততার কথা ওঠে, তবে বলতে হয়, নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন কাজ করছে সরকারের সঙ্গে। অনেকেরই মনে আছে, দ্বিতীয় পর্বে এসে ২০০৮-এর এপ্রিল মাসে সুন্দরবন ও কক্সবাজার নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে যায়। কেন? তখন পর্যন্ত সুন্দরবন ও কক্সবাজারের জন্য অফিসিয়াল সাপোর্টিং কমিটি ছিল না। তখন এই কমিটি করতে গিয়ে দেখা গেল, সরকারি সংস্থা ছাড়া বা সরকারের অনুমোদন ছাড়া কমিটি করা যাবে না। তাই বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কক্সবাজার আর সুন্দরবনের জন্য অফিসিয়াল সাপোর্টিং কমিটি গঠন করে। আবার যেসব স্থান একাধিক দেশে অবস্থিত, সেসবের জন্য সব দেশেরই কমিটি লাগবে, না হলে বাদ। সুন্দরবনের জন্য বেশ কিছু সময় পর পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় কমিটি গঠন করা হয়। এ কারণে এ প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে মাউন্ট এভারেস্ট আর নায়াগ্রা জলপ্রপাত। এভারেস্টের জন্য নেপালে কমিটি হলেও চীন কমিটি গঠন করেনি। আর নায়াগ্রার ক্ষেত্রে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র দুটি দেশই কমিটি গঠন করতে পারেনি। চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ ২৮টি স্থানের সঙ্গে ৩৮ থেকে ৪০টি দেশ জড়িত আছে। সব দেশেই আছে অফিসিয়াল সাপোর্টিং কমিটি। তাই একটা সংগঠন এতগুলো দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করলে তাকে তো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এসএমএসে ভোট দেওয়া নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন আছে। এসএমএসে বাণিজ্য আছে, তা ঠিক। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে এই এসএমএসের টাকা তিনভাগে ভাগ হচ্ছে। দুই টাকার মধ্যে ৮০ পয়সা পাচ্ছে নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন, ৬০ পয়সা পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটর আর বাকি ৬০ পয়সা পাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আর প্রতি এসএমএসে সরকার সরাসরি কর হিসেবে পাচ্ছে ১৫ শতাংশ অর্থাত্ ৩০ পয়সা। উদ্যোক্তাদের এখানে একটা আয় হচ্ছে সেটা ঠিক। তাদেরও তো খরচাপাতি আছে। আমরা তো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আয়োজিত সংগীতপ্রতিভা অন্বেষণের প্রতিযোগিতায় এসএমএস করে একজন নোলক, একজন বিউটিকে নির্বাচন করছি। তাহলে সুন্দরবনের জন্য এসএমএস করলে ক্ষতিটা কি, এটা বোধগম্য নয়। আড়াই টাকারও কম খরচ একটা এসএমএসে। এটা করলে কী এমন ক্ষতি হবে আমাদের।
বাংলাদেশ অনেককিছুই গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না। তার পরও কিছুটা হলেও সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এই প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনকে। পর্যটন করপোরেশন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জড়িত এর সঙ্গে। তবে কাজের কাজ কিন্তু হয়েছে সাধারণ মানুষের ভোটে। ব্যক্তিগত ও বেসরকারি কিছু উদ্যোগ এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কৃতিত্বটা পুরোপুরিই পেতে পারে। ইন্টারনেটে চোখ রাখলেই দেখা যায়, অন্য দেশগুলো কত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এ প্রতিযোগিতাকে। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবল-তারকা লিওনেল মেসি তাঁর তাবত্ ভক্তকুলকে আহ্বান জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার ইগুয়াজু জলপ্রপাতকে ভোট দিয়ে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় নিয়ে যেতে। সে ভিডিও এ নির্বাচনের ওয়েবসাইটেই (http://www.n7w.com বা http://www.new7wonders.com) আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু সে দেশের টেবিল মাউনটেনের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁরা আশা করছেন, নেলসন ম্যান্ডেলাও ভোট চাইবেন টেবিল মাউনটেনের পক্ষে। ভিয়েতনাম চার বছর ধরেই হা লং বে নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশি যাঁরা হা লং বে ঘুরে আসছেন, তাঁদের তোলা ছবিতে দেখা যায়, সেখানকার সাইনবোর্ড, বিলবোর্ডে এই নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রচার। সুন্দরবনের জন্য ভারতে প্রচার কম এ ধারণাও ঠিক নয়। আলেক্সা ডট কমের হিসাব অনুযায়ী এই ভোটের ওয়েবসাইট বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে ব্যবহার করা হচ্ছে বেশি। এই মুহূর্তে কমপক্ষে ১৫টি দেশ ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে তাদের প্রাকৃতিক স্থান নিয়ে। তার মানে, কমপক্ষে ২০ কোটি মানুষ এটার সঙ্গে এখন জড়িয়ে গেছে। ফলাফল যেদিন ঘোষিত হবে, সেদিন এই ২০ কোটি মানুষ মুখিয়ে থাকবে কোন কোন স্থান আছে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের তালিকায়, তা জানতে। এই প্রচারের গুরুত্ব অপরিসীম। সেটা আমাদের বুঝতে হবে।
এবার সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের। এ সুযোগ কাজে লাগানোর একেবারে দ্বারপ্রান্তেও আমরা। চূড়ান্ত পর্বে সুন্দরবন উঠে এসেছে, এখন এত দূর এসে ভোটে হেরে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। আমরা মাথা নোয়াতে চাই না। কারণ সুন্দরবন মাথা নোয়াবার নয়।
তাই যে যেখানে যেভাবে আছি, চলুন সবাই ভোট দিয়ে সুন্দরবনকে নিয়ে যাই প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের চূড়ান্ত তালিকায়। বিশেষ করে বিদেশের ভোট আমাদের খুব প্রয়োজন। http://www.n7w.com বা http://www.new7wonders.com ঠিকানার ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি ই-মেইল ঠিকানা থেকে একবার করে ভোট দেওয়া যাবে। আর মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে SB লিখে পাঠিয়ে দিতে হবে ১৬৩৩৩ নম্বরে। যত খুশি তত এসএমএস পাঠানো যাবে। প্রতিটিকেই একেকটি ভোট হিসেবে গণনা করা হবে। এ ছাড়া আছে ফোন ভোট। এ জন্য +১ ৮৬৯ ৭৬০ ৫৯৯০, +১ ৬৪৯ ৩৩৯ ৮০৮০, +৪৪ ৭৫৮ ৯০০ ১২৯০ এই তিনটি নম্বরের যেকোনো একটিতে ফোন করতে হবে। এরপর একটা বার্তা শোনা যাবে। তারপর একটা সংকেত বাজলে তখন ৭৭২৪ নম্বর চাপতে হবে সুন্দরবনের জন্য।প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে আনিসুল হকের কলাম ‘আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছি’ একেবারে আমার মর্ম স্পর্শ করেছে। তিনি সিডরের মতো ঝড়েও যে সুন্দরবন আমাদের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন। সুন্দরবনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে সুন্দরবনকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে। এতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে। অনেকের মনে এ আয়োজন নিয়ে যে প্রশ্ন, সে ব্যাপারে আনিসুল হকের বক্তব্য নিঃসন্দেহে গ্রহণযোগ্য। আয়োজক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বাণিজ্যিক—এও আছে তাঁর লেখায়।
আমি বলতে চাই আনিস ভাই, এই আয়োজক বা তাদের কাজ নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের অবকাশ নেই। আমি নিজে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনপ্রক্রিয়া ফলো করছি ও খবরাখবর লিখে আসছি। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশনের এসব কর্মকাণ্ড মানে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার কাজে ধারাবাহিকতা আছে। ২০০৭ সালের ৭ জুলাই যখন পর্তুগালের লিসবনে একটি জমকালো অনুষ্ঠানে মানুষের তৈরি করা সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের ফলাফল দেওয়া হয়, তখনই প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনপ্রক্রিয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। চার শতাধিক প্রাথমিক মনোনয়ন থেকে ২০০৯ সালের ৭ জুলাই ৭৭টি স্থানের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর বিচারকদের রায়ে ২১ জুলাই এখান থেকে ২৮টি স্থান চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হয়। এখন ঠিক করা হয়েছে আগামী ১১ নভেম্বর গ্রিনিচ মান সময় বেলা ১১টা ১১ মিনিট পর্যন্ত ভোট দেওয়া যাবে। একই দিন রাতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত সাতটি স্থানের নাম ঘোষণা করা হবে। আর এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে নতুন প্রচারণা ‘নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স অব সিটিস’ চালু হয়ে গেছে।
নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্সের প্রধান কার্যালয় জুরিখে। এটি একটি বেসরকারি উদ্যোগ। যদিও ওয়েবসাইটে বলা আছে, এটি অলাভজনক। তবুও ধরে নিচ্ছি এটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তাতে কী হয়েছে? প্রতিষ্ঠানটি তো আর আমাদের সুন্দরবন দখল করতে আসছে না বা সুন্দরবন বিক্রি করে দিচ্ছে না। গোটা দুনিয়ার মানুষের ভোট আর বিশেষজ্ঞ বিচারকমণ্ডলীর রায়ে যে সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন করা হয়, তাতে স্থানগুলো বা দেশগুলোই তো লাভবান হয়েছে। যেদিন নতুন সপ্তাশ্চর্যের ঘোষণা দেওয়া হলো, সেদিন এপি, এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএনসহ পৃথিবীর তাবত্ সংবাদমাধ্যম তা প্রচার করেছে। আমরাও সে খবর ছেপেছি, জেনেছি। প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের দ্বিতীয় পর্বের ফলাফল ঘোষণাও সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে এসেছে। সেদিন সুন্দরবনের নামটাও কিন্তু জেনে গেছে গোটা দুনিয়া। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার এ নির্বাচনে শীর্ষ ৭৭-এর মধ্যে ছিল। তখন ব্যাপক প্রচারের কারণে ২০০৮-এর পর থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে এটা চোখের সামনেই দেখা যায়।
অনেকে বলছেন, ইউনেস্কো তথা জাতিসংঘের কোনো সংস্রব নেই প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের সঙ্গে। তাতে কী এল গেল? ফিফা, অস্কার, অলিম্পিক কোনটার সঙ্গে জাতিসংঘ আছে? তার পরও ব্যাপক আলোড়ন দেখে সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনের একদিন আগে ২০০৭ সালের ৫ জুলাই ইউনেস্কো এই উদ্যোগকে সমর্থন দেয়। চলতি বছরে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছে ইউনেস্কো। এটা তো ব্যাপার না। বেসরকারি একটা উদ্যোগে জাতিসংঘের অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান কতটা জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ—এ প্রশ্ন অবান্তর।
তার পরও যদি বিশ্বস্ততার কথা ওঠে, তবে বলতে হয়, নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন কাজ করছে সরকারের সঙ্গে। অনেকেরই মনে আছে, দ্বিতীয় পর্বে এসে ২০০৮-এর এপ্রিল মাসে সুন্দরবন ও কক্সবাজার নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে যায়। কেন? তখন পর্যন্ত সুন্দরবন ও কক্সবাজারের জন্য অফিসিয়াল সাপোর্টিং কমিটি ছিল না। তখন এই কমিটি করতে গিয়ে দেখা গেল, সরকারি সংস্থা ছাড়া বা সরকারের অনুমোদন ছাড়া কমিটি করা যাবে না। তাই বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কক্সবাজার আর সুন্দরবনের জন্য অফিসিয়াল সাপোর্টিং কমিটি গঠন করে। আবার যেসব স্থান একাধিক দেশে অবস্থিত, সেসবের জন্য সব দেশেরই কমিটি লাগবে, না হলে বাদ। সুন্দরবনের জন্য বেশ কিছু সময় পর পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় কমিটি গঠন করা হয়। এ কারণে এ প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে মাউন্ট এভারেস্ট আর নায়াগ্রা জলপ্রপাত। এভারেস্টের জন্য নেপালে কমিটি হলেও চীন কমিটি গঠন করেনি। আর নায়াগ্রার ক্ষেত্রে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র দুটি দেশই কমিটি গঠন করতে পারেনি। চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ ২৮টি স্থানের সঙ্গে ৩৮ থেকে ৪০টি দেশ জড়িত আছে। সব দেশেই আছে অফিসিয়াল সাপোর্টিং কমিটি। তাই একটা সংগঠন এতগুলো দেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করলে তাকে তো একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এসএমএসে ভোট দেওয়া নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন আছে। এসএমএসে বাণিজ্য আছে, তা ঠিক। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে এই এসএমএসের টাকা তিনভাগে ভাগ হচ্ছে। দুই টাকার মধ্যে ৮০ পয়সা পাচ্ছে নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন, ৬০ পয়সা পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটর আর বাকি ৬০ পয়সা পাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আর প্রতি এসএমএসে সরকার সরাসরি কর হিসেবে পাচ্ছে ১৫ শতাংশ অর্থাত্ ৩০ পয়সা। উদ্যোক্তাদের এখানে একটা আয় হচ্ছে সেটা ঠিক। তাদেরও তো খরচাপাতি আছে। আমরা তো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আয়োজিত সংগীতপ্রতিভা অন্বেষণের প্রতিযোগিতায় এসএমএস করে একজন নোলক, একজন বিউটিকে নির্বাচন করছি। তাহলে সুন্দরবনের জন্য এসএমএস করলে ক্ষতিটা কি, এটা বোধগম্য নয়। আড়াই টাকারও কম খরচ একটা এসএমএসে। এটা করলে কী এমন ক্ষতি হবে আমাদের।
