somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলমান সভ্যতার সংঘাতে নাস্তিকতার অবস্থান

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্যামুয়েল হান্টিংটনের "সভ্যতার সংঘাত" (Clash of Civilizations ) অথবা চলমান "ওয়ার অন টেরর" যে নামেই ডাকা হোন না কেন, পশ্চিমের এই যুদ্ধের মুল টার্গেট কিন্তু মুসলমানরা না - এর মুল টার্গেট হলো ইসলামের কোর ভ্যালুজগুলো। সুদ নির্ভর অর্থনীতিতে সুদের নীচে চাপা পড়া ভোগবাদী অর্থনীতির বিপরীতে সুদমুক্ত একটা ন্যায় ভিত্তিক অর্থনীতির ব্যবস্থা অথবা প্রবল ভোগে ভেসে যাওয়া সামাজিক মূল্যবোধের প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলা পশ্চিমা অহংকারী জাতিগোষ্ঠীর কাছে ইসলামের মূল্যবোধগুলো প্রবল ভাবে হুমকীর সৃষ্টি করেছে। ফলে দেখি নারীবাদী এবং নারী ব্যবসায়ীদের বিপুল প্রচার প্রপাগান্ডার পরও পশ্চিমে যারা ইসলামকে জীবনের দর্শন হিসাবে গ্রহন করছে তাদের মধ্যে নারীরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ।

এই চলমান যুদ্ধের মধ্যে একটা বানিজ্য চলছে - বরাবরই সকল যুদ্ধে যেমনটা হয় - যাকে ওয়ার ইন্ডাষ্ট্রি বলা হয় - চলমান যুদ্ধে এর নাম ইসলামোফোবিয়া ইন্ডাষ্ট্রী। এই ইন্ড্রাষ্ট্রি মুল পন্য বলাই বাহুল্য মারনাস্ত্র - নতুন নতুন অস্ত্র বানিনে বাজারে আনার আগে দরকার রিয়েল লাইফ ডেমো - যা আমার দেখছি ওয়ার অন টেররের নামে ব্যবহূত হচ্ছে ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের সীমান্ত আর ইয়ামেনর নানান ফ্রন্টে। অন্য আরো কিছু পণ্য আছে এই ইসলামোফোবিক ইন্ড্রাষ্টিতে - তার মধ্যে আছে মুভি - বই পত্র - গান - নাটক - আর কার্টুন। সবই হলো বানিজ্যের জন্যে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যারা এই মুভি বানায় - কার্টুন আঁকে - তারা কারন ছাড়া করে? না, অবশ্যই এর পেছনে তাদের একটা এজেন্ডা থাকে। যেমন ডেনিশ কার্টুনের কথাই ধরি - ডেনমার্কে মুসলিম পপুলেশ বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার ডেমোগ্রাফী বদলে যাচ্ছে - কিন্তু অর্থনীতিকে চালু রাখার স্বার্থে ইমিগ্রেশন বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য তত্ত্ব ( নিউটনের থার্ড ল) অনুসারে সেখানে একটা উগ্র ইসলমোফোবিক গ্রুপের জন্ম নিয়েছে - যারা কার্টুন এঁকে - অথবা বেইভেকে মতো মানুষ হত্যা করে নিজেদের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছে। ঠিক তেমনি মিশরে ঘটে যাওয়া ক্ষমতার পালাবদলকে অনেকেই মেনে নিতে পারেনি - তাই সেখানে কপটিক খৃষ্টান এবং মুসলমানদের মাঝে একটা ফাঁটল তৈরীর চেষ্টা করার জন্যেই বর্তমান আলোচিত মুভিটি তৈরী করা হয়েছে এবং যতক্ষন না তা নিয়ে যথেষ্ঠ পরিমানে প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে ততক্ষন তাকে নানান ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই মুভিটি গত জুলাই মাসেই স্থানীয় একটা থিয়েটারে মুক্তি দিলেও দর্শক পায়নি। তারপর তাকে ইউটিউবে দেওয়ার পরও তেমন সাড়া না পেয়ে অবশেষে আরবী ভাষায় ডাবিং করে ইজিপ্টের একটা চ্যানেলে দেখিয়ে সেখানে টকশো করে জনগনকে জানানো হয়েছে।

