somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"হিরু অনোদা"- একজন জাপানী যোদ্ধার অশ্রুত কাহিনী

০৯ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কল্পনা করুন যে আপনাকে একটা গেরিলা মিশনে পাঠানো হল এবং আপনার উপর নির্দেশ হল- আত্মসমর্পণ না করা এমনকি , ধরা পড়ার মত অবস্থা হলেও আত্মহত্যা না করা। তাহলে আপনি কি করবেন?


এখানে আরেকটি টুইস্ট হল, যদি আপনার দেশ যুদ্ধে হেরে যায় বা আত্মসমর্পণ করে এবং আপনি এখনও শত্রু লাইনের পেছনে! আপনি তখন কি করবেন? চেষ্টা করবেন পালাতে অথবা আত্মসমর্পণ করবেন।


কিন্তু জাপানী ইম্পেরিয়াল আর্মি অফিসার হিরু অনোদা, যিনি একই রকম একটি মিশনে ফিলিপাইনে অবস্থান করছিলেন, তিনি একটি ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছিলেন।

৯ই আগস্ট,১৯৪৫ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি পারমাণবিক বোমা ফেলল নাগাসাকিতে এবং ৩ দিন পরে হিরোশিমায়। দুটি শহর ধ্বংস এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ চিরনিদ্রায়। ১৫ই আগস্ট,এক সপ্তাহ পরে আত্মসমর্পণ করে জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়।


সেইসময় হিরু এবং আরও তিনজন ছিলেন লুবাং দ্বীপে অবস্থানরত একমাত্র জাপানি সৈন্য যারা মারা যাননি বা আত্মসমর্পণ করেননি। অক্টোবর মাসে তাঁরা একটি লিফলেট পেল- " ১৫ই আগস্ট যুদ্ধ শেষ। পাহাড় থেকে নেমে আস"। কিন্তু হিরু ও তার সঙ্গীরা মনে করল এটা শত্রু দ্বারা প্রচারিত প্রপাগান্ডা এবং তাঁরা গেরিলা লড়াই চালিয়ে যেতে লাগল।

এক সদস্য ১৯৫০ সালে আত্মসমর্পণ করে, অন্য একজনকে ১৯৫৪ সালে একটি অনুসন্ধানকারী দল গুলি করে হত্যা করে। হিরু অনোদা এবং একমাত্র সঙ্গী প্রাইভেট কেনিশি কোজুকা তখন শুধুমাত্র জীবিত।


তারা সরকারের কাছ থেকে পারিবারিক ছবি পেল,আত্মসমর্পণ করতে সরকার তাদের প্রতি আহ্বান জানায়। কিন্তু তারা ভাবল এটা কোন চালাকি,তাই তাঁরা ধরা দিল না। তাঁরা পাহাড়ে কলা খেয়ে,মাংস চুরি করে ও নারকেল পানি খেয়ে যুদ্ধ জারি রাখল।

১৯৭২ সালে স্থানীয় কৃষক দের ধানের গোলা পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার সময় কোজুকাকে গুলি করে পুলিশ। হিরু অনোদা এখন একা। কিন্তু তিনি তাঁর কমান্ডারের আদেশ অনুসরণ অব্যাহত রাখল। ইতিমধ্যে তিনি জাপান ও ফিলিপাইনে একজন কিংবদন্তি হয়ে উঠলেন।

এদিকে নরিও সুজুকি নামে একজন জাপানী মানুষ যে বিশ্বের সর্বত্র একটি দু:সাহসিক অভিযান করত, তিনি ব্রত নিলেন লেফটেন্যান্ট হিরু অনোদা কে খুঁজে বের করার।
১৯৭৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে তিনি আসলে অনোদাকে খুঁজে পান কিন্তু অনোদা তার অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করে বলেন- যখন তার কম্যান্ডার তাকে আদেশ করবে তখনই সে কেবল আত্মসমর্পণ করবে।


এদিকে তার ঊর্ধ্বতন মেজর তানগুচ্চি অনেকদিন আগে অবসর নেন এবং বই বিক্রেতা হয়েছিলেন। কিন্তু নরিও তাঁকে ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে লুবাং যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করে দেন। অবসরপ্রাপ্ত মেজর অবশেষে হিরু অনোদার সাক্ষাত করেছিলেন এবং তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করেছিলেন- "যাই হোক না কেন আমরা আপনার জন্য ফিরে আসব।" এবং তাকে শেষ বারের মত আদেশ দেন আত্মসমর্পণ করার জন্য।


যদিও তিনি ও তার সঙ্গীরা এতবছর ধরে প্রায় 30 জন লোককে হত্যা করেছিলেন,কিন্তু ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মারকোসের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ক্ষমা পান। রাষ্ট্রপতির কাছে হিরু অনোদা অস্ত্র (বন্দুক ও তলোয়ার) রেখে অবশেষে আত্মসমর্পণ করেন।


তিনি দেশে ফিরে একজন নায়কের মর্যাদা পান এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ পুরস্কার স্বরূপ পান। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এবং ইয়াসুকুনি মন্দিরে তা দান করে দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি এমনকি লুবাংতে ফিরে গিয়ে সেখানে স্থানীয় স্কুলে ১০০০০ মার্কিন ডলার দান করেন।

১৬ই জানুয়ারী,২০১৪ তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।



তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
আমার অন্যান্য পোস্ট গুলো হল -
মহৎপ্রাণ মহারাজা দিগ্বিজয় সিং জাদেজা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পোল্যান্ড
"অরণ্যদেব"- যাদব পায়েং
একজন নারী যিনি সবজি বিক্রি করে একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২০
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×