গোয়েন্দা কিংবা ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সীর চেয়ে সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী নামেই পরিচিত । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গোয়েন্দা চরিত্রের মধ্যে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি "ব্যোমকেশ বক্সী " এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ।
ব্যোমকেশ বক্সী চরিত্র এতটাই জনপ্রিয় যে, কল্পনা থেকে উঠে এসে কখন যে সাহিত্য প্রেমিদের মনে বাস্তবিকভাবে জায়গা করে নিয়েছে তা বলা মুশকিল।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ চরিত্র নিয়ে তেত্রিশটি গল্প রচনা করেছেন । এর মাঝে বিশুপাল বধ গল্পটি তিনি সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি ।পরবর্তীতে এই গল্প সম্পুর্ন করেন সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ বক্সী সিরিজের গল্পগুলিতে লেখক হিসেবে ব্যোমকেশের বন্ধু অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপস্থাপিত করেছেন। ব্যোমকেশের প্রতিটি রহস্যভেদের সঙ্গী অজিতের লেখনীতে ব্যোমকেশের অধিকাংশ গল্পগুলি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু রুম নম্বর দুই, শজারুর কাঁটা, বেণীসংহার, লোহার বিস্কুট, বিশুপাল বধ এই গল্পগুলিতে অজিতকে গল্পলেখক হিসেবে উপস্থিত করা হয়নি ।
সত্যান্বেষী গল্পে ব্যোমকেশের বিবরণ দিতে গিয়ে অজিত বলেছেন, ''তাহার বয়স বোধকরি তেইশ-চব্বিশ হইবে, দেখিলে শিক্ষিত ভদ্রলোক বলিয়া মনে হয়। গায়ের রঙ ফরসা, বেশ সুশ্রী সুগঠিত চেহারা-মুখে চোখে বুদ্ধির একটা ছাপ আছে। এই গল্পের শেষে জানা যায়, হ্যারিসন রোডের একটি বাড়ীর তিনতলা ভাড়া নিয়ে ব্যোমকেশ বসবাস করেন। এই বাড়িতে ব্যোমকেশ ছাড়া দ্বিতীয় ব্যক্তি তাঁর পরিচারক পুঁটিরাম। ব্যোমকেশের অনুরোধে অজিত এই বাড়ীতে বসবাস শুরু করেন। বাড়ীর দরজায় পেতলের ফলকে লেখা ছিল শ্রীব্যোমকেশ বক্সী, সত্যান্বেষী। সত্যান্বেষীর অর্থ জিজ্ঞাসা করায় অজিতকে ব্যোমকেশ বলেন, ওটা আমার পরিচয়। ডিটেকটিভ কথা শুনতে ভালো নয়, গোয়েন্দা শব্দটা আরও খারাপ, তাই নিজের খেতাব দিয়েছি সত্যান্বেষী।
পরের গল্পগুলিতে ব্যোমকেশ নিজেকে সত্যান্বেষী বলেই পরিচয় দিয়েছেন। অর্থমনর্থম্ গল্পে ব্যোমকেশের সঙ্গে একটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সুকুমারবাবুর বোন সত্যবতীর পরিচয় হয়, যার সাথে পরে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়।তাদের “খোকা” নামে একটা ছেলে সন্তানও আছে।
আদিম রিপু গল্পে ব্যোমকেশের বাল্যকাল সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানা যায়। ব্যোমকেশের পিতা স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন ও বাড়িতে সাংখ্য দর্শনের চর্চা করতেন এবং তাঁর মাতা বৈষ্ণব বংশের মেয়ে ছিলেন। ব্যোমকেশের যখন সতেরো বছর বয়স, তখন তাঁর পিতা ও পরে তাঁর মাতা যক্ষ্মা রোগে মারা যান। পরে ব্যোমকেশ জলপানির সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরেও অজিত ও সপরিবারে ব্যোমকেশ হ্যারিসন রোডের বাড়িতে বসবাস করেন। পরে তাঁরা দক্ষিণ কলকাতার কেয়াতলায় জমি কিনে সেখানে বাড়ি বানিয়ে চলে যাবেন বলে মনস্থির করেন।"
যারা ডিটেকটিভ গল্প পছন্দ করেন । আর্থার কোনান ডয়েলে এর "শার্লক হোমস" ,অগাথা ক্রিস্টি এর রহস্য রোমাঞ্চ গল্প পড়েছেন অথচ "ব্যোমকেশ বক্সী " পড়েননি তাদেরকে বলব আপনি অনেক কিছু মিস করেছেন । সত্যন্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী, অন্যসকল গোয়েন্দা চরিত্রগুলো থেকে একেবারে আলাদা, তেমনি ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে লেখা রচনাগুলোও একবারে আলাদা। অন্যসকল গোয়েন্দা রচনাগুলোর মতো জীবনকে বাদ দিয়ে লেখা নয় এই ব্যোমকেশ বক্সী। জীবনকে, জীবনের সকল জটিলতাকে সাথী করেই লেখা সত্যন্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী।
ব্যোমকেশ বক্সীর আছে রহস্য সমাধানে অসামান্য দক্ষতা। ব্যোমকেশ বক্সী সকল রহস্যের জট সমাধান করে নিজের ধারালো বুদ্ধি আর অব্যর্থ অনুমান শক্তি দিয়ে। সমাজ যখন রহস্যের জালে ধীরে ধীরে আবৃত্ত হতে শুরু করে তখন সত্যন্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী কখনও নিজে থেকেই লেগে যায়, রহস্যের সমাধান করতে আবার কখনওবা নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। আবার কখনও কখনও এমন হয়েছে ব্যোমকেশকে দেখেই রহস্য আপনাআপনিই তৈরি হয়েছে।
যারা এখনো পড়েননি , শুরু করে দিন ।এক একটা গল্প শেষ করে যে তৃপ্তি পাবেন সেটা বোঝানোর ভাষা নেই আমার ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:১৭