তাই বলছিলাম - যা হচ্ছে তা অকারনে হচ্ছে না। কেউ ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো শুধুমাত্র ফ্রীডম অব স্পীচ চর্চার জন্যে এই কাজগুলো করছে না। এইগুলো হলো বৃহত্তর সংঘাতের অংশ মাত্র।

যারা এইটুকু ঘটনায় বিচলিত হয়ে যাচ্ছেন - ভাবছেন এর একটা বিহিত করা এখনই দরকার - তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই - মুল সভ্যতার সংঘাত এখনও শুরু হয়নি। চীন এবং ভারত এখনও পুরোপুরি ভোগবাদী হয়ে উঠেনি বলে এখনও ইসলামের বিরুদ্ধে পুরোপুরি নামেনি। একসময় ভারতের ব্রাহ্ম্যন্যবাদের উপর ভর করে গড়ে উঠা পুঁজিবাদ আর চীনের বিকৃত কমিউনিজিম - সবই এই সংঘাতে যোগ দেবে। সেইটা হবে প্রচন্ড দুর্ভোগের সময়। অবশ্যই সেই যুদ্ধে জয়ী হবে ইসলামই - কারন ইসলামের মুলে আছে প্রবল মানবিক শক্তি - যা সাধারন মানুষকে খুবই শক্তিশালী করতে পারে।

(২)

এখন দেখা যাক চলমান এই সংঘাতে নাস্তিক নামধারী একদল লোকের ভুমিকা সম্পর্কে। তার আগে বুঝার চেষ্টা করি নাস্তিক কারা। প্রকৃত অর্থে নাস্তিকদের একটা সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা কঠিন - কারন নানান কিসিমের এজেন্ডা নিয়ে লোকজন নাস্ত্যিকবাদের চর্চা করে। কেউ শুধুমাত্র ভিন্ন বিশ্বাসের মানুষকে বিয়ে করার জন্যে নাস্তিক হয় - কেউবা শুধুমাত্র মদ্যপানের জন্যেই নাস্তিক হয় - কেউবা ছোটবেলার কোন ঘটনার শিকার হয়ে ধর্মের পুরোহিতদের প্রতি ঘৃনার থেকে নাস্তিক্যবাদের চর্চা করে অথবা অসম্পূর্ন বিজ্ঞান চর্চা অথবা স্বল্প জানের গর্বের কারনে উদ্ভ্রান্ত হয়ে নাস্তিক্যচর্চায় ঝুকে পড়ে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে কি কারনে একজন মানুষ নাস্তিক হয় - তার উপরে নির্ভর করে নাস্ত্যিক্যবাদের সংজ্ঞা। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে নাস্তিকদের একটা স্বরূপ ধরতে পেরেছি। সেইটা এই রকমের - এরা প্রকৃতপক্ষে প্রবলভাবে বিভ্রান্ত এবং কম জেনে বেশি কথা বলার মধ্যে নিজেদের পান্ডিত্য জাহির করে।

এই প্রসংগে একটা ঘটনা বলা যেতে পারে - বাংলা ব্লগগুলোতে বিচরনকারী নাস্তিকদের মধ্যে উল্লেগযোগ্য একজনকে একদিন প্রশ্ন করলাম - আপনি কি নিম্চিত যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই?

উত্তরে উনি বললেন - না, নিম্চিত না।

তারপর বললাম - যে যে বিষয়ে আপনার নিম্চিত জ্ঞান নেই - সেই বিষয় নিয়ে আপনি সারাদিন রাত এতো কথা বলেন কেন?

