জীবনে যাদেও হররোজ
রোযা ক্ষুধায়
আসে না নীদ
আধমরা সেই গরিবের
ঘরে এসেছে কি আজ
ঈদ?
ঈদ
আসলে পত্রপত্রিকাগুলো বিশেষ
সংখ্যা বের করে।
এটি একটি র্ওেয়াজে পরিনত
হয়ে গেছে। আর
তাতে বিশেষ গুরুত্ব
দিয়ে জানান দেয়্ াহয়
এই
সমাজে সেলিব্রেটি তকমা নিয়ে ঘুরে বেড়ান
যারা, তাদের ঈদ
ভাবনা।
মন্ত্রী মহোদয়রা কে কোন
ঈদগাহকে ঈদের নামাজ
পড়ে ধন্য করবেন,
এমপি সাহেবান উনার
নির্বাচনি এলাকায়
গিয়ে কীভাবে তাদের
উদ্ধার করে ফেলবেন,
বেশিরভাগ
রোযা রাখেননি,
শোবিজের তেমন
তারকাদের ঈদ
ভাবনা কি,
আমলারা সারা মাস
কামলা খরচের
পয়সা থেকে যেটুকুন
সঞ্চয় করেছেন,
তদবীরের
নজরানা জমিয়েছেন
যত,
সেগুলো কীভাবে খরচ
করবেন, অর্থাত
সিঙ্গাপুরের কোন
মার্কেট থেকে বউয়ের
জন্য এবারের ঈদের
শাড়িটা কিনবেন,
সুশীল শ্রেণীর
অতি সুশীল সম্প্রদায়
ঈদ নিয়ে নতুন
কী বাণী প্রসব
করলেন,
এগালো ফল্ওা করে প্রকাশ
করা হবে। কিন্তু এই
সমাজে, আমাদের এই
সমাজে আরেকটি শ্রেণী আছে,
যারা হলো সমাজের
মেরুদণ্ড, যাদের ঘাম
দিয়ে জুতো পলিশ
করেন আমাদের
পূঁিজপতিরা, যাদের
শ্রমকে বিদেশে বিক্রি করে সচল
রাখা হয় রেমিটেন্সের
চাকা,
হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যায়
অর্থনীতির গাড়ি,
সেই
শ্রেণীকে নিয়ে কেই
লিখেন না।
সেলিব্রেটিদের ঈদ
ভাবনা শেয়ার করা হয়,
এই মানুষগুলো নিয়ে,
রিক্সা চলেক, ভ্যান
চালক, ভিক্ষুক,
পথকলি, টুকাই,
ব্রিজে রিক্সা ঠেলক,
কাজের মেয়ে, কাজের
ছেলে-এদের নিয়ে খুব
কিছু কথা হয় না!
ফিচার প্রতিবেদন হয়
না, খুব
একটা চোখে পড়ে না।
সেলিব্রেটিদের ঈদ
ভাবনা প্রকাশিত
হোক, আমার
আপত্তি নেই কিন্তু
সাথে সাথে শ্রমজীবি এই
গরিবগুলোর ঈদ
দুর্ভাবনাও
তো তুলে ধরা যেতো।
কিছু মানুষ কত
আনন্দ
করছে সেটা জানান
দেয়ার
সাথে সাথে আরেকটি অংশ
কত কষ্ট করছে,
সেটাও
তো জানানো দরকার।
এই সমাজের
নিম্নবিত্ত থেকে শুরু
করে রোড লেভেল
পর্যন্ত
যে মানুষগুলো অহর্ণিষ
হাতড়ে ফিরে একটুকরো অবলম্বন,
বেঁচে থাকবার,
একটুকরো রুটি,
জীবনের
প্রদীপটি জ্বালিয়ে রাখবার,
তাদের নিয়েই
স্ববিস্থারে বলতে ইচ্ছে করছে।
এখানে সুযোগ নেই।
অন্য
পরিসরে সেটা হবে।
এখানে খুব
ছোটকরে দেখতে চেষ্টা করবো ঈদ
তাদের কাছে কেমন?
