১৮.০৯.০৯ শুক্রবার।
-----------------
ভুমিকা:
ব্লগে যতদিন দেখেছি- আড্ডা হত বেশিরভাগ-ই ঢাবি-তে। একবার এরকম একটা আড্ডা দিয়ে জিনিষটা ভালই মজাদার 'নোসিলা' মনে হল। এদিকে বিভিন্ন পোস্ট দেখে বুঝতে পারতাম মিরপুরে ব্লগার সংখ্যা অনেক। একটা আড্ডা দেবার ইচ্ছা মনের মধ্যে সবসময় পুষে রাখতাম। কিন্তু কেউ তেমন কোন ডাক দেয়ও নাই-আবার আমারও দেবার ইচ্ছা হয় নাই। সমস্যা বাধল কিছুদিন আগে আকাশ_পাগলা কে মেসন্জারে এড করে। প্রথম দিনেই ও আর আমিনুলইসলাম ধরে বসল একটা আড্ডা-র ডাক দিতেই হবে। আমারও গায়ে 'জোস' চলে আসল। আকাশ_পাগলা-র পরীক্ষা থাকায় পোস্ট টা আমাকেই দিতে হল। ঐ পোস্ট টাতেই বুঝলাম, মিরপুরের সবাই কতটা আড্ডা দিতে ইচ্ছুক। সবার পরামর্শে স্থান আর কাল ঠিক হয়ে গেল। ফলাফল আজকের এই আড্ডা।
সময়ানুক্রম বর্ণনা
বিকাল ৫টা।
পোস্ট এ দেয়া সময় এর আগেই যেয়ে আড্ডা দেবার উপযুক্ত বসার যায়গা খুজে বের করলাম। উপরে বাশের চাটাই ছাউনি দেয়া , নিচে বাশের মাচা। আশ্চর্যজনক ভাবে জায়গাটা খালি। ৫-১০ এ তানভির ভাই এলেন, উনি পোস্ট দেয়ার চে পড়তেই বেশি পছন্দ করেন। তারপর পরই এল আকাশ_পাগলা । ৩জন মিলে ঐ বাঁশময় জায়গায় বাসা থেকে টেনে আনা পেপার না বিছিয়েই বসে গল্প শুর করলাম আর ফোনে-র দিকে আকুল করা হৃদয় নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম- কখন আরও ব্লগাররা আসবেন। মিলটন ভাই আর সামছা আকিদা জাহান আপা ফোন করে শিওর হতে চাইলেন সত্যি আড্ডা হচ্ছে তো? উত্তর- অবশ্যই। এর মাঝে বৃত্তবন্দী ভাই স্কুলপালানো বালকের মত কাধে একটা ব্যাগ নিয়ে হাজির। আমাদের বাকি ৩জন কে দেখে উনার চোখ তার 'বড় কপালের চৌকাঠে' গিয়ে ঠেকল। সাথে সাথে ফোন বের করে উনার পরিচিত ব্লগার দের আসার জন্য অনুরোধ-- কাউকে তো ঘুম থেকে টান দিয়ে নিয়ে আসার মত ঝাড়ি..........
তানভির ভাই অনেক্ষন থেকে উঠি উঠি করছিলেন, এবার আর থাকতে পারলেন না, উনি আবার উনার বেইলী রোড আড্ডার বন্ধুদের কাছ থেকে ঝাড়ি খাচ্ছিলেন কিনা...
