somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নরক - কল্প গল্প

১১ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রফেসর কাওসেইন প্রায় ১৮৭ বছর জীবিত ছিলেন। বলতে গেলে জীবনের শেষের শতাব্দীটা তার কেটেছে কেবল খালি বিদায় অভিনন্দন গ্রহন করতে করতে। আত্মহননকারীদের অনেকেরই একটা কমন প্রশ্ন ছিল, উনি কেন এখনও এ জীবনে থেকে গেছেন।
ব্যাপারটা যে, এ মহিয়সী নারীকেও ভাবায় নি কখনো; সেটা বলাটা অবশ্য ঠিক হবে না। তিনি ভেবে দেখেছেন, আসলে অমরত্ব লাভের প্রলোভনটা তাকে কখনো কাছে টানেনি। মাঝে মাঝে তার মনে হয়, মানব সভ্যতার সর্বকালীন, সর্বোচ্চ সত্য উম্মোচন, তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল কেবল মাত্র এই একটাই কারণে যে, তিনি কখনো কোন কামনা বাসনা বা রিপু তাড়িত ছিলেন না। এই জন্যই হয়তো চিরন্তন সত্যটা জানার পর তিনি খুব ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে, দীর্ঘ সময় নিয়ে তা সবার সামনে তুলে ধরেছেন, সেই সাথে, হাতে কলমে অকাট্য প্রমাণও।
৩৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে, মহান শী'আর এর অন্তর্ধানের ঠিক হাজার বছর পরে; মানব জাতির সামনে উম্মোচিত হলো চিরন্তন সত্যের দ্বার-
'পর জীবন অনন্ত'।
এটা ঠিক যে, শুধু যে শী'আর ই যে মানুষকে, পরকালের অনন্ত জীবনের কথা বলে গেছেন তা নয়; তার আগেকার সব ধর্মেই অর্থাৎ জিউনিজম, খ্রিস্চিয়ান, ইসলাম ও অনান্য ধর্মেও বার বার বলা হয়েছে পরকালের কথা। প্রফেসর কাওসেইন সেই পরকালের অস্তিত্ব কেবল প্রমাণই করলেন না, তাদের সাথে যোগাযোগ ও ঘটিয়ে দিলেন।
মানুষ জেনে গেল, মৃত্যু নিছকই একটা সাময়িক কায়াবদল মাত্র। মনকে শরীর থেকে মুক্ত হবার জন্যই, সকল জীবনকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হয়। তিনি আরো প্রমাণ করে দিলেন যে, মৃত্যু পরবর্তী জীবনে যখন সময় থমকে যায়; মানুষ সম্রাজ্য গড়ে তোলে তার আত্মার চেতনায়। পারস্পরিক যোগাযোগের ভেতর দিয়ে শুরু হয় দীর্ঘ পরিক্রমার এক চক্র।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেদিনটির কথা ভুলতে পারেননি প্রফেসর। মানব অধ্যুষিত ২৪৭ টি গ্রহ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষনাটি সরাসরি দেখতে পাচ্ছিল অভিবাসিত মানুষেরা। প্রফেসর নিয়াকার এক এক করে সব তথ্য প্রমাণ হাজির করছিলেন।
"জীবনের প্রয়োজন কেবল মৃত্যুকে উপস্থাপনের জন্য। শরীরি জগতকে আত্মা থেকে আলাদা করতে হয় বলেই মৃত্যু আসে। বস্তুজগতে প্রবেশের সাথে সাথে আত্মা আটকে পড়ে সময়ের পরিক্রমায়। বস্তু চক্রের সূচনা আছে বলেই ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে। মৃত্যু হলো এই চক্রকে অতিক্রম করার একমাত্র মাধ্যম।"
১৫০ বিলিয়নেরও বেশী সংখ্যক মানুষ বিস্মিত হয়ে শুনছিল তার কথা। প্রফেসর নিয়াকার প্রমাণও হাজির করলেন সামনে। অগনিত অশরীরি অস্তিত্বের অবস্থান গ্যালাক্সির সব কটি অতিক্রমন্য দুরত্বে একসাথে ধ্বনিত হলো।
"আমরা আছি। আমরা যেমন ছিলাম একসময় এই বস্তুজগতে; আমরা এখন আছি সেই অনন্তে।"
তাদের কন্ঠ কোথাও ধ্বনিত হয়নি, অথচ সবাই শুনতে পেলো!
