somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন ইমন ভাইয়া!

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইমন ভাইয়ার সাথে আমার প্রথম পরিচয়- গানের মাধ্যমে। আমি তখনো বাংলাদেশের আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড বলতে চিনি অর্থহীন আর ক্রিপ্টিক ফেইথ। সেটা ২০০৪ এর কথা। ব্ল্যাক ভালো পরিচিতি পেয়েছে তখন, বন্ধুরা অনেকেই শোনে ওদের গান। আমার তখনো শোনা হয়ে ওঠেনি। আমার বন্ধু অনিক, একদিন আমাকে জোড় করেই ব্ল্যাকের একটা অ্যালবাম কিনিয়ে নিল। সেটা ছিলো "উৎসবের পর"। মনে মনে ভাবলাম- কি আর এমন গান হবে! কিন্তু বাসায় এসে বাজিয়ে শুনতেই যেন ক্যামন যেন মোহাচ্ছন হয়ে গেলাম ওগুলো শুনতে শুনতে। সমসাময়িক বাংলা ব্যান্ডের গানের তুলনায় ব্ল্যাকের গানগুলো ছিল একেবারেই অন্যরকম, কি মিউজিকে - কি লিরিকে, কি গায়কীতে! আমার তখন চলছিলো ব্ল্যাক-গ্রস্থতার পালা। সারাদিন গানগুলো উল্টেপাল্টে শুনতাম, আর ভাবতাম সুর স্রষ্টা দের তো সামনে দেখতে পাচ্ছি। একেবারেই অন্যধাচের এই লিরিক গুলো যিনি লেখেন, তিনি কে? সিডির ফ্ল্যাপে পড়ে জেনেছি ওনার নাম জুবায়ের হোসেন ইমন। কে তিনি?

ব্ল্যাকের প্রথম একক অ্যালবাম আর মিক্সড অ্যালবাম গুলো সংগ্রহ করে ফেললাম শিঘ্রীই। শোনা হয়ে গেলো সব গান। আমি তখন ব্ল্যাকের লিরিক দ্বারা ভীষণ ভাবে প্রভাবিত। আগে থেকেই টুকটাক লেখার অভ্যেস ছিলো। গল্পই লেখার চেষ্টা করতাম বেশী। জুবায়ের হোসেন ইমন নামের এই মানুষটার লিরিক গুলো আমাকে এতটাই প্রভাবিত করলো, আমি অনেক অনেক লিরিক (আমি লিরিকই বলি, লিরিক মনে করেই লিখি। কবিতা লেখার বিষয়টা আসলে আমার মাথায় কখনোই থাকে না! শব্দেরা বেশী বেয়াড়াপণা শুরু করলে আমি সেগুলোকে কবিতা বানিয়ে ফেলি!) লেখা শুরু করলাম। অবচেতনেই হয়ত অন্যরকম একটা প্যাটার্নে লিখতে চাইতাম, কেননা ব্ল্যাকের গান তখন আমার শরীরে ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তী তে অনেকেই আমাকে বলেছে, তোমার কবিতাগুলো ব্ল্যাকের লিরিকের মত লাগে পড়তে! যতবারই আমি শুনেছি কথাটা কারো কাছ থেকে, ততবারই একটা আনন্দের হিল্লোল বয়ে গিয়েছে আমার ভেতর।