জানতে চেষ্টা করবো তাদের
ঈদ ভাবনা (ঈদ
দুর্ভাবন্ওা পড়া যাবে!)।
দুই
ঈদের দিন
সবচে বেশি আমরা যে বাক্যটি উচ্চারণ
করি, তা হচ্ছে ঈদ
মোবারক’।
সারাদিনে কম
করে হলেও ৫০ বার ‘ঈদ
মোবারক’ বলা হয়।
বাংলাদেশে সাড়ে বারকোটি মুসলমান।
যদি ধরে নিই ২
কোটি হচ্ছে বাচ্চা-
কাচ্ছা, তবুও ঈদ
মোবারক
বলতে পারা লোকের
সংখ্যা দশ কোটিরও
বেশি।
প্রত্যেকে যদি মাত্র
১০ বার করেও ঈদ
মোবারক বলে,
তাহলে শুধু
বাংলাদেশেই ঈদের
দিনে ঈদ মোবারক
বলা হচ্ছে একশ
কোটি! অথচ
আমরা কি কখনো লক্ষ্য
করে দেখেছি ঈদ
কতজনের জন্য
মোবারক হয়?
ঈদ
মানে যদি হয়ে থাকে আনন্দ,
ঈদের আনন্দ
যদি হয়ে থাকে সার্বজনীন,
তাহলে আনন্দের এই
একটি দিনেও
কেনো কিছু
মানুষকে কষ্ট
করতে হবে?
আপনি জীবনে কখনো কোনো ভিক্ষুককে ঈদের
দিনেও
যদি ভিক্ষে করতে দেখে থাকেন,
তাহলে আপনি আমার
সাথে একমত
না হয়ে পারেন না ঈদ
অনেকের জন্য হলেও
সকলের জন্য নয়।
ঈদের দিনেও যাদের
থালা নিয়ে বেরুতে হয়,
এতটুকু খাবারের
আশায়
হাজিরা দিতে হয়
মানুষের দরজায়, যাদের
বেরুতে হয় রিক্সা-
ভ্যানগাড়ি নিয়ে,
অর্থাৎ সমাজের সেই
অংশ,
যারা কখনো দু’দিনের
খাবার
একত্রে জমা করতে পারেনা,
তাদের জন্য ঈদ
মানে বিশেষ কিছু নয়।
অন্য দশটি-
পাঁচটি দিনের মতই
আরেকটি দিন।
ঈদের দিন সবার
মাঝে এক ধরনের
প্রাণচাঞ্চল্যের
উপস্থিতি লক্ষ্যকরা যায়।
রকমারী সু-স্বাদু
খাবার তৈরি হয়
ঘরে ঘরে। নুতন
জামা কাপড়
পরে চেহারায়
একটি সুখ ও তৃপ্তির
আবেশ টেনে এনে ঈদের
দিনের মনোরম বাতাস
উপভোগ করে লোকে।
কিন্তু কেউ
ভেবে দেখেছে এই
ঈদের দিনেও অনেক
ঘরের চুলো জ্বলে না।
নুতন কাপড় দুরে থাকে,
ছিড়ে যাওয়া পুরানো কাপড়
সেলাই সূইসূতা কেনার
মত বাড়তি টাকাও
অনেকের পক্ষে যোগাড়
করা হয়ে উঠে না।
আমার এই
কথাটি মিথ্যে প্রমাণিত
হলে আমি বেশি খুশি হতাম
কিন্তু
বাস্তবতাকে তো আর
স্বীকার করার উপায়
নেই।
আবার
যারা ভিক্ষে করে জীবিকা নির্বাহ
করে, ঈদ তাদের জন্য
আলাদা কোনো চেহারায়
অবতীর্ণ হয় না।
প্রাত্যহিক
নিয়মে ঈদের ভোরেও
এতটুকু খাবারের
সন্ধানে তাদের
বেরুতে হয়। ক্ষিধের
কষ্ট লাঘবে অই দিনও
তাদের
তাকিয়ে থাকতে হয়
মানুষের করুণার দিকে।
এটা কেমন কথা?
কিন্তু
কথা তো সেটাই।
কী আর করা!