তাদের প্রশান্তি চাক্ষুস হয়নি কারো কাছে, কিন্তু সবাই দেখল!
তারা কোন আহ্বান জানায়নি কাউকে; অথচ সবাই উম্মাদনায় অস্থির হয়ে উঠলো!
পরের সাতদিনের ভেতর মানবজাতির জনসংখ্যা কমে এসে দাড়ালো ২৩ বিলিয়নে! ১৯৩ টি গ্রহের সব অভিবাসী একসাথে আত্মহত্যা করবে এটা অনুমান করা সম্ভব ছিলনা। তা নিয়ে অবশ্য মোটেই চিন্তিত ছিলনা কেউ। নানান উৎসবে মুখর তখন অনান্য সব গ্রহও, তারাও গন আত্মহননের কিংবা চিরমুক্তির পথে!।
এভাবেই কেটে গেল আরেকটি শতাব্দী। ১৮৭ বছর বয়সে যখন প্রফেসর কাওসেইন বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান, মহাবিশ্বে তখন মানুষ কেবল, পৃথিবীতেই আছে। মাত্র এক বিলিয়ন মানুষ। এদের বেশীর ভাগই গবেষক, বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক। পার্থিবতাকে ভালবেসে তারা থেকে গেছে এপাড়ের জীবনে। কেউ কেউ যে একেবারেই ব্যাতিক্রম ছিলনা তা নয়।
মাআন্দ্রি-আলা হচ্ছে তেমনই একজন।
ইন্দ্রিয় আসক্ত, রিপু তাড়িত এই ধর্মযাজককে জ্ঞান পাপী বলা যায় অনায়সেই। প্রফেসর কাওসেইনের সহকারী হিসেবে কাটিয়েছে বেশ কিছুকাল। সব সত্য জেনে শুনেও, সে ঘোর বিরোধিতা করে চলছে তার। যদিও খুব একটা অনুসারী মাআন্দ্রি-আলার নেই। কিন্তু গত অর্ধ শতাব্দি ধরে সে একদিনের জন্যও হাল ছাড়েনি। সে জানে তার জিঘাংসার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে সে।
প্রফেসর কাওসেইনের সত্য উম্মোচনের পর শী'আরের অনুসারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একদল, যারা মেনে নিয়েছিল; তাদের অধিকাংশই আত্মহত্যা করে। অপরদল- ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠী; তারা প্রতিশোধের নেশায় মেতে উঠেছিল!
মাআন্দ্রি-আলা তাদের সবাইকে সংঘটিত করেছে। তার সার্বক্ষনিক চিন্তা হয়ে উঠেছে, কিভাবে প্রতিশোধ নেয়া যায় এই অধর্ম, স্রষ্টাবিরোধী আচরণের।

কাছের লোকেরা গত কদিন ধরেই লক্ষ্য করছে, মাআন্দ্রি-আলা খুব নীরব। আসলে নীরব বললে বোধহয় ভুল হবে; তাকে বিগত যেকোন সময়ের তুলনায় খুব শান্ত , সমাহিত দেখাচ্ছিল। তবে অনুসারীরা কেউ প্রশ্ন করার ধৃষ্টতা দেখায়নি; তাদের আনুগত্য সবসময় প্রশ্নাতীত।
মাআন্দ্রি-আলা প্রশান্তি বোধ করছে; কারণ সে জানে, সে ঈশ্বরের নির্দেশনা পেয়ে গেছে। পাপীদের শাস্তি প্রদানে তার সংকল্পের চুড়ান্ত সফলতা এখন শুধুমাত্র অল্প সময়ের অপেক্ষা। পাঁচ দশকের আক্ষেপের পর আজ সেও তার বিশ্বাসের ফল পেতে যাচ্ছে। সে জেনে গেছে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে মুক্ত আত্মাদের উপর। তাদের জন্য সে তৈরী করে নিয়েছে চরম শাস্তির স্থান। এখন নিজেকে মুক্ত করতে হবে বস্তু জগত থেকে।
সৃষ্টিকর্তা তাকে নিদর্শন দেখিয়ে দিয়েছেন।
মাআন্দ্রি-আলা ও তার অনুসারীরা আত্মহত্যা নয়, একে অপরকে হত্যা করলো!