বাংলাদেশ অনেককিছুই গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না। তার পরও কিছুটা হলেও সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এই প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনকে। পর্যটন করপোরেশন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জড়িত এর সঙ্গে। তবে কাজের কাজ কিন্তু হয়েছে সাধারণ মানুষের ভোটে। ব্যক্তিগত ও বেসরকারি কিছু উদ্যোগ এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কৃতিত্বটা পুরোপুরিই পেতে পারে। ইন্টারনেটে চোখ রাখলেই দেখা যায়, অন্য দেশগুলো কত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এ প্রতিযোগিতাকে। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবল-তারকা লিওনেল মেসি তাঁর তাবত্ ভক্তকুলকে আহ্বান জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার ইগুয়াজু জলপ্রপাতকে ভোট দিয়ে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় নিয়ে যেতে। সে ভিডিও এ নির্বাচনের ওয়েবসাইটেই (http://www.n7w.com বা http://www.new7wonders.com) আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু সে দেশের টেবিল মাউনটেনের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁরা আশা করছেন, নেলসন ম্যান্ডেলাও ভোট চাইবেন টেবিল মাউনটেনের পক্ষে। ভিয়েতনাম চার বছর ধরেই হা লং বে নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশি যাঁরা হা লং বে ঘুরে আসছেন, তাঁদের তোলা ছবিতে দেখা যায়, সেখানকার সাইনবোর্ড, বিলবোর্ডে এই নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রচার। সুন্দরবনের জন্য ভারতে প্রচার কম এ ধারণাও ঠিক নয়। আলেক্সা ডট কমের হিসাব অনুযায়ী এই ভোটের ওয়েবসাইট বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে ব্যবহার করা হচ্ছে বেশি। এই মুহূর্তে কমপক্ষে ১৫টি দেশ ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে তাদের প্রাকৃতিক স্থান নিয়ে। তার মানে, কমপক্ষে ২০ কোটি মানুষ এটার সঙ্গে এখন জড়িয়ে গেছে। ফলাফল যেদিন ঘোষিত হবে, সেদিন এই ২০ কোটি মানুষ মুখিয়ে থাকবে কোন কোন স্থান আছে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের তালিকায়, তা জানতে। এই প্রচারের গুরুত্ব অপরিসীম। সেটা আমাদের বুঝতে হবে।
এবার সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের। এ সুযোগ কাজে লাগানোর একেবারে দ্বারপ্রান্তেও আমরা। চূড়ান্ত পর্বে সুন্দরবন উঠে এসেছে, এখন এত দূর এসে ভোটে হেরে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। আমরা মাথা নোয়াতে চাই না। কারণ সুন্দরবন মাথা নোয়াবার নয়।
তাই যে যেখানে যেভাবে আছি, চলুন সবাই ভোট দিয়ে সুন্দরবনকে নিয়ে যাই প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের চূড়ান্ত তালিকায়। বিশেষ করে বিদেশের ভোট আমাদের খুব প্রয়োজন। http://www.n7w.com বা http://www.new7wonders.com ঠিকানার ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি ই-মেইল ঠিকানা থেকে একবার করে ভোট দেওয়া যাবে। আর মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে SB লিখে পাঠিয়ে দিতে হবে ১৬৩৩৩ নম্বরে। যত খুশি তত এসএমএস পাঠানো যাবে। প্রতিটিকেই একেকটি ভোট হিসেবে গণনা করা হবে। এ ছাড়া আছে ফোন ভোট। এ জন্য +১ ৮৬৯ ৭৬০ ৫৯৯০, +১ ৬৪৯ ৩৩৯ ৮০৮০, +৪৪ ৭৫৮ ৯০০ ১২৯০ এই তিনটি নম্বরের যেকোনো একটিতে ফোন করতে হবে। এরপর একটা বার্তা শোনা যাবে। তারপর একটা সংকেত বাজলে তখন ৭৭২৪ নম্বর চাপতে হবে সুন্দরবনের জন্য।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×