somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরবন বিপর্যয়, চোখ বন্ধ করে উদযাপনের প্রস্তুতি নিন

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক
জাতি হিসেবে আমরা সবকিছুকেই ঝালমুড়ি হিসেবে একসেপ্ট করি। ঝালে আহাউহু করবো,আবার তার মজাও নেবো। ঝাল-চানাচুরের সাময়িক ইফেক্ট শেষ হয়ে গেলে ভুলেও যাবো। এরপর অপেক্ষা করবো পরবর্তি ঠোঙ্গার জন্য!

তেরো দিন হতে চললো। শ্যালা নদীর পানি এখন দুষিত। সে দুষণ ছড়িয়েছে সুন্দরবনের আনাচে কানাচেও। স্থানীয় শ্রমীকদের কাজে লাগিয়ে যে অবাস্তব পদ্ধতিতে তেল অপসারণ চলছে,ওতে লাভের লাভ আরও কিছু হতভাগ্য মানুষের দুর্দশা বাড়িয়ে দেওয়া। নদী থেকে তেল অপসারণে কাজ করা শ্রমীকেরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া,বমিতে। চামড়ায় শুরু হয়েছে জ্বলুনী।

খবরের কাগজে দেখলাম শ্যালা নদীর তীরবর্তি গাছপালায় লেগে থাকা তেল হোস পাইপ দিয়ে ধুয়ে ফেলার প্রক্রিয়া। গাছ থেকে ধুয়ে ওই তেল আবার পড়ছে নদীতেই। জোয়ারের সময় ওই তেল আবার উঠবে গিয়ে গাছে! এই নির্মম কৌতুক আর কতোদিন?

আর কদিন লাগবে কার্য্যকরি ব্যাবস্থা নিতে? সরকারের হয়তো কিছু আসে যায়না। যারা বলছেন এ ধরণের ম্যানমেইড প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এর আগে দেশ পড়েনি। তাই কি করবে বুঝতে পারছেনা সরকার। সরকার শুধু বোঝে বিরোধী দল কি বললো,তার জবাব দিতে?

বিরোধী দলীয় যুবরাজ উন্মাদ। কিন্তু দেশের এমন বিপর্যয়ে কি আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সেই কোঠায় পা দিলেন? আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,বাস্তবিক বিবেচনায় শেষতক আপনার উপরেই ভরসা। আপনার পক্ষেই সম্ভব দ্রুত সমাধানের জোরালো নির্দেশ দিতে,বিদেশী সাহায্যকে দ্রুতমুখি করতে।

নতুবা,এই সংকট আমাদের নতুন এক মৃত্যুর দিকেই নিয়ে যাবে।
প্রতিবেলা ঝালমুড়ি খেতে খেতে আমাদের পাকস্থলীতে গন্ডগোল শুরু হবে। একসময় পচনও ধরবে। হয়তো পচন শুরুও হয়ে গেছে। সুন্দরবন নিয়ে পত্রপত্রিকার ঝড়ও থামু থামু প্রায়,ফেসবুকের ওয়াল,নিউজ ফিড নতুন ইস্যু পেয়েছে- পেশোয়ার কিলিং,তালেবান।

তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি কিংবা অপরাধকে ঘৃণা করছি,সেটাও ঝালমুড়ি ইফেক্টের মতো। আবেগের গভীরতা আমাদের নেই। নতুন কোন ইস্যু আসলেই আমরা এইসব ভুলে তাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যাবো।
দেশের ক্ষেত্রেও আজ আমাদের অনুভূতি ভিন্ন কিছু কি?

দুই
নৌপরিবহণ মন্ত্রী শাহজাহান খান বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছেন,ফার্নেস অয়েলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবেনা। এই বিদেশী বিশেষজ্ঞ কারা? মুড়ি খেয়ে কি তারা বিশেষজ্ঞ হয়েছে?
ও আচ্ছা,আপনি ধরে রেখেছেন সারা দেশের মানুষ মুড়ি খায়। বিরোধী দলেরও কি আনন্দ,তারা আবার আল্টিমেটাম দিয়েছে। এরা কোন দেশের ক্ষমতায় বসতে চায়? বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে দেশ,তারা আছে গদীর চিন্তায়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষক ভাইদের নিয়ে ব্যাস্ত। বাঘ নিয়ে তাঁর যতো আগ্রহ,বাঘের বন নিয়ে মনে হয়না ততো দুশ্চিন্তা আছে। নেইকি? আপনি পারেননা কার্যকর কোন ব্যাবস্থা নেওয়ার আদেশ দিতে? নাকি ২০০ শ্রমীক মান্ধাতা পদ্ধতিতে তেল নিংড়াচ্ছে স্পঞ্জ দিয়ে,ওতেই আপনি নিশ্চিন্ত?

