somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিক (কল্প গল্প)

০১ লা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রভূ নেফটারের লিপি থেকে প্রাপ্ত
সিদ্ধান্ত নেয়াটা আমার জন্য মোটেও সহজ ছিলনা। এমন একটা অবস্থানে থেকে অবশ্য কারো পক্ষেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া কখনোই সহজ হয়না। আমাদের সভ্যতার ইতিহাসে এর আগে এই মাপের সিদ্ধান্ত কেউ কখনো নেয়নি, আর ভবিষ্যতে নেয়ার সুযোগটাও নষ্ট হয়ে গেলো বৈকি! (অবশ্য ভবিষ্যত বলে যদি কিছু থাকতো তাহলেই)।
পেছন ফিরে তাকালে আজকাল আর খুব বেশী কিছু মনে করতে পারিনা। ঈশ্বরবিশ্বাসীদের সাথে দীর্ঘ ক্লান্তিকর যুদ্ধ আমার অতীত স্মৃতির সবটুকু ছিনিয়ে নিয়েছে। পুরো পৃথিবীতে আমার অনুসারীদের কর্তৃত্ব স্থাপনের তাও প্রায় ২০০ বছর পার হয়ে গেলো।
তারপরও, অবাক লাগে যখন দেখি পৃথিবীর আনাচে কানাচে এখনো ঈশ্বর বিশ্বাসীদের অস্তিত্ত্ব অটুট থেকে গেছে।
বিস্ময় কেটে ক্রোধে পরিনত হতে সময় লাগে না!
আমার হাতে সময়ও খুব বেশী একটা আর নেই। আর বড়জোর দু চার বছর!
তারপর অসীম শূন্যতায় বিলীন হয়ে যাবো আমিও।
ভাবনাটা আজকাল অস্থির করে তুলতে চায় আমাকে।
তার আগেই প্রমাণ পাওয়াটা আমার দরকার!
আমার অনুসারীরাও এই শংকা থেকে মুক্ত হতে পারছে না, যে আমি না থাকলে কী ঘটবে!?
এখন আর সেই ভয়টা থাকলো না; সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে; কেবল অল্প কিছু সময়ের ভেতরেই। নিজেকে তৈরী করে নিয়েছি মানসিকভাবে।
এটোমিক চেইন রিঅ্যাকশন শুরু হবার মাত্র দুঘন্টার ভেতরেই পুরো পৃথিবীতে তা ছড়িয়ে পড়বে। শক্তিনির্ভর সব প্রাণের অস্তিত্ত্ব বিলীন হয়ে যাবে মাত্র একশো বিশ মিনিটের ভেতরেই!
মনে মনে তৃপ্তির হাসি হাসছিলাম আমি।
এবার?! তোমাদের ঈশ্বর কী করবে? এই সভ্যতাকে বাঁচাতে কি অবগুন্ঠনের আড়াল থেকে বের হয়ে আসবেন?
আস্তিক নাস্তিকের দ্বন্দ সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই। চুড়ান্ত মুক্তির পথ কখনোই একা পাওয়া সম্ভব নয়। যুগে যুগে ধর্ম প্রচারকরা সবসময় জেনেশুনে এই ভুল করে এসেছে। তারা প্রত্যেকের আলাদা আলাদা পরজীবনের লোভ দেখিয়ে আমাদেরকে বঞ্চিত করেছে প্রকৃত সত্য থেকে; সৃষ্টিকর্তাহীন মহাজগতে এনেছে ঈশ্বর নামের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারিকে।
যুগে যুগে নেতৃত্বরা কেবল পরজনমের লোভ দেখিয়ে আমাদেরকে ধর্মের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ এই জীবনের চাওয়া পাওয়া টুকুকেই তারা অবহেলা করে গেছেন চিরকাল!
আমি কেবল আমাতেই বিশ্বাস করি। আমি যখন নেই; তখন কোন কিছুই, সব অস্তিত্তই অর্থহীন আমার কাছে।
প্রতিটি অস্তিত্তের জন্যই তাই।
কিন্তু হায়! ঈশ্বর বিশ্বাসীরা অন্ধকারকেই বেছে নিতে চায়।
এই কারণেই আমাকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হলো। আমাদের জাতির সমাপ্তি টানার সময় এসে গেছে। যদি ঈশ্বরের কাছে শেষ বিচার ই আমাদের নিয়তি হয়ে থাকে, তবে আমাদের দ্বারাই সেটা হোক না কেন? যে পরিণতি একসময় ভোগ করতেই হবে; সেটা এখনি হোক না কেন?! কেন আমরা তাকে এখনই পেতে চাইবো না?
এই সভ্যতাকে উন্নতির অর্থহীন শিখরে টেনে নিয়ে গিয়ে কীই বা লাভ হবে তবে?
যদি পরজীবন থেকেই থাকে আর চির অনন্ত আমরা পাবোই তবে তা এখনই নয় কেন?
ঈশ্বর মহা বিশ্ব করেছেন এইঅগ্নি সৃষ্ট জাতির জন্য?!
তাহলে এই জাতিই যদি না থাকে; যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে কি ঈশ্বর মহাপ্রলয়ের সূচনা করে দেবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর জানা আমার জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাড়িয়েছে। আমি যে খুব বেশী সময় পাবো তা নয়। চেইন রিঅ্যাকশন শুরু হবার পর প্রতিরোধ ব্যবস্থা আমাকে বড়জোর ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত রক্ষা করবে।
আমি এই ২৪ ঘন্টার প্রতিটি মূহুর্ত উপভোগ করতে চাই ঈশ্বর হীনতার জয়গান গেয়ে।
...................................
সমাপ্তি ঘনিয়ে এসেছে। ঈশ্বর এখনো আসেননি। আমার হাতে অল্প কিছু সময় ছিল। এর ভেতরে আমি এই লিপিগুলি সংরক্ষন করে যাচ্ছি।

লেখকের কথা
লেখাটা এখানেই শেষ। গেল বছর এক কারখানা মালিক, যিনি আমার ক্লায়েন্ট, তার জন্য একটা পাওয়ার প্ল্যান্ট ইমপোর্ট করতে হয়েছিল। সেটা ইনসপেকশন করতে আমাকে দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে যেতে হয়। কাজ শেষ করে অবসরের সুযোগে কিছু পুরোনো অ্যানটিক সামগ্রীর দোকানে ঢু মেরেছিলাম। সেখানেই একটি শিরি লিপিতে লেখা তাম্র পান্ডুলিপি পেয়ে যাই।(শখের বসে আমি ইন্টারনেট ঘেটে 'শিরি লিপি'টা শিখে নিয়েছিলাম একসময়। দক্ষিণ আমেরিকার উপকথায় শোনা যায় শিরি লিপির জন্ম নাকি এই পৃথিবীতে নয়।) দেশে ফিরে অনেক সময় নিয়ে সেটার পাঠোদ্ধার করেছিলাম। পুরো পান্ডুলিপি হয়তো সেখানে ছিল না, কিংবা হয়তো এটা এভাবেই সম্পূর্ণ ছিল। এটা কি গল্প না কোন উপকথা কিংবা সত্য ঘটনা, সেটা বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই; পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম। তবে এই লিপির কোথাও মানব সভ্যতার কথা পাইনি। অগ্নি সৃষ্ট এক জাতির কথা এসেছে একটি জায়গায়। তবে কি এরাই গ্রীক উপকথার দেবতা কিংবা নানা ধর্ম গ্রন্হে বলা সেই ভিন্ন জাতি? বিচারের ভার পাঠকের উপর।তবে প্রতিক্রিয়া পেলে ভালো লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:১২
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×