সাপ্তাহিক বার্তা এর প্রতিবেদক সোবাহান মিয়াকে কে না চিনে?
প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে পাঠক মহলে তার সুনাম বেড়েছে।
ভদ্রলোক বাহিরের জগতটাতে যতটা না ভদ্র
তার চেয়ে বেশী নিরীহ আর আর শান্ত প্রকৃতির।
সুফিয়া খাতুন আর মেয়ে ছন্দা কে নিয়ে ছোট সংসার।
পত্রিকার প্রতিবেদন কে কন্ট্রোল করতে পারলেও,
ঘরের কর্তিত্ব কন্ট্রোল নিজের আওতার বাইরে।
সুফিয়া খাতুন নারী আন্দোলনের সভাপতি।
এ কাজে-সে কাজে বেশির ভাগ সময় বাইরে কাটাতে হয়।
অনেক বার বলেও তাকে ফেরাতে পারেনি।
মান সম্মানের ভয়ে এবং ঝগড়া এড়াতে এখন আর সুফিয়াকে কি কিছু বলা হয় না।
প্রত্যেকটা ভদ্র মানুষ, মান সম্মানের কাছে জিম্মি।
মেয়েটাও মায়ের মত হয়ে যাচ্ছে।
একমাত্র কন্যা যে সবচেয়ে ছিল আদুরী সেও মায়ের কন্ট্রোলে চলে গেছে।
তাকে আর কেয়ার করে না। মেয়েটা ইদানিং বেশি আধুনিক হয়ে যাচ্ছে।
আধুনিক পোশাক পরে। আরও কতকি যা দেখেও না দেখার ভান করতে হয়।
কিছুদিন আগে একটা ছেলের সাথে একই রিক্সায় দেখতে পায়।
লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে জিজ্ঞেশ করেছিল- ছেলেটি কে?
প্রত্ত্যুতরে বলেছিল- বাবা, তুমি আনকালচারালডই রয়ে গেলো। ও আমার জাষ্ট ফ্রেন্ড!
দীর্ঘ নি:শাস ফেলা ছাড়া এ কথার আর কোন জবাব তার কাছে ছিল না।
সুফিয়ার সাথে এ বিষয়ে আলাপ করেছে। সেখানেও একি উত্তর - আনকালচারালড!
এই যুগের ছেলেমেয়েরা মিলে অসাধ্য সাধন করে,
আর তুমি ঘরে বসে এসব নিয়ে নোংরা কথা ভাবো?
সংস্কৃতির হাতে জিম্মি হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই।
ওই যে সম্মান যেটাকে সে ভয় পায়, সেটা কি রক্ষে হয়েছিল?
দিনটি ছিল কালচারাল প্রোগ্রামের দিন।
ছন্দাকে কয়েক টা ছেলে-মেয়ের সাথে বের হয়ে যেতে দেখলো।
সুফিয়া অনেক আগেই বের হয়ে গেছে।
মেয়েটাকে যে বলবে- আজকের এই দিনটাতে একটু সময় দে?
সেটুকু বলার শক্তি আজ সে হারিয়ে ফেলছে।
- মা, আজ একটু তারাতাড়ি বাসায় আসিস।
উত্তরের পরিবর্তে দেখতে হল, মেয়ের তাচ্ছ্যিল ভরা চাহনি।
রাত ২ টা: সুফিয়া অনেক আগেই ফিরেছে। মেয়েটা এখনও ফিরছে না।
সচরাচর ছন্দা এতো দেরীতে ফিরে না। কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে।
সুফিয়া কে ডেকে তুলে বিষয়টা জানালো। আজ প্রথম সুফিয়ার মাথায়
ঘাম জমা দেখতে পেলো সে। ছন্দার মোবাইলের সুইচ অফ,
ভয়টা দুজনের মনে জায়গা করে নিয়েছে। ভয়টা কী আসলেই ছোয়াচে?
সুফিয়াতো ভয় পাওয়ার মত মেয়ে না। ভোর নাগাদ ফোন এলো।
থানা থেকে আসছে- নিরবে কথাগুলো শুনে গেলো সে।
সুফিয়া জিজ্ঞেস করতেই ঠাস করে চর মারলো সোবাহান সাহেব।
চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো সুফিয়ার ।
শুধু একটাই কথা বের হলো - তোমার মেয়ে সংস্কৃতিমনা হয়েছে।
পরদিন একটি জনপ্রিয় দৈনিক প্রত্রিকায় খবর বের হল.
“বনানীর এক অভিজাত হোটেল থেকে আপত্তিকর অবস্থায়
কিছু বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলেমেয়েদের গ্রেফতার্।”
আর দৈনিক দিনবার্তায় প্রকাশিত হল।
সিনিয়র রিপোটার সোবাহান সাহেব হার্ট অ্যাটার্কে মৃত্যু বরণ।
দিনটি ছিল ২ রা বৈশাখ।
যেদিন কালচারের সাথে তাল মেলাতে না পেরে এক আনকালচারালড ব্যক্তিত্বের মৃত্যু দিন।
যার কবরে লিখা ছিল: আমার মৃত্যুর জন্য অতিসভ্য সংস্কৃত দায়ী।
সংস্কৃতিমনা সভ্য মানুষের জন্য কী কোন মেসেজ রেখে যেতে পারলাম।