somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধঃ মানুষের মানচিত্রের স্বপ্নের জন্য ইতিহাসের লড়াই

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উৎসর্গ
শহিদ বুদ্ধিজীবীদের পবিত্র ও জীবন্ত স্মৃতির উদ্দেশ্যে




আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটা ভদ্রলোকি ‘ইতিহাস’ চালু আছে। মুক্তিযুদ্ধের এই ‘ইতিহাস’(?) পাঠ করলে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ ছিলো একটা খেলা, যার এক পক্ষে ছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা, অন্য পক্ষে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযুদ্ধের এই ‘ইতিহাস’ জুড়ে থাকে মুরুব্বিদের মূর্তি, তাঁদের অসাধারণত্বের অতিপ্রশংসা, সামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, মুক্তিযুদ্ধের টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি, ঘোষকসংক্রান্ত বেহুদা বিতর্ক, ধর্মকেন্দ্রীক বিপজ্জনক বাহাস, এবং অজস্র পরিসংখ্যান।


মুক্তিযুদ্ধের এই ‘ইতিহাসে’-র বাইরেও একটা ইতিহাস আছে। এই ‘ইতিহাস’ মাঝে মধ্যে বাধ্য হয়ে সেই ইতিহাস সম্পর্কে একটু আকটু ধারণা দিতে, কিংবা বলা যায়, সেই ইতিহাস তার নিজ শেকড়সংলগ্নতার শক্তিতেই এই ‘ইতিহাসে’ ঢুকে পড়ে। সেটা মানুষের মানচিত্রের জন্য স্বপ্নের ইতিহাসের লড়াই, ‘গণযুদ্ধের জনযোদ্ধাদের’ শত সহস্র বছরের ইতিহাসের লড়াই, শোষক নিপীড়কদের বিরুদ্ধে। যে স্বপ্নের সূচনা ঘটেছে প্রাচীন ভারতে বহিরাগত আর্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দ্রাবিড় এবং ভূমিপুত্রদের প্রতিরোধ থেকে। যে স্বপ্ন বেঁচে থেকেছে বহিরাগত মুঘলদের বিরুদ্ধে ‘বুলঘাখানা’ বাঙলার নিরন্তর বিদ্রোহে। যে খোয়াব বুকে নিয়েই ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে মুর্শিদাবাদের সিপাহি থেকে ফকির মজনু শাহ-ভবানী সন্ন্যাসী-জয় দূর্গা দেবী চৌধুরাণীর নেতৃত্বে নিম্নবর্গের বিদ্রোহী থেকে তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা ও ফরায়েজি আন্দোলনের লড়াকু থেকে সাঁওতাল সিদু ও কানু মাঝির তীর ধনুকের ধারকগণ থেকে স্বদেশী আন্দোলনের সন্ত্রাসবাদী থেকে তেভাগা আন্দোলনের চাষী। যে খোয়াবের বশবর্তী হয়েই একদিন পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমান ও তফসিলি হিন্দুদের এক বিশাল অংশ পাকিস্তান কায়েমের জ্বালানি হয়েছিলো, যে স্বপ্ন পাকিস্তান কায়েমের অব্যবহিত পরেই মাটির সানকির মতো ভেঙে গিয়েছিলো পূর্ববাংলার হতদরিদ্র মানুষদের উঠোনে, যে খোয়াব দ্বারা তাড়িত হয়েই বায়ান্নোয় ‘বাঙালি মুসলমানের [মানসিকভাবে] স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ ঘটেছিলো ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে।


মানুষের মানচিত্রের এই স্বপ্নই আসলে স্বাধীনতার স্থপতি। এই স্বপ্নই পাকিস্তানের লুটেরা সাম্প্রদায়িক সামরিক-আমলাতান্ত্রিক শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে লড়েছে, কখনো রবীন্দ্রসঙ্গীত ও বাঙলা বর্ণমালা রক্ষার দাবীতে, কখনো রক্তচক্ষু সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসনের ও ন্যুনতম গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবীতে। এবং এই স্বপ্নই অনিবার্য করেছিলো বাংলাদেশের জন্ম।