শুরুটা হলো এভাবে...।
যারা পরজীবনের দেবত্ব লাভ করেছে; তাদের ভেতরে একটা অংশ হঠাৎই বিভ্রান্তির ভেতরে পড়ে গেল।
প্রতিশ্রুত চিরপ্রশান্তির আবরণ ক্ষয়ে যেতে লাগলো খুব দ্রুত।
আক্ষেপ, ক্ষোভ, হতাশা, ইর্ষা আর লালসার রিপুরা ছেয়ে ফেলছে যেন তাদের সব প্রাপ্তিকে।
সব আলোকিত স্নিগ্ধতাকে হারিয়ে ফেলে তারা মুখমুখি হলো মাআন্দ্রি-আলা'র ।
"আমরা কোথায়?"- কোন একক প্রশ্ন নয়, সমবেত।
"নরকে", শব্দে পরিবর্তিত করলে জবাবটা মাআন্দ্রি-আলার তৃপ্ত স্বরকেই নির্দেশ করতো।
" তোমরা সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিলে, তাই আমি এই নরকে তোমাদের নিয়ে এসেছি; তোমাদের শরীর ত্যাগকারী আত্মা এখন এই নরকের বাসিন্দা!"
"তুমি কে?" সমবেত যন্ত্রণার আর্তনাদ যেন শব্দে রূপ নিতে চাইছিল।
"আমি মাআন্দ্রি-আলা; শী'আর এর উত্তরসুরী, ঈশ্বরের সেবক।"
"মিথ্যে কথা! আমি মাআন্দ্রি-আলা; আমরা মাআন্দ্রি-আলা।"!
চারদিক থেকে সমবেত উত্তর ছুটে এলো তার কাছে।
মাআন্দ্রি-আলা বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো; কিছু একটা মিলছে না।
কিন্তু খুব বেশী সময় সে ভাবতে পারলো না। তার আগেই নরক যন্ত্রনার তীব্রতায় তার আত্মা আর্তনাদ করে উঠলো। তার সব নিয়ন্ত্রণের আগল ছিড়ে সত্তারা সব তার একত্বে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। যাদের সে শাস্তি দিতে চেয়েছিল, নরকে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল; সেখানে সে এখন একক, সে ই বিলীন হয়ে গেছে সবার ভেতরে। তার জিঘাংসা তাকে পরাস্ত করে ফেলেছে।
অনন্ত জীবনের চক্রে প্রবেশের মুহুর্ত ক্ষণে সে কেবল জানতে চাইলো, কেন? কেন হে ঈশ্বর? কেন এমনটা হলো?"
জবাবটা সে পেয়েছিল কিনা, সেটা পৃথিবীর কেউ বলতে পারবে না।
কিন্তু পার্থিব জীবনে আসক্ত মানুষগুলো এখন জানে, চিরশান্তির জগতে একক কিছুর অস্তিত্ব থাকেনা, থাকতে নেই। চাওয়া থেকেই জন্ম নেয়, চিরসুখের সমবেত পরজীবন।
আর নরক?
সেটাও মানুষ নিজেরাই বেছে নিতে পারে; তবে সে পতনের ক্ষমতা তার নিজ সৃষ্ট; ঈশ্বর তাকে সে ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন।
(সমাপ্ত)
[After the truth was reaveled that after death, time was streched to allow thousands of years of God like living in the mind world, most people committed suicide, finally some people learned to take the control of others dying mind and one lunatic created hell for all of them.
An story Idea of Enamul Azim Rana]
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১২:৩৬
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×