প্রিয় লাইলাক ফুল,
আমি তোমাকে ভালবাসি। বাসতাম। বাসব? হয়তো হ্যাঁ! হয়তো না! জানি না ঠিক কি কি তোমার ভালবাসার তালিকায় স্থান পায়, বা পেয়েছে এতকাল! বিড়াল? তোমার তুলতুলে গালের মতন? নাকি তুমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসতে যখন বৃষ্টি নেমে আসত আমাদের মফস্বলে, আকাশ আঁধার করে সন্ধ্যার সময়? আমার ভেজা হয়নি কখনো তোমার সাথে কোনোদিন বরষায়, জানো? না, তুমি জান না! আবহাওয়া অফিসের বার্তা আর টোকন ঠাকুরের কবিতা শুধু আমাকেই জানিয়েছে "আকাশ অংশত মেঘলা থাকবে..."; শুধুই আমাকে। কবিতা টবিতা পড় না তুমি, আমি নিশ্চিত। তোমার আরও জানার কথা না আমার দীর্ঘশ্বাসের নিঃসঙ্গ গল্পগুচ্ছ কিভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বসন্তের নিষ্ঠুর বাতাসে, তোমার আজও জানার কথা না আমার রাত্রিজাগার করুণ কাসিদা কিভাবে হারিয়ে যাচ্ছে হৃদয়ের অন্ধকার ঘরে। আচ্ছা বাদ দেই আমার কথা, কি যেন লিখছিলাম...ও হ্যাঁ, তোমার কি কি ভালবাসা। জানি না, আমি আসলে কিছুই জানি; না জেনে না শুনে তোমাকে কি বানাব আমি একজন অতিমানবী? যা খুব প্রিয় অভ্যেস আমার অগ্রজ সব অপার্থিব কাব্যপুত্রদের। না, তুমি খুব সাধারণ। ঘাস ফুল নদীর মতন! বা প্রজাপতির মতন! বা প্রাকৃতিক দৃশ্যের মতন! তুমি খুব সাধারণ। জানো; তোমার কথা আমার খুব মনে হয়। আর মনে হয় আমার প্রিয় মফস্বলটির কথা। এই শহর আমাকে টানে না। এর ধূলো, এর তাড়াহুড়ো, এর কড়া-মেকআপ-নির্ভর সুন্দরীরা, এর জ্যাম, এর প্রতিযোগিতা। আমার এই শহরটাকে মনে হয় সেইসব জনপদের মতন, হুদ আর সালেহের সম্প্রদায় যেইসব জনপদে বাস করত; ইজরাইলের ঈশ্বরের ক্রোধে যারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল সম্পূর্ণভাবে। আমাদের এই শহরটাও ধ্বংস হয়ে গেছে, মরে গেছে এর আত্মা; ঠিক মতন কান পাতলে ইট কাঠের আড়ালে শুনলেও শোনা যেতে পারে কোনো শিল্পীর আর্তনাদ, যে তুলি তুলে নিয়েছে ভুল সময়ে, যে ভুল রঙে এঁকেছে ছবি ক্যানভাস ছাড়াই সময়ের কাগজে। আমার খুব ইচ্ছে করে আমার প্রিয় মফস্বলটিতে ফিরে যেতে, তোমাকে আমি দেখব না, কিন্তু জানব তার বাতাসে তোমার অস্তিত্বের কিছুটা মিশে আছে, জেনে স্বস্তি পাব। আমাকে কি তোমার পাগল মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে, জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছি? মনে হচ্ছে, মাথায় জলপট্টি জ্বরুরি হয়ে উঠেছে খুব? কিন্তু এখন কি কেউ জলপট্টি দেয় আর?
তোমাকে ছাড়া বাঁচব না? খুব বাঁচব। তুমি যখন ছিলে না, আসোনি পৃথিবীতে; তখন কি বাঁচেনি কোটি কোটি মানুষ এই পৃথিবীতে? বেঁচেছে। তুমি যখন থাকবে না, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে; তখন কি বাঁচবেনা কোটি কোটি মানুষ? বাঁচবে।
তবু শিশুর মতন খেলনার জন্য চোখের জল ফেলতে ইচ্ছে করে, তবু উন্মাদের মত উদ্দেশ্যহীন উঠে পড়তে ইচ্ছে করে আমার প্রিয় মফস্বলের বাসে, যেখানে আমার জন্য কেউ করছে না অপেক্ষা। যেখানে আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই।
তুমি এই চিঠি পাবে না। তোমার ঠিকানায় পাঠাচ্ছি না। কারণ কাব্যিক নয়, একেবারেই সাধারণ। তোমার ঠিকানা জানি না যে! "ভিনদেশী তারা", আমার "রাতেরই আকাশে" জ্বলতে থাকো! ভাল থাক...
ইতি,
তোমার
মফস্বলের মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১২ বিকাল ৪:৫৬