তিন
এদেশের গরীব ও
অসহায় ঈদের
দিনে বাড়তি কোনো আনন্দের
কারণ খুঁজে পায় না।
আমাদের ভাই বোন
অথবা সন্তানেরা যখন
পেট ভরে খেয়ে নুতন
জামা পরে ঈদের দিন
উল্লাস
করে ঘুরে বেড়ায়, তখন
ঐ ছেলে মেয়েগুলো,
যাদের পেটে খাবার
ঝুটেনি, যাদের
শরীরে নুতন
জামা উঠেনি, যাদের
অসহায় বাবার
পক্ষে সম্ভব হয়নি ঐ
অবুঝ ছেলে-
মেয়েগুলো মুখে খাবার
তুলে দেবার, নুতন
জামা খরিদ
কওে দেয়ার, আমাদের
সমাজের ঐ দুর্বল
অংশ, ঐ অসহায়
পরিবারের
সন্তানগুলো একবুক
কষ্ট
চেপে রেখে দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে তাদের
পাড়ার তাদেরই খেলার
সাথীরা নুতন
জামা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
চাপা কান্নার তীব্র
গতি অই ছোট্র
ছেলেমেয়েগুলোর
কোমল মনকে তখন
দারুণভাবে নাড়া দেয়
তখন। এই পৃথিবীর
নিষ্টুরতা তাদের
অবুঝ
মনে ভয়ংকরভাবে আঘাত
হানে।
যারা একটু বড়
হয়ে গেছে, তারা তাদের
বাবার অপারগতার
বুঝে নিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নেয়।
তারা ভাবে, এই
পৃথিবীর সব আনন্দ
সকলের জন্য নয়।
যারা খুব ছোট্ট,
তারা ঘুরঘুর
করতে থাকে বাবা-মা’র
আসে পাশে। লোভাতুর
দৃষ্টিতে তাকায় বাবার
দিকে। আবদারের
সুরে জিজ্ঞেস
করে,‘‘বাবা,
আজতো ঈদ, সবাই
নুতন কাপড় পরেছে।
আমাদের কি নুতন
জামা পরা হবেনা? বাবা,
সবার
ঘরে ফিন্নি সেমাই
রান্না হয়েছে, গোশত
রান্না হয়েছে,
আমরা কি আজ সেমাই
খাবনা? আমাদের
ঘরে কি গোশত
রান্না হবে না...?
এই অবস্থায় অই
অসহায় ‘‘বাবা’
লোকটির পক্ষে আর
স্বভাবিক
থাকা সম্ভব হয় না।
দু’চোখ
বেয়ে নেমে আসে অসহায়ত্বের
কান্না।
নিজেকে একজন
ব্যর্থ
পিতা হিসেবে ধীক্কার
দিতে ইচ্ছে হয়।
বিপর্যস্ত সেই
বাবাগুলো মানসিক
যন্ত্রণার তীব্র
দাবদাহে জ্বলতে থাকে।
বিধ্যস্থ
অন্তরে অপারগতার
গ্লানি কাধে নিয়ে তাঁরা তাকিয়ে থাকে খোলা আকাশের
দিকে। খুঁজে বেড়ায়
একটু
ভরসা অথবা লোকানোর
মত একটু জায়গা।
তাদের মনে সম্ভবত
এই প্রশ্নটিই
ঘুরে বেড়ায়, ঈদ
পৃথিবীর সব মানুষের
জন্য সমান নয় কেন?
