ব্লগার ভাই ও বোনেরা,
ঈদের এই আনন্দের আবহের মাঝেও সচেতন ব্লগার ভাই ও বোনেরা কি লক্ষ করেন নাই, তোবা গার্মেন্টস-এর শ্রমিক ভাই বোনদের দুরঃবস্থা। ঈদের আগে তারা মজুরী বুঝে পান নাই, ৩ মাস যাবত বেতন বন্ধ। তারা কি খাচ্ছেন, বেচে আছেন কিভাবে, ভবিষ্যতে কি হবে? তারা অনশন ধর্মঘট করে চলেছেন, কিন্তু কারোরই যেন কিছু করার নাই। বিজিএমই-ওয়ালারা কোথায় কে জানে?
এই মূহুর্তে তাদের অনশনকারী শ্রমিক ভাই বোনদের প্রয়োজন মানবিক সাহায্য।
কিছু চাল-ডাল, আটা-তেল, সম্ভব হলে কিছু নগদ টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করে আমরা কি কিছুটা মানবিক দ্বায়িত্ত নিতে পারি না?
রানা প্লাজা দূর্ঘটনার সময় আমরাই তো ঝাপিয়ে পড়েছিলাম মানুষের বিপদে, এবারো কি আমরা পারি না এগিয়ে আসতে?
উদ্যোগী সংগঠকদের এখনি এগিয়ে আসার সময়।
বন্ধু কল্লোল মুস্তাফা-র ফেসবুক লিঙ্ক থেকে যারা ঊতসাহী তারা আরো কিছু তথ্য জানতে পারবেন।
https://www.facebook.com/kallol.mustafa
“আমি এই মর্মে প্রতিশ্রুতি প্রদান করিতেছি যে তোবা ফ্যাশন লি: এর সকল শ্রমিকদের এপ্রিল-২০১৪ ইং এর বেতন আগামী ২০/০৫/২০১৪ ইং তে লাঞ্চের পূর্বে পরিশোধ করিব এবং মে-২০১৪ ইং এর বেতন পরবর্তী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে প্রদান করিব”--মো: খালেকুজ্জামান, কারখানা ব্যবস্থাপক, তোবা ফ্যাশন লি:, ১৭/০৫/২০১৪।
এই রকম লিখিত অঙ্গীকার করে, মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়ে দিনের পর দিন শ্রমিকদের কাজ করানো হলো, কিন্তু মাস শেষে মজুরি দেয়া হলো না! শ্রমিকরাতো হুট করে অনশনে বসে নি। নিরুপায় হয়ে ঈদের আগের দিন থেকে আমরণ অনশনে বসার আগে মজুরির দাবীতে তারা বার বার রাস্তায় নেমেছে, কারখানার সামনে উত্তর বাড্ডার রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের মার খেয়েছে, রাবার বুলেটে আহত হয়ে বার বার হাসপাতালে গিয়েছে। বিজিএমইএ ঘেরাও করেছে, শ্রম মন্ত্রণালয়েও গিয়েছে। তখন কিন্তু তাদের ঠিকই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, কারখানার ব্যাবস্থাপকদের মতোই মৌখিক ও লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজিএমইএও শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়েছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মজুরী পরিশোধ করেনি।
[মালিক দেলওয়ার ছাড়া ২৬ কোটি টাকার বিশ্বকাপের জার্সি বানানোর কাজ করানো যায়, কিন্তু মজুরী দেয়া যায় না! মজুরি যদি নাই দিবি, তাহলে মজুরীর প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনের পর দিন শ্রমিকদেরকে মাগনা খাটালি কেন শুয়োরের বাচ্চারা? আগেই কারখানা বন্ধ করে রাখতি! শ্রমিকের মাগনা শ্রমে মুনাফা লুটতে খুব মজা না?]
সর্বশেষ গত ২৬ জুন ২০১৪ তারিখে শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ফয়েজ আহমেদ এবং অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে তোবাগ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার(মিতা) সহ কারখানার ব্যাবস্থাপক এবং খোদ বিজিএমইএর প্রতিনিধি আব্দুল আহাদ আনসারী লিখিত ভাবে শ্রমিক প্রতিনিধিদের কাছে অঙ্গীকার করে যে- মে মাসের মজুরী ৩ জুলাই এর মধ্যে, জুন মাসের মজুরি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এবং ঈদ বোনাস ও জুলাই মাসের ১৫ দিনের মজুরী ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রদান করা হবে।
আচ্ছা, উল্টো ঘটনা যদি ঘটতো- যদি শ্রমিকরা ৩ মাসের অ্যাডভান্স মজুরী নিয়ে কাজ না করতো, যদি শ্রমিক প্রতিনিধিরা শ্রম সচিবদের উপস্থিতিতে তাদের করা লিখিত অঙ্গীকার ভঙ্গ করতো- তাহলে কি ঘটতো? শ্রমিক প্রতিনিধিরা কি নিশ্চিন্তে ঘরে বসে ঈদ করতে পারতো? শ্রমিকরা অ্যাডভান্সের টাকা হজম করতে পারতো?
তাহলে লিখিত অঙ্গীকার করে শ্রমিকদের খাটিয়ে নিয়ে তারপর মজুরী না দেয়ার অপরাধে কারখানার মালিক- ব্যাবস্থাপক সহ বিজিএমইএ প্রতিনিধিদের ধরা হবে না কেন? কেন রাষ্ট্র দ্বায়িত্ব নিয়ে বিজিএমইএ ও মালিক প্রতিনিধিদেরকে বাধ্য করবে না তাদের লিখিত অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে?কেন শ্রমিকদেরকে ন্যায্য পাওনা আদায়ে অনশন করে মরতে হবে? কেন??