রয়ে গেলাম তিন পাপী - আমি, আকাশ_পাগলা, বৃত্তবন্দী।
৬টা বেজে ৩৩।
বেগতিক অবস্থা দেখে বৃত্তবন্দী ভাই পরামর্শ দিলেন পাশেই বিক্রির জন্য রাখা কোয়েলের ডিম খেয়ে ইফতারী সেরে বাড়ি বলে হাটার জন্য। আমাদের তখন শংকা ইতিহাসের সবচে সুইটি কিউটি 'লিটল' আড্ডা-র তকমা নিয়ে ব্লগে ফান পোস্ট আসে কিনা।
তবে না, অথৈ জলের শেষেও ডাণ্গা থাকে।
কালপুরুষদার ফোন, উনি আসছেন। আমরা তো অবাক- মিরপুরের আড্ডা- মিরপুরবাসীদের কোন খবর নাই আর উনি এত দূর থেকে আসছেন!! উনি আসার পর আমরা আরও অবাক- আশ্বিন মাসের এই মেঘলা গোমড়া সন্ধ্যায় -- শ্রাবণসন্ধা আপু এসেছেন। উনার বাসা কালপুরুষদার বাসা থেকেও দূরে, আবার উনার বলাতেই নাকি কালপুরুষদা আসতে পেরেছেন । নৈলে কালপুরুষদা ১৮ তারিখ পরের দিন মনে করেছিলেন।
ইফতারি করার জন্য কালপুরুষদার নেতৃত্বে আমরা পাচঁ সদস্যের টিম রওয়না হতেই পথে হাসান মাহবুবের সাথে দেখা। দেখে মনে হল উনি এককালে মোটাগোটা ছিলেন, এখন চিকনমিঞা টাইপ দশা , তাই প্রোফাইলে পিকে উনার "আই মিস দ্যা ওল্ড মি" টা লেখা।
বাংলার মেলা-ক্যাফে তে ইফতার অর্ডার দিয়ে শুধু পানির বোতল গুলা হাতে পেলাম , কিন্তু চোখের সামনে ঠিকমত ইফতার প্লেট আসার আগেই রোজা ভান্গার উপরওয়ালার নির্দেশ। রোজা ভাংতে গিয়ে আরেকটু হলেই ভিমড়ি খেতে লেগেছিলাম, কারন---সে সময়ই থুতনীতে ব্যন্ডেজ নিয়ে হাজির ব্লগের আপামনি - জানা আপা।ব্লগের কোন জেনারেল মফিজ তাকে এই ব্যান্ডেজ উপহার দিয়েছে কিনা সে ব্যাপার টা খোলাসা হয় নি এখনও। উনাকে দেখে অবাক সবাই।উনি আসবেন সেটা কারো কল্পনায় ছিল না।
খেতে খেতে -ই শ্রাবণসন্ধ্যা আপুর ক্যামেরায় নিজেদের বন্দী করার চেস্টা, সাথে জানা আপুর ব্যন্ডেজ ঢাকার ব্যার্থ প্রচেস্টা।
কালপুরুষদার মানিব্যাগের বোঝা হালকা করে আমাদের রোজা-র হালকা পেট ভারি করে, ক্যাফে থেকে নিচে নেমেই দেখা কৌশিক ভাইয়ের সাথে।
৭টা বেজে-৩০মিনিট
সবাই মিলে স্টেডিয়ামের ঐ বাশঁময় এলাকায় গমন। আমার এতক্ষন বয়ে নিয়ে বেরানো পেপার দিয়ে সবার বসার জায়গা হল কিন্তু কেন যেন, প্রাসংগিক ইউটার্ণ আলাপে উত্তেজিত সবাই আর বসল না। দাড়িয়ে-ই গল্প চলার ফাকে কৌশিকদা-র স্পন্সরে দুজন বাদে সবাই চা খেয়ে হাটা ধরলাম ফুচকা -চটপটি-র মোবাইল ভ্যানের দিকে। সবার কেন যেন ''মামা চটপটি'' দোকান টা পছন্দ হল। ওখানের সব কটা চেয়ার দখল করে বসে পরলাম। বাকি যে কটা ছিল সে কটা খালি দেখা গেলে কেমন হয়, তাই মিলটন ভাই হাসিমাখা মুখে এসে উনার পিচ্চি সুপারম্যান আর ভাবীকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চেয়ার গুলো দখলে নিলেন। সবার জন্য জানা আপা স্পন্সর হয়ে ফুচকা- চটপটি খাওয়ালেন, বেশিরভাগেরই ফুচকা নেয়া দেখে কৌশিক ভাই বলে বসলেন ফুচকা খায় মেয়েরা। তত্বটা শুনে আরও মনযোগের সাথে ফুচকা খাওয়া শুরু করলাম। যাতে ফুচকা খেয়ে একটা মেয়ে নিক খুলে হিট বলগার হতে পরি।