মুক্তিযুদ্ধের ভদ্রলোকি ‘ইতিহাস’ যান্ত্রিকভাবে বলতে/লিখতে পছন্দ করেঃ “৩০ লক্ষ শহিদের রক্ত আর ২ লক্ষ ৮০ হাজার মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে।’’ এই বয়ানে কি কোনো ধরণের সমস্যা আছে? আছে।


প্রথম সমস্যা ‘মা-বোন’ শব্দটার ব্যবহার নিয়ে। রক্তের সম্পর্ক নেই এমন নারীকে আমি কখন মা বা বোন বলে ডাকতে চাইবো? যখন আমি তাঁকে আমার বাসনার এলাকার বাইরে রাখতে চাইবো, একজন পুরুষ হিসেবে, সচেতনভাবে। নইলে মা বা বোন ডাকার তো কোনো অর্থ হয় না! ব্যক্তিগত জীবনে রক্তের সম্পর্ক না থাকা মানুষকে মা বা বোন ডাকাটা মানবিক, কিন্তু, ১৯৭১-এর নিপীড়িত নারীদের জন্য এটা একটা অদ্ভূত ট্র্যাজেডি তৈরি করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা যখন বাংলাদেশের নারীদের ওপর সুপরিকল্পিতভাবে ধর্ষণসহ পৈশাচিক সব অত্যাচার চালিয়েছে, তারা নারীদের ‘কামসামগ্রী’ হিসেবে দ্যাখে বলেই তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে দিনের পর দিন মাসের পর মাস রেইপ ক্যাম্পগুলোতে পাগলা কুত্তার মতো বাংলাদেশের নারীদের ওপর নির্যাতন চালানো। আজকে যারা সেইসব নিপীড়িত নারীদের ‘মা-বোন’ ডাকছেন, তারাও কিন্তু একজন নিপীড়িত নারী যে তার “লৈঙ্গিক পরিচয় সত্ত্বায় ধারণ করেই একজন মানুষ’’- এভাবে চিন্তা করতে পারছেন না, পাকিস্তান আর্মি তাঁদের ওপর পিশাচের মতো অত্যাচার করেছে বলেই যে তাঁদের মানবিক পরিচয় খারিজ হয়ে যায় না, এই সেন্সটুকু কারো মধ্যে কাজ করছে না।


ফলে মুক্তিযুদ্ধের পরে তাঁদের বেশ্যাবৃত্তি বা আত্মহননে বাধ্য করতে যাঁদের বিবেকে বাঁধেনি, বেয়াল্লিশ বছর পরে যান্ত্রিক আবেগহীন গলায় ‘মা-বোন’ ডাকতেও তাঁদের এতোটুকু লজ্জাও হয় না, নিপীড়িত মানুষগুলোর যন্ত্রণা-দীর্ঘশ্বাস-কান্না নিয়ে চলে নির্বাচনের রাজনীতি! ‘মা-বোন’ ডাকা যাবে না তা বলছি না। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ‘মা-বোন’ ডাকার মধ্যে যে ব্যাটাগিরির ধূর্ততার রাজনীতি কাজ করে সেটা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার কথা বলছি।


দ্বিতীয় সমস্যা ‘ইজ্জতের বিনিময়’ শব্দবন্ধের ব্যবহার নিয়ে, অর্জন লড়াইয়ের সাথে সম্পর্কিত, বিনিময় ব্যবসার সাথে। আমরা কি ১৯৭১ এ পাকিস্তানের সাথে কোনো বিজনেস ডিল করেছিলাম স্বাধীনতা নিয়ে, নাকি, লড়াই সংগ্রাম করার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম? রাজাকার আলবদর আলশামসরা ‘বিনিময়’ শব্দটা ব্যবহার করতে পারে, তারা টাকাপয়সার বিনিময়ে আমাদের দেশের নারী পুরুষ শিশুর নিধনযজ্ঞে ও রিফিউজি বানানোয় ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় দোসর এবং পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, তারা লক্ষ লক্ষ নারীকে রেইপ ক্যাম্পের নৃশংস হিংস্রতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু আমরা তো বাংলার স্বাধীনতা অর্জন করেছি! যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা, যাঁরা রেইপ ক্যাম্পে পাগলা কুকুরদের পৈশাচিক হিংস্রতার বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার মাধ্যমে যুদ্ধ করেছেন তাঁরাও মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা বলে কাউকে সেকেন্ড ক্লাস মুক্তিযোদ্ধা বা ঘৃণা-করুণা-অবহেলার পাত্রী বানানোর কোনো অধিকার আমাদের নেই। বিনিময়ের মতো একটা রাজাকারি শব্দ আমরা ব্যবহার করবো কেনো? এর কারণ কি এই যে মুখে যাই বলি না কেনো ভেতরে ভেতরে রাজাকারদের সাথে আমাদের অনেক ‘মূল্যবোধগত’ মিল আছে?


