বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্টিত থাকা দুই মহান মানবীকে নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করে একটা সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব পেশ করছি।
বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে আধা খেচড়া গনতন্ত্র আর সামরিক শাসনের দীর্ঘ পথ পাড়িয়ে দিয়ে যখন ৯০ দশকে গনতন্ত্র এলো - তার সাথে উপযাত হিসাবে জাতি পেলো দুই নেত্রী। গনতন্ত্রের জন্যে ৯ বছরের দীর্ঘ আন্দোলনে উনাদের অবদানের কথা জাতি সব সময় স্মরন করে - আরও স্মরণ করবে উনাদের মহামানবী হয়ে উঠার ইতিহাস।
দুই দলের নেত্রীর পদে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তো নিয়ে বসে থাকা এই দুইজন যে শুধু মাত্র দলের মধ্যে গনতন্ত্রের চর্চা বন্ধ করে রেখেছে তা না - উনারা পরষ্পর বিরোধী ইগোর সমস্যার কারনে দেশের গনতন্ত্র চর্চাকে বন্ধ করে রেখেছে। ফলে নিজেদেরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটা আগাছার জঙ্গল - যেখানে জনগন কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত অনেক রাজনীতিকও জ্ঞানবান হিসাবে সমাদৃত হচ্ছে - যারা জাতিকে সব সময় একটা বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়াচ্ছে।
এই পরষ্পর বিরোধী দুই মহান নেত্রী একদিনের জন্যে নিজেদেরকে ক্ষমতার বাইরে দেখতে নারাজ। জনগনে ভোটে পরাজিত হবার পর উনারা নানা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দিয়ে সরকারকে ব্যর্থ বলেন - কিন্তু নিজেরা বিরোধী দল হিসাবে কোন ভুমিকা না রেখে মানুষ জনকে রাস্তায় নামিয়ে আন্দোলন করে। ফলে দেশের লুটেরা শ্রেনী - বিশেষ করে প্রবল দূর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্র সব সময় ধরা ছোয়ার্ বাইরে থাকে - দেশের উন্নয়নের বিরাট অংশ লুটে পুটে বিদেশে পাচার করে আমলারা রিটায়ার করে হয় রাজনীতি করে - না হয় বিদেশে ছেলেমেয়ের সাথে আনন্দে দিন কাটায়।
এই দুই নেত্রী বাংলাদেশের বর্তমান সমাজে এতো উচু আসনে বসে আছেন যে উনাদের কর্তব্য কর্মের বিষয়ে জ্ঞানদানের মতো বেয়াদপি করার মতো মানুষ এখন আর নাই। একসময় শেখ মুজিবের মতো নেতাকেও মাওলানা ভাসানী পরামর্শ দিতে - এখন উনাদের মতের বাইরে কথা বলা মানে স্বর্গ থেকে পতন।
তাইলে বিরোধী দলে অবস্থান রত নেত্রীদের কিভাবে মনোঃকষ্ট কমানো যায়?
(২)
এই বিষয়ে প্রস্তাবটি দেবার আগে একটা ঘটনা বলা লোভ সামলাতে পারছি না। ঢাকা ওয়াসার সিস্টেম লস ৭০%। অর্থাৎ ১০০ টাকার পানি সরবরাহ করে আয় হয় ৩০ টাকা - ৭০ টাকা লস। যদিও সিস্টেম লস একটা ট্যাকনিক্যাল টার্ম - আসলে ওয়াসা একদল লোক অত্যন্ত সংঘবদ্ধ হয়ে এই ৭০ টাকা ভাগাভাগি করে পানি ব্যবহারকারী এবং নিজেদের মধ্যে। ১৯৯০ সালের হিসাবে এই চুরি যাওয়া অর্থের পরিমান ১২০০ কোটি টাকা। এখন নিশ্চয় তা ৫০০০ কোটি টাকায় গিয়ে উঠেছে। কিন্তু জেনে শুনেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এই চুরির সাথে সরাসরি জড়িত মিটার রিডাররা। কিন্তু ঢাকা ওয়াসায় মিটার রিডার নামে কোন পদ নাই - কিন্তু এক সময় ছিলো। ওরা এতো বেশী অর্থ আর ক্ষমতার মালিক যে - ওদের কোন কাজ করতে হয় না। শুধু মাত্র ইউনিয়ন করে দিন কাটায়।
মিটার রিডাররা সংখ্যায় ছিলো ৩০০। এরশাদের শাসনামলে এরা বিপুল অর্থের মালিক হয়ে ঢাকায় ব্যবসা আর বাড়ী গাড়ী করে রীতিমতো প্রতিষ্টিত। মিটার রিডার পরিচয় তাদের জন্যে অত্যন্ত বেমানান হয়ে উঠলে এরা তৎকালীন মন্ত্রী নাজিউর রহমানের দ্বারস্থ হয়। নাজিউর রহমান ( বর্তমা এমপি আন্দালিব রহমান পার্থের বাবা) এতো বড় চোর ছিলো যা বাগদাদের চোরকেও লজ্জিত করবে। উনার সাথে বিরাট অর্থের ডিল হয়( যার পরিমান শুনা গিয়েছিলো ২ কোটি টাকা) - আর উনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী হিসাবে একটা আদেশ দিয়ে "মিটার রিডার"দের "রেভিনিউ ইনিসপেক্টর" বানিয়ে দেয়। ফলে যোগ্যতার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষমতাশালী এবং সুবিধাভোগী মিটার রিডাররা সামাজিক ভাবে নিজেদের অনেক উচুতে উঠেছে বলে। আনন্দিত হয়।
(৩)
আমাদের দুই নেত্রীও নিজেদের যোগ্যতা আর জ্ঞানের চেয়ে অনেক উঁচু পদে বসে থাকায় - নিজেদের নীচে নামাতে (বিরোধীদলের নেতা) অপমানিত বোধ করেন। এখন উনাদের দুইজনের জন্যে সংবিধান সংশোধন করে একটা নতুন আইন করা যেতে পারে। যেখানে বিরোধী দলকে সরকারী দল (২) হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। আর বিরোধী দলীয় নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী - ২। হিসাবে নামাঙ্কিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ১ সরকার চালাবেন - কিন্তু প্রধানমন্ত্রী -২ শুধু বাড়ীতে বসে বসে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। আর এখনও যেমন বিরোধী দলের এমপিরা সংসদে না গিয়ে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন - তা অব্যহত থাকবে। তাদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। ৯০ দিনের বাধ্যবাধকতা উঠি উনাদের ৫ বছরের জন্যে সংসদে উপস্থিতির থেকে মুক্তি দিতে হবে।
আশা করি - এতে দুই নেত্রীই খুশী হবেন আর তাদের সহচরগনও নিজেদের সরকারের অংশ হিসাবে লুটপাট সহ সকল কাজে সমান অংশিধারিত্ব থাকায় চুপচাপ ৫ বছর কাটিয়ে দেবেন। ফলে আন্দোলন আন্দোলন খেলার নামে জনদুর্ভোগ আর জনসভার নামে মিথ্যাচার শুনা থেকে জনগনও বেঁচে যাবে। আর দুই দলের অন্ধ সমর্থকদের উত্তেজনার কারনে রক্তচাপ জনিত সমস্যাও থাকবে না।