জবাব খুঁজে বেড়ায়
তাঁরা।
আমরা তাদের জবাব
হতে পারি।
আমরা ইচ্ছে করলে পারি ঈদের
আনন্দে তাদের শেয়ার
করতে। এ জন্য খুব
বেশি আয়োজনের
দরকার নেই।
যারা তাদের
সন্তানদের জন্য
কয়েকটি জামা খরিদ
করার
বিলসিতা দেখান,
তারা তারা পারেন
দু’একটি জামা কম
কিনে অই জামাগুলোর
টাকায় কয়েকটি গরীব
ছেলে মেয়েকে নুতন
কাপড় কিনে দিতে।
যারা স্ত্রী’র ঈদের
শাড়ি কিনতে সিঙ্গাপুর
চলে যান,
তারা যদি দেশের
কোনো মার্কেট
থেকে শাড়িটি কিনে ফেলেন,
তাহলে যাওয়া- আসার
বিমান ভাড়ায় টাকায়
কয়েকটি পরিবারের
ছেলেমেয়েদের ঈদের
কাপড় হয়ে যাবে।
এতে করে হয়ত একজন
স্ত্রী’র মুখ একটু
মলিন হবে কিন্তু
কয়েকশ
মুখে হাসি ফুটে উঠবে।
চার
যারা ভয়াবহ পারমাণ
সম্পদের অধিকারী,
যারা তাদের টোটাল
সম্পদের হিসেব
কখনো মিলাতে পারেন
নি, যারা প্রতিদিন
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ
করেন বিলাসিতায়,
তাদের বলি, বিশ্বাস
করুন, খোদার ক্বসম,
এই যে বিশাল
অর্থভাণ্ডার
আপনি গড়ে তুলেছেন,
চোখ বন্ধ করুন,
দেখবেন কিছুই
আপনার নয়।
অগুলো আপনার
কোনো কাজেই
আসবেন না। নিজের
জন্য কিছু করুন।
গরীব
অনাহারী মানুষের
মুখে আহার তুলে দিন।
ঈদের প্রকৃত আনন্দ
কেমন হয়,
সেটা গরীবদের অনুভব
করার সুযোগ দিন।
দেখবেন আল্লাহর
কাছে সওয়াব ছাড়াও
আত্মার
যে প্রশান্তি লাভ হবে,
এমন আনন্দ এর
আগে কখনো পাননি আপনি।
আসুন
আমরা সিদ্ধান্ত নেই
এবারের ঈদ
বাংলাদেশের সাড়ে বার
কোটি মুসলমান
মিলে ভাগাভাগি করে নেব।
অন্তত একটি দিনের
জন্য হলেও
আমরা প্রমাণ করে দেব
বাংলাদেশের
মুসলমানদের
মাঝে চমৎকার
একটি সহযোগিতা ও
সহমর্মিতার
আবেগী সম্পর্ক
রয়েছে। ঈদ সকলের,
সূতরাং ঈদের আনন্দ
সবাইকে সমানভাবে উপভোগ
করার সুযোগ করে দেব।
আমরা কি পারিনা এমন
আবস্মরণীয় দৃষ্টান্ত
মাধুর্যে পরিপূর্ণ
সিদ্ধান্ত নিতে?
পাশাপাশি স্মরণ
রাখবেন, সম্পদের
যাকাত দেবেন না,
গরীবদের
সাহায্যে করবেন না,
গরীবের
হাড়ভাঙ্গা শ্রম
ব্যবহার করে বিশাল
অর্থ সাম্রাজ্য
গড়ে তুলে ঈদের
দিনে উড়াবেন। আর
গরীবেরা ঈদের দিনেও
একটু খাবারের জন্য
পথে পথে ঘুরবে,
তাহলে জেনে রাখুন
আল্লাহ আপনাকে এই
পৃথিবীতেই ধরবেন।
ভেতরে সামান্য
একটি শিরা অথবা উপশিরা বন্ধ
করে দেবেন,
আপনি কয়েক
কোটি টাকা খরচ
করেও ওটা চালু
করতে পারবেন না।
আমরা বলি ‘ঈদ
মোবারক’। ‘মোবারক’
মানে বরকতময়।
তাহলে শুধু
পয়সাআলারা কেন
বরকত পাবে? গরীব
কেন পাবে না? ঈদ
তখনই মোবারক হবে,
যখন আমরা ধনী-
গরীব, ছোট-বড় ,
সাদা কালো, সবাই
প্রাণ
খুলে হাসতে পারবো। ঈদ
তখনই মোবারক হবে,
যখন ঈদের
দিনে অন্ততঃ কারো ঘরে খাবারের
অভাব থাকবে না। চলুন
আমরা সকলে মিলে ঈদকে সত্যিকার
অর্থে মোবারক
করে তুলি। তারপর
আমরা বাংলাদেশের
সাথে কন্ঠ
মিলিয়ে তৃপ্তির
সাথে উচ্চারণ করি,
‘‘ঈদ মোবারক’’।