দুটো সমস্যার শেকড়ই লুকিয়ে আছে পুরুষতন্ত্রের মধ্যে। হ্যাঁ, ‘পুরুষতন্ত্র’ হচ্ছে সেই মতাদর্শ যার ওপর দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভদ্রলোকি ‘ইতিহাস’ গোপনে লালন করে এমন সব মূল্যবোধ যেসবের বিরুদ্ধে লড়াই করেই আমরা ‘স্বাধীন’ হয়েছি, কাগজেকলমে। সত্য সাধারণত তেতো, এই কথা পড়ে অনেকেই উত্তেজিত হতে পারেন, কিন্তু সত্য যতো তেতোই হোক সত্য সত্যই।


আর তাই ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটা শুনলে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার কথা মাথায় আসে। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা বা রেইপ ক্যাম্পে পাগলা কুকুরদের পৈশাচিক হিংস্রতার বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার মাধ্যমে যুদ্ধ করা নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মাথায় আসে না। মুক্তিযুদ্ধ, অন্তত এখন পর্যন্ত, ভদ্রলোকি ‘ইতিহাসে’ পুরুষদের যুদ্ধ।


কিন্তু মানুষের মানচিত্রের জন্য স্বপ্নের ইতিহাসের যে-লড়াই, তা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভদ্রলোকি ‘সেলিব্রেশনে’ সীমাবদ্ধ নয়, তা নিরন্তরভাবে প্রবাহিত হয় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলায়, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের লুটপাটের বিরুদ্ধে বিপন্ন মানুষের লড়াইয়ে, সেখানে নারীপুরুষের বৈচিত্র্য থাকলেও বিভেদ নাই, স্বার্থের সংহতি আছে, আর এই স্বপ্নই বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে আজো।




মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় নি, এখনো, মুক্তিযুদ্ধ চলছে। মুক্তিযুদ্ধের একটা অসমাপ্ত লড়াই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। যুদ্ধের পরে সেই প্রক্রিয়াটা শুরু করা হয়েছিলো, খুব দায়সারা ভাবে, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের’ চাপের কাছে নতি স্বীকার করে পাকিস্তানি সামরিক মূল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করেই পাকিস্তানে পাঠানো থেকে শুরু করে ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণার দিন শর্ষিণার পীর আবু সালেহ (এই পীরসায়েব ১৯৭১ সালে ফতোয়া প্রদান করেছিলেন, নারীদের গণিমতের মাল হিসেবে ধর্ষণ করা জায়েজ, এরশাদ আমলে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছেন) ও শাহ আজিজের (এই শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীকে জিয়া আমলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়) মতো প্রথম সারির যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে বের হয়ে আসা ইত্যাদি থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে মুজিব আমলে নেওয়া উদ্যোগে সদিচ্ছার অভাব ছিলো। তারপর মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর একের পর এক সামরিক শাসকেরা এসে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করেন। জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসরগিরি করেছে, অথচ স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো সরকারই জামাতকে নিষিদ্ধ করেনি গণহত্যা ও ধর্ষণে এর একাত্তরকালীন ভূমিকার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি ব্যান করার কারণে জামাত নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এই কারণেই মুজিব সপরিবারে খুন হওয়ার পর, সামরিক শাসকদের জন্য এতো সহজে সম্ভব হয়েছিলো, জামাতকে বাংলার মাটিতে ‘রাজনীতি’ করার অধিকার দেওয়া। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা এরা সবাই কখনো না কখনো গোপনে বা প্রকাশ্যে জামায়াতে ইসলামীর সাথে হাত মিলিয়েছে ‘ভোটের রাজনীতির’ হিসাবনিকাশে।