পরপর-ই এলেন আসাদ নামের 'নিক প্রকাশে অনিচ্ছুক' একজন। হ্যান ত্যান খেয়ে পেট ভরা অজুহাত নিয়ে বিশালাকায় শয়তান গুরুগম্ভীর ভাবে এলেন- পিছনে পিছনে মনির হাসান।
এর মধ্যে জানা আপার ব্যান্ডেজ খুলে যাচ্ছিল সেটা কালপুরুষদার কিনে আনা ব্যানড এইড দিয়ে কোনরকম লাগিয়ে দিলেন মিলটন ভাবী। তারপরই আবার একচোট ফটোসেশন। শয়তান-বৃত্তবন্দী- হাসান মাহবুব-আসাদ ভাইয়ের ছবি নিলাম , ব্যাকগ্রাউন্ডে পাবলিক টয়লেট।
৮টা বেজে ৩০
জানা আপা চলে গেলেন । সেই সাথে মিলটন ভাই ও। একই সময়ে এসে হাজির হলেন সামছা আকিদা জাহান আপু - সাথে সুইটু সুইটু দুই পিচ্চি। একজনের প্রশ্ন- চটপটির দোকানে ফুচকা কিভাবে? কারন দোকানে গায়ে শুধু মামা চটপটি-ই লেখা ছিল।
কিছুক্ষন আড্ডা মেরে কালপুরুষ দা আর শ্রাবণসন্ধ্যা আপু চলে গেলেন । তাদের সি এনজি তে তুলে দিয়ে মিরপুরীয়ান আকাশ_পাগলা বলল টায়ার্ড লাগসে, অতঃপর ভাগল। আমি আড্ডা-য় এসে দেখি সামছা আকিদা জাহান আপুও নাই, চলে গেছেন।
৯টা বেজে ১৫
এসে দেখি লুলুপাগলা!!!!! হাতে একটা প্যাকেট , তা থেকে পাগলালাঠি সমানে বের করে গণহারে বিলাচ্ছেন। যা এতক্ষণ করেছিল বৃত্তবন্দী। এরপর হাটতে হাটতে স্টেডিয়ামের উল্টাদিকের বাসস্ট্যান্ডের পাশে বট খাওয়া পরোটা দিয়ে। সেই সাথে সামহোয়ার ব্লগের চুলচেরা বিশ্লেষন। ইউটার্ণ তো অবশ্যম্ভাবী একটা টপিক.... । বট খাওয়া শেষে কেউ বিল দেয়না দেখে নাকি হাসান মাহবুব ভাই নিজেই বিল দিয়ে দিলেন। পরে মনির হাসান ভাই বিল দিতে গিয়ে শুনেন যে বিল আগেই দেয়া সারা... এক্ষেত্রে মনির হাসান ভাই আগেই জেনে গিয়েছিল নাকি বিলের ব্যাপার টা তা তদন্তের দাবীদার
খাওয়া শেষ ঘড়ির কাটা ১০টা পার হবে বলে চোখ রান্গাচ্ছে। কিনতু রাস্তায় দাড়িয়ে আড্ডাটা আবার জমে উঠতে চায় । সেটাকে বাগ মানিয়ে ১০টা১৫ এর দিকে সবাই নিজ নিজ বাসার ডিরেকশনে হাটা ধরল।
উপসংহার
আড্ডায় ডিসিশন নেবার কথা ছিল পরের আড্ডা কোথায় হবে, তবে সেটা নিয়ে কোন কথাই হয়নি। তবে এ বিশ্বাস গজিয়েছে, ফুচকার স্পন্সর পেলে আড্ডা যখন তখন করা যাবে ওখানে, সাথে এরএফএল চেয়ারে বসা ফ্রি। আজকের এই প্রাণবন্ত আড্ডা যারা মিস করেছেন তারা আফসুস খাইতে থাকেন। আমি এখন ঘুমাইতে যাই। সব ব্লগারের নাম লিখতে লিখতে হাত ব্যাথা। কি বড় বড় নাম রে বাবা। পরের আড্ডায় আবার দেখা হবে। তখন যেন আফসুস না খান সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেন।
---------------------------একটু এডিট করলামএই পোস্ট টা -৮-২১, শনিবার,১৯/০৯/২০০৯। জানা আপু আর, বট খাওয়ার লাইন টায়।
আকাশ পাগলার এই আড্ডার সামারি করা এবং মজাদার পোস্ট
এবং
আমার, আড্ডার ভিন্নরকম ট্রেইলার পোস্ট।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১১:২৬