somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম এইড, আরিফ জেবতিকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আর আমার সামান্য সংযুক্তি

১৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই আরিফ জেবতিকে ধন্যবাদ, প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতার Click This Link মাধ্যমে একটা ধর্মের নামে প্রতারনার একটা চিত্র প্রকাশ করার জন্যে। জামাত-শিবির (মুলত মৌদুদীবাদীরা) যে ধর্মের নামে কতটা নীচে নামতে পারে তার একটা দলিল হয়ে থাকবে এই অভিজ্ঞতার বিবরনটি। ধন্যবাদ, আরিফ জেবতিক।

এই সুযোগে আমার একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতার কথা বলি।

সিডরের পরপর কর্মক্ষেত্রে বাঙালীরা অর্থ সাহায্যের বিষয়ে আলোচনা শুরু করলো। সবাই মিলে আমাকে দায়িত্ব দিলো কোথায় সেই অর্থ পাঠানো যায় - তা নির্ধারন করতে হবে। সব কিছু বিবেচনা করে রেডক্রিসেন্টে কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু একজন মুসলিম এইড নামের একটা সংস্থার বিষয়ে বেশ জোরালো বক্তব্য রাখায় আমার প্রস্তাব নিয়ে একটু দ্বিধার সুস্টি হয়।

কোন ধর্মীয় সাইনবোর্ডের নীচে কোন প্রতিষ্টানের বিষয়ে আমার একটু খুত খুতে ভাব আছে। এর কারন হলো এদের জবাবদীহিতা কম। এরা যেহেতু ধর্মীয় অনুভুতিকে ব্যবহার করে তাই এদের হিসাব নিকাশ নিয়ে কেউ তেমন একটা উচ্চবাচ্য করে না। আমি শুধু মুসলিমের কথাই বলছি না - অন্য ধর্মীয় চ্যারিটি গুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের অসংল্পনতা দেখেছি। যেমন ক্রিস্টিয়ান প্রতিষ্টানগুলো যেভাবে এইডস এর কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করে প্রাইভেট জেটে আফ্রিকায় বিলাস বহুল ট্যুর করে তা সত্যই অবাক করার মতো।

যাই হোক - আগে কথায় আসি। কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে বেশ বড় অংকের ডলার উঠে ছিলো । কিন্তু গিন্নি একটা সমস্যা তৈরী করলো। ও এনটিভির বিজ্ঞাপনে দেখেছে মুসলিম এইডএর কিভাবে ওরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে সাহায্য করছে - যা সত্য।ই প্রসংশা পাওয়ার মতো । ওর কথা হলো মুসলিম এইড ভাল হতে পারে - একটু যাচাই করা যাক। আমি ইন্টারনেটে দেখলাম বিরাট ব্যপার স্যাপর। কিন্তু মন থেকে পুরোপুরি সায় দিচ্ছিলোনা - কারন বিজ্ঞাপন তো আর খবর না আর বিজ্ঞাপন বানানো হয় প্রফেশনাল দিয়ে - ভাল হতেই হবে। আমার দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখে গিন্নিও বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে - কারন ওর একটা অংশ ছিলো সেই সংগৃহিত অর্থের মধ্যে। এক পর্যায়ে গিন্নিকে বললাম - দেখো হয়তো কোন রাজাকার এই সংস্থা চালাচ্ছে। গিন্নি এতে বেশ বিরক্ত হয়ে বললো - মুসলিম নাম দতেখেই তোমার রাজাকার মনে হচ্ছে। তবে সত্য বলতে কি, কথাটা খুব একটা ভেবে বলিনি। কিন্তু আমার একটা বিশ্বাস - জামাতি/রাজাকারগোষ্ঠী পিছনে না থাকলে এতো সুন্দর ফটো তুলে এনে টিভিতে দেখিয়ে টাকা উঠাতো না। ধর্মপ্রান মুসলমানরা গোপনেই দানের বিষয়টা সারতে চায় - আর তাদের ভাষাটাও হয় সহজ সরল। কিন্তু এরা পুরোপুরি পশ্চিমা প্রফেশনালিজমের সাথে ধর্মকে মিশিয়ে একটা করুন রসের আবেশে মুসলমানদের ওয়ালেটের দিকে লক্ষ্য নির্ধারন করেছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রায় এক সপ্তাহ চলে গেল। আমি কিছুটা দ্বন্দ্বের মধ্যে - রেডক্রসে না কি প্রধান উপদেষ্টার ত্রান তহবিলে ডলারগুলো পাঠাবো। মুসলিম এইডে পাঠাবো না - মোটামুটি স্থির করে ফেলেছি - কিন্তু তার জন্যে ভাল একটা যুক্তির দরকার।