লিরিক লিখে ফেললাম অনেকগুলো। বন্ধুরা মিলে সারাদিন প্ল্যান করি একটা ব্যান্ড বানাবো। কে কি বাজাবো ঠিকও করে ফেলি। বাসায় আব্বু গানবাজনা পছন্দ করে না- কি করবো? টাকা জমিয়ে জমিয়ে কিনে ফেলি একটা গীটার- চলতে থাকে আব্বুর চোখ এড়িয়ে গীটার শেখা, আর লিরিক লেখা। ব্ল্যাক তখন আমার কাছে অন্য কিছু- কেউ ব্ল্যাক নিয়ে খারাপ মন্তব্য করলে পার্সোনাল অ্যাটাক হিসেবে নিতাম! (সত্যি কথা বলতে এখনো নিই। আমার সাথে কথা বলার সময় সাবধান!) কিন্তু যার লেখা গানে আমার মধ্যে এত উৎসাহ, এত প্রেরণা, সেই ইমন ভাই কে তো দেখলাম না! প্রায়ই ভাবতাম অ্যালবাম এর ফ্ল্যাপে লিরিসিস্ট এর ছবি ক্যানো দেয়া হয় না! আমার কাছে তখন ছবিই অনেক...

স্কুল কলেজ পর্ব পেরোলাম, এইচ এস সি পরীক্ষা শেষে কয়েক টুকরো অবসর। সামুতে আসা হয় নিয়মিত। তখনো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। নাফিস ইফতেখার ভাইয়ের লেখাগুলো নিয়মিত পড়া হয়। হোমপেজে একদিন পোস্ট পড়তে পড়তে আটকে গেলাম একটা নামে। ইমন জুবায়ের। লেখাটা পড়লাম। বুঝে উঠতে পারলাম না ইনিই কি সেই ইমন ভাই! আগের বেশ কিছু পোস্ট ঘেটে দেখা হলো। আরে, ইনিই তো! বিশ্বাসই হচ্ছিল না ইমন ভাইকে ব্লগে এসে পেয়ে গেলাম। তড়িঘড়ি করে অ্যাকাউন্ট খুললাম। লেখাও শুরু করলাম- জেনারেল না হলে তো ওনার ব্লগে কমেন্ট করতে পারছি না। একসময় পেলাম কমেন্ট একসেস। ভাইয়ার একা ২ নিয়ে করা পোস্টেই বোধ হয় প্রথম কমেন্ট করেছিলাম।

আমি কল্পনা করতে ভালোবাসি। আমার কল্পনায় ইমন ভাইয়া ছিলেন দাড়িগোফে ঢাকা একজন। কাচাপাকা চুল। চোখে মোটা রীমের চশমা। কিছুটা রবীন্দ্রনাথ টাইপ! খুব রাগ করে থাকলে তাকে যেমন দেখায়, খুব খুশীর সময়েও একই রকম দেখায়, এটাই ছিলো আমার ধারণা! তো তখনো ব্লগের কেউ ইমন ভাইয়ার ছবি দেখেন নি। আমি একটা পোস্ট লিখলাম, মিথ্যা - ইমন জুবায়ের ভাইয়ের সেই গান... পোস্টটা পড়ে ইমন ভাই নিজে থেকেই ওনার ছবি দিয়ে গেলেন, আর ওনাকে প্রথম দেখলাম। দেখলাম কল্পনার সাথে কোন মিলই নেই! হাঃ হাঃ। সেটা ছিলো আগস্টে।

জন্মদিনের পোস্ট লিখতে গিয়ে সব মনে পড়ে গেলো।

এর মধ্যেই ফেবুতে ভাইয়াকে বন্ধু হবার অনুরোধ পাঠালাম। ভাইয়াও সাড়া দিলেন। মোবাইল নাম্বার ও নেয়া হলো। কিন্তু ফোনটা আজও দেয়া হয়নি। ভাইয়ার সম্ভবত এটা নিয়ে একটু অভিমানও আছে। ফোন যে দিতে ইচ্ছে করে নি তা নয়। বেশ অনেকবারই হাতে ফোন নিয়ে ভাইয়ার নাম্বার ডায়াল করতে গিয়েও থেমে গিয়েছি। কি যেন একটা আড়ষ্টতায় শেষ পর্যন্ত ফোন দিতে পারিনি! বিষয়টা বেশ হাস্যকর হয়তো... মাঝে বেশ কয়েকবার ইচ্ছে করেছিলো ভাইয়ার সাথে গিয়ে দেখা করবো। সেটাও করা হয়নি। কারণ আলাদা অবশ্য। ওনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব কিনা আর বলবটা কি- এসব ভেবেই যাওয়ার সাহস করিনি। আমি যাদের কে খুব পছন্দ করি তাদের সামনে গেলে আমি আড়ষ্ট হয়ে যাই! মুখ থেকে কথা সরে না...

