ল্যাবে রাইত ভইরা বইসা থাকি, গ্রুপ ম্যাটও বইসা থাকে। আমি ঘুমাই, সে চাইয়া থাকে। কোড কেও লেখে না, মানে সাহস করে না। সে ডায়োড হাতাইতে হাতাইতে উর্দু ভাষায় কয়
: লাইফটা পুরাটাই একখান ডায়োড।
: কপাল ভালা আইসি কস নাই, তাইলে কানেকশন দিতে দিতে মাথা খারাপ হইয়া যাইতো!
: আইচ্ছা রনি, তুমি উর্দু শিখলা কই থিকা?
: ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ লাগাইছিলা তখন।
: তোমার বয়স কত?
: ৩৫০।
: কিন্তু তুমারে দেখলে তো ১৭-১৮ লাগে। বিয়া করছো?
: হ, দুইটা করছিলাম, দুইটাই মইরা গেছে। অখন তিন নম্বর খুজতাছি!
আমার দিকে চোখ বড় বড় কইরা চাইয়া রইছে। ঠান্ডায় দেখি ইদানিং কান জইমা যায়, তারপর জমে চোয়াল, তারপর জমে নাক, তারপর জমে মাথা, তারপর জমে শরীর...আর নীচে যামু না; তয় সব জইমা যায়। আগে যেই কাপড় দিয়া -৩০ ডিফিট দিছি অখন তার থিকা দুইটা কাপড় উপর নীচে এক্সট্রা লইয়াও পার পাইতাছি, শীত বাবাজী কামড় একখান লাগাইবোই, তারপর এই রাইত ২ টার সময় ল্যাব কইরা ২ মাইল হাটা দিয়া রুমে যাই! মনে হইতাছে ঠান্ডার চেয়ে রাস্তার পাশে জইমা থাকা বরফের পিরিত বেশী!
তাও শান্তির কথা যে জাহান্নাম আগুনের তৈরী, নাইলে ঐটাও যদি বরফের মতোন ঠান্ডা হইতো, তাইলে সারা জীবন সেগুন কাঠের তক্তা হইয়া খাড়াই থাকতাম। সাত সকালে উঠলেই দেখি নো চেন্জ্ঞ। সেই একখান পাহাড়, পাহাড়ের উপর খাড়ায় আছে গলার লম্বা লম্বা দাড়ির মতো পাইনের বন আর সব জইমা সাদা! মনে হয় প্রাকৃতিক উপায়ে তুলার চাষ করতাছে!
রুম মেট একখান চাইনিজ মাইয়া, মানে ঠিক রুম মেট না, একই রুম একখান পারটিশন মাইরা পাশেরটায়।আমার সাইডে আমি একখান বাঙ্গালীর লগে রুম শেয়ার করতাছি ভাড়া কমানির লিগা! রুম খান পুরা ফুটবলের মাঠ! মাইয়া খান পুরাই মাশাল্লাহ, প্রথমদিন দেইখা মনে করছিলাম বয় ব্যান্ডের একটা পিচ্চি পোলা। পরে গলার টোন শুইনা মনে হইলো ইহা মাইয়া, ফিগার আলুর চিপস, এক বসায় প্যাকেট শেষ! তো একদিন দেখি ফ্রিজে দুইটা বড় বড় ফান্টা ২ লিটারের সাথে এক খান ম্যারিন্ডা! লোভ সামলাইতে পারলাম না। রুমে বসা দুইটা ল্যাব ম্যাটরে কইলাম,"রুম মেট আমার বড়ই ভালা, আমাগো লিগা ড্রিংকস আইনা রাখছে!"
এক পাইক্কা খাড়ায় কয়,"রনি তুমি ড্রিংকস করো? কুনটা আছে, ওয়াইন না হুইস্কি?"
মনে মনে কইলাম "যার মনে যা ফাল দা উঠে তা"! আমি কইলাম,"ফান্টা আর মেরিন্ডার তিনখান বোতল আছে।"
বাঙ্গালী ফ্রিতে আলকাতরাও খায়, মাগার এরা দেখি ফ্রিতে বোতলও গেলে। মোটামোটি দুইটা বোতলের লাস্টের দিকে আসনের পর হিসাব করতাছিলাম কুন জায়গায় এই দুইটা বোতল বিক্রি করবো অমুন সময় হঠাৎ রুমে নক, দেখি পিছনে চাইনিজ খান চাইয়া আছে!
: (বাংলায় প্রথমে পরে ইংলিশে!) আরে বোচন যে, আহ এক লগে বোতল মারি!আরো একখান বোতল ইনট্যাক্ট আছে!
: রনি, তুমি কি জিজ্ঞেস কইরা নিছো? আজকা আমার বয় ফ্রেন্ড আসবে আর তুমি একটু জিজ্ঞাসাও করলা না?এইটা খারাপ!
মনে মনে কইলাম এই পাটখড়ির আবার বয় ফ্রেন্ড। পাইক্কা দুইটা আমার দিকে চাইয়া আছে, বোচনডাও আমার দিকে চাইয়া আছে। রুম মেট সকালে বাইরে গেছিলো, কইছিলো রাইতে আইবো, দেখি মদনটায় অখন পিছে খাড়ায়া খাড়ায়া সার্কাস দেখতাছে, আর টাইম পাইলো না!
বড়ই শরমিন্দার কথা, পরে ওরে পামপট্টি দিয়া দুইখান ফান্টা আর মেরিন্ডার দাম হিসাব কইরা একখান স্কটিশ হুইস্কি আইনা দিয়া ঠান্ডা করলাম। রুমমেট যখন দুকানে হুদাই বোতল দেখতাছে রং বেরং এর, তখন আমারে কয়," একখান পাটখড়িরও অখন বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড থাকে, আর আপনে মিয়া.....ইজ্জত মারছেন!"
মনে হইলো এই ইজ্জতের কপিরাইট আমি জাব্বার কাগুর মতো লইয়া বইসা আছি!! কিছু কইতে গিয়াও কওন বাদ দিলাম! অবশ্য রুম মেট পাংখায় আছে, ফিনল্যান্ডের ট্যাম্পেরে তে পিএইচডিতে চান্স পাইছে। সামনের মাসে ভিসা পাইবো।
তো মেজাজ খান বড় বিলা, পরানপাখী আফগানীও ইদানিং ফোন ধরে না। ফোন দিলে দেয় কাইটা! শালার একখান দেশ, আউট অফ সাইট, আউট অফ মাইন্ড! সমস্যা হইলো চোখের সামনে একটারে বসাইয়া কেমনে থাকি? ভ্যারিয়েশন না হইলে কি লাইফে কুনো মজা আছে?
এত কিছু ভাবতে ভাবতে যখন দুকান থিকা বাইর হমু, এমুন সময় রুম মেট দুই পাটির ১৬+১৬=৩১ খান দাত (আক্কেল দাত অখনো একখান কম আছে, মাগার চুল পাইকা গেছে গা) বাইর কইরা কইতাছে,"ওস্তাদ, আপনের হবু ভাবীও ফিনল্যান্ডে চান্স পাইছে, অখন কি করুম? কেবল ফুন দিছিলো!"
মেজাজ আর এক ডিগ্রি খিচায়া কইলাম,"কি করবেন? আমার কান চুলকাইতাছে, পিঠ খান খাউজায় দেন, বড়ই চুলকাইতাছে!"
লাইফটা তেচপাতা হইয়া গেলো!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:৫৪