সেই যুক্তিটা এনে দিলো মুসলিম এইডের এটিভিতে প্রচারতি তিন ঘন্টার সরাসরি প্রচারিত ফান্ডরাইজিং ক্যাম্পেইন অনুষ্টানটি। তিনদিন বিজ্ঞাপনী প্রচারনার পর যেদিন ফান্ডরাইজিং অনুষ্টান শুরু হলো - আমি তখন কাজে। গিন্নি বেশ আগ্রহ নিয়ে অনুষ্ঠান দেখছে - হঠাৎ আমার কাজের ফোন বেজে উঠলো। গিন্নি উত্তেজিত কন্ঠে বলেছে -

"তুমি কিভাবে জানতে যে মুসলিম এইডে রাজাকার আছে?"

আমি বললাম - "আমার মনে হয়েছে।"

- তুমি ঠিক। এই মাত্র একটা ঞটনা হয়ে গেল। যখন ফান্ডরাইজিং এর অনুস্ঠান সরাসরি দেখাচ্ছে - উপস্থাপকের পাশ এবসে ছিলো এক ব্যক্তি - একটা টেলিফোনে ওয়াশিংটন থেকে একজন ভদ্র মহিলা উপস্থাপকের সাথে বেশ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেছে। ভদ্রমহিলা পাশে বসা লোকটিকে একটা আল-বদর হিসাবে চিহ্নিত করে তার পিতার হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত লোকটির সাথে মুসলিম এইডের সম্পর্ক জানতে চেয়েছে। কিন্তু উপস্থাপক সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফোন বন্ধ করে বলছে - আপনারা সিডর বিষয়ে কথা বলুন। এদিকে ক্যামেরা যখন সরিয়েছে - পাশে বসা আল-বদরটা সেখান থেকে সরে গেছে আর তাকে টিভির পর্দায় দেখা যায়নি। এই ঘটনা পর টরন্টো ও অন্যান্য শহর থেকে টেলিফোনে প্রশ্নকারীরা মুসলিম এইড, জামাত আর পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক বিষয়ে প্রচুর প্রশ্ন করলে উপস্থাপক বিরক্ত হয়ে যায় আর বিষয়ের বাইরে প্রশ্ন না করতে বলছে।

ঘটনার পর পুরো অনুষ্ঠানে ছন্দপত হয়- ফলে ফান্ডরেইজিং তেমন হয় নি।


এর পর গিন্নীর পক্ষ থেকে মুসলিম এইডএ বিষয়ে আর সমর্থন থাকেনি। মুসলিম এইডের ফান্ডরেইডিং ক্যাম্পনেইনের অনুষ্ঠানের নামে আল-বদরকে উপস্থাপনে গিন্নী মর্মাহত। তবে আমি তেমন একটা অবাক হয়নি। কারন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দেখেছি - যদিও জামাতিরা মিলাদকে বেদাত হিসাবে বিবেচনা করে - তারপরও জামাতি নেতারা মিলাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করার চেষ্টা করেছে - যা ঠেকাতে যথেষ্ঠ ঝামেলা করতে হয়েছিলো। যেনতেন ভাবে ধর্মীয় লেবাসে রাজাকার- আলবদরদের পুর্নাবসন ও রক্ষা করাই জামাত নামক প্রতিষ্ঠানটির মুল কর্মসূচী - এই বিষয়টা জেনে দীর্ঘকাল আগেই।

মুসলিম এইডের নামে ধর্মের আড়ালে ধর্মপ্রান প্রবাসীদের অর্থ দিয়ে উপমহাদেশে মৌদুদীবাদের প্রচার ও প্রসার ঘটনানোর চেষ্টার বিষয়টা বোধ হয় আর আড়াল করা গেল না। আশা করি প্রবাসীরা সাইনবোর্ডে ধর্ম দেখে আর বিভ্রান্ত হবেন না।
২০টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×