ভদ্রলোক উত্তর দেননি। বলা যেতে পারে দিতে পারেননি। কারন মৌলিক কোন জ্ঞানের ভিত্তিতে নাস্তিক্যবাদের চর্চা হয় না - এরা একজনের কথা ধার করে এনে আরেকজনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। বাংলাভাষী নাস্তিকদের জ্ঞানে মুল সোর্স হলো ইন্টারনেটে ক্রীষ্টান মিশনারির ওয়েব সাইট - অথবা জায়নিষ্টদের ওয়েব ফোরাম। সেই কারনে দেখা যায় - এরা তাদের আলোচনা সমালোচনা নিয়ে একটা নির্দিষ্ট ধর্মের সমালোচনার মধ্যেই ঘুরপাক খেতে থাকে। এর বাইরে যাওয়ার মতো মেধা বা শিক্ষার অভাবই এর কারন।

নাস্তিকতার স্বরূপ বুঝার জন্যে একটা গল্প বলা যেতে পারে। ঠিক মনে নেই কার লেখা - হয়তো সৈয়দ মুজতবা আলী বা আবুল মনসুর আহমেদের হতে পারে। গল্পটা হলো - গ্রামের স্কুলে এক বয়োবৃদ্ধ শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজী পড়ায়। একসময় গ্রামের মানুষ ভাবলো এবারে একজন আধুনিক যুবক শিক্ষক এনে ছাত্রদের ভাল ইংরেজী শিক্ষা দেওয়া দরকার। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ শিক্ষক এতে কষ্ট পেলেন এবং গ্রামের মুরুব্বিদের বললেন একটা বহাসের আয়োজন করতে - সেখানে যে বিজয়ী হবে সে শিক্ষক হিসাবে থাকবে। নির্দিষ্ট দিনে বৃদ্ধ শিক্ষক প্রথম প্রশ্ন করলো যুবক শিক্ষককে - বাবা আমি একটা ইংরেজী বলবো তুমি তার বাংলা জোরে বলবে - "আই ডোন্ট নো" - যুবক শিক্ষক জোরে বললো - "আমি জানি না"। পাঠক, ধারনা করতে পারি সেই সমাবেশের অবস্থা কি হয়েছিলো।
বাংলাভাষী নাস্তিকদের লেখা আর আলোচনার মুলই হলো আমি জানি না। "আমি জানি না" এই কথা বলার জন্যে এতো পরিশ্রম করে তা দেখলে এই গল্পটাই মনে পড়ে বেশী।

যাই হোক - যা বলছিলাম - যুগে যুগে সভ্যতার দ্বন্দে নাস্তিকদের অবস্থান ছিলো মুলত শক্তিশালী পক্ষের প্যারাসাইট হিসাবে অবস্থান করেছে। একসময় কমিউনিজমের প্রবল সমর্থক হয়ে উঠেছিলো নাস্তিকরা। বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বারটা বাজিয়েছে মুলত নাস্তিকরা - সাধারন মানুষ নাস্তিকদের প্রতি প্রবল বিতৃষ্ঞার কারনে সমাজতন্ত্রের মুল ম্যাসেজটা এই নাস্তিক্যবাদের আড়ালে হারিয়ে গেছে। এখন নাস্তিকরা হয়ে উঠেছে আমেরিকার ওয়ার অন টেররের প্রক্সি। এরা যদিও আখেরে ছাগলের তৃতীয় শাবকের মতোই লম্ফজম্ফ দিয়েই সারা - তারপরও এদের উৎসাহের কমতি নেই। দিনরাত এরা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমের ভোগবাদী সমাজের পক্ষে - যদি এদের অনেকেই নিজেদের সাম্যবাদী বলে পরিচয় দেয়। প্রকৃতপক্ষে এরা না সাম্যবাদী - না এরা পুঁজিবাদী - এরা আসলে নৈরাশ্যবাদী। সব সময় নিরাশার অন্ধকার ছাড়া এরা কিছুই দেখে না বলে অন্যকে অসুখী দেখতে চায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:১৮
২৩টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×