ইমন ভাইয়ার ব্যপারে আর নতুন করে কি বলব? উনি খুব পড়ুয়া। নাক মুখ গুঁজে বই পড়েন আর দুহাতে লেখেন (আক্ষরিক অর্থেই!)। সামুর একটা জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া হচ্ছেন ভাইয়া, এমনটা তো সবাই বলেই! ব্লগে এমন খুব কম ব্লগারই আছেন যাদের প্রিয় পোস্টে ভাইয়ার কোন পোস্ট নেই! প্রতিনিয়ত আমাদের উপহার দিয়ে যাচ্ছেন নতুন নতুন গল্প, গান, গবেষণা, প্রবন্ধ, মিথ আরো কতকিছু! ব্লগে এই লেখালিখির স্বীকৃতি হিসেবে গতবছর ডয়েচে ভেলে ব্লগ প্রতিযোগে মনোনীত হয়েছিলেন সামু থেকে। গতবছরের শেষে বাংলা ব্লগ দিবসে সামুর শ্রেষ্ঠ ১০ জন ব্লগারের ভেতর একজন নির্বাচিত হয়েছেন ভাইয়া। তবে আমি জানি, ভাইয়া এত এত পড়াশোনা আর লেখালিখি করেন এসব কিছু জন্যে না, নিজের ভেতরের একটা ভালোলাগা থেকে...

আজ ইমন ভাইয়ার জন্মদিন! প্রতিবার ভাবি এবারের ভাইয়ার জন্মদিনে একটা পোস্ট দেবই, কিন্তু প্রতিবারই আমার আগেই দেখি অনেকগুলো পোস্ট চলে এসেছে। আর দেয়া হয়না। কিন্তু এবার ঠিক করে ফেলেছি দেবই। তাই লেখা শুরু করে। (তখন বাজে সাড়ে ১২ টা) :| । তার আগেই অবশ্যই হোমপেজে ঘুরে দেখে নিয়েছি আর কেউ পোস্ট দিয়ে ফেলল কিনা ভাইয়ার জন্মদিন উপলক্ষে! তখনো পর্যন্ত কেউ দেয়নি...

যাহোক! জন্মদিনে ভাইয়ার জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা!






ভাইয়া কি কেক পছন্দ করেন, বা আদৌ পছন্দ করেন কি জানিনা! তাই আমার পছন্দের কেক দিলাম! ব্ল্যাকফরেস্ট।





ভাল থাকুন সবসময়, আর এভাবেই প্রাণবন্ত করে রাখুন সবাইকে... সামনের দিনগুলো দারুণ কাটুক এই প্রত্যাশা রইল :)


এই দ্যাখো না আলোর মেলায়/
পাখিদের প্রেম দুপুর বেলায়।
দু হাতে নাও এসব/
এসব তো তোমারই...

দূর থেকে শোন ঝর্নারই গান/
দ্যাখো পাতার সবুজ অভিমান।

এই দ্যাখো না এই সন্ধ্যায়/
জীবনের গভীর মায়া।
দু হাতে নাও এসব/
এসব তো তোমারই...

বিকেলের নরম রোদে/
আমার ছায়া আকাশের তলে/
ঝিরিঝিরি মৃদুস্রোত হ্রদের জলে...



আমার ধারণা ভাইয়া রেগেমেগে ভ্রুকুটি করতে পারেন না! দেখি এই লেখাটা দেখে ভ্রুকুটি পাই, না ভাইয়ার মুখে একটা মুচকি হাসি ফুটে ওঠে......
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:০৮
৬০টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×