শহিদ জননী জাহানারা ইমাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্দোলন শুরু না করলে, কে বলতে পারে, আজ হয়তো জামাত খুনী নিজামীদের মুক্তিযোদ্ধা দাবী করতো! শহিদ জননী এবং একাত্তর ঘাতক ও দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের ফলে যে প্রবল গণআদালত তৈরি হয়েছিলো এইসব জানোয়ারদের বিচারের জন্য, ২০১৩ সালের শাহবাগ সেই মহান আন্দোলনেরই উত্তরাধিকার বহন করে, এবং যেই আওয়ামী লীগ শহিদ জননীর আন্দোলনে পেছন থেকে ছুড়ি মেরেছিলো সেই দলই আজ শাহবাগ আন্দোলনকে নিজেদের নির্বাচনী ভোটব্যাংক তৈরির উদ্দেশ্যে ছিনতাই করেছে। আর বিএনপি একাত্তরের গণহত্যাকে অস্বীকার করার খায়েশে যেখানে সেখানে গণহত্যা দেখে বেড়াচ্ছে, ইসলাম হেফাজতের নামে জামায়াতে ইসলামীকে হেফাজত করছে, মার্কিন-ভারত-রাশিয়ান স্বার্থে টিকফা চুক্তি-রামপাল প্রকল্প-রূপপুর প্রকল্পের মতো বাংলাদেশধবংসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা না করে আমাদের এই ‘বিরোধী দল’ দেশের মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে ‘আন্দোলন’ করছে।


রামু থেকে সাঁথিয়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারে, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জাতিসমূহের মানুষদের ওপর অত্যাচারে, এরা সবাই মিলে মিশে এক হয়ে যায়। কে সরকারি কে বিরোধী বোঝা যায় না। স্বাধীনতার স্বপক্ষ বিপক্ষ প্রতিপক্ষ তখন পরস্পরের দোসর।


রাজাকার মানে স্বেচ্ছাসেবক, অর্থাৎ স্বেচ্ছায় যারা বিদেশি দখলদারদের সেবা করে, পদলেহী কুকুরের মতো। এই অর্থে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা, জামাত সবাই রাজাকার দল। কারণ, দেশের সম্পদ মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেটদের কাছে পানির চেয়েও শস্তা দরে বেচার ক্ষেত্রে এদের মধ্যে ফিরাক নাই। মার্কিন ভারতের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, বানিজ্য খাত ধবংস করে ফেলতে এদের মধ্যে ফিরাক নাই। বিদেশী দূতাবাসগুলোয় দৌড়াদৌড়িতে এদের মধ্যে ফিরাক নাই। শুধু জামায়াতে ইসলামীরেই আমি রাজাকার ভাবি না। এদের সবাই রাজাকার।


এবং এরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। কৃষকদের হত্যা করে। মধ্যবিত্তের যে-অংশটা এখনো ‘জাতে’ উঠতে পারে নি, তাদেরকে হত্যা করে। আজকে মুক্তিযুদ্ধের বেয়াল্লিশ বছর পরও নারী নিপীড়নকারী দাঁতাল শুয়োরদের অভয়ারণ্যই রয়ে গেছে এই দেশ, আর তার জন্য, সমাজের পুরুষতান্ত্রিক ভিত্তির পাশাপাশি এই দলগুলোও দায়ী। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেহায়া লোকটা ইসলামকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ করেছে, পাকিস্তান থেকে ‘উত্তরাধিকার-সূত্রে’ এসেছে অর্পিত সম্পত্তি আইন, এবং এইসব সাম্প্রদায়িকতার ‘ঐতিহ্য’ বজায় রেখেছে দলগুলো। তরুণ প্রজন্মই সারা দুনিয়ায় পরিবর্তনের নিশান ওড়ায়, তাই, আমাদের দেশে তরুণ প্রজন্মকে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখা হয়েছে হাজারো রকমের রঙিন নেশায়। সমাজ জাহান্নামে যাক, তুমি ‘ইন্ডিভিজুয়ালিস্ট’ হও, আহাম্মকের মতো নিজের লাইফ ‘এনজয়’ করে বেড়াও।