তিন
সুন্দরবন মরছে,আসুন আমরা উদযাপন করি। ধিরে ধিরে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট তার বৈচিত্রে ভরা প্রাণ-প্রাচুর্য্য নিয়ে বিলিন হতে বসেছে,উদযাপন না করলে চলে? আমাদের মত কানা আযম কেউ তো নেই। নিজের পাতের দইটুকু মিলে গেলেই,আমরা খুশি। সত্য কথাটা হলো,আমরা এমনই কানা যে নিজের প্লেটটাই আমরা চিনিনা।

সুন্দরবনের ধ্বংশ আর বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় যে এক কথা,আমরা কি ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারি? না পারিনা। মেরুদন্ডে ক্ষয় শুরু হওয়া একটা জাতি কখনও সেটা বুঝতে পারবেনা। আদতে,পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে মরার আগ মুহুর্তে একটা তেলাপোকা যেমন বুঝতে পারেনা সে মরছে,আমরাও বুঝতে পারছিনা।

চার
অযথাই মাথার চুল ছিড়তাসেন ভাই। এই বয়সে টাক পড়ে যাবে। আপনার তো বিয়ে হবেনা।
বিয়ে হওয়া কি খুব জরুরি?
জরুরি না? সুন্দরবন মরলে আপনার কি? বয়স পার হইলে বুঝবেন,বিয়া জিনিসটা কত জরুরি।
সমবয়সি এবং দুরবর্তি,স্বল্প পরিচিত মানুষটিকে বলি- সুন্দরবন মরলে আমার একার কিছু না। বয়স পার হলে বুঝবেন,সুন্দরবন ধ্বংস হলে আমাদের দেশের পরিবেশ কতোটা বিধ্বস্ত হবে। তখন দেশের সবাই মিলে চুল ছিঁড়বে।
বর্তমানে একলার মাথার চুল ছিড়া ছিড়া কি আপনে সুন্দরবন বাচায়া ফেলবেন?
না। আমার একলার পক্ষে সম্ভব না। দেশে ষোলো কোটি মানুষ আছে। ষোলো কোটির দুই/তিন কোটি লোক যদি মাথার চুল ছিঁড়তে ছিড়তে রাস্তায় নেমে যেতো,সরকার কি বাধ্য হতোনা কার্য্যকর আর জরুরি পদক্ষেপ নিতে?
স্বল্প পরিচিত মানুষটির পরবর্তি রিপ্লাই ছিলো- হুম!!

পাঁচ
BirdLife একটা প্রতিষ্ঠান যারা পাখির বিচরণ, আচরণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সচেতনতা বাড়াতে পৃথিবীর অনেক দেশেই কাজ করে থাকে। সুন্দরবন নিয়ে তারা যে ফিচারটা করেছে, সেখানে তারা স্বাভাবিক ভাবেই ফোকাস করেছে এই বনের ১০০ প্রজাতির জলচর পাখি, ৮ প্রজাতির মাছরাঙা এবং কমপক্ষে ১০ রকমের শিকারি পাখির বিপন্নতা নিয়ে!

ফিচারটার শেষে ছিলো আরও বিষন্ন এক সংবাদ- বিপুল বৈভবা সুন্দরবনের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে কম করে হলেও ৪ লক্ষ্যের মতো মানুষ। বনের সবুজ ধুসর হয়ে পড়েছে তেল আক্রান্ত স্থানগুলোয়, প্রাণী ও মৎস সম্পদ মরছে কিংবা সরে যাচ্ছে। এই মানুষগুলোর দুর্দশা ইতোমধ্যে শুরুও হয়ে গিয়েছে। এরা ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

আমাদের দেশের নিউজ মিডিয়াগুলো ধিরে ধিরে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। এক টপিক জনগণ কদ্দিন খায়? এক দুই দিন পত্রিকার ফ্রন্ট পেজে প্রধান হেডলাইন হয়েছে তো,এর বেশি যোগ্যতা সুন্দরবন রাখেনা।

পরিশিষ্টঃ
জানিনা একা একা গলা ফাটিয়ে কি লাভ হচ্ছে। তবু জানি, এই অভাগা দেশটায় আমার মতো আরও অনেক অভাগা আছে, ভরসা সেখানেই। আপনি সচেতন মানেই তো আপনি অভাগা। কিন্তু মনে রাখা জরুরি, অভাগাদের মিছিল যতো লম্বা হবে, এই বিপর্যয়ের সমাধানে সরকার ততো দ্রুত ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য হবে। সরকারের প্রতি কড়জোরে অনুরোধ, প্রহসন বন্ধ করে প্রয়োজনিয় ব্যাবস্থা নিন। বিদেশি সহায়তার জন্য জোরালো চেষ্টা করলে, সেটা কি খুব অপমানজনক বিষয় সরকারের জন্য?

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ মরতে বসেছে, এই মৃত্যু কি চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে? সেটুকু দেখার মতো নির্লজ্জ কি আমরা হতে পারবো?
----------------------------

পাদটিকাঃ
জাতিসংঘের ইউএনডিএসি (United Nations Disaster Assessment and Coordination) থেকে বিশেষজ্ঞ পাঠানো হয়েছিলো চারদিন আগে। আজ তারা ২২ সদস্যের দল নিয়ে সুন্দরবনের পথে রওনা করেছে। তাদের উদ্যেশ্য ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় ও তথ্য সংগ্রহ! এরপর পরামর্শ দেওয়া হবে??
------------------------------------
Click This Link
http://whc.unesco.org/en/news/1209
Click This Link
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫১
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×