somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহায্য পৌঁছায় না , কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"মৃত্যু, ছোট্ট একটি শব্দ অথচ কি অলীক ক্ষমতা , এক মুহূর্তে থমকে দাঁড়ায় জীবন যে ছিল প্রানবন্ত মুহূর্ত আগে। নিমিষেই তারা পরিনত হয় লাশে। তাদের আধবোজা চোখগুলো লালসার পৃথিবীকে ধিক্কার জানায় অথবা তাদের অবিরাম পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া শরীরগুলো সবুজ ঘাসের মাঝে শান্তির খোঁজে পড়ে থাকে। "

এরিক মারিয়া রেমারকের " আ টাইম টু লাভ এন্ড আ টাইম টু ডাই " উপন্যাসটির শুরু এভাবে। এক অসাধারন যুদ্ধবিরোধী এই উপন্যাসে দেখান হয়েছে কত সহজে, কত অবলীলায় ঝরে যাচ্ছে তরুন জার্মানদের প্রাণ। যুদ্ধে মৃত্যু কত স্বাভাবিক তাই বারবার দেখান হয়েছে।

সেটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্ব-যুদ্ধের সময়কাল। আর এর ৭০ বছর পর এসে আমার দেশের সাধারন মানুষের অবস্থা আর পরিনতি সেসব জার্মান সৈনিকদের সাথে যেন মিলে যাচ্ছে।

এক বছর আগে যখন রানা প্লাজা ধ্বসে পরে, তখন সেলিনা তার পুরো এক পা আর আরেকটি পা অর্ধেক হারিয়েছে। বিশ হাজার টাকা মিলেছে তার এ পর্যন্ত সাহায্য। রংপুরের অবারিত সবুজ ধানক্ষেত আর মমতাময়ী মাকে ছেড়ে সে শহরে এসেছিল দু'মুঠো ভাতের খোঁজে। ভাত কতটুকু পেয়েছিল তা না হয় থাক, তার আফসোস অন্যদের সাথে সে কেন সেদিন মারা গেল না। এখন তার স্বামীর চায়ের দোকানের অল্প আয়ে খাবার কেনা যাচ্ছে না, ওষুধ অনেক পরের ব্যাপার। আরেকজনের সাহায্যে এভাবে বেঁচে থাকতে কদিন পারবেন। অথবা জোর করে কদিন বাঁচা যায় ? সরকারি সাহায্যের কথা তিনি শুনেছেন কিন্তু তা এখন আর বিশ্বাস করেন না, আর যদি সাহায্য পৌছায় ততদিনে হয়ত তার তা প্রয়োজন নেই। তার দীর্ঘশ্বাস মিশে যাচ্ছে দুষিত শহরের দুষিত বাতাসে।

হোসেন আলীর এক হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে তাকে যা দিয়ে তিনি ফুটপাথে সবজি ফেরি করেন, কিন্তু এ দিয়ে দুবেলার চালের খরচ হচ্ছে না।হাত না থাকায় আগের কাজ করতে পারেন না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং একটি হাত না থাকা হোসেন আলী আর কীইবা করতে পারেন তার মেয়েকে আরেকটি নতুন জামা কিনে দিতে? তার চোখে এখন আর ঘৃণা নেই, সেখানে একটা অশনিসংকেত , এক ভারসাম্যহীন সমাজের প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হয় প্রতিনিয়ত। বলে, আমাদেরকে ফেলে তোমরা কতদুর যাবে? কতদুর যেতে চাও?

এগুলি কোন কল্পিত গল্প নয়, সেদিনের আহত-নিহত প্রতিটি পরিবারের গল্প এরকম বা কাছাকাছি।

প্রধান মন্ত্রীর তহবিলে ১২৭ কোটি টাকা পরে আছে , এখনো বণ্টন হয়নি। হবে, সে সম্ভাবনা অচিরেই দেখা যাচ্ছে না। গেব্রিয়েল গারসিয়া মার্কেজের সেই কর্নেলের মত সেসব আহত শ্রমিকদের এখন আর কেউ খোঁজ নেয় না। বহু আগে যুদ্ধফেরত কর্নেল প্রতিদিন খোঁজ নেন সরকারি সাহায্যের চিঠি এল কিনা, কিন্তু আসে না , তিনি বুড়ো হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী - কিন্তু সাহায্য পৌছায় না । তারা অনাহারে অর্ধমৃত পরে থাকে। জার্মান সৈনিকরা মরে গিয়েছিল। আর হাত -পা হারানো আমার দেশের ভাইবোনেরা আশায় বুক বাঁধতে বাঁধতে এখন মৃত্যু কামনা করে। তাদের দুবেলা খাবারের "ড্রিমল্যান্ড এক্সপ্রেস" আসে না। তারা বলে, তোমরা আরও "উন্নত" হও , আরও উপরে উঠে যাও, কিন্তু মনে রেখো , আমাদের অভিশাপ, দীর্ঘশ্বাস, কষ্টের প্রতিটি অনু-পরমানু তোমাদের প্রতিটি দামি ইটের আঁচরে আঁচরে লেগে থাকবে, তোমরা না চাইলেও থাকবে।

হায়, আমরা মেতে থাকি, সিনেপ্লেক্স, প্রতিবেশিদের নষ্ট সিনেমা, ক্ষমতা আর টাকার নোংরা ভাগাভাগি নিয়ে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×