গত কয়েকদিনের মিডিয়া পাড়া কিম্বা চিত্রপুরির আলোচিত ঘটনা হচ্ছে কোলকাতার বিগ ফিগার, প্রেসেনজিৎ, জিৎ, শ্রী ভেংকটেশ ফিল্মসের কর্ণধার এবং গৌতম ঘোষের বাংলাদেশ সফর।
তারা এসেছিলেন এপার বাংলা আর ওপার বাংলার সিনেমার মধ্যে একটা মেল বন্ধন করতে আমাদের তথ্য মন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে।
তথ্য মন্ত্রী মহোদয়ের এই মহতী উদ্যোগের সাধুবাদ জানাই! কিন্তু উনি আসলে কিসের মেল বন্ধন করতে চেয়েছেন এই বিষয়টা এখনো আমার মত আমজনতার কাছে পরিষ্কার নয়। আমরা সিনেমা বানাবো, আর সেইটা ওই দেশে চালাবো?
মাননীয় তথ্য মন্ত্রী,
সালাম নিয়েন। স্যার, আপনি কি বাংলাদেশের সব তথ্য রাখেন? নাকি আপনার পদটাকে অলংকৃত করার জন্যই তথ্য মন্ত্রী হয়ে বসে আছেন? আপনার জ্ঞাতার্থে কিছু তথ্য দেই।
আপনার ছোট মেয়েটা ড্রইং রুমে বসে সংগীত বাংলা চ্যানেলে হয়তো কোলকাতার দেবের লেটেস্ট সিনেমা পাগলু-২ এর গান শুনে শুনে কাঁধ নাচায়, অথবা মুন্নি বদনাম হুই না ছাড়লে আপনার ছোট ছেলেটা পরের লোকমা ভাত মুখে দেয় না। আর আপনার সহধর্মিণী হয়তো স্টার প্লাস, সনি কিম্বা স্টার জলসার সিরিয়াল গুলো দেখে দেখে রাজনীতির মাঠে আপনাকে আরও বেশী বিচক্ষণ হতে পরামর্শ দেন।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, আপনি কি জানেন কোলকাতার লাখো দর্শক আমাদের মশাররফ করিমের অভিনয় দেখে প্রাণ খুলে হাসতে চায়, জয়ার অভিনয় দেখে বুকের মাঝে ভালোবাসার ঝড় বইয়ে দিতে চায়, শাকিব খানের অভিনয় দেখে নিজেদের বাংগালিয়ানা খুজে পেতে চায়! তারা কেও বাংলাদেশে আসলে ভাইব্রাদার গ্রুপ কিম্বা সালাউদ্দিন লাভলুর তৈরি করা ভিডিও ফিকশনের ডিভিডি কিনে নিয়ে যায়।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, আপনার পরিবারের সদস্যরা যেমন ভারতের প্রত্যেকটা অভিনেতা- অভিনেত্রীর নাম মুখস্ত করে বলতে পারে, তেমনি ওদের কে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা না হোক অন্তত কয়েকজনের নাম মুখস্ত করার সুযোগ করে দেবার উদ্যোগী হন।
তবেই না ওরা আমাদের সিনেমা দেখতে উৎসাহিত বোধ করবে।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, আপনার পরিবারের সব চেয়ে ছোট্ট ছেলেটির খৎনা অনুষ্ঠানের জৌলুশ বাড়াতে ভারত থেকে সনু নিগম কে ভাড়া করে আনেন, কিম্বা অখ্যাত বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাতারাতি তারকা খ্যাতি পাওয়া ভিবিন্ন ভারতীয় আইডল নিয়ে এসে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান করান, সুনিধি চৌহান কে নিয়ে এসে নতুন বাজার সৃষ্টি করেন ভালো কথা, কিন্তু একবারও কি চিন্তা করে দেখেছেন আমাদের জেমস, মমতাজ, আসিফ, বাচ্চু কোলকাতায় কত জনপ্রিয়! এদের একটা কনসার্ট দেখার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে কোলকাতায়, এরা সবাই চলচিত্রের অংশ। এদের কে ওদের মাঝে পৌঁছে দেবার উদ্যোগী হন।
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, আপনি কি এই তথ্য জানেন, মজিবর নামের এক বাংলাদেশী কৌতুক অভিনেতা বৈধভাবে কৌতুক পরিবেশনের জন্য কোলকাতায় না যেতে পেরে অবৈধভাবে যেয়ে পাঁচ মাস কোলকাতার সেন্ট্রাল জেলে আটকা ছিলেন! আপনি কি জানেন, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়?
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, আপনি কোলকাতার সিনেমা সম্পর্কে কোন তথ্য কি আসলেই রেখেছেন?
ওদের চলচিত্র কারিগরির কিম্বা টেকনোলজির দিক থেকে কোথায় যেয়ে থেমেছে তা কি একবার খোঁজ নিয়ে দেখেছেন? আমাদের চলচিত্র থেকে ওদের চলচিত্র যোজন যোজন দূরে এগিয়ে গিয়েছে, সরকারের সহযোগিতায়। আমাদের সিনেমাগুলোকে একটু আধুনিকায়ন করে ওদের সমকক্ষতায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। ডিজিটাল ডিজিটাল শব্দ বলে মুখ দিয়ে সাদা ফেনা না তুলে একটা ডিজিটাল ল্যাব করেন যাতে প্রতিটা সিনেমা ভারতের মাদ্রাজ থেকে এডিটিং করতে না হয়। সিনেমা হলগুলোকে আধুনিকায়নে সহজ শর্তে ঋণ দেন, প্রতিটা শপিং মলে সিনেপ্লেক্স বানাতে বাধ্যবাধকতার আইন পাশ করেন, ভালো কিছু ক্যামেরা-ক্রেন থেকে শুরু করে আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে এফ ডি সি কে আধুনিক করেন, দেখবেন ওদের চেয়ে ভালো ভালো সিনেমা আমরা বানাচ্ছি।
আমাদের মেধার সংকট নাই, কোন কালেই ছিল না, ছিল শুধু নীতিবান নীতিনির্ধারকের অভাব। এই অভাবটা না হয় আপনিই পূরণ করেন!
না হলে দেখবেন, এই সব সিনেমা বিনিময় নতুন কোন শুভঙ্করের ফাঁকিরই নীল নকশা ছাড়া কিছুই না।
ধন্যবাদ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়। ধন্যবাদ আপনাকে।
আল মাইমুন, বনানী কবরিস্থানের পাশ থেকে।