বিপ্লবী রাজনৈতিক দলগুলো তারুণ্যের ধারক ছিলো এইদেশে। এখনো তারা আছে। জনগণের পাশেই আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে বিভাজনের কোনো সীমা নাই। এই বিভাজনের একটা বড়ো কারণঃ ‘আন্তঃমতাদর্শিক বিতর্ক।’ তো ‘আন্তঃমতাদর্শিক বিতর্কের’ নামে বিপ্লবীরা স্নবারি-চর্চা চালিয়ে যেতে পারে, তাতে জনগণের ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না, কারণ এখন পর্যন্ত জনগণের পাশে এঁরাই আছে। হাজার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, যে স্বপ্ন নিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নে এখনো এঁরাই সম্মুখসারির লড়াকু।


মানুষের মানচিত্রের স্বপ্নের জন্য ইতিহাসের যে-লড়াই মুক্তিযুদ্ধ, তা কারো জন্যই অপেক্ষায় থাকে না কখনো, কারো জন্যই না। ইতিহাস তার নিজের ধারায় ঠিকই চলতে থাকবে, ভদ্রলোকি ‘ইতিহাসের’ নিগড়ে সে আটকে থাকবে না, মুক্তিযুদ্ধ ভদ্রলোকি চর্চার ওপর নির্ভর করেনি কোনোদিন। আমি মনে করি, আমাদের আদি মুক্তিযুদ্ধ যে স্বপ্ন নিয়ে হয়েছিলো সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন এই বাংলায় অবশ্যই হবে, তবে তার জন্য স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রেখে আমাদেরকে সংগঠিত হতে হবে ও মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে সকল প্রকার শোষণ-নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে।

১৪ই ডিসেম্বর ২০১৩


দ্রষ্টব্যঃ

১. আহমেদ, হুমায়ূন. (২০০৪) জোছনা ও জননীর গল্প, ঢাকাঃ অন্যপ্রকাশ

২. আরিফ, রইসউদ্দিন. (২০১০) বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস, ঢাকাঃ পাঠক সমাবেশ

৩. ইলিয়াস, আখতারুজ্জামান. (২০১১ : ১৯৯৬) খোয়াবনামা, ঢাকাঃ মাওলা ব্রাদার্স

৪. ফেরদৌস, হাসান. (২০০৯) ১৯৭১ বন্ধুর মুখ শত্রুর ছায়া, ঢাকাঃ প্রথমা

৫. শরীফ, ড. আহমদ. নূর-উজ্জামান, কাজী. কবির, শাহরিয়ার. (১৯৯২ : ১৯৮৭) একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়, ঢাকাঃ মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র (ই-বুকঃ Click This Link)

৬. শুভ, সুব্রত অধিকারী (২০১৩) ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ সর্ম্পকে দৈনিক সংগ্রাম-এর ভূমিকা। ব্লগ পোস্ট http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=34249 Accessed on December 14, 2013

৭. হাসান, ড. এম এ. (২০০২) যুদ্ধ ও নারীঃ একাত্তরে বাংলাদেশে সংঘটিত নারী নির্যাতন ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের সংকট বিষয় প্রামাণ্য দলিল, ঢাকাঃ তাম্রলিপি

[পত্র-পত্রিকাঃ দৈনিক সংগ্রাম, মার্চ-ডিসেম্বর ১৯৭১ এবং “শাহ আজিজ ও শর্ষিণার পীরের মুক্তিলাভ “ দৈনিক বাংলা, ১ ডিসেম্বর ১৯৭৩]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×