somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালি মধ্যবিত্তের চরিত্রঃ ৭টি পর্যবেক্ষণমূলক মন্তব্য

০৯ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালি মধ্যবিত্তে পরিবারে জন্ম, মিশেছিও মূলত এই শ্রেণীর মানুষের সাথেই সবচেয়ে বেশি, তাই এই শ্রেণীটাকেই চিনি অন্য যে-কোনো শ্রেণীর চেয়ে ভালোভাবে। ইনসাইডার হিসেবেই এই লেখাটা লিখলাম, নায়কগিরিতে বিশ্বাসী নই, তাই এই লেখা যে লিখেছে তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তথাপি মাঝে মাঝে নির্মোহভাবে দাঁড়াতে হয় আয়নার সামনে, তাতে নিজের মিথ্যে ইগোর অন্তঃসারশূন্যতা ও হাস্যকরতার মুখোমুখি হওয়া যায়, সেই তাড়না থেকেই এই লেখার জন্ম।

১ রাজনীতি, সংস্কৃতি, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে বাঙালি মধ্যবিত্তের ভেতরে এক ধরণের আলগা সেন্টিমেন্ট কাজ করে। এটা হয় এসব সম্পর্কে তার ভেতরে কোনো গভীর ইমোশন না থাকার কারণেই। তাই একটু রাজনীতি, একটু সংস্কৃতি, একটু ধর্ম করে করেই সে কবরে যায়/চিতায় ওঠে; এসবের কোনোটার ক্ষেত্রেই সে এমন কোনো বোধ অর্জন করতে পারে না যা তাকে প্ররোচিত করতে পারে সমাজের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের সংগ্রামে শামিল হতে, আর যদিও বা সে শামিল হয় খুব দ্রুতই তার ধৈর্য ফুরিয়ে যায়।

২ বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবনযাপনের আদর্শ গণ্ডার। এটা সে জানে, খুব ভালোই জানে, কিন্তু স্বীকার তো করেই না বরং নিজের শ্রেণীর বা অন্য শ্রেণীর কাউকে খুব ক্ষীণকণ্ঠেও যদি সে এটা বলতে দ্যাখে তাহলে সেই বক্তার ওপর সে ঝাঁপিয়ে পড়ে হিংস্র ও অবোধ জন্তুর মতো। বাঙালি মধ্যবিত্ত সবচেয়ে ভয় পায় নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে, কারণ তাতে তার আস্তিত্বিক অর্থহীনতা তার কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়বে, সে দুনিয়ার সবাইকেই দ্যাখে শুধু নিজেকে না দেখে।

৩ বাঙালি মধ্যবিত্তের এক বিরাট বিকারের নামঃ শ্লীলতা। শ্লীলতার মানবিক সীমাকে সীমাহীনভাবে প্রসারিত করে বাঙালি মধ্যবিত্ত একে পরিণত করেছে এক অসুস্থ বিকারে। নারীপুরুষের স্বাভাবিক কামবাসনা বাঙালি মধ্যবিত্ত সহ্য করতে পারে না, অথচ ধর্ষণকে সে সহ্য করে যায় আশ্চর্য সহনশীলতার সাথে, এই হচ্ছে বাঙালি মধ্যবিত্তের শ্লীলতাধারণা।

৪ বাঙালি মধ্যবিত্ত রুটলেস, স্বেচ্ছায়ই, কারণ সামান্য অর্থনৈতিক সচ্ছলতার মুখ দেখলেই বিস্মৃত হয় তার শেকড়। সে অধিকাংশ সময়ই উঠে আসে গ্রাম থেকে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কালো চামড়া শাদা মুখোশ হবার 'শিক্ষা' অর্জন করার পর সে সবার আগে ঘেন্না করতে শেখে তার গ্রামকে। বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে 'খ্যাত' একটা গালি, যা দিয়ে সে নির্দেশ করে স্মার্টনেসের অভাব, যেই কৃষকের রক্ত-পানি-করা শ্রমের ফসল খেয়ে সে বেঁচে থাকে তার প্রতি এই অসুস্থ অবজ্ঞাতেই প্রকাশ পায় বাঙালি মধ্যবিত্তের শেকড়হীনতা।

৫ বাঙালি মধ্যবিত্ত বীর খুঁজতে পছন্দ করে। সে বিশ্বাসী নয় সাংগঠনিকতায় ও সংঘশক্তিতে। অন্ধ-অনুসরণ বাঙালি মধ্যবিত্তের প্রিয় আদর্শ।

৬ বাঙালি মধ্যবিত্ত উদ্যোগ নিতে ভয় পায়। সে দাসের মতো কেরানিগিরি করে জীবনযাপন করতে পছন্দ করে একটা চরম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থায়, তার সন্তানের ভেতরেও বপন করে এই ধারণা যে কেরানি হওয়াই হচ্ছে জীবনের স্বার্থকতা, এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবেই তৈরি করেছে পৃথিবীর সবচেয়ে 'ঐতিহাসিক' কেরানিশ্রেণীকে। তাই বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে একজন লেখক, বিজ্ঞানী বা শিল্প-উদ্যোক্তা কখনোই আইকন হয় না।

৭ বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে গম্ভীর থাকাই পার্সোনালিটি। প্রাণখুলে হাসতে ভয় পায় সে, যেন ক্ষতি হয়ে যাবে তাতে, বা হাসির সাথে ব্যক্তিত্বের বিরোধ রয়েছে। সে প্রাণখোলা হাসি সহ্য করতে পারে না, মেপে মেপে হাসে, এবং কাউকে প্রাণখুলে হাসতে দেখলে ভীষণ বিরক